হঁ মা কাঁদিস কেনে
ইন্দ্রনীল তেওয়ারী
ক্ষেপচুরিয়াসের সম্পাদক সেদিন হঠাৎ ফোন করল। সম্পাদককে চিনি ব্যাক্তিগত ভাবে। সর্বক্ষণ যেন বিদ্যুৎ এর উপর বসে আছে । বলল, আজ রাতের ভেতরেই কোন এক কবির পঠিত কোন একটি কবিতা নিয়ে লিখে দিতে হবে। হাসতে হাসতে বললুম ঠিক আছে, লিখে দেবো। কিন্তু কাকে নিয়ে লিখি, কোন কবিতা নিয়ে লিখি ? আমার কবিতা পড়া তো অনেকটা শ্বাস- প্রশ্বাস নেওয়ার মতো । অনেক সময় নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে ব্যাপারটা বুঝে নিতে হয়। কবিতা পড়া ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম। কখনোয় খেয়াল আসেনি, যে কোন বিশেষ কবির কোনও একটি কবিতা নিয়ে লিখতে হবে।কবিতা পড়লেই সে তো আমার প্রানের সাথে আত্মার সাথে কিরকম জড়িয়ে -মড়িয়ে যায় । তাকে টেনে বের করে আনার মতো পরিস্থিতি কোনদিন ঘটে নি । অতএব মুস্কিলে পড়লাম খুব ।
ফোনটা যখন এসেছিলরতখন আমার হাতে যে লিটিল ম্যাগাজিনটা ছিল তাতে কবি অরুনকুমার চট্টোপাধ্যায় এর তিনটি কবিতা ছিল। মনে মনে ভাবলুম দাঁড়াও, দেখাচ্ছি । কবির কাব্য গ্রন্থ "সাঁঝ বিহানের" থেকে একটি কবিতা ~
হঁ মা কাঁদিস কেনে
অরুনকুমার চট্টোপাধ্যায়
হঁ মা কাঁদিস কেনে
আমার পারাই দুখী বটিস...
তাথেই...নাকি...
তোর বুক ফাইঢ়ে তেল জল
কয়লা পাথর আর সকলি
উঠাইঁ লিছে...তাথেই...নাকি...
ইয়াতেও তুমার দয়ার শেষ নাই
ফসল দিছ ধান দিছ
ফুল দিছ ফল দিছ...
তাথেও উয়ারা টাঙ্গি শানাছে কেনে গো মা...
হঁ বুঝলুম... ইয়াতেই তোর চোখে জল...
কবিতাটি পড়তেই আমার আনন্দ ও কষ্ট যুগপৎ হু হু করে বেড়ে গেলো । এতো আমার ভাষা । আমার প্রানের আরাম। মানভুমের ভাষা । কবি তো বেঁচে থাকেন কবিতার মধ্যে, কবিতার ভাষার ভেতরে । হঠাৎ করেই অন্তরের সুদুরতম কোন থেকে বেড়িয়ে এলো "হঁ মা কাঁদিস কেনে"।
এবং কবিতাটি পড়তে পড়তে ক্রমশ নিজের ভিতর ঢুকে যাওয়া ছাড়া আমার আর যেন কিছুই করার ছিল না।
ছোটনাগপুর মালভূমির পায়ের তলায় আমার জন্ম। বেড়ে ওঠা, দাপিয়ে বেড়ানো । এই মাটির নীচে বিশাল খনিজ ভাণ্ডার। মাকড়সার জালের মতো মাটির নীচে ছড়িয়ে আছে গাঢ় অন্ধকার সুড়ঙ্গ । তার উপরের জমিতে কোনোদিন গড়ে ওঠা না বসত, গড়ে ওঠে না বিশাল বাড়ি। ঐ সব জমিতে জ্বল জ্বল করে সবুজ চারাগাছ, সোনালি ফসল ।
কালো সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে,কালো কালো মানুষেরা দুই চোখে চাঁদ আর সূর্য নিয়ে উঠে আসে উপরে, মাটিতে । সারা শরীরে জল ঢেলে পরিষ্কার হয় ,শুচি হয় । হয় পবিত্র। তারপর ক্ষেতে ফলানো ধান আর সবজির শক্তি শরীরে ধারণ করে বেঁচে-বর্তে থাকে।
অথচ এই সুখ ও শান্তির আলপনা মুছে দিয়ে এখানকার বাতাসে বাতসে চিৎকার করে বারুদের গন্ধ। বুলেটের ঝলকানি আর বোমার আগুনে আলোয় প্রতিটি নিস্পাপ চোখ আঁতকে আঁতকে ওঠে।
এই অঞ্চলের প্রতিটি মায়ের চোখ আর জলের যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে রেখে গেছে কেউ। এবং এভাবেই যেন এক অমোঘ উচ্চারণ হয়ে ওঠে কবিতার শেষ পংক্তি "হঁ বুঝলুম... ইয়াতেই তোর চোখে জল..."।
ধীরে ধীরে আমার প্রানের সাথে, আত্মার সাথে মিশে যেতে থাকেন কবি অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়। ২৯ শে এপ্রিল ২০১২ সালে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও ,আমাকে বা আমার মতো মানুষদের তিনি যেন কিছুতেই ছেড়ে যেতে পারেন না।
ক্ষেপচুরিয়াসের সম্পাদক সেদিন হঠাৎ ফোন করল। সম্পাদককে চিনি ব্যাক্তিগত ভাবে। সর্বক্ষণ যেন বিদ্যুৎ এর উপর বসে আছে । বলল, আজ রাতের ভেতরেই কোন এক কবির পঠিত কোন একটি কবিতা নিয়ে লিখে দিতে হবে। হাসতে হাসতে বললুম ঠিক আছে, লিখে দেবো। কিন্তু কাকে নিয়ে লিখি, কোন কবিতা নিয়ে লিখি ? আমার কবিতা পড়া তো অনেকটা শ্বাস- প্রশ্বাস নেওয়ার মতো । অনেক সময় নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে ব্যাপারটা বুঝে নিতে হয়। কবিতা পড়া ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম। কখনোয় খেয়াল আসেনি, যে কোন বিশেষ কবির কোনও একটি কবিতা নিয়ে লিখতে হবে।কবিতা পড়লেই সে তো আমার প্রানের সাথে আত্মার সাথে কিরকম জড়িয়ে -মড়িয়ে যায় । তাকে টেনে বের করে আনার মতো পরিস্থিতি কোনদিন ঘটে নি । অতএব মুস্কিলে পড়লাম খুব ।
ফোনটা যখন এসেছিলরতখন আমার হাতে যে লিটিল ম্যাগাজিনটা ছিল তাতে কবি অরুনকুমার চট্টোপাধ্যায় এর তিনটি কবিতা ছিল। মনে মনে ভাবলুম দাঁড়াও, দেখাচ্ছি । কবির কাব্য গ্রন্থ "সাঁঝ বিহানের" থেকে একটি কবিতা ~
হঁ মা কাঁদিস কেনে
অরুনকুমার চট্টোপাধ্যায়
হঁ মা কাঁদিস কেনে
আমার পারাই দুখী বটিস...
তাথেই...নাকি...
তোর বুক ফাইঢ়ে তেল জল
কয়লা পাথর আর সকলি
উঠাইঁ লিছে...তাথেই...নাকি...
ইয়াতেও তুমার দয়ার শেষ নাই
ফসল দিছ ধান দিছ
ফুল দিছ ফল দিছ...
তাথেও উয়ারা টাঙ্গি শানাছে কেনে গো মা...
হঁ বুঝলুম... ইয়াতেই তোর চোখে জল...
কবিতাটি পড়তেই আমার আনন্দ ও কষ্ট যুগপৎ হু হু করে বেড়ে গেলো । এতো আমার ভাষা । আমার প্রানের আরাম। মানভুমের ভাষা । কবি তো বেঁচে থাকেন কবিতার মধ্যে, কবিতার ভাষার ভেতরে । হঠাৎ করেই অন্তরের সুদুরতম কোন থেকে বেড়িয়ে এলো "হঁ মা কাঁদিস কেনে"।
এবং কবিতাটি পড়তে পড়তে ক্রমশ নিজের ভিতর ঢুকে যাওয়া ছাড়া আমার আর যেন কিছুই করার ছিল না।
ছোটনাগপুর মালভূমির পায়ের তলায় আমার জন্ম। বেড়ে ওঠা, দাপিয়ে বেড়ানো । এই মাটির নীচে বিশাল খনিজ ভাণ্ডার। মাকড়সার জালের মতো মাটির নীচে ছড়িয়ে আছে গাঢ় অন্ধকার সুড়ঙ্গ । তার উপরের জমিতে কোনোদিন গড়ে ওঠা না বসত, গড়ে ওঠে না বিশাল বাড়ি। ঐ সব জমিতে জ্বল জ্বল করে সবুজ চারাগাছ, সোনালি ফসল ।
কালো সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে,কালো কালো মানুষেরা দুই চোখে চাঁদ আর সূর্য নিয়ে উঠে আসে উপরে, মাটিতে । সারা শরীরে জল ঢেলে পরিষ্কার হয় ,শুচি হয় । হয় পবিত্র। তারপর ক্ষেতে ফলানো ধান আর সবজির শক্তি শরীরে ধারণ করে বেঁচে-বর্তে থাকে।
অথচ এই সুখ ও শান্তির আলপনা মুছে দিয়ে এখানকার বাতাসে বাতসে চিৎকার করে বারুদের গন্ধ। বুলেটের ঝলকানি আর বোমার আগুনে আলোয় প্রতিটি নিস্পাপ চোখ আঁতকে আঁতকে ওঠে।
এই অঞ্চলের প্রতিটি মায়ের চোখ আর জলের যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে রেখে গেছে কেউ। এবং এভাবেই যেন এক অমোঘ উচ্চারণ হয়ে ওঠে কবিতার শেষ পংক্তি "হঁ বুঝলুম... ইয়াতেই তোর চোখে জল..."।
ধীরে ধীরে আমার প্রানের সাথে, আত্মার সাথে মিশে যেতে থাকেন কবি অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়। ২৯ শে এপ্রিল ২০১২ সালে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও ,আমাকে বা আমার মতো মানুষদের তিনি যেন কিছুতেই ছেড়ে যেতে পারেন না।
1 comments:
"সম্পাদককে চিনি ব্যাক্তিগত ভাবে। সর্বক্ষণ যেন বিদ্যুৎ এর উপর বসে আছে ।"
-- এই বজ্জাত সম্পাদক আমিই । তোকে ধন্যবাদ দেবো না , শুধু ভালোবাসা এই কারনেই যে আমার পাশে তুই , প্রসেন, বাণীব্রত, জুবিন , পার্থ - যেভাবে থাকিস সেভাবেই যেন পাশে পাই আমৃত্যু ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন