সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩

আর্কাইভ - অয়ন দাশগুপ্ত


জৈবনিক শব্দের প্রতি একটা ভীষণ আকুতি ছিল সারাজীবন, কবিতায় এবং আলোচনাতেও।সারাজীবন একটা আফসোস থেকে গেল, কবি অয়ন দাশগুপ্তের একটাও ইন্টারভিউ নেওয়া হল না। যার কাছে যেটুকু থাকল পুরোটাই স্মৃতিতে। এই স্মৃতিই বাঁচিয়ে রাখবে ক্ষেপচুরিয়াসের অন্যতম প্রাণপুরুষ, কবি-সমালোচক অয়ন দাশগুপ্তকে। আর তার যাবতীয় কবিতা ছড়িয়ে থাকবে সামাজিক মাধ্যমে। সমালোচনার এমন শক্তিশালী হাত আমি আগে দেখিনি, হঠাৎ করেই যেন বাংলা সাহিত্যের অন্দরে মানুষটাকে প্রবেশ করতে দেখলাম স্যোশাল মিডিয়ার হাত ধরে। প্রথমে ছোট ছোট অভিব্যক্তি তারপর ক্রমশ পেলাম তাঁর জ্ঞানের ভাণ্ডার। গভীর আত্মদর্শন কীভাবে পঙ্‌ক্তিগুলিতে ছেয়ে আছে সেটাই বিস্ময়ভরে দেখলাম। পরে যেন কালের নিয়মে অয়নদা ক্ষেপচুরিয়াসের সঙ্গে কখন যুক্ত হয়ে পড়লেন। আমার মতে অয়নদার কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য বিষাদ বিলাস। অণু কবিতা ও ছোট কবিতায় বার বার তাঁর  বিষাদ  ফিরে আসে। একাকীত্ব-ই  এই কবির নিরাপদ আশ্রয়। কবিতা তাঁর কাছে যাপন ভিন্ন অন্য কিছু নয়। অয়নবাবুর কবিতায় তাই আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখি বারবার পুনরাবর্ত করে বিষাদ, শ্বাপদ, নিষাদ, মন, পোড়া, জৈবনিক প্রভৃতি শব্দ। প্রত্যেকটা কবিতার মধ্যে দেখা যায় একধরণের অনস্তিত্ববাদ। তাঁর মধ্যে সহবাস করেন কবি, বিলাস করেন শ্বাপদের সঙ্গে , সেই শ্বাপদের তীক্ষ্ণ নখরকে ভয় করেও দেখেন অন্তরে সেই শ্বাপদের চলাচল। 

অয়নদা ক্ষেপচুরিয়াসের বাইরে খুব কমই লিখেছেন, দুই একটা ওয়েব ম্যাগাজিনে তাও সামান্য। অয়নদা ছিলেন প্রকৃতার্থে ক্ষেপু। একটা সচল, অচল উভয় টাইপের = তাঁর আসা এবং যাওয়া, তাঁর অন্তিমযাত্রাটাও যেন সেইরকম। 

ক্ষেপু পরিবার থেকে অয়ন দাশপ্তকে হারানোর পর এই প্রথম ক্ষেপু বেরোচ্ছে। তাই এই সংখ্যায় থাকল তাঁর ক্ষেপুতে প্রকাশিত দুটি কবিতা। সামনের সংখ্যায় আমরা প্রত্যেকে কবি অয়ন দাশগুপ্তের কবিতা নিয়ে অনেক কথা বলব, এখন কেবল এক টুকরো নীরবতায় ক্ষেপু লালন করে যাক তার প্রিয় সন্তানকে, কবিতা পাগল এক বিষাদ পুরুষ অয়ন দাশগুপ্তকে। 


-- জুবিন ঘোষ

 

আর্কাইভ 

অয়ন দাশগুপ্ত


শোধন

 

হাজার জোনাকের অন্ধকার আত্মসাৎ করেছো

আর ওরা তাই ভেবেছে

এখন দু-দশদিন অক্লেশে গড়িয়ে নেবে আলোর মোচ্ছবে...

 

এতদিন এই যে আশ্চর্য ফুলের মত নির্ভুল একটা ব্রত রেখেছিলে -  

এযাবৎ ভেবেছে ওরা

সবার অলক্ষ্যে, নিশ্চিত বাসিফুল বদল করেছো প্রতিরাতে

 

মানুষ তো কত কি ভাবে -

হাওয়ার নিষেধ ভেঙে

ভেবে থাকে তৃপ্তি পায় ক্ষণিকের তৃষা

নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বপ্নে আস্বাদন করে দেবভোগ্য ফল 

 

মাঘের উঠোন জুড়ে

জ্বলুক না মাঝরাতে চাঁদের আগুন - 

আজ নির্গুণ আঁধারের তুমিই বা কতটুকু শোধন করেছো !

 


তুরুপ

 

একেকটি অন্তরঙ্গ মুহূর্ত যেন ঘূর্ণির মত বাস্তবিক

পাথরে পাথরে ফুল্‌কির শুদ্ধতায় অম্লান,

ছিন্ন অনুপল...

 

ওটুকুই ক্ষীণ আয়ু অমৃত জানি

শূন্য আধার জুড়ে সাক্ষাত অশনি,

নির্মোক অবশেষ... অসময়ে হাতের তুরুপ -

অবাধ অসাড় পড়ে থাকে...

 

আজ মনোলোভা ছকের উপান্তে বসে আছি

 

নেপথ্যে শব্দময় রাষ্ট্রীয় ঘর্ষণে

নির্মম সময় প্রয়াসবন্দী পড়ে আছে;

 

দলবদ্ধ ক্রীড়ায় দিনগত শুধু মাঝে মধ্যে দেখি,

নিকষ আঁধারে জ্বলন্ত উল্কা সব

শব্দহীন খসে পড়ে...

2 comments:

নামহীন বলেছেন...

"ইচ্ছেবাড়ি" মনে পড়ে যায়। আর কারো পড়ে কি? ঘোষের পো, মনে পড়ে???

নামহীন বলেছেন...

এইসব মণিমাণিক্যকে মর্যাদা দিতে শিখব কবে আমরা?