সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৩

ছোটগল্প – উল্কা

চট্‌চটাচটিচটেচটো
উল্কা



ছাদের কার্নিশে চটি খুলে উঠে বসল বলাই।একটু আগেই বিরেন স্যার বাংলা কপচে গেছেন।একরাশ সন্ধি সমাস কারক বিভক্তি কোনোটার সাথে কোনোটার খাপ খায় না এদিকে একটা বাক্যে সবাই আছে তাল মিল করে।বেশ তো লাগছিল সাগরসঙ্গমে নবকুমারের একখাবোল তমালতালিবনরাজিনীলা না কি যেন।উপভোগ্য আরাম দায়ক।জীবনবিজ্ঞান স্যারই তো সেদিন বললেন এটা অ্যাডোলেসেন্স পিরিয়ড।এই সময় শরীরের সব ঘুমন্ত অর্গানগুলো কারণে অকারণে সাড়া দিতে থাকে।বলাই বাহুল্য এতো ষাঁড়াষাঁড়ি হয়ে যাচ্ছে!তবে মেয়েগুলো সেদিন অদ্ভুত ভাবে চুপকে চুপকে স্টাইলে হেসে উঠেছিল।এই হাসির পিছনে সামনে কোন কারণই ঠিক ঠাক ফিট করছিল না।পাশে বসে খাতায় অ্যাবস্ট্রাক্ট ভঙ্গিতে আঁকা জীবনবিজ্ঞান বই থেকে নারী দেহটার স্তনে দুবার বল পেনের মুখটা ঘষে সন্ত বলছিল “ওই যে পিরিয়ড বলেছে সে জন্য ওরা হাসছে।ও তুই বুঝবি না, জটিল ব্যাপার...”জটিল ব্যাপার শালা নিজেই জানে না জটিল ব্যাপার।কিন্তু সন্তু কিছু কিছু জিনিস এত ভয়ানক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে যে আহা...তৃপ্তি ছাড়া আর কিছুই লাগে না।আরে বাবা অ্যাডলেসেন্সে তো সেটাই চাই... বুঝবে কে।পুরো শীতের দুপুরগুলো এই স্যারের জ্বালায় দফারফা হবে নিঃসন্দেহে।মাধ্যমিক বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তা।জীবনবিজ্ঞান ক্লাসটা ছিল বলে রক্ষে।বিরেন স্যার বিদায় হওয়ার পর সন্তুবাবার দয়ায় কেটে যায় দুপুরটা।মনে পড়ে ক্লাস এইটে সন্তু স্কুলে মাঝে মাঝে চটি পড়ে আসত।খুব শখ ছিল ওর নানা রকমের চটির।লাল নীল ডিজাইন করা।কোন কোনটাতে আঁকা থাকতো মাল্টিকালারের ফুলপাতা। মাঝে মাঝে নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে ওর দাদার বিদেশি চটিও পড়ত। সেই গল্প বলাই অবাক হয়ে শুনত।বলাই যদিও সন্তুকে একজোড়ার বেশি চটি পড়তে দেখেনি,তাতেও আবার সেফটিপিন লাগানো। সেফটিপিন এটার মধ্যেও কত রকম মজারু আছে সেটা ওর কাছেই জানতে পেরেছিল বলাই।বাসে ট্রামে দু তিন টাকায় বিক্রি হওয়া এই জিনিসটার যা কপাল কোথায় না কোথায় লাগানো থাকে বলে চোখ মেরেছিল সন্তু।



বিলটুদের ছাদে দুটো পায়রা বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে। একটা গোলা পায়রা আরেকটা সাদা।অ্যালজেব্রা দিয়ে লিঙ্গ বানানো বেশ মজার! দুটো এক্স জুড়লেই একটা জলজ্যান্ত নারী আর তিনটে জুটলে...এটা ভাবলেই কেমন একটা শিহরণ জাগে বলাইয়ের পেটে।নারী ছাড়া যেন কিছুই কমপ্লিট না।তাসের দেশেও আছে বিবি।সন্তু এদেরও এক্স ওয়াই ক্রশ করে একটা ছয় আর একটা নয় কিভাবে হতে পারে দেখিয়েছিল।ওটা নাকি ওর দাদার থেকেই শেখা।সত্যি একটা দাদা থাকলে কত সুবিধে হয়।চটির দিকে এতক্ষণ নজর ছিল না তার। নতুন কিনেছে চটিটা।দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।আগামী শুক্রবার সন্তু চেয়েছে পড়বে বলে।চটি এক্সচেঞ্জ!পায়রাগুলোর কি মজা খালি পায়ে উড়ে বেড়ায় হেঁটে বেড়ায়।কোন এক্স ওয়াই জেডের বালাই নেই।প্রাকৃতিক নিয়মে কেমন সব আপনা আপনি হয়...আর এদিকে বলাইয়ের জীবনের অন্তরমহল চোখের বালিতে কিচকিচ করছে।চটিতেই কেবল যেটুকু নতুনত্ব বাদবাকিটা ক্যামন খ্যাব্রাখ্যাচাং হয়ে গেছে।



প্লাস্টিক হাতে মেয়েটা অনেকক্ষণ থেকে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।চিমসে শরীর কিন্তু ডবকা।ডবকা শব্দটার তুলনা একটা জলজ্যান্ত মানুষের সাথে কিন্তু প্রতি মুহূর্তে ডবকাই জেতে। এটার এমন গোল নিটোল ভাব আছে যে কামড়ে খাবলে চেটে আরশোলা হয়ে যেতে ইচ্ছা করে বলাইয়ের।মেয়েটা চটি পড়েনি ফ্রক পড়েছে।মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছে বলাইয়ের দিকে।তাকিয়েই থাকছে...পরশু রাতের সাক্ষী ওর বিনুনির লাল ফিতে নেতিয়ে রয়েছে।সেদিন দুপুরে দেখা হয়েছিল মেয়েটার সাথে।হাওয়ায় উড়ন্ত ফ্রকের ঘের দুহাতে চেপে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার মোড়ে।বলাইয়ের সামনে হাঁ করে ছিল ওর ফ্রকের চেন কাটা উদোম পিঠ।চোখ নামাতে গিয়ে দেখে ফেলেছিল বিশ্রী ভাবে ফাটা নোংরা ওর পায়ের গোড়ালিটা।আজ ফ্রকটায় বোতাম রয়েছে।ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলে মেয়েটার চোখে তলিয়ে যাবে বলাই।ইদানিং আলাদিন হতেও ইচ্ছা করে বলাইয়ের।কিন্তু ওর প্রদীপ নেই আছে চটি।তবে কি গুগাবাবার মত!না না ওদের তো জুতো ছিল তাও ভুতের রাজার দেওয়া।দীর্ঘ ল্যাজ বিশিষ্ট জানোয়ার হয়ে বসে আছে বলাই। সামনে চটি, পিছনে সন্তু, রাস্তায় অনামিকা, অলক্ষ্যে জোড়া পায়রা, নেপথ্যে ষড়যন্ত্রী মাধ্যমিক।