সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

গুচ্ছ কবিতা - রাজর্ষি মজুমদার

শ্রেয়সীকে ভেবে নিয়ে শীত
রাজর্ষি মজুমদার



১.

কবিতার কথা ভাবলে আমায় ভাবতে হয় – আজকাল ভাবা ভীষণ পরিশ্রমের কাজ। আমায় চুপ করে বসে থাকতে হয়েছে ভাবনায়- কবিতা লেখার আগের সময় প্রিয় থেকে প্রিয়তম নদীর মতন। জলের অভাবে শুকিয়ে গিয়েও বেঁচে উঠতে চাইছে কাগজের কাছে এসে।



২.

উষ্ণতা শীতকালে আমার প্রয়োজন – সিগারেটে কিংবা কাঁথার আড়ালে উষ্ণতা আমার পছন্দ নয় তবুও তোমার বুকের কথা ভেবে নিজেকে উষ্ণ রাখতে শিখি মুহূর্ত থেকে মুহূর্তান্তরে।



৩.

সে ছেলেটা কয়েকবার ছোট্ট মাছি দেখেও ভয় পেয়েছে- সেখানে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে বড়। বেশ কিছু ধুলমাখা বই আর হাত, পা থাকার অহংকার নিয়ে অনেকক্ষণ ভয় ভুলে থাকতে চাই। ভয় ভুলে থাকার দরুন জতুগৃহ ছেড়ে শীতের সবজিতে চলে গেছে মাছি ও আমার মন। সময় হলে, মিঠে রোদ পিঠে ফিরে আসবে।



৪.

একা বসে থেকে এ শহরে অবশেষে শীতকাল এসেছে প্রিয় হয়ে সেখানে আমার সোয়েটারে ডোরাকাটা কুয়াশা লেগে লেগে আমায় আমার মতো থাকতে দিচ্ছেনা – জামা খোলার আগে মনে এসে বসেছে পাথর ছোঁয়ার আনন্দের মতো শীত – সমস্ত প্রিয় চায়ের দোকান, ঠোঁট এবং বইয়ের দোকান খুঁজে খুঁজে বের করার কঠিন কাজে হাতকে সাহায্য করতে।



৫.

বাস থেকে নেমে গেলে হাতে টিকিট ধরে রেখে ভেবে উঠতে পারিনা টিকিটের কাজ কি?
ঠিক সেই মুহূর্তেই, আমার ভাবনা পরিষ্কার হবার আগেই বাস বেরিয়ে যায় দু তিনখানা।
আগে আমি বাসের টিকিট জমাতাম, এখন বাকিদের মতই দু আঙুলে চিপে রাস্তায় ফেলে দিই।



৬.

“ রও মে হ্যায় রাখশে উমর কাঁহা দেখিয়ে থামে
নে হাথ বাগ পাড় হ্যায়, নহ পা হ্যায় রেকাব পর।”
গালিব পড়ে মাঝে মাঝে বাঁচতে শিখি- তখন বরানগরে দিল্লীকে খুঁজছি।
দুপুরের ঘুমে জীবন , চায়ের মধ্যে ফরাসডাঙ্গা মদ।



৭.

কয়েকজন্ম বেঁচে থাকতে হলে তোমার থেকে ভাল কেউ নেই যার সাথে বাঁচা যায়।

চলন্ত বাস থেকে নেমেই বাজার সারতে হয় আমাকে সারা সপ্তাহের মতন; কুমড়ো আর লাউ কিনে রেখে দিতে হবে অন্তত। আমি জানি তোমার ডাল ভাত পছন্দ, দুপুরে মিষ্টি পান। বিকেলে আদা দিয়ে দুকাপ মতন চা।



৮.

আমার কাছে অনেক নতুন মানুষ তোমার খোঁজ নিয়ে গেছে- তোমার ঠিকানা, চুলের আপাত বাদামী রঙ সম্বন্ধে তাদের অনেক কৌতূহল। পরে অনুযোগ করোনা তোমায় আগে জানাইনি বলে।



৯.

শীতে বরানগরে বরফ পড়েনা, শুনলাম নাকি দেরাদুনে ট্রান্সফার নিচ্ছ।

তোমায় বহুদিন বরফের মাঝে দেখা হয়না, শীতে শীতল হয়ে তোমায় মনে পড়ে আমার... বাঁধাকপির পাতায় বা নতুন গুড়ের গন্ধে। তুমি এখনও পিঠে বানাও? বানাতে পার?



১০.

তোমায় ভেবে আমার সময়গুলো বদলে যাচ্ছে দ্রুত, কয়েকবছর ধরে ঠিক এই সময় – যখন শীতকাল এসে উঁকি দিয়ে গেছে বিছানায়। আমরা বয়সের তুলনায় বুড়ো হয়েছি খানিক, চাঞ্চল্যের দুটো দাড়ি পেকে গেছে।



১১.

আমার শীতকাল এসেছে তোমার বয়সে, দুপুরের কোল্ড ক্রীমের নরমে। তোমার ন্যাপথলিন মাখা যেসব সোয়েটারীও আদর বইমেলা লিটল ম্যাগে মিশিয়ে নন্দন মিলনমেলায় ফেলে এসেছ নিয়মিত – শীতার্ত সেসব মুহূর্তের খোঁজ কি নিয়েছ কখনো?


তোমার বাড়ির স্টপে এবার ট্রাম দাঁড়ালেই নেমে পড়ে কি এক কাপ চায়ের দাবি কি করতে পারি আমি? অন্তত সেই সকালগুলোয়; যখন তোমার মা ইস্কুলে বেরিয়েছে, পুরো পাড়া পেপারে মগ্ন আর সিগারেট ধরিয়ে তোমায় দেখছি আমি।

3 comments:

Pritam Bhattacharyya বলেছেন...

রাজর্ষির কবিতা গুচ্ছ গুলো অসাধারণ লাগলো। অনবদ্য ছোটগল্প - ঋষি সৌরকের। ক্ষেপচুরিয়াস টীম'কে অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানাই ।

Rajarshi Majumdar বলেছেন...

dhonyobad dada

polashmita Rg বলেছেন...

গালিব পড়ে মাঝে মাঝে বাঁচতে শিখি- তখন বরানগরে দিল্লীকে খুঁজছি।
দুপুরের ঘুমে জীবন , চায়ের মধ্যে ফরাসডাঙ্গা মদ।
-----------
sundor.