বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

অনুবাদ প্রবন্ধ - অত্রি ভট্টাচার্য্য

এক মুসলিম যুবককে খোলা চিঠি
তারেক আলী, অনুবাদঃ অত্রি ভট্টাচার্য্য
তারিক আলী রচিত “Clashes of Fundamentalisms” (Verso, ২০০৩) গ্রন্থ থেকে  “Letter to an young Muslim”
প্রবন্ধের অনুবাদ করলেন অত্রি ভট্টাচার্য্য

প্রিয়বরেষু,

মনে আছে, ২০০১-এর নভেম্বরে সেই বিরাট যুদ্ধবিরোধী সমাবেশের পরে তুমি আমার সঙ্গে দেখা করেছিলে (যদ্দূর মনে পড়ছে, গ্লাসগো-য় ) এবং জানতে চেয়েছিলে আমি ধর্মবিশ্বাসী কিনা? যখন আমি বলেছিলাম, “না”, তখন তোমার বিস্মিত মুখ আমি ভুলিনি, বা ভুলিনি তোমার বন্ধুর মন্তব্য (‘আমাদের অভিভাবকেরা আপনার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন’), বা তীরের মত এসে বেঁধা তোমাদের গরম প্রশ্নগুলো ! এগুলি আমাকে খুব ভাবিয়েছে, এবং তোমার ও তোমার মত ইউরোপ-উত্তর আমেরিকার আরোও যারা এইধরনের প্রশ্ন করেছে তাদের কাছে এই আমার উত্তর।

যখন আমরা কথা বলি, আমি তোমাকে বলেছিলাম, ধর্মের বিরুদ্ধে আমার সমালোচনা এবং যারা একে রাজনৈতীকভাবে ব্যবহার করে, তা প্রকাশ্যে কূটনীতি প্রদর্শনের জন্যে না । অত্যাচারী ও শোষকেরা চিরকাল ধর্মকে স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্যে ব্যবহার করেছে। অবশ্য এইটুকুই সব নয়। পৃথিবীর সর্বত্রই প্রকৃত ধর্মবিশ্বাসী বহু মানুষ আছেন, যারা গরীবের পক্ষ নিয়ে লড়াই করে থাকেন, কিন্তু তারা সংগঠিত ধর্ম নিয়ে নিজেরাই দ্বন্দ্বে জড়িত।

কর্মী বা গ্রাম্য পুরোহিত যারা দমননীতির বিরোধীতা করেছিল, ক্যাথলিক চার্চ তাদের দোষী সাব্যস্ত করে। যেসব মুসলিম সামাজিক চরমপন্থার পক্ষে কথা বলেছিল, ইরানী আয়াতোল্লা-রা তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়। যদি আমি সত্যিই বিশ্বাস করতাম, এই চরমপন্থী ইসলাম মানবতার উত্তরণের পথ, তবে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করতেও দ্বিধা বোধ করতাম না, তার ফলাফল যাই হোক না কেন। আমি জানি তোমার অনেক বন্ধু “ওসামা” নামটি উচ্চারন করতে ভালোবাসেন এবং নয়-এগারো নিয়ে তারা খুব খুশী। এরা একাই নয়, এটা সারা পৃথিবীতেই হয়েছে এবং এর সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। আমি শুনেছি আর্জেন্টিনায় শিক্ষক ওসামার সমালোচনা করায় ছাত্ররা ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমি জানি এক রাশিয়ান যুবক একটি এক শব্দের মেল করেছিল তার বন্ধুদের, যাদের বাবা-মা –রা নিউইয়র্ক-এর বাইরে স্থায়ী – ‘অভিনন্দন’ – আর তারা জবাব দিয়েছিলঃ ‘ধন্যবাদ। এটা দারুণ হয়েছে।’ মনে আছে, আমরা কথা বলেছি, যে ফুটবল মাঠে গ্রীক জনতা দু মিনিট নীরবতা পালনের সরকারী নির্দেশ মানেনি, বদলে আমেরিকাবিরোধী গুঞ্জনে মুখর হয়েছিল।

কিন্তু এর কোনোটাই আলোচ্য ঘটনা সমর্থন করে না। দুঃখের বদলে এই যে আনন্দ, এর পেছনে কোন শক্তি নয়, বরং এক সাংঘাতিক দুর্বলতা রয়ে গিয়েছে। ইন্দোচীনের মানুষ আমেরিকার হাতে যা সহ্য করেছে, কোন ইসলাম দেশ তা করেনি। সেখানে ১৫ বছর টানা বোম্বিং হয়েছে আর অজস্র মানুষ নিহত হয়েছে। তারা কি আমেরিকায় পাল্টা বোম ফেলার কথা একবারও ভেবেছে? কিউবাবাসীরা, চিলিয় বা ব্রাজিলিয়-রাও ভাবেনি। শেষ দুটি দেশ নিজেদের সীমানায় আমেরিকার পৃষ্ঠপোষিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়েছে এবং শেষপর্যন্ত জিতেছে।

আজকাল, মানুষ নিজেকে বড় অসহায় ভাবে। তাই, আমেরিকার উপর আঘাত আসায় তারা উৎসব করছে। এসব করে কি হবে, এর ফল কি হবে, তাতে কার লাভ - সেসব তারা বুঝতেও চায় না। তাদের প্রতিক্রিয়াও, এই ঘটনাটির মতোই, পুরোপুরি প্রতীকি। আমার মতে ওসামা আর তার দলবলের রাজনৈতীক পথ শেষ হয়ে গেছে। নয়-এগারো এক বিরাট আতসবাজির শো বই কিছু নয়। আমেরিকা, পাল্টা এক যুদ্ধ দিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে, এ থেকে আদৌ অন্ধকার ভবিষ্যতটুকু বদলাবে কিনা। এই ঘটনা আমেরিকার অভিধানে এক টিকা বা টিপ্পনী হিসেবে থেকে যাবে। রাজনৈতীক, অর্থনৈতীক বা সামরিক অর্থে এটা স্রেফ একটা আলপিনের খোঁচা ছিল।

ইসলামীয়দের কি দেবার আছে? এমন এক অতীতের পথনির্দেশ, সপ্তম শতকের মানুষের সৌভাগ্যবশতঃ যার কোনোদিন কোন অস্তিত্ব ছিল না। যা তারা সারা পৃথিবীর ঘাড়ে চাপাতে চাইছে, ‘শাহী আফগানিস্তান’ যদি তার নমুনা হয় তবে তো বেশীরভাগ মুসলিম তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেবে ! ওসামা বা মোল্লা ওমর ইসলামের ভবিষ্যত – এ কথা ভাবাও যায়না ! সেটা হলে, আমাদের উভয়ের সংস্কৃতির পক্ষেই খুব মারাত্মক জিনিস ঘটবে ! তুমি কি তার মধ্যে বাস করবার কথা ভাবতে পারো? তুমি সহ্য করতে পারতে, যদি তোমার মা, বোন বা প্রেমিকা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে বাধ্য হত, আর শুধু মৃত মানুষের মত মুখ ঢেকে বাইরে বেরোবার অনুমতি পেত?

তোমাকে সোজাসুজি বলি, আমি হালের আফগান যুদ্ধের বিরোধীতা করেছি। বৃহৎ একচেটিয়া শক্তি নিজেদের ইচ্ছামত সরকারের পরিবর্তন ঘটাক, এ আমি কোনমতেই চাই না। কিন্তু তালিবানরা যখন দাড়ি কামিয়ে বাড়ি পালিয়ে গেছে, আমি তাদের জন্যে একফোঁটা চোখের জল-ও ফেলিনি। এর মানে এও নয় যে, যারা ধরা পড়েছে তাদের সঙ্গে পশুর মত ব্যবহার করতে হবে, বা জেনিভা কনভেনশন-অনুযায়ী প্রাপ্ত তাদের সাধারন অধিকার লঙ্ঘন করতে হবে, তবে আমার আপত্তি অন্য জায়গায়; এই মূহুর্তে বিশ্বে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মৌলবাদের কোন জুড়ি নেই। তারা ইচ্ছামত যে কোন আইন অথবা চুক্তি ভাঙতে পারে। আফগানিস্তানে অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চালানোর পরে তারা এই যে খোলাখুলি যুদ্ধবন্দীদের অত্যাচার করছে, তার একটাই কারণ – তারা পৃথিবীকে তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, আর তাদের এই নোংরামি দিয়ে কিউবার মাটিকে অপবিত্র করতে চায়। সবাইকে দেখিয়ে দিতে চায় সিংহের ল্যাজ মোচড়ালে তার শাস্তি কী মারাত্মক হতে পারে !

আমার মনে আছে, ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে সিআইএ আর তাদের দেশীয় আঞ্চলিক দালালরা কিভাবে যুদ্ধবন্দীদের উপরে অত্যাচার আর ধর্ষন চালিয়েছিল ! ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকা জেনিভা চুক্তির প্রায় সমস্ত ধারাই অগ্রাহ্য হয়। তারা বন্দীদের পশুর মত মারত, মহিলাদের ধর্ষন করত, বন্দীদের হেলিকপ্টার থেকে মাটিতে ফেলে দিত বা সমুদ্রের জলে ডুবিয়ে মারত আর এ সবই হত, বলাই বাহুল্য, স্বাধীনতার নামে।

যেহেতু পশ্চিমের অনেকে এখনো “মানবিক অনুপ্রবেশ” জাতীয় গাঁজাখুরিতে বিশ্বাস করে, তারা এসব দেখেশুনে হাঁ হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু গত শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদ-কৃত অপরাধের তালিকার তুলনায় এ তো কিছুই নয় ! নয়-এগারোর পরে আমি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের আরোও অনেকের সঙ্গে দেখা করেছি। একটা প্রশ্ন বারবার শুনতে হয়েছেঃ ‘আমরা মুসলিমরা কি এতই বুদ্ধিমান যে এমনি একটা কাণ্ড ঘটাব?’ আমি সবসময় বলি, ‘হ্যাঁ’, তারপরেই জানতে চাই, তাদের মতে কে এর জন্যে দায়ী? এবং একই উত্তর আসে ‘ইজরায়েল’। কেন? ‘আমাদের দোষী বানিয়ে আমেরিকাকে আমাদের দেশ আক্রমন করানোর জন্য’ আমি আস্তে আস্তে তাদের উৎসাহিত ভুল ধারণাগুলির মূলোদ্ধার করি, কিন্তু এসব কথা বলতে গিয়ে কষ্ট-ও পাই খুব। কেন এত এত মুসলিম এই জগদ্দল ধারণায় ডুবে গেল? নিজেদের প্রতি এত সহানুভূতি কোথা থেকে এল এদের মধ্যে? এদের আকাশ সবসময় অন্ধকার হয়ে থাকে কেন? কেন নিজেদের ছেড়ে শুধু অন্য কাউকে দোষারোপ করতে হবে?

মাঝে মাঝে যখন আমি ঘুরে বেড়াই, আমার মনে হয় এমন কোন ইসলাম রাষ্ট্র নেই যাদের মধ্যে একফোঁটা গর্ববোধ অবশিষ্ট আছে। যারা দক্ষিণ এশিয়া থেকে এসেছে তারা সৌদি আরব বা গাল্‌ফ দেশগুলির থেকে ব্রিটেনে অনেক বেশী সমাদর পায়। এখন কিছু একটা না হলেই নয় ! আরব বিশ্ব পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে। বছরের পর বছর, ইরাকী, সিরীয়, সৌদি, মিশরীয়, জর্ডনীয়, প্যালেস্তিনীয়দের সঙ্গে প্রতিটি আলোচনায় বারবার একই প্রশ্ন উঠেছে, একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কেন আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। সবকিছু যেন থমকে রয়েছেঃ আমাদের অর্থনীতি, আমাদের রাজনীতি, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা, এবং সর্বোপরী আমাদের ধর্ম।

প্যালেস্তাইন রোজ মার খাচ্ছে। পশ্চিম তা দেখেও দেখছে না। আমাদের সরকারগুলি সব মৃত। আমাদের রাজনীতিবিদরা কোরাপ্ট। আমাদের জনগণ অবহেলিত। কেউ যদি ইসলামীদের দিকে হাত বাড়িয়েই দেয়, তবে এতে আশ্চর্য্যের কি আছে? আর কে আছে আমাদের পাশে আজকাল? আমেরিকা? সে তো গণতন্ত্রই চায় না, এমনকি কাতারের মত ছোট্ট দেশেও চায়নি এবং তার একটাই সোজাসাপ্টা কারণ। যদি আমরা আমাদের সরকার নির্বাচিত করি, তবে তারা হয়তো আমেরিকার ঘাঁটিগুলি গুটিয়ে নেবার দাবী জানাবে। তাই না? ওরা এর মধ্যেই আল জাজিরা টেলিভিশনকে আর সহ্য করতে পারছে না, কারণ আল জাজিরা ওদের কোন কোন ব্যাপারে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে। এই একই চ্যানেল যখন আরব উচ্চবিত্তদের কোরাপশন নিয়ে আঘাত করেছিল, তখন কোন সমস্যা ছিল না। নিউ ইয়র্ক টাইমসে টমাস ফ্রিডম্যান তো গোটা একটা কলাম জুড়ে আল জাজিরার প্রশস্তি গেয়েছিলেন। তিনি এর মধ্যে আরবে আসন্ন গণতন্ত্রের আভাস খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে আর নয় ! কারণ গণতন্ত্র মানে ব্যাতিক্রমী চিন্তাভাবনার জায়গা, আর আল জাজিরা আফগান যুদ্ধের যে ছবি দেখিয়েছে, মার্কিন চ্যানেলগুলিও তা দেখায়নি, সেজন্যে বুশ আর ব্লেয়ার যুগপৎ কাতারের উপরে চাপ সৃষ্টি করলেন অপ্রীতিকর সম্প্রচার বন্ধ করার জন্য।

পাশ্চাত্যের কাছে গণতন্ত্র হচ্ছে, যা তারা বিশ্বাস করে তাতেই চিরকাল পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা। এই কি প্রকৃত গণতন্ত্র? আমরা যদি আমাদের সরকারকে নির্বাচিত করতে পারি, দুই-একটি দেশে মুসলিম সরকার-ও নির্বাচিত হতে পারে। পাশ্চাত্য কেন আমাদের মুক্তি দেয় না? ফরাসী সরকার কি আলজিরিয়ান মুক্তিযোদ্ধাদের ছেড়ে দিয়েছিল? না। তারা চেয়েছিল, ১৯৯০ আর ৯১-এর নির্বাচনকে শুন্য ও ফাঁপা ঘোষনা করা হোক। ফরাসী বুদ্ধিজীবীরা Front Islamique du Salut (FIS)-কে ‘ইসলামী ফ্যাসিস্ত’ রূপে বর্ণনা করেছিল, তাদের নির্বাচনে জয়লাভের তথ্যকে সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে। তাদের সরকার গড়তে দিলে, তাদের মধ্যে বর্তমান দলাদলি সামনে চলে আসত। সেনাবাহিনী সতর্ক করতেই পারত, জনগনের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ কোন অবস্থাতেই মেনে নেওয়া হবে না। শেষে যখন FIS-এর আসল মাথারা কাটা পড়ল তখনই আরোও লুম্পেন এলিমেন্ট প্রকাশ্যে এল এবং অরাজকতা ছড়াতে লাগল। আমরা কি তাদেরকে গৃহযুদ্ধের জন্যে দায়ী করব, নাকি আলজিয়ার্স ও প্যারিসের যেসব মাথা এদেরকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছিল, তাদের? আলজিরিয়ায় যে ধ্বংসজজ্ঞ চলেছে তা ভয়াবহ ! তার জন্যে কি শুধু ইসলামরাই দোষী? কি হয়েছিল ২২.৯.১৯৯৭ তারিখে আলজিরিয়ার দশ মাইল দক্ষিণে বেনতালা (Bentalha) শহরে? কারা সেদিন রাতে সেই শহরের ৫০০ পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করেছিল? কারা? ফরাসীদের মধ্যে সবজান্তা, বার্নার্ড-অঁরি লেভি ( Bernard-Henri Lévy ) নিঃসন্দেহ যে, এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের পেছনে মুসলিমদেরই হাত ছিল। তাহলে কেন সেনারা স্থানীয় জনতাকে আত্মরক্ষার্থে সশস্ত্র থাকতে দিল না? স্থানীয় মিলিশিয়াকে কেন সেদিন রাত্রেই এলাকা ছাড়তে বলা হল? সব কিছু চোখের সামনে ঘটা সত্ত্বেও সুরক্ষাবাহিনী কেন এল না? মঁসিয়ে লেভি কেন মনে করেন, Maghreb জনগণের হিতকল্পে অধিগ্রহন করা উচিত, অথচ কেউ এই মৌলবাদী চিন্তার প্রতিবাদ পর্যন্ত করে না?

আরব-রা বলে, আমরা জানি কি করতে হবে, অথচ পশ্চিম এসে নাক গলালেই তাদের হাবভাব পাল্টে যায় – এমন দীর্ঘদিন ধরেই ঘটছে। তাই, যদি তারা সাহায্য করতে চায়, তারা দূরে থাকুক। এটা আমার আরব বন্ধুদের বক্তব্য, এবং আমি তাদের সঙ্গে সম্পুর্ন সহমত। ইরানের দিকে তাকান। আফগানিস্তান দখলের সময় পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে গিয়ে নরম হয়েছিল। ইরান যুদ্ধের সময়-ও তাদের প্রয়োজন ছিল, অথচ সে সময় তারা দূর থেকেই দেখে গিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী মৌলবাদীরা বলছে ‘axis of evil’-এর কথা, যার মধ্যে ইরান-ও পড়ে। সেখানে অনুপ্রবেশের ফল প্রাণঘাতী হতে পারে। নতুন প্রজন্ম কেরানীতন্ত্রের দমননীতি দেখেছে। এরা কিচ্ছু মানেনি। শাহ্‌-এর কিংবদন্তী এই প্রাগিতিহাসের অঙ্গ। এই যুবক-যুবতীরা আর কিছু না হোক, অন্ততঃ একটি ব্যাপারে নিঃসন্দেহ। এরা আর আয়াতোল্লাদের শাসন চায় না। যদিও সাম্প্রতিককালে ইরান, সৌদি আরব বা ‘শাহী আফগানিস্তান’-এর মত দুঃসহ নয়, তবু আয়াতোল্লারা লোকের কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।

তোমাকে একটা গল্প বলি শোনো। বচ্ছর কয় আগে লস আঞ্জেলেসে আমার সঙ্গে এক নবীন ইরানী চিত্রপরিচালকের দেখা হয়েছিল। তার নাম মোসলেম মানসৌরি। সে তার নির্মীয়মান তথ্যচিত্রের জন্যে তোলা দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার সাক্ষাৎকার সঙ্গে নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। সে তেহরানের জনাতিনেক বেশ্যার বিশ্বাস অর্জন করে এবং দুই বৎসর ধরে তাদের ছবি তোলে। আমাকে সেসব ফুটেজের কিছু কিছু দেখিয়েছিল। তারা ওর সাথে বেশ খোলাখুলিই কথা বলেছিল। তারা বলেছিল ধর্মীয় উৎসবগুলিতেই তাদের সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হয় ! আমার কাছে পাঠানো নমুনাগুলি থেকে আমি তথ্যচিত্রটির একটি আভাস পেয়েছি। একজন মহিলা তাকে বলছেনঃ ইদানিং প্রত্যেকে তাদের শরীর বেচতে বাধ্য হচ্ছে ! আমাদের মত মেয়েদের মাত্র ১০,০০০ তুমানের বদলে পুরুষের সঙ্গে শুতে হয়। যুবকদের ১০ মিনিটের জন্যে হলেও একসাথে বিছানায় যেতে হয়.........এসব এদের মৌলিক চাহিদা.........এতে ওরা শান্ত থাকে।

‘সরকার যখন এটা নিষিদ্ধ করে, বেশ্যাবৃত্তিও বেড়ে যায়। বেশ্যাবৃত্তি ত দূরের কথা, সরকার বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে প্রকাশ্যে কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ......পার্কে, সিনেমায়, রাস্তায় তুমি তোমার পাশে বসা মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। রাস্তায় যদি কোন মেয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলে, ‘ইসলামের রক্ষক’-রা তাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আজকাল আমাদের দেশে, কেউ তৃপ্ত নয় ! কারুর কোন নিরাপত্তা নেই। আমি একটা কোম্পানিতে কাজের খোঁজে গিয়েছিলাম। দাড়িওলা ম্যানেজার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি তোমাকে চাকরী দেব আর মাইনের থেকে ১০,০০০ তুমান বেশী দেব।’ আমি বললাম, ‘আপনি অন্ততঃ আমার কম্পিউটার জ্ঞানটুকু পরখ করে দেখুন আমি এই কাজের উপযুক্ত কিনা।’ তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি তোমাকে চাকরী দেব তোমার সৌন্দর্য্যের জন্যে।’ আমি বুঝলাম, আমাকে যদি ওখানে কাজ করতে হয়, তাহলে রোজ ওই ভদ্রলোকের সাথে অন্ততঃ একবার করে শুতে হবে।

যেখানেই যাও, সর্বত্র একই চিত্র। আমি এক বিশেষ পরিবার-আদালতে গিয়েছিলাম, বিবাহবিচ্ছেদের জন্য – এবং বিচারক, একজন পাদরী, তার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি আমার সন্তানের দায়িত্ব আমাকে দেবার জন্যে। আমি তাকে বলি, ‘প্লিজ......দয়া করে আমাকে আমার সন্তানের দায়িত্ব নিতে দিন। আমি আপনার ‘কানিজ’ হতে রাজী [ ‘কানিজ’ (Kaniz) অর্থে ঝি/ চাকর……এটা একটা ফারসী ব্যাজস্তুতি, যার মানে হল, ‘আমি এর জন্যে যা সম্ভব তা করতে পারি।’] সেই ভদ্রলোক কি বললেন ভাবতে পারো? তিনি বললেনঃ “আমার কোন ঝি লাগবে না। আমি একটা মেয়ে চাই।” একটা আদালতের বিচারক, একজন পাদরী যখন একথা বলছে, তখন তুমি বাকিদের কাছ থেকে কী আশা করবে? আমি আমার বিচ্ছেদের কাগজ সই করাতে অফিসারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বিবাহবিচ্ছেদ করতে নিষেধ করলেন, তার বদলে বেআইনীভাবে আরেকটা বিয়ে করতে বললেন। কারণ স্বামী ছাড়া নাকি আমার পক্ষে কোন কাজ পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। উনি ঠিকই বলেছিলেন, কিন্তু আমার কাছে ওনার পারিশ্রমিক দেবার মত টাকা ছিল না......এসব অভিজ্ঞতা বয়স অনেক বাড়িয়ে দেয়......মানুষের উপরে চাপ এত বাড়ে, যে তাতে ক্ষতি হয়। যদি এর থেকে মুক্তির কোন উপায় থাকত......’

কোন আমেরিকান নেটওয়ার্ক তার ফিল্ম না কেনায় মোসলেম হতাশায় প্রায় উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল ! এরা খতমী-র রাজত্বে নাড়া দিতে চায় নি। মোসলেম নিজেই এক বিপ্লবের সন্তান। বিপ্লবী না হলে সে আদৌ এই ছবি বানাতে চাইত না। সে খুব দরিদ্র পরিবারে জন্মেছে। সে ইরাক যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিল। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এই অভিজ্ঞতা তাকে আমূল বদলিয়ে দেয়। ‘জেলখানা খুব কষ্টকর হলেও মূল্যবান অভিজ্ঞতা ছিল আমার কাছে। এখানে থাকার ফলেই আমি টের পেয়েছিলাম আমি আমার চেতনাগত পরিণতির দিকে পৌঁছেছি। আমি প্রতিবাদ করছিলাম, অন্তর্নিহিত শক্তির অস্তিত্ব বুঝতে পারছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আমি আমার জীবনকে নৈতীকভাবে দূষিত পাদরীদের শাসন থেকে মুক্ত করেছি, এবং তার জন্যে আমাকে এই মূল্য চোকাতে হচ্ছে। আমি গর্ববোধ করতাম। একবছর পরে ওরা আমাকে বলল, আমাকে একটিমাত্র শর্তে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে যে আমি প্রতি জুম্মাবারের নামাজ এবং অন্যান্য ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহন করব। আমি সই করিনি। ওরা আমাকে আরো একবছর জেলে বন্দী করে রাখল।’

এর পরে সে একটা চলচ্চিত্র পত্রিকায় সাংবাদিকের কাজ নেয়। ‘আমি ভেবেছিলাম সংবাদমাধ্যমের চাকরীটা আমার নিজের কাজ, মানে রাজনীতির মসনদের ভিতর ঘটে চলা জঘন্য অপরাধগুলি নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ - এর একটা মুখোশ হবে। আমি জানতাম, আমি যে ধরনের ছবি তৈরী করতে চাই, সেন্সরবোর্ডের নীতিনিয়ম আমাকে তা করতে দেবে না। যা নিয়েই লিখি না কেন, ইসলামিক সেন্সরবোর্ড আমাকে তা প্রকাশ করতে বাধা দেবেই। জানতাম এর ফলে শুধু সময় নষ্ট আর শক্তিক্ষয় হবে। তাই আমি গোপনে আটটি তথ্যচিত্র বানাবো স্থির করি। আমি চোরাপথে এই ফুটেজগুলো ইরাণের বাইরে পাচার করি। টাকাপয়সার সমস্যা থাকায় মাত্র দুটি ফিল্মের সম্পাদনার কাজ সম্পুর্ন হয়। প্রথমটা “Close Up, Long Shot” আর অন্যটা “Shamloo, The Poet Of Liberty”

প্রথম ছবিটার বিষয় ছিল আব্বাস কিয়েরোস্তামির ড্রামা-তথ্যচিত্র “Close Up”-এর প্রধান চরিত্র হোসেন সাবজিয়ানের জীবন। কিয়েরোস্তামির ছবিটি বেরনোর কয়েক বছর আমি সাবজিয়ানের সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি সিনেমা ভালোবাসেন। তার স্ত্রী-ছেলেমেয়েরা তার প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে শেষে বিদায় নিয়েছে। আজকাল তিনি তেহরানের সীমান্তবর্তী এক গ্রামের থাকেন, এবং এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, সিনেমার প্রতি তার প্রেম শুধু দুর্ভাগ্যই বয়ে এনেছে। আমার ছবিতে তিনি বলছেন, “আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে আমার মত মানুষ ধ্বংসই হয়ে যায়। আমরা নিজেদের কখনোই তুলে ধরতে পারিনা। দুধরনের লাশ হয়ঃ শায়িত আর চলন্ত। আমরা হলাম চলন্ত লাশ !”’

এইরকম এবং এর চেয়েও খারাপ গল্প আমরা প্রতিটি মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে খুঁজে পাব। ডায়াস্পোরা মুসলিম, যাদের অভিভাবকেরা পশ্চিমে চলে গিয়েছেন, আর ইসলামের খাসমহলে বসবাস করা মুসলিম – এদের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য আছে। দ্বিতীয় দলভুক্তরা অনেক বেশী প্রতিবাদী, কারণ ধর্ম তাদের পরিচয়ের খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়। স্বাভাবিকভাবেই তারা মুসলিম। ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকায় চিত্রটি একটু ভিন্ন। একধরনের সার্বজনিন বহুসংস্কৃতি সবকিছুর মূল্যে এখানে এক বিরাট তফাৎ গড়ে দিয়েছে। এর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে চরমপন্থী রাজনীতির পতনের একটি সুস্পষ্ট যোগ চিহ্নিত করা যায়।

‘সংস্কৃতি’ আর ‘ধর্ম’ হল আর্থসামাজিক অসাম্যের অপেক্ষাকৃত নরম, মুখরোচক প্রতিশব্দ – যেমন, স্তরবিন্যাসের পরিবর্তে বৈচিত্র্য হল ইদানিং উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপীয় সমাজের অন্যতম চর্চার বিষয়। আমি কথা বলেছি মেঘরাব (ফ্রান্স), আনাতোলিয়া (জার্মানী), পাকিস্তান ও বাংলাদেশ (ব্রিটেন), দক্ষিন এশিয়া থেকে স্ক্যাণ্ডেনেভিয়ায় আগত এবং প্রায় সর্বত্র থেকে আসা (আমেরিকা) মুসলিমদের সঙ্গে। আমি প্রায়ই নিজেকে জিজ্ঞেস করি, এত লোক তোমার মত মনে মনোভাব পোষন করে কেন? এরা কাশ্মীর আর পাঞ্জাবের বলশালী ও সতেজ গ্রামবাসীদের থেকে অনেক বেশী রক্ষনশীল ও অনমনীয় হয়ে পড়েছে, যাদের আমি খুব কাছ থেকে চিনতাম।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অদ্বৈতবাদী স্কুলের উপরে অগাধ বিশ্বাসী। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি তার প্রতিটি বক্তৃতা শেষ করেন ‘ঈশ্বর আমেরিকাকে রক্ষা করুন’ বলে। ওসামা প্রতিটি টিভি সাক্ষাৎকারের শুরু ও শেষে আল্লার নামে শপথ নেয়। এদের প্রত্যেকের যেমন এসব বলার অধিকার আছে, আমারও তেমনি অধিকার আছে চৈতন্যপ্রাপ্ত মূল্যবোধগুলির কাছে বিশ্বস্ত থাকার। চেতনা ধর্মগুলিকে আক্রমন করেছে –খ্রীষ্টধর্মকে, মূলতঃ – দুটি কারণেঃ প্রথমতঃ, এটা একটা আদর্শগত ভুল ধারণা, আর দুই, এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়নতন্ত্র, নিগ্রহ এবং অসহিষ্ণুতার অশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন। আজ কেন আমরা এই দুই ঐতিহ্যের কোন একটিকে ছেড়ে কথা বলব?

তুমি আমাকে ভুল বঝো, তা আমি চাই না। আমার ধর্মের বিরোধীতা শুধুমাত্র ইসলামেই সীমাবদ্ধ নয়। বা সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মের ভূমিকাকে আমি আদৌ অস্বীকার করছি না। খ্রীষ্টধর্মেরই দুই ভিন্ন মত – প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কারবাদ বনাম ক্যাথলিক সংস্কারবিরোধীতা – এদের আদর্শের সংঘাতের ফলেই ইউরোপ এক বৃহৎ বিস্ফোরনে ফেটে পড়েছিল। ধর্মতত্ত্ব থেকে উদ্ভুত ক্ষুরধার বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, যার ফলে ক্রমশঃ গৃহযুদ্ধ এবং কালক্রমে গোটা এক বিপ্লবের জন্ম নেয়, এখানে তার একটি উদাহরন দেওয়া গেল।

হিস্পানী অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ষোড়শ শতাব্দীর ডাচ বিপ্লব জন্ম নিয়েছিল স্বীকারোক্তিমূলক সংস্কারসাধনের নামে তাদের পবিত্র কিছু চিত্রকে অপবিত্র করার ফলে। ইংল্যাণ্ডে সপ্তদশ শতকের পিউরিটান বিপ্লবের কারণ ছিল স্কটল্যাণ্ডে এক নতুন প্রার্থনাগ্রন্থের প্রচলন, ১৬৮৮-তে ক্যাথলিকবাদকে সইতে অগ্রাহ্য করা যার পরবর্তী বিদ্রোহটির জন্ম দেয়। চেতনার উদ্ভব সেখানেই থেমে থাকে না এবং এক শতাব্দী পরে এর দ্বারাই ফ্রান্সে বিপ্লবের আগুন জ্বলে ওঠে। ইংল্যাণ্ডের চার্চ এবং ভাটিকান এই নতুন শত্রুর বিরুদ্ধে একজোট হল, কিন্তু জনগণতান্ত্রিক সার্বভৌমত্ব ও সাধারনতন্ত্রের ধারণা এত সহজে মুছে যাবার ছিল না।

আমি তোমার প্রশ্ন প্রায় স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। এতে আমাদের কী যায় আসে? অনেক কিছু, বন্ধু আমার। পশ্চিম ইউরোপ ধর্মতাত্ত্বিক ভাবাবেগে ভেসে গিয়েছিল, কিন্তু ইদানিং তা আবার আবছা হয়ে আসছে। দিগন্ত জুড়ে আধুনিকতা। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, অটোমান সাম্রাজ্যের সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। সুন্নি-শিয়ার প্রভেদ বড় দ্রুত স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল এবং পরস্পর বিরোধী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। ইসলামের যাবতীয় মতানৈক্য ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবার কথা ছিল। সুলতানেরা, তাদের ধর্মগুরুদের সহায়তায় এক বিরাট সাম্রাজ্য চালিয়েছেন, যা শেষ হবার মুখে এসে দাড়িয়েছিল।

এইটে যদি আঠারো শতকের চিত্র হয়ে থাকে, আজকের দিনে তার কতটুকু সত্যি হওয়া সম্ভব? বাস্তব অভিজ্ঞতাই বোধহয় মুসলিমদের সামনে একমাত্র রাস্তা, যার দ্বারা তারা এর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারে, যেমন ইরান করেছে। নব্যউদারতাবাদের বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যে অন্য কোন পরিবর্তের অনুপস্থিতি ধর্মের এই উত্থান কিছুটা ব্যাখা করে। একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন, যতদিন ইসলামীয় সরকারগুলি দেশের দরজা সারা বিশ্বের অনুপ্রবেশের জন্যে খুলে রাখবে, সামাজিক-রাজনৈতীক ক্ষেত্রে তারা যা খুশি করার অধিকার পাবে।

আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ আগেও ইসলামকে ব্যবহার করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। এখানেই আসল লড়াই। একটা ইসলামীয় সংস্কারসাধন আমাদের বড় প্রয়োজন যা মৌলবাদের সুগভীর রক্ষণশীলতা এবং পশ্চাদপদতাকে মুছে দেবে, এহ বাহ্য, ইসলামের সামনে একঝাঁক নতুন আদর্শ রাখবে যা আধুনিক পাশ্চাত্যবাদী ধ্যানধারণার থেকে বেশী উন্নত।

এর ফলে ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীভবনের প্রয়োজনীয়তা তৈরী হবে; মোল্লাতন্ত্র বীলিন হবে; সামগ্রিক ইসলামের সমবায় সম্পত্তি হিসেবে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখা যা মুসলিম বুদ্ধিজীবীরাই কুক্ষিগত করে রেখেছিল, তা থেকে মুক্ত হবে। যুক্তিবাদী, স্বাধীন চিন্তার অধিকার এবং কল্পনার অধিকার পাওয়া যাবে। এ পথে না এগোলে আমরা সুপ্রাচীন যুদ্ধবিগ্রহেই চিরতরে ডুবে যাব এবং কোন সমৃদ্ধ ও মানবিক ভবিষ্যৎ নয়, বরং ভাবতে থাকব কিভাবে বর্তমান থেকে অতীতে ফিরে যাওয়া যায়। এ ভবিষ্যতের কথা ভাবাও যায় না। আমি আমার কলমকেও আমার সঙ্গে দৌড় করিয়েছি এবং অনেক্ষন ধরে যা তা বকবক করে গেলাম। আমি নিজে বদলাব কিনা সন্দেহ আছে, কিন্তু তুমি বদলাবে – এমনটা আশা করি।

3 comments:

Soumitra Chakraborty বলেছেন...

অসাধারণ অত্রি। শুভেচ্ছা।

A Fair well to pen. বলেছেন...

ধন্যবাদ সৌমিত্রদা।

Abdullah Al Jamil বলেছেন...

খুব সুন্দর অনুবাদ হয়েছে। পড়ে ভালো লেগেছে।

এই লেখার শিরোনাম "এক মুসলিম যুবককে খোলা চিঠি" না হয়ে "এক সচেতন যুবককে খোলা চিঠি" হওয়া উচিৎ ছিলো। কারণ, যখনই কোনো ব্যক্তি ধর্মে অবিশ্বাসী বলে ঘোষণা করে তখন সেই ব্যক্তি আর মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ থাকেন না। সে তখন এথিস্ট হয়ে যায়। যদিও মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিলো।

সব ধর্মই মানব কল্যাণে সৃষ্ট। স্বার্থান্বেষী ও লোভী মানুষ ধর্মকে বিকৃত করে ব্যবহার করেছে। মানুষে মানুষে হানাহানীর সৃষ্টি করেছে। ওসামা বা মোদী, বা আরো যত এই ধরনের মানুষ পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে গণহত্যা ঘটিয়েছে এরা মানুষ নামের কলঙ্ক। ধর্মের নামে রায়ট বা গণহত্যা জঘন্য ঘৃণ্য অপরাধ। ওসামা যা ঘটিয়েছে তা কোনোভাবেই ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন বা গ্রহনযোগ্য নয়।