শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৩

কবিতা - রাজীব

বৈশ্যযুগ
রাজীব



আমাদের এই শহর আজ শুধুই এক বিপণিবিতান ,
কেবল কিছু সৌন্দর্যবর্ধক গাছ আছে কেয়ারি-করা বাগানে ।
প্রত্যেকটি দেওয়াল চিত্রিত ক’রে
বাকি প্রচারণা ধুলো আর বাতাসের হাতে ছেড়ে দিয়ে
আমরা নিমগ্ন হই বিনীত উপস্থাপনায় ।
অত্যন্ত অধ্যাবসায়ে অবশেষে রপ্ত করেছি
নিক্তিতে ঠিকমত স্থির হতে ;
যদিও হৃদয়ে কিছু বেয়াড়া কাঁটা
এখনও মাঝে মাঝে অযথা শব্দ করে ,
তবুও আজ আমরা যথার্থই
অর্থের বিনিময়ে হাতবদল হতে প্রস্তুত ।
যাদের এসব ভাল লাগে নি
সেই বুনোরামনাথগুলো জ্ঞানিমূর্খমাত্র ----
আজ তারা তাত্ত্বিকভাবে নির্বাসিত ;
কারণ , হয়ত তারা হাতে-কলমে পরাজিত বলে ।
তারা হঠকারী এবং আত্মপ্রবঞ্চক --- বেচারা !
কিন্তু আমরা এতদিনে অতিক্রম করেছি
সেই প্রাগৈতিহাসিক চিন্তার বেড়া
এবং আয়ত্ত করেছি দ্বন্দ্বমুখর গতি ;
প্রতিনিয়ত আমরা বদলে যাচ্ছি সঙ্খ্যার অবয়বে ,
হৃৎপিণ্ড উপড়ে জমিয়ে রাখছি তাল তাল সোনা ----
যা দরকারমত ভাঙানো যাবে এবং সবচেয়ে নিরাপদ ।
ইতিহাসের এ অমোঘ পাঠ যে যত জলদি শেখে তত শুভ ,
কৌটিল্য থাকলে ঠিক তাই বলতেন ;
প্রগতির এই মূলনীতি মেনে
নিশ্চয় দারিদ্র্য জাদুঘরে যাবে !
স্ফীতশিরাময় পায়ের অক্লান্ত আঘাতে
রিক্সায় চড়ে এ শহরে আসবে সুবর্ণময় সমৃদ্ধি ;
তোমায় প্রণাম ভাস্কো-দা-গামা
ক্রেতা-নারায়ণদের পথ দেখিয়েছ বলে ,
কে বলে আমরা অচল পয়সা ?
মান্ধাতার সেই যুগ আজ আর নেই ।
আমাদের পূর্বপুরুষদের মত আমরাও ঝানু ,
ধূর্ত এবং কুটিল --- হয়ত কিছুটা বেশিই ।
সবরকমের সদগুণই পেয়েছি বংশানুক্রমে
শুধু তাদের নির্বাণের ক্ষ্যাপামি বাদে ;
তাই আমাদের ভবিষ্যৎ নিষ্কণ্টক ,
স্বয়ং শয়তানেরও সাধ্য নেই বাধ সাধে !