মুক্তগদ্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মুক্তগদ্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মুক্তধারা - ইন্দ্রজিৎ মাজি



মুক্তধারা
ইন্দ্রজিৎ মাজি 

মুক্তধারা একটি সম্মিলিত মানবিক প্রচেষ্টার নামমুক্তধারা সেদিনই বোধহয় দানা বেঁধেছিল,যেদিন আমার শিক্ষা বিস্তারকে অর্থাভাব তরবারির মত বিভক্ত করেছিলমুক্তধারা চেষ্টা করে কুসংস্কার ও নৈরাজ্যের আঁধারে শিক্ষার ও সংস্কারের আলো জ্বালাতেপ্রত্যন্ত গ্রামে অর্থাভাবে,কুসংস্কারের প্রভাবে অনুষ্ঠিত হয় সাড়ম্বরে বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমআর্থিক দূরাবস্থায় জর্জরিত,কূসংস্কারাছন্ন বাধ্য পিতারা বলি দেয় সন্তান'দের,ছেল'দের বারো-চোদ্দ বছর বয়সেই পাঠানো হয় ভিনরাজ্যে কিংবা চায়ের দোকানে টাকা তৈরীর কল হিসেবে,তারফলে মাসে দু-পাঁচ হাজার টাকা বাড়ি ঢোকে সাথে সাথে ঝরে যায় শিক্ষা স্বপ্নের কুঁড়ি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা আর্থিক যন্ত্রনায় পীড়িত হয়ে এবং সামাজিক হায়না'দের ভয়ে ভীত হয়ে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায় বছর চোদ্দ পনেরোর সদ্য কিশোরীকে ছাতনাতলায় অপেক্ষারত ত্রিশ বত্রিশ বছরের পাত্রের সামনে ফল স্বরূপ পিতা কন্যাদায় থেকে মুক্তি পেলেন কিন্তু আগামীর আকাশে উল্কা হয়ে গেল মেয়েটি
মুক্তধারার লড়াই এই ঘৃণিত শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের প্রতিজড় বুদ্ধি সম্পন্ন,রোগাগ্রস্ত,দুঃস্থ ছাত্রছাত্রী'দের বই খাতা  দিয়ে,তাদের পাশে থেকে তাদের পথ পদর্শক হয়ে সাহায্য করেদুঃস্থদের অশিক্ষা,কুসংস্কার এবং ভয়ানক ব্যাধির দাবানল থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেশিক্ষা বিমুখ এবং সংস্কার বিমুখ মানুষকে মূলপথের আলোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে মুক্তধারামুক্তধারার নূন্যতম পরিকাঠামো নেই,নেই মান্যতা,নেই স্থির নির্ভরযোগ্য আর্থিক সহযোগীতা,নেই জনবলও,এককথায় মুক্তধারা নেই রাজ্যের একটি সামান্য অংশআমারা ধর্মের নামে হাজার হাজার প্রণামী দিই,শিব পূজার নামে নর্দমাকে বানিয়ে ফেলি অপচয়ের দুধগঙ্গা,অকারণ বিলাস যাপনে উড়িয়ে দিই খরচার সাদা পায়রা;অথচ আমাদের চারপাশে রোজ ভিড় বাড়ে অশিক্ষিত দরিদ্র'দের,সমাজের একাংশকে গ্রাস করতে থাকে অপুষ্টি ও রোগের দাবানলআমরা যদি একটু মানবিক হয়ে উঠি, যদি সবাই মুক্তধারার প্রচেষ্টায় মিলিয়ে দেই আমাদের একটু সামান্য চেষ্টা তবে হয়ত শত মলিন মুখে ফুটবে হাসি,শতছিন্ন বসনে পড়বে একটা তাপ্পি,শিক্ষা ও সুস্থতার অমৃত বারি বর্ষণে সিক্ত ভ্রুণ অঙ্কুরিত হয়ে উঠবে,আঁধারের মানুষ খুঁজে পাবে আলোর সন্ধান

 মুক্তধারা একটি সঠিক মানবিক পদক্ষেপআসুন না আমরা সবাই সামিল হয়ে হাঁটি মুক্তধারার সাথে

রবিবার, ২ মার্চ, ২০১৪

মুক্তগদ্য – সায়ন্তন সাহা



এক যে আছে ছোটবেলা...



দুপুরের হলুদ পাখি বসেছিল গোধূলির অপেক্ষায়। প্রাক্‌বসন্তের আমপাতার মুকুলে কেমন মন ভাল করা গন্ধ। রেললাইনের ওপারের হাওয়ায় সারাদুপুর দুলছিল কলাবতী ফুল। জল ট্যাঙ্কের ঐদিকে অনেক ঘুড়ি কাটা খেয়ে পড়ে, মাম্পিদি কেন ওই দিকে যায়? মা বলেছে ওই দিকে না যেতে...



আজ বিকেলে মাঠে যাবার আগে খুব আনন্দ...আজ বিকেলে মাসি আসবে আর আমাকে পড়তে বসতে হবে না...রাতে বড় মামার কাছে শুতে পারি,মামা একটা ভূতের গল্প বলবে বলেছ...পরশু দুপুরে লুকিয়ে বাবার ম্যাগাজিন পড়েছি উপন্যাসটার নাম শঙ্খিনী তার বেশী জানি না...চৈত্রমাসে আমাদের বাড়ির আকাশটা মসৃণ আর সুন্দর হয়ে যায়...সামনে ফুটবলের সময়,সাঁতার কাটার সময়...পাগলা বাপি মারা গেল,ওর মা খুব কেঁদেছিল...আমি আমার মাকে শক্ত করে দাঁড়িয়ে ছিলাম...ক’দিন বাদে মামনি-দি’র বিয়ে হয়ে যাবে...ছোটবেলা মানে আমি আর একটা মেয়ে...থ্যাবড়ানো কাজল,বেগুনী সাইকেল...আর ভয়ঙ্কর জেদ...

মুক্তগদ্য – তন্ময় ভট্টাচার্য



মান্যবরেষু



আমি মেঘ দেখলে ওরা দ্যাখে সিনেমার পোস্টার,আমি পোস্টার দেখলে ওরা দাঁড়ায় পেচ্ছাপ করতে। সেই ছড়ছড়িয়ে ভিজে যাওয়ার মধ্যেও যদি বৃষ্টির গন্ধ খুঁজে পাই,ওরা আমায় ক্যুরিয়ার করে দেয় রাঁচিতে। সেখানেও পাতার পর পাতা ভরাচ্ছি তো ওরা কেটে কেটে পাতা ঠুসছে ভেতরে। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠতেই আমিও মন্দিরের সামনে গিয়ে পেচ্ছাপ করে দিলাম আর ভাবলাম বিশাল কিছু একটা করছি,পুরুত ডেকে বললো ‘বাইরে কেন,ভেতরে এসো’। লজ্জায় পালিয়ে এলাম কলকাতার ফুটপাথে যেখানে ল্যাংটো ছেলেপুলে দেখে আমি কতো ভালো আছি চিন্তা করছি ঠিক তখনই একটা মার্সিডিজ সারা গায়ে কাদা ছিটিয়ে চলে গেলো আর আমি দৌড়লাম জলের দিকে। সবে উবু হয়ে বসেছি ওমনি একটা কুকুর মারাদোনার স্টাইলে ছ’জনকে কাটিয়ে আমার পাছায় মারলো এক লাথি আর আমি হুমড়ি খেয়ে পড়লাম লালদিঘিতে। উঠেই দেখি মুখ্যমন্ত্রী আমায় ডাকছেন এবং কাছে যেতেই সপাটে চড় মেরে বুঝিয়ে দিলেন যে কুকুরের কাছে লাথি খাই মানে আমি বিরোধীপক্ষ। কুঁইকুঁই করতে করতে একটা কবিতা লিখে ফেললাম আর পোস্ট করে দিলাম সেই জেলখানায় যেখানে সূর্যের আলোও ঢুকতে পারলে ধন্য হয়ে যায়



হাজারএক-টা কুকুর তখন হাততালি দিচ্ছে

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মুক্তগদ্য - সূর্য্যস্নাত বসু



















বাস ইত্যাদি
সূর্যস্নাত



বাসের জানলা দিয়ে অনেক ইত্যাদি লাফিয়ে পার হন । শেষবেলার সিগারেট থেকে থু থু, ভাঙা আসবাব, রেসের বেটন থেকে ঘড়ির ব্যাটারী, কিংবা হালফিলের কবিতার বইএর কিছু ছেঁড়া পৃষ্ঠা; এরা সর্বতভাবে কিছু না কিছু ইত্যাদিই বটে । এ ইত্যাদি মাঝেসাঝে পাশের পাড়ার নান্টুদার সাথে ডেটিং এ বেরোয় । আমি কিছুই বলিনা । মা জলখাবার আনার আগে টুক করে তাদের একটু সজাগ করে দিই । আর মার পা’দুটো যখন প্রায় ঘর অব্দি চলে এসে থেমে যায় পাপোশে, আমি আবার ওই ইত্যাদিকে যথাস্থানে রেখে দিই । স্কুলে পড়ার সময় থেকে বন্ধু সায়ন্তন আমায় হলুদ মলাটের ওই ইত্যাদি সাপ্লাই করত, আর ফিরে যাওয়ার আগে বলত; “নে জানলার সিটটা ছেড়ে দে;” আমিও তখনকার মত বাসের আলোয় মাখা ইত্যাদিগুলোকে বাইরে বার করে উঠে দাঁড়াতাম, কাজেই ইত্যাদির আরেক নাম যে অন্ধকার; তা আমার স্কুল লেভেল থেকেই জানা ।

অবশ্য এখন জানলার ধারে বসেই বাড়ি ফিরছি । ভিড় বাস । রোগা কণ্ডাক্টর । মোটা ড্রাইভার । ঘোলা চোখ খালাসি, ভোলা চোখ সহযাত্রী । কাকিমার বোগল, লালচে লোম, কাকুর কালো ঘেটি; হাতে একমাত্র বেটি আর বাদবাকি যত আছে; মুখে খিস্তিখাস্তা; একেবারে কাচা যাকে বলে ; এই বুঝি কামড়ে দিল; এই বুঝি মশাল জ্বালালো; খুরপি বার করলো; তারপর সজোরে চালালো পেটে এই বুঝি । এছাড়া কনুই মারা থেকে আরও যত যত ইয়ে ইসে মারা যায় সব চলছে । সারাদিনের ক্লান্তি, ঘাম গন্ধ দুর্গন্ধ, এরাও যে ইত্যাদি এবং এদের পারাপার করার মধ্যেও শালা ঘ্যাটাং ঘ্যাটাং করে চলা, চুলের স্টপেজ, তার মধ্যে দুএকটা পেট্রোল পাম্পসহ মানে একাকার যা বলি; কন্ডাক্টর বারবার কথায় কথায় থেকে থেকে আস্তে লেডিজ; কোলে বাচ্চা, এ এ এ আআইইয়োওও করে মানে কি সব বলছে ; এটাও ইত্যাদি, অর্থাৎ সব না বলা কথারাও যে শুধু ইত্যাদি , তা নয় । এরপর কেউ হুড়মুড়িয়ে পড়ল, কারো হাতে কি কারো পায়ে কি কারো ওখানে কি কারো মুখে কি কারো বুকে হেব্বি লাগল; ওরে বাবা রে বাবা গেলাম গো করে অজস্র ইত্যাদি চেঁচিয়ে ঊঠল; পিছনে প্রতিবন্ধীর সিট আর লেডিজ সিট আর সিনিয়ার সিটিজেন উফফ মাগো মাগো ইত্যাদির আবার ইমারজেন্সি এক্সিট ; অথচ ইত্যাদি এন্ট্রি নেই, তারপর সারাদিনের খবরাখবর, তেলের দাম বৃদ্ধি থেকে ইষ্টবেঙ্গল কি মোহনবাগান; সে যাই বলো চম্পক লোয়ার ইন্ট্যালেকচুয়ালিটি আর কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে ফের জেগে যাওয়া, আপনার ওটা আমার ওখানে লেগেছে, জুতোয় গোবর মাথায় ঘাড়ে আলু নিয়ে হেলে দুলে বসে আছেন তারাই যারা ইত্যাদি । এই আকালে হায় বাসদেবতা কেন যে ইত্যাদি করে বাড়ি ফিরছি, অটো বা ট্যাক্সি বা হেঁটে; হায় রে; যদিও একদল যুবক-যুবতী পেছন সিটে তাক করে গান শুরু করছে; মাটির গান, বাতাসের গান, আকাশের গান, স্নানের গান, পাইখানার গান, পাখির গান, ভেঁপুর গান, ফুলের গান, মেহেন্দির গান, পুজোর গান, আজানের গান ; কিন্তু এত কছু সত্ত্বেও কেউ যদি একবার ইত্যাদির গানখানিও গেয়ে দিতেন; আমি নিশ্চিত, বাসযাত্রী সকলেই একে অপরকে আর কিছু নাই করুক, অন্তত চুম্বনটুকু করতেনই ।

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মুক্তগদ্য - সাম্য রাইয়ান

কবিতা নিয়ে মুক্তগদ্য
সাম্য রাইয়ান



হাঁটতে হাঁটতে পথ গ্যাছে ক্লান্ত হয়ে


আর এইভাবে জঙধরা সুখ নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। আমাদের সুখভর্তি মরিচা; আর দুঃখগুলো ইস্পাতের মতো বেগময়। সে যাই হোক, আমরা বেঁচে আছি, এটাই বড়ো কথা। জঙধরা সুখ নিয়ে─ ইস্পাতগতির দুঃখ নিয়ে─ আর যেটা মূল বিষয়─ কিংবা বলতে পারেন আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র লক্ষ্য/উদ্দেশ্য/সার্থকতা/বৈশিষ্ট্য/তৃপ্তি/আকাক্সক্ষা/চাওয়া-পাওয়া─ যে বিষয়টা অত্যন্ত মধ্যবৃত্তিয়─ পিচ্ছিল সুবিধাবাদ নিয়ে আমরা নিজে নিজেই বেশ তৃপ্তিবোধ করি।

এর অর্থ দাঁড়ায়─ আমরা বেঁচে আছি। অনেকেই মরে গ্যাছে─ আমার অনেক বন্ধু, অনেক আতœীয়, অনেক চেনা-জানা/অচেনা-অজানা; অনেকেই মরে গ্যাছে। আমাদের কাছাকাছি থেকেও অনেকে মরে গ্যাছে। আমরা বেঁচে আছি।

উদিত দুঃখের দেশ, হে কবিতা, হে দুধভাত তুমি ফিরে এসো!
মানুষের লোকালয়ে লালিত লোভনকান্তি কবিদের মতো
তুমি বেঁচে থাকো।
তুমি ফের ঘুরে ঘুরে ডাকো সুসময়!
(উদিত দুঃখের দেশ ॥ আবুল হাসান)


২.

তার আছে প্রাণখোলা জীবনবোধের গান, যা সে হাঁটতে হাঁটতে গায়। এটা তার নিত্যদিনের অভ্যেস। রাত নেমে এলে যখন চাঁদের দ্যাখা পাওয়া যায়, তখন তাকে ঘর থেকে ডেকে আনে চাঁদ; আকাশ থেকে ডাক দ্যায়; ওপরে উঠে আসতে বলে কিংবা নিজেই নেমে আসতে চায়। ডাকে আয় আয়। সে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়, আঁতকে ওঠে। সকালে সূর্যকে দেখে তার চাঁদের কথা মনে পড়ে যায়। চাঁ দ, এর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, যার জন্য তার এতো খ্যাতি-বিখ্যাতি, তা হল রাত না হলে তার দ্যাখা পাওয়া যায় না।

এইগুলো শুধু চলতে চলতে দেখা
যবে আমি একা,
যদি কেউ বলে চাঁদ নিয়ে তো হয়েছে
কথা ঢের, তোমার ভাবনা তুমি-ই
করো একা একা,
প্রয়োজন নেই পুরাতন তর্কের!

কালকের চাঁদ আজকে উঠেছে আবার
চলতি পথে দেখছি যে বারবার
দালানগুলো সবার চেয়ে উঁচু
তারি ফাঁকে একটুকরো আকাশ,
বিষ্ময় যদি দালানচূড়ায় ওঠে
থাকতেই পারে চাঁদ দেখার অবকাশ!
(চাঁদ দেখার অবকাশ ॥ আহমেদ নকীব)


৩.

প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে হঠাৎ রথি-মহারথিরা গাছ থেকে নেমে এলেন। এবং মাটিতে পা দিয়ে পরমূহুর্তেই বুঝতে পারলেন মা টি গ র ম। লাস্টবেঞ্চির ছাত্ররা ওতেই শস্যৎপাদনের লাগি অমানুষিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর ক্লাসের সেইসব উজ্জল সন্তানেরা, বৃদ্ধার স্তনের মতো; ওরাও ব্যস্ত, মাটিকে দিচ্ছে বরফের স্বাদ; কখনো ঠুকছে মাধা নরম গদিতে; কখনো দিচ্ছে গাল প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, লাস্টবেঞ্চির।

কার পক্ষে যাবো? কোন দিকে যাবো? আমাকে দিওনা গালÑ আমি নিরুপায়
ক্লাশভর্তি উজ্জল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেপ সমস্ত কাগজ!
আমি বাজে ছেলে, আমি লাস্টবেঞ্চি, আমি পারবো না!
ক্ষমা করবেন বৃক্ষ, আপনার শাখায় আমি সত্যপাখি বসাতে পারবো না!
বানান ভীষণ ভুল হবে আর প্র“ফ সংশোধন করা যেহেতু শিখিনি
ভাষায় গলদ: আমি কি সাহসে লিখবো তবে সত্য পাখি সচ্চরিত্র ফুল?

আমার হবে না আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ আকাঠ!
সচ্চরিত্র ফুল আমি যত বাগানের মোড়ে লিখতে যাই, দেখি
আমার কলম খুলে পড়ে যায় বিষ পিঁপড়ে বিষের পুতুল।
(আমার হবে না আমি বুঝে গেছি ॥ আবুল হাসান)


৪.

মাঝরাতে জেগে যদি রাজাকারমন উসখুস করে মাফিয়া তোমার, ডেকে নিও কাছে, হৃদয়ের আলিঙ্গণে, মুখোশী নির্মূলকারীকে। সে দেবে মাথায় হাতবুলিয়ে পূণর্বারÑপূণর্বার।

দৃশ্যমান সকল কিছুই সত্য নয়, কখনো অদৃশ্যমান অনেক কিছুই সত্য প্রমাণিত হয়।

ঐ পারের সৌন্দর্যের কথা ভেবে যেতে ইচ্ছে হয়। পার তো জানে না, পৃথিবীময় পরের রয়েছে একই দৃশ্য; অন্তত আমার কাছে তাই-ই মনে হয়, ব্যতিক্রম নয়।

আমি
একজন রাজাকার
...৭১ টি পাঁপড়ি মেলা
একটি সকালকে বলাৎকার করেছিলাম
সকালের মর্মে লুকায়িত রাগ
সাক্ষ্য দিচ্ছে
আমি একজন রাজাকার

------------------------------------------

রাজা যায়
রাজা আসে...
আমি কেবলি আকার পাই
আবডালে রয়ে যাই রাজাকার
রাজা কার
জানে যূধিষ্ঠির
(আমি
একজন রাজাকার ॥ আরণ্যক টিটো)

আমি রাজাকার।
আমি রাজাকার ৭১ নং ডিপার্টমেন্ট
স্টোরের চিফ একাউন্টেন্ট বলছি।
রক্তে মাখা পুঁজি আর
কলুষিত বুক নিয়ে আগামিকাল
আমি হজ্বে যাবো;

-----------------------------------------

সত্যি বলছি
আমি পাল্টে গিয়ে
মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারের
খাতায় নিজের নামটা লেখাব।
(অপরিবর্তনীয় ॥ শুভ্র সরখেল)



৫.

অন্তরটা তার বাজি ওঠে থাকি থাকি। কোন প্রচেষ্টা লক্ষিত হয় না থামানোর, বরং কৃতজ্ঞদৃষ্টির আমরা যখন তার সামনে থাকি তখনি বরং অধিক মর্মরি ওঠে অন্তর তাহার। যেতে যেতে দিন, এক কুমারীর সাথে দ্যাখা হয় তার। পরস্পর দ্যাখা-শোনা-বাদ্য-মর্মও চলতে থাকে। যুবকের মর্মও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাইতে থাকে; কুমারীর অন্তরের বাজনাও কি এতদিন পর অনুভূত হইল না কি; যেভাবে কাঁপিয়া উঠিল কবি!..

দেখা হয়েছিল শুকনো গাছের সাথে
গাছেরা কেবলি ঝরায় তাদের পাতা
কথা হয়েছিল নগ্ননারীর সাথে
গাছেরা খাদ্য চেয়েছে পদক্ষেপে


ভোজনবিলাসী পুরুষ খেয়েছে পাতা
অগ্নিদ্রবণ, নির্বাপনের স্বাদÑ
আমাদের পিঠে কালো মোহরের ছাপ
আমাদের ঘরে ঘুনপোকাদের ঘর;
(আয়না ॥ শাহেদ শাফায়েত)


৬.

কলমের ঝনঝন শব্দে কাগজের ঘুম ভেঙে গেল। কাগজ জেগে বলল, আমার ঘুম ভাঙানোর অপরাধে তুমি অপরাধী, তা  জান? কলম বলল, আমি অপরাধী জন্মলগ্ন থেকে। এরপর কোত্থেকে দোয়াত বলে উঠল, ওর জন্মই হয়েছে অপরাধের মধ্য দিয়ে; আমি ওরে জন্ম হতে চিনি; প্রচুর অপরাধে অপরাধী ও। কাগজের ঝুড়ি হঠাৎ বলে উঠল, ওনার দন্ড হোক।

পিপাসার্ত বাতাসের হাতে এক গ্লাস পরিপাটি জল
বিশুষ্ক গলার নলে পতন খুশিতে দিশেহারা
জলের গভীরে সামুদ্রিক ঘুম, আনিত ঘুমের নুনচোখ এলাকায়
কখনোবা ফেটেছে তোমার পিপাসার ডিম

তালা খুলে খামের শরীর থেকে বেরিয়েছে চৌকোণ বাতাশ
উড়েছে তোমার লম্বা চুল-লম্বা ফুলÑ ব্যাপক কোমলে
পর্যটক খাম মৃত্যুমনি ফুটফুটে হস্তাক্ষর
একে অন্যের জড়িয়ে কাঁধÑ জলের তরল বিষ্ফোরণ
(পর্যটক খাম ॥ নাভিল মানদার)


৭.

একজন কবি আমাকে বলেছিলেন; সাম্য, সবকিছু বুঝে ফেলো না, তাহলে আর বাঁচতে ইচ্ছে হবে না; মন চাইবে আতœহত্যা করি।

এসে দেখি সকলই ভোজবাজি
ঘর নেই গেরস্থালি নেই
কেবলই মানুষ
একে অপরের দিকে আঙুল তুলে
জগৎ বোঝাচ্ছে
আমার দায় নেই অত
এত কিছু বুঝতেও আসিনি
এসেছিলাম ঘরের সন্ধানে
এসে দেখি
মানুষেরা এখনো সেভাবে
ঘরটর বাঁধা শেখেনি
(লোকালয়ে ॥ সুহৃদ শহীদুল্লাহ)

কৃতজ্ঞতা: শিলাজিৎ, তানভীর তজিব, রবিন সরকার, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য


সাম্য রাইয়ান

অট্টহাসি কল্পনা করিয়া মুচকিহাসিদেনেওয়ালা যুবক এবং ভালোবাসাবাসির নামে পোদঘষাঘষিতে অভ্যস্ত কতক সংস্কৃতিজীবীর খ্যাতির চূড়ায় আরোহনের গল্প

তা র কো ন না ম নে ই
তা র কো ন দে শ নে ই

সিগ্রেটের আগুনে তার জীবন পুড়ে যায়। গন্ধে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারি না। এইবার, খুব শক্ত করে কিছু রিয়েলিস্টিক কথা/কথারমতো বেঁধে নিয়েছি মনের ভেতর, উদগীরনের উদ্দেশ্যে, ভেবে; সাতরঙা চায়ের মতো চারমিনারের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে─ যুবক-এর সবাকস্পর্ধ আগমন যাদের প্রস্ফুটিত করে তোলে, নতুন করে আশা জাগায় বাকযুদ্ধে, যুবক তাদের প্রতি ছুঁড়ে দিয়েছিল তীব্র বাক্যবান। ধুরশালা / কিছুই হইল না / এ্যাতো খায়াও নেশা হইল না...। ভবে, চিন্তাগত ঐক্য ছাড়া / কেউ কারো নয় / যা দ্যাখো সব ভন্ডামি কেবল / অভিনয় অভিনয়... এইসব─ সবই দ্যাখে যুবক; আর মুচকি হাসে। আমাকে তোমার মতো লিখতে বলো না, বরং আমাকে পাঠের যোগ্যতা অর্জন করো।

ভাবে, দম ফাটিয়ে হাসতে পারলে ভালো লাগতো কিন্তু মুচকিহাসিটাই এক্ষেত্রে কাজের, অনেক অর্থবহ। যুবকের বিপরীত, সংস্কৃতিজীবী এবঙ অন্যান্যগণ ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয় আর প্রকাশ্য জাতির কল্যাণ কামনা করে, প্রার্থনার মতো। যুবক দ্যাখে─ দ্যাখে আর হাসে─ দ্যাখে আর হাসে। পাশ দিয়ে বয়ে যায় বদহাওয়া। বয়ে যায় কতোকিছু! যুবক দ্যাখে আর মজে─ জগতলীলায়─ আনন্দনেয়।

ইতিহাস হ’য়ে যাওয়া ইতিহাস পাঠে ছাত্ররা ব্যাপক বিরক্ত।
মরে-সরে যাওয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
ব্যবসানীতিÑকর্মপদ্ধতিÑকর্তা’নাম
সবই ছাত্রদের মুখস্থ করা
বাধ্যতামূলক। তারা তা করে এবং
লেখেও। সুঁই হয়ে আসা
এবং ফলা হয়ে যাওয়ার নীতিও তাদের জানা (মুখস্থ)। তবুও বর্তমানইস্টইন্ডিয়াকোম্পানির কথা
কেউ বলেনা;
ছাত্ররাও বোঝেনা। ইতিহাসের
ঐতিহাসিক শিক্ষা হ’য়ে
দাঁত কেলিয়ে─ঘাড় বেকিয়ে মুচকি হাসে─
ইতিহাসের বড় শিক্ষা:
ই তি হা স থে কে কে উ শি ক্ষা নে য় না

আমাকে তোমার মতো লিখতে বলো না, বরং আমাকে পাঠের যোগ্যতা অর্জন করো।

যুবকের উর্ধ্বতন প্রজন্মের গুটিকতক সংস্কৃতিজীবীর হঠাৎ সম্মানিত হবার─ গুরুত্বপূর্ণ হবার খায়েশ জাগে। চলতে থাকে পথাবিষ্কারের কাজ। এমত অবস্থায় এক সংস্কৃতিজীবীর [কবি+বক্তা+সাংবাদিক+ উপস্থাপক+সমালোচক+জাতিরভবিষ্যৎ...] উর্বর মস্তিষ্কে নাজেল হয় এক অভিনব ডিজিটাল আইডিয়া─ নিজেরা পদক নেয়ার─ সম্মনিত হবার─ খ্যাত হবার─ ; আইসো জাতিয় এক সংস্কৃতিনেতাক পুরুষ্ক্যার দেই, তাইও টাকা দিবে, প্রচার হইবে; সবাই ইনভেস্ট করবে─ নেতায় আশীর্বাদ (বিজ্ঞাপন) দিবে─ চাউলের দোকান─ডাইলের দোকান বিজ্ঞাপন দিবে─ ইনকামও হইবে─ আÑইÑসো... বলে সর্বসম্মতিক্রমে বৈঠকিসিদ্ধান্ত হিসেবে এই যুগোপযোগি ডিজিটাল আইডিয়া বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ে

বিনোদন→ঝঁনলবপঃ/ঙনলবপঃ+%ঝবী
% ঝবী ↑ → বিনোদন ↑
বিনোদন ↑ → গিলবে ↑
গিলবে ↑ → এউচ ↑

এউচ-র জন্য পোশাক থাকলেই কি না থাকলেই কি? → সাহেবদের ট্রেতে চা দেয়া যায়→আপেল দেয়া যায়→জিন দেয়া যায়→আস্ত শরীর তুলে দিলে মন্দ কি? শরীরের বিনিময়ে বেড়ে যাবে চ/র, আর চ/র এর বিনিময়ে বেড়ে যাবে এউচ। অর্থনীতি-বিদদের অত কঠিন তত্ত্ব নিয়ে কবে গধপৎড় ঊপড়হড়সু উবাবষড়ঢ়ব করবে তার জন্য অপেক্ষা না করে একটা ঘঁফব রহফঁংঃৎু করে ফেলেন, দেখবেন আদমজী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো শোক থাকবে না।

আমাকে তোমার মতো লিখতে বলো না, বরং আমাকে পাঠের যোগ্যতা অর্জন করো।

শুরু হয় মহাকর্মযজ্ঞ। ব্যাপকভাবে চলতে থাকে প্রচার─প্রপাগান্ডা ...আপনারা আমন্ত্রিত। আমন্ত্রণে (এখানে খ্যাতিগ্রহনেচ্ছুক ঐ সংস্কৃতিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে টাকাঅলা/মাফিয়ার নাম পড়তে হবে) ... অনুষ্ঠান উদ্যাপন পরিষদ।

ঐ যজ্ঞক্ষণে আলোঝলমলে উৎসবস্থলে শুরু হয় যজ্ঞ। চতুর্দিকে টাকার গন্ধ আর বেলিফুলের সৌরভ। একে একে বক্তৃতা করেন অত্র এলাকার খ্যাতিগ্রহনলক্ষ্যে ইনভেস্টারমহোদয়গণ। পুরষ্কার গ্রহন করেন মহান ঐ সংস্কৃতিজীবীনেতা, যার অবদান এই বাঙলার বর্তমান সরকার ভুলতেই পারে না [এই বাঙলায়─ এই মহান সংস্কৃতিজীবীদের অবদান─চেহারা─বাসস্থল এবং সেইসাথে এই রাজপথেরকর্মী─ কলমসৈনিক─ ‘মুক্তিযুদ্ধেরপক্ষের’ মহানায়কগণও সরকার পরিবর্তনের সাথেসাথে পরিবর্তিত হন কিÑনা..!]; পুরষ্কারের ক্রেস্ট বগলে চেপে তিনিও বিবৃত করেন এজাতির উদ্দেশে, পবিত্রবাণী/জ্ঞানেরকথা! দুলুমিয়ারা শোনে আর অন্ডকোষ চুলকায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আর পুঁজিপতিদের পতি বারাক ওবামার যাদুকরি সুকৌশল সকল ল্যাবরাÑট্যাবরা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে ড্রইংরুমে বনসাই বানাইয়া সুবক্তা সাজিয়া শান্তি পুরষ্কারের নবেলের লকেট নিজেই নিজেকে পড়াইয়া আহা! কি চমৎকার দেখা গেল ... ধরনের সঙ্গীতের মূর্ছনায় জলনৃত্য বিশ্ব দেখিতে বাধ্য হইয়া পরিয়াছে।

আর যুবক তখনও মুচকি হেসেই চলেছে যদিচ মনে ভাবে, দম ফাটিয়ে হাসতে পারলে ভাল লাগত কিন্তু মুচকিহাসিটাই এক্ষেত্রে অর্থবহ, অনেক কাজের।

আর এরইমধ্যে যুবক আমাদের কণিষ্ঠা দেখিয়ে মূত্রাগারে ঢোকে, নানান রঙের─আকৃতির ঐ মুখগুলো মনে করতে থাকে আর পরম শান্তিতে পেচ্ছাব করতে থাকে...

উৎসর্গ ও ঋণস্বীকার:
শব্দশিল্পি কামরুল হুদা পথিক

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪

মুক্ত গদ্য - সোহম দাশগুপ্ত

মুক্ত গদ্য
সোহম দাশগুপ্ত



বনে যদি ফুটলো কুসুম

গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ত্রিপুরা পৌঁছলাম। সারা রাজ্যটাই প্রায় নিশ্ছিদ্র সবুজ। আকাশ ছোঁয়া সেগুনের জঙ্গলের মাঝ দিয়ে আমাদের বাস ছুটছে। ঐতিহাসিক রাজপ্রাসাদ, মন্দির, পাহাড়ের গায়ে পাথরে খোদাই করা উনোকোটি দেবতা মূর্তি দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম জম্পুই পাহাড়ে। প্ল্যান ছিল, ঘন জঙ্গলে ঢাকা নির্জন জম্পুইএর দৃশ্য দেখার সাথে সাথে সেখানকার পাখিদের ছবি তুলবো। কিন্তু হায় কপাল, দুদিন বহু খোঁজাখুজি করে দুচারটে চড়াই আর ফিঙে ছাড়া আর কোনো পাখি, এমনকি কাকেরও টিকি পেলাম না! স্থানীয় এক দোকানদারকে শুধোতে জানালেন, "আর কইয়েন না। আদিবাসীরা সব পাখি-পুখি মাইরা খাইয়া ফ্যালাইসে"; মনে পড়ে গেলো আমাদের কলেজ হস্টেলে যে ক'জন মিজো ছেলে ছিলো তারা, প্রায় রোববার, গুলতি দিয়ে কাক মেরে রান্না করে খেতো। জম্পুইয়ের পূবদিকে হাত বাড়ালেই মিজোরাম, তাই এপারেও সেই রসনার ছোঁয়া লাগতেই পারে। এমনই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল, পরের গন্তব্য ত্রিপুরার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কুমিল্লা বর্ডারে। আমার আত্মীয়দের অনেকেই কুমিল্লার, তারা কখনো কাক খেতো বলে তো শুনিনি। আশায় বুক বাঁধলাম, বাকি সফরে নিশ্চয় পাখির দেখা পাবো।


আবার বাসযাত্রা। আবার সেই সবুজের সমারোহ। এদিকটায় সেগুনের চেয়ে রাবার প্লান্টেশনই বেশী। মাইলের পড় মাইল রাবার বাগান, মাঝেমধ্যে লোকালয়ের উঠোন পেরিয়ে পৌঁছলাম ত্রিপুরার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে। পথে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে আমার একান্ত আবেদন জানিয়ে গন্তব্যে পৌঁছলাম। কিন্তু ভবি ভোলাবার নয়- নীরমহলের লেক, সিপাহীজলার স্যাঙ্কচুয়ারি চষে ফেলেও তেমন কোনো পাখির দেখা মিললোনা! এবার চায়ের দোকানে এক স্থানীয় মানুষের দ্বারস্থ হলাম।

-দাদা, আপনাদের অঞ্চলে পাখিটাখি চোখে পরেনা কেন?

-পরবো কি কৈরা? পাখি থাকলেতো...

-সে কি, এ তল্লাটেও পাখি নেই?

-আমিতো জম্মে দেখি নাই। শুনছি এককালে নাকি ছিল। আওনের পথে চাইরদিকে রাবার বাগান দ্যাখসেন?

-হ্যাঁ, তা তো দেখলাম, ছবিও তো তুললাম।

-পাখির ডাক শোনছেন?

-মনে পরেনা।

-হেইটাই তো কাল হইসে। ঐ রাবার গাছ লাগানের ঠ্যালায় সব পাখি দ্যাশ ছাড়সে।

-তাই নাকি! এ তথ্যটাতো জানা ছিলোনা!

-হ, তাই সরকার নাকি অখন রাবার গাছ লাগানের কাম বন্ধ রাখসে।


বাকি বেড়ানোটা জমজমাট চলছিলো। পরদিন আগরতলা ফিরে, চললাম উজ্জয়ন্ত প্যালাস দেখতে। এখন ত্রিপুরার রাজপ্রাসাদ ঝকঝকে স্টেট মিউজিয়াম। বিভিন্ন ঘরে ঘুড়তে ঘুড়তে পৌঁছলাম রবীন্দ্র কক্ষে। রবিঠাকুরের ছোঁয়া পেলেই বাঙ্গালীর মন উদাস হয়ে যায়। মনের কোনে পাখির দেখা না পাওয়ার আক্ষেপটা ছিলো বলেই হয়তো অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠলাম "বনে যদি ফুটল কুসুম, নেই কেন সেই পাখি নেই কেন..."; হঠাৎই মিউজিয়ামের এক কর্মী মিষ্টি হেঁসে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি বেজায় অপ্রস্তুত, এযাবৎ আমার গান শুনে কাউকে কখনো উৎসাহী হতে দেখিনি। ভদ্রলোক বললেন,

-এই গানটা রবীন্দ্রনাথ কোথায় লিখেছিলেন জানেন কি?

-না তো!

-এই ত্রিপুরাতেই, ১৯২৬ সালে।






জম্পুই পাহাড়

"বিসর্জন" এর সেই মন্দির


উজ্জয়ন্ত প্যালেস