শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৩

গুচ্ছ কবিতা - শান্তনু মৈত্র


গুচ্ছ কবিতা
শান্তনু মৈত্র


দেবদাসী

বিকেল যখন সন্ধ্যে নামার মুখে...
আচমকা কোথা থেকে একমুঠো বৃষ্টিমাখা রোদ,
তোমার চোখে অদৃশ্য শ্রাবণ।

বদলাতে থাকা সময়ের অপরিসর গন্ডিতে
নীলচে স্বপ্নের হাতছানি,
আলোছায়া মাখা সে পথ, প্রেমের প্লাবন।

চেরি গাঢ় লাল চুড়ি ... এলোমেলো শরীর
সন্ধ্যারতির সময় কি এখন ??
রিনিঝিনি ঐ প্রাচীন নূপুর।

সুদক্ষিণা,তোমার স্পর্শে শরীরী চেতনা
কিছু নিষ্কাম পুরুষের পাশবিক উল্লাস,
নিশ্চুপ দেবতার বন্দনায় ... অচেনা সুর।

তুমি বিদ্যুৎ হতে পারো ...
ছিন্ন ভিন্ন হোক কথাকলির সৌকর্য ,
সুদক্ষিণা ... দিতে পারো একটুকরো ভালোবাসা ??

নিথর জন্তুর মত ঝিমোয় পাথরের রথ
নির্জনতায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, মৈত্রেয়র মন্দির ...
তোমার ঠোঁটে শব্দাহত জীবনবোধের ভাষা।

আলগোছে তোমার হাত আমার হাতে
তোমার শরীরে সেই বৃষ্টির স্পন্দন,
তান্ডবের আশ্বাসে হাজার বসন্তের রাত।

পাহাড়ের ওপাশে কার পদশব্দ ??
যুদ্ধজয়ের উল্লাস নাকি প্রতিহিংসার নৃশংসতা ...
সুদক্ষিণা, অজানা অন্ধকারে ছেড়ো না আমার হাত।

আচম্বিতে উড়ে আসে বিষাক্ত তীর ... মৃত্যুর ঠিকানা নিয়ে,
অজাতশত্রুর উন্মত্ত অভিঘাতে ,
খসে পড়ে নর্তকীর তিলোত্তমা কান।

রক্তস্রোতে ভাসে পূজার উপকরণ ,
নির্ঝর শ্রাবণে হারায় সম্পর্কের বন্যতা।
সহবাস করে যন্ত্রণা আর সূর্যের নিহত সন্তান।

কিছুটা সময় তোমাকে দিতে পারতো
এক অলোকসামান্যা চিরন্তনী রূপ...
আকাঙ্ক্ষিত ভোগবিলাসের তীব্রতায় তুমি দানবী।

কালের ব্যবধানে কোন নিশাচর
বাসা বেঁধেছে তোমার পাথরের স্তনে,
তবুও নীরব ধ্বনিসাম্যে, তুমিই প্রথম মানবী


একটা কাগজের পাখি

একটা কাগজের পাখি
ডানা ঝাপ্টাচ্ছে ... অসম্ভব কোনো মুক্তির আশায়।
হারিয়ে গিয়েছে মুক্তির দিশা,
সব পথের আজ একটাই শেষ ...
মৃত্যু।
যারা চাঁদে গিয়েছিল,
তারা পৃথিবীতে ফেরার জন্য ছটফট করছে।
তাদের দুঃখ অনেকটা আলেয়ার মত,
আজ তারা খুঁজে বেড়ায় ...
সুখ।
ডিভোর্সের পর অনেকদিন কেটে গেছে,
তোমাকে আর মনে পড়ে না।
একটা সময় ছিল যখন ...
তোমায় খুঁজতাম কুয়াশা ঘেরা কোন এক প্রান্তরে।
আমার জন্য দুএকটা চিঠি উড়িয়ে দিও ...
শূন্যে।।


বারবনিতা
 

গলির ওপারে তীব্র অন্ধকার
লাস্যময়ী শবগুলো ঢেকেছে মুখ ...
নৈঃশব্দের বর্ণমালা ঘিরে আসে,
এধারে ওধারে দাউ দাউ করে জ্বলছে নারীত্বের অহঙ্কার
প্রশান্তি পাচ্ছে পুরুষের নগ্ন ভোগবিলাস।
পথের শেষ ...
দাঁড়িয়ে আছে বৃদ্ধা সুখে সাদা থান জড়িয়ে
আঁচলে জড়ানো আছে বিক্রি না হওয়া...
কয়েকটা মালা,আর কয়েকটা শুকনো ফুল।
কিনতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই,
ভেসে আসে অপার্থিব আর্তনাদ,দরদাম চলছে আসেপাশে।
সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে সিক্ত হৃদয়ে,
বারবণিতার ঢেউ... ঘুরছে আমার চারপাশে ।।

বেঁচেথাকা 

শিরায় উপশিরায় বয়ে চলে দ্বন্দের ইতিহাস
চোখের ভাষায় মুক্তি পেতে চায় তীব্র যন্ত্রণা।
জ্বলতে জ্বলতে একটু একটু করে নিভে আসে ...
সন্ধ্যাপ্রদীপের আলো ,
আঁধার নেমেছিল দিন কয়েকআগেই...
বিবর্ণ কিছু স্বপ্নের মাঝে ফিরে এসেছিল জ্বলন্ত বাস্তব।
ফিরে এসেছিল মৃত্যু...
নগ্ন বাতাসের নির্বাক কোলাহলে
মিলিয়ে যাচ্ছে কিছু পরিচয়,
সম্পর্কের মানচিত্র থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে...
চেনা-অচেনা কত অস্তিত্বের ডাকনাম ।