বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

উত্তর সম্পাদকীয় – চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য

খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না
চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য





পর্ব-১
অবিশ্বাসযোগ্য যৌনহেনস্থার অভিযোগে ক্ষতি মেয়েদেরই




“ঠোঙ্গা ভরা বাদাম ভাজা, খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।” কি অনবদ্য লাইনটাই না লিখেছিলেন সুকুমার রায়! এতদিন পরও দেখা যাচ্ছে তাঁর বলা লাইনটা এক্কেবারে চুল-টু-পা ট্রু। আমাদের মাথার উপরে স্ব-মনোনীত অবিভাবকের মত বসে থাকা মিডিয়া-মনোহরেদের সম্পর্কে সুকুমার রায় কত বছর আগেও বিন্দাস আজকের হাল মানসচক্ষে দেখে আকাশবাণীর মত বলে রেখে গেলেন, ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। ইদানিং মিডিয়াই কেবল খাওয়ায়, আরে সুকুমার রায় কতদিন আগে এদেরকেও খাইয়ে গেছেন, ভাবা যায়!

কিছুদিন আগে শতবর্ষে পা দেওয়া এক সাংবাদিকের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কলকাতার এক সিনিয়ার সাংবাদিক বলছিলেন, “মিডিয়ার এখন নতুন নতুন বিট হয়েছে, যার মধ্যে পড়ে ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ। কোথায় কে কি মন্তব্য করল, তাঁর জন্যেও সতর্ক থাকতে হয়।” তারি সর্বশেষ এক মনহারক নিদর্শণ দেখা গেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আশোক গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে এক ল’ইন্টার্নিকে যৌনহেনস্থার অভিযোগে। অভিযোগ সত্যি না মিথ্যে, তা প্রমাণের অপেক্ষা না রেখেই মিডীয়াবাগীশরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন বিচার করতে। বিচার বলে বিচার, এক্কেবারে পঞ্চায়েতী রাজ। গাঁয়ের খবর পত্রিকা পেলে লুফে নিত! অভিযুক্তের মতামত শোনার দরকারই নেই। “অহম গাঁয়ের পঞ্চজন, মনে করিয়াছি, অভিযোগ সিত্য এবং অভিযুক্তই অপরাধী। ব্যস” হয়ে গেল পঞ্চায়েতের রায়। রায় মানলে সম্পত্তি ছেরে পালা, না মানলে গাঁয়ের বার করে দেব। অর্থাৎ, সোজাই যাও আর বাঁকা, তুমি যাও ঢাকা কিংবা মক্কা।

মামলাটার পূর্বাপর একটু ভেবে দেখুন, বেশ মজা পাবেন। ঐ মহিলা ইন্টার্নি ঘটনার এক বছর পর এ-বছর নভেম্বরে নিজের ব্লগে এঁকে লিখলেন ‘সম্প্রতি’ ঘটা এক কাহিনী বলে। সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি ২০১২-র ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিজের হোটেলের রুমে তাঁকে ওয়াইন অফার করেছিলেন, মাথায় ও পিঠে হাত দিয়েছিলেন, হাতে চুমু খেয়েছিলেন। মহিলার মনে হয়েছিল এগুলি “আনওয়েলকাম বিহেভিয়ার’। তাই চলে আসতে চেয়েও ঐ বিচারপতির সঙ্গেই সে রাতে ডিনার খেয়ে তারপর ফেরেন। বিচারপতিই তাঁকে বাড়ি ফেরার গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন এবং গাড়ি পর্যন্ত তাঁকে ছেড়ে যান। সেখানেই তাঁর মনে হল, বিচারপতির আচরণ ‘অনওয়েলকাম বিহেভিয়ার, কিন্তু তিনি সেটা ব্লগেও প্রকাশ করলেন ২০১৩-র নভেম্বরে’, ১১ মাস বাদে।

এবার সূত্রগুলি মেলান। ঐ মহিলা খ্রিস্টান, তাই ২৫ ডিসেম্বর তাঁর উৎসবের রাত। উচ্চশিক্ষিতা ঐ মহিলা অন্য পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিল। সে-রাতে খ্রিস্টান্দের ওয়াইন খাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কেউ তা অফার করলে তা বরং তাঁদের রীতি মানার ভদ্রতা বলে গণ্য হওয়ার কথা। কোনও খ্রিস্টান বাড়িতে পৌষ সংক্রান্তির দিন যদি আপনাকে পিঠে খেতে দেয়, আপনি কি ভাবতেন? আনয়েলকাম বিহেভিয়ার হলে তো তাঁর তখনই চলে আসার কথা! তিনি সেখানে বসে ২৫-৩০পাতা টাইপ করার পর ডিনার খেয়ে বিচারপতিরই আনা গাড়িতে বাড়ি ফিরতেন না। এবং এ-সবই যদি মেনে নেয়া হয় যে মহিলাটিও ভদ্রতার খাতিরেি তৎক্ষণাৎ রিঅ্যাক্ট করেন নি, তাহলেও সেই অভিযোগ জানানোর জন্যে ১১ মাস! বিশ্বাস্য? এক জন আইনজীবির আচরণ কি বলছে?

আইনের ছাত্রী হিসাবে তিনি ভালই জানেন, যে কোনও ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগ তখনই গ্রাহ্য হয়, যখন পুলিশে অভিযোগ এফআইআর বা জেনারেল ডায়েরি হিসাবে দায়ের করা হয়। পুলিশ তাঁর তদন্ত করে, মামলা হয়য় নিম্ন আদালতে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে জেলা আদালত, হাই কোর্ট তারপর সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে যায়। নদীর জল যেমন পাহাড় থেকে গড়িয়ে এসে সমুদ্রে এসে মেশাই তাঁর স্বাভাবিক পথ, উল্টোটা নয়; মামলার ক্ষেত্রেও ওটাই তাঁর স্বাভাবিক নিয়ম, উল্টোটা নয়। কিন্তু, বিচারপতির গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ঘটনায় দেখা গেল সমুদ্রের জল নদী বেয়ে পাহাড়ে যাচ্ছে।

বলার কারণ, মামলাটা নিম্ন আদালতে এলই না। কারণ, পুলিশে আজও কোনও অভিযোগই দায়ের হয় নি। ফলে জেলা আদালত, হাইকোর্ট ইত্যাদি সব ফালতু হয়ে গেল। সোজা গেল সুপ্রিম কোর্টে… না সেখানেও কোনও মামলা হয়য় নি, কেউ করেনি। প্রধান বিচারপতি স্বতপ্রণোদিত হয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি করলেন অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে। সেই কমিটি আসলে প্রশাসনিক তদন্তের, বিচারবিভাগীয় নয়। রিপোর্টে সেই মহিলা ‘আনওয়েলকাম বিহেভিয়ার এর কথাই পুণরুক্তি করে প্রাথমিকভাবে তারাও অভিযোগের খানিকটা সত্যতা পেয়েছেন, যদিও বিচারপতি গাঙ্গুলী তা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের কমিটি বলে দিন, “যেহেতু ঘটনার সময় বিচারপতি গাঙ্গুলী সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, তাই এই অভিযোগের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার এক্তিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই।” তা ছাড়া ‘এই ল’ইন্টার্নি স্টেলা জেমসও সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে যুক্ত নন’ বলে সর্বোচ্চ আদালত এ নিয়ে কিছুই করতে পারে না। দেখুন, একথা বলছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বের কমিটি, যিনি নিজেই বিচারপতির গাঙ্গুলীর অবসর উপলক্ষে প্রদত্ত পার্টিতে ছিলেন। তিনি কি এই কমিটি গড়ার আগে জানতেন না যে উনি ঘটনার আগেই অবসর নিয়ে নিয়েছেন? জানতেন না যে অভিযোগকারিনী সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাক্টিশ করেন না? সে অজ্ঞানতার দায় কার? অজ্ঞানতাপ্রসূত একটি মন্তব্য যে গোটা ঘটনায় একজন বিচারপতির মর্যাদায় কালি ছেটাল, তাঁর কি হবে? সুপ্রিম কোর্ট এমন মন্তব্য করার ফলে মামলাটি আর নিম্ন আদালতে গেলেও সুবিচার দূর অস্ত। ফলে, গোটা বিষয়টাই কেচিয়ে এল। যদি, সত্যি বিচারপতি গাঙ্গুলী অপরাধীও হন, তাও তো তাঁর ন্যায্য বিচার সম্ভন নয়!

তাহলে এমনটা হল কেন? এর উদ্দেশ্যই বা কি? এর পিছনে কি কোনও কোট-আনকোট ষড়যন্ত্র আছে বা ছিল?

এগুলিই এখন জরুরি প্রসঙ্গ। এই লেখা লেখার সময়েই জানা গেল, এত দেরিতে অভিযোগ জনসমক্ষে আনায় সুপ্রিম কোর্টও বিরক্তি প্রকাশ করেছে। কিন্তু, সত্যি বললে, মেয়েটি কিন্তু কোনও অভিযোগই জানায় নি। সে ব্লগে লিখেছিল তাঁর কথা – তা সে ঠিক বা বেঠিক – যাই হোক। তাকে মুখোরোচক করে খবরে এনেছে নির্দিষ্ট একটি সংবাদপত্র। তারপর অন্য মাধ্যমগুলি ঝাঁপিয়ে পড়ে। কি ছিল সেই সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্য? প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই না করে ব্লগের ভিত্তিতে খবর কতটা যুক্তিসংগত? এ সব নানা প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। তারপরই দেখা গেল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিচারপতি গাঙ্গুলীর অপসারণ চাইলেন। তিনি অবশ্য এক বচর আগে থেকেই বিচারপতি গাঙ্গুলীর উপর ক্ষুব্ধ। রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান হিসাবে তিনি পার্ক স্ট্রিট ধর্ষোণ থেকে অম্বিকেশ মহাপাত্র মামলা, শীলাদিত্যকে মাওবাদী বলে অন্যায় গ্রেফতারের মত ঘটনা সহ বহু ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মনোভাব গোপন রাখেন নি, বরং বলেছিলেন, ““মানবাধিকার কমিশনে একজনকে আমরা বসালাম, তিনি এসে আমাদের বিরুদ্ধে রায় দিচ্ছেন।” যেন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিয়োগে সুপারিশ করেছেন বলে তাঁকে রায় দেওয়ার সময় ধামাধরা হতে হবে! এ কেবল হাস্যকর দাবীই নয়, বিপজ্জনকও। কোনও রাজ্যের বা দেশের প্রধান যদি এই দাবী করেন, তাহলে ধরে নিতে হবে সে রাজ্যে বা দেশে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটেছে। যে বিচারপতি শ্রীমতী গান্ধীর নির্বাচনকে অবৈধ রায় দিয়েছিলেন, তাঁর নিয়োগও কিন্তু শ্রীমতী গান্ধীর সরকারি দিয়েছিল। তিনি কিন্তু এমন উদ্ভট তর্ক তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবেন নি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পদত্যাগ চেয়েছিলেন। এছাড়া কলকাতার আইন বিশ্ববিদ্যালয় এনইউজেএস-এর একদল অধ্যাপক সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর পদ থেকে বিচারপতি গাঙ্গুলীকে সরাতে কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়েছেন। এতেও আশ্চর্যের কিছু নেই। আইনজীবি কল্যাণবাবু তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ এবং দুর্মুখ, এটা সকলেই জানেন। মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা চাইলে সভাসদেরা যে ‘বলে তাঁর শতগুণ’, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। ইস্তফা চেয়েছিলেন মোহনবাগান ক্লাবের শীর্ষকর্তারাও, কারণ বিচারপতির সেদিনকার রিপোর্টে ক্লাবের বিপুল টাকা জরিমানা হয়েছিল। এই শীর্ষকর্তা আবার একই দলের রাজ্যসভা সাংসদ, অর্থাৎ সভাসদ। তাঁরা যে অপসারণ চাইবেন, এতে বিষ্ময়ের কি আছে!

বিষ্ময়ের বিষয় এল কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত সলসিটার জেনারেল (এএসজি) ইন্দিরা জয়সিংহ কলকাতায় এসে অভিযোগকারিণীর লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে এবং দিল্লিতে সংসদে বিরোধী নেত্রী বিজেপির সুষমা স্বরাজ বিচারপতির ইস্তফা চাওয়ায়। অভিযোগকারিনী সুপ্রিম কোর্টের তিন-সদস্যক কমিটিকে যে মৌখিক বিবৃতি (কেন মৌখিক, তাও প্রশ্নবোধক) দিয়েছিল, তাঁর কপি অভিযুক্ত বিচারপতি গাঙ্গুলীও পান নি, কারণ সেটি ছিল আদালতের সম্পত্তি। আদালতের সম্পত্তি কিন্তু সরকারের নয়। দি-তিন দিন পর সেটাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রসাদধন্য কলকাতার এক বাণিজ্যিক কাগজে ছাপা হয়ে গেল! তাতে লেখা হল, কেন্দ্রীয় সরকারের আইন মন্ত্রকের মাধ্যমে তাঁরা ঐ বিবৃতি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক এমন কাজ করতে পারে কি? আইন মন্ত্রক বেআইনি কাজ করে বসে নি তো? সেখানেই জানা গেল, অভিযোগকারিনী ম্যেটির নাম স্টেলা জেমস। নাম তো প্রকাশ তো বেআইনি! হল কেন? কারা করল? এএসজি ইন্দিরা জয় সিং কি করে সেই বিবৃতি প্রেস কনফারেন্সে প্রকাশ করলেন, যা সুপ্রিম কোর্টের ভাষায় ছিল গোপনীয়’?

এমন বহু প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য। ইতিমধ্যে আরেকজন বিচারপতির বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে, এবং এ-ক্ষেত্রেও অভিযোগকারিনী কলকাতার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ইন্টার্নি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আবার কেন্দ্রীয় গ্রিন ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারপতি, যিনি পূর্বাঞ্চলের পরিবেশ আদালতটি কলকাতায় খোলার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন। তা ছাড়া, তাঁর দফতরে গিয়ে আটকে আছে এমন বহু বিনিয়োগের প্রকল্প, যেগুলি আদতে পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে। এমনই এক প্রকল্পে বাঁধা দেওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে জয়ন্তী নটরাজনের মত স্পষ্টবক্তা মন্ত্রীকে সরে যেতে হয়েছে।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যৌনহেনস্থার এ-সব অভিযোগ কি আসলে বিচারপতিদের বিচার প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি কৌশল হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হল? এখনই এই নিয়ে চূড়ান্ত মতামত না দিলেও এমন প্রশ্ন ওঠাকে কিন্তু আটকানো যাচ্ছে না। নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবিই, যঅধিকাংশই মহিলা, এখন এই নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেছেন। তাঁরা চিন্তিত, এর পর বিচারপতিরা মহিলা ইন্টার্নদের আর সুযোগ দেবেন তো? এমনকি চেম্বার অ্যাডভোকেট হিসাবেও মহিলা আইনজীবিদের সুযোগ সত্যিই কমে গেল কি না! যদি একটি ঘটনাতেও প্রমাণিত হয় যে, অভিযোগটি কেবল মিথ্যাই নয়, ষড়যন্ত্রমূলক; সে ক্ষেত্রে অভিযোগকারিনীর পরিচয় গোপন রাখা যাবে তো? অভিযোগকারিনী যদি বয়ান বদল করে থাকেন, তাহলে আইনের চোখে তিনিই হয়ে যাবেন ‘কন্ডেমন্ড লায়ার’, বা স্বঘোষিত মিথ্যাবাদী। গুজরাত দাঙ্গার বেস্ট বেকারী মামলায় এই কারণে শাস্তি পেয়েছেন তিনি, যার পরিবারের প্রায় সবাই দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন। এমন হলে কিন্তু সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হবে মহিলাদেরই। স্বার্থের ষড়যন্ত্রে আর কেউ জড়িয়ে পড়ার আগে, এই পরিণতিটাও মনে রাখা ভাল।







পর্ব-২
ধর্ষণের হ-য-ব-র-ল ঘটিয়ে দিল সর্বোচ্চ আদালত




মাঝের একটি সংখ্যায় আর আপনাদের জ্বালাতে আসিনি। বইমেলা নিয়েই মেতে ছিলাম। তাই এই লেখার শেষাংশ পাচ্ছেন এক মাস পর। আগের সংখ্যায় খেপচুরিয়ান-এর সম্পাদকমণ্ডলী এই লেখার উপর বিতর্কের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দেখলাম, দুজন এই লেখা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এক বন্ধু মিলন চ্যাটার্জি লিখেছেন, “বেশ ভালো লাগছে পড়তে । দেখা যাক আরও :)।” আরেক বন্ধু গৌতম চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “বিচারপতি গাঙ্গুলির কি দরকার ছিল ৩-জি স্ক্যামে রায় দেবার যেখানে অনেক দলের সংযুক্তি থাকতে পারে অথবা বাংলার জনবন্ধু সরকারের বিরাগভাজন নির্দেশ দেবার তাহলে এই অমূলক অভিযোগ উঠতই না!!!”

ধন্যবার মিলনবাবু, পরের অংশটা এবার দেখে নিন। মতামত জানান। আর, ধন্যবাদ গৌতমবাবু! আপনিই ঠিক। শাসনও সেটাই চায়। সরকারের পদলেহনকারী বিচারক এবং বিচারের রায়। এমনিতেই যে কোনও সরকার অ্যাডভোকেট জেনারেল, সলিসিটার জেনারেল ও অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল পদে তাঁদেরই নিয়োগ করে, যারা সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ বহন করবে। মামলায় তাঁরা সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থকেই রক্ষা করার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই, অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল পদে ইন্দিরা জয় সিং-এর নিয়োগ পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ-কারণেই আশোক গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে তাঁর উষ্মা প্রকাশ স্বাভাবিক। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা শ্রীমতি জয় সিং কিন্তু মূলত আইন-বিশেষজ্ঞ নন, নারীবাদী আন্দোলনের একজন এক্টিভিস্ট। ইউপিএ সরকার বর্তমান পদে তাঁকে নিয়োগ করে চেয়েছিল ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করাতে। কিন্তু, তাঁর অনভিজ্ঞতায় সেটি বর্তমানে নানা আইনী বাধায় আটকে গিয়েছে। এক্টিভিজম এক বিষয়, আর আইন প্রণয়ন আরেক বিষয়। এই দুইয়ের মেলবন্ধন অসম্ভব না হলেও বড়ই যে কঠিন, তা শ্রীমতী জয় সিং ভালই বুঝতে পারছেন। বর্তমান পদে তাঁর রাজনৈতিক নিয়োগে তিনি সচেতন । তাই সর্বোচ্চ আদালতেই বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুর একটি মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেছিলেন, “আমরা ল-অফিসার, সরকারের মুখপাত্র না। আশা করি, আমি যদি কোনও বিচারকের ন্যায্য সমালোচনা করি, সরকার আমার পাশে থাকবে”।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেওয়ার আগের দিন, অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ তারিখে বিচারপতি আশোক গাঙ্গুলীর বেঞ্চ ২-জি মামলার ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করে রায় ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশী যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা দেশের বড় বড় কর্পোরেট হাউস – যার মধ্যে টাটা ও আম্বানীরাও আছে। তাদের কোচড়ে রাখা থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ মিডিয়ার ম্যানেজার থেকে মালিক। টাটাদের নিজস্ব বৈষ্ণবী কমিউনিকেশনের নীরা রাডিয়ার ভূমিকা নিশ্চয় কেউ ভুলে যান নি। যতদূর জানা যায়, আম্বানীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক আছে ইন্দিরা জয় সিং ও তাঁর নারীবাদী সংগঠনের। ফলে, প্রতিশোধ নেওয়ার এমন একটা সুযোগ কেউ ছাড়তেও চান নি।

আর কংগ্রেসের খেপে যাওয়ার আরও অনেক কারন আছে। জব্বলপুরের এডিএম বনাম শিবকান্ত শুক্লা মামলায় বিচারপতি আশোক গাঙ্গুলী ও বিচারপতি আফতাব আলমের বেঞ্চ রায় দিয়েছিল যে, ১৯৭৫-এ জরুরী অবস্থার সময়ে সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছিল। তাঁদের মতে, জরুরি অবস্থার সময় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ-সদস্যক সংবিধান বেঞ্চ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার স্থগিত রেখে এই অন্যায় করেছিল। তা ছাড়া, এক রায়ে তিনি বলেছিলেন, মানবিক কারণে দণ্ডপ্রাপ্তের শাস্তি মকুব বা কমাতেই পারেন রাষ্ট্রপতি বা এই মর্মে রাজ্যপাল সুপারিশ করতেই পারেন। কিন্তু, তাঁরা কেউই আইনের দায়রায় থাকা বিষয় নিয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য করতে পারেন না। এমন ঘটনা ঘটলে সেই মন্তব্য সেটি আইনী বৈধতা পাবে না এবং সেক্ষেত্রে আইনের হাতকেই অহেতুক লম্বা করার প্রশ্ন আসবে।

সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি আইনী ব্যাখ্যায় দেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার দায়রায় প্রবেশ না করেও তাঁর মন্তব্যের অধিকারের আইনী বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এমন ঘটনার নজীর অতীতে নেই। ফলে, কংগ্রেসের পক্ষে সহজে বিচারপতি গাঙ্গুলীকে মেনে নেওয়া কঠিন ছিলই। সামান্যতম সুযোগকে তাই ব্যবহার করার জনে উঠে পড়ে লাগেন সলিসিটার জেনারেল বাহনাবতী ও শ্রীমতী জয় সিং। বিষয়টি সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে চাপ সৃষ্টি করেন, যা একেবারেই কাম্য ছিল না। তাঁরা আসলে যা করেছেন, তা বস্তুত কেন্দ্রীয় ক্ষমতার নগ্ন অপব্যবহার। তাঁরা সহজেই পারতেন, মামলাটি দিল্লিরই নিম্ন আদালতে দায়ের করে বিচারপতি গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু, তাঁরা তা করেন নি। কারণ, সেক্ষেত্রে অপমানজনক পরাজয়ের নিশ্চিত রায় তাঁরা আগেই পড়তে পেরেছিলেন।

এবার আসি বিজেপির প্রসঙ্গে। তাঁদের পক্ষ থেকে ইস্তফার দাবীর পিছনে আছে বাণিজ্যিক মহলের অস্বস্তি। বিজেপি এখন ভারতের কর্পোরেট দুনিয়ার প্রশ্রয়ধন্য। তাঁদের ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে পূর্ণত মদত দিচ্ছেন মুকেশ আম্বানীর রিলায়েন্স গোষ্ঠী। আম আদমি পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ তো সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে আম্বানীদের সংস্থা ‘রিলায়েন্সের হাতের পুতুল’ বলে মন্তব্য করেছেন। কর্পোরেট লবি চায় মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে। প্রকাশিত তথ্যে প্রমাণ, কর্পোরেটের সবচেয়ে বেশী দান ঢুকছে বিজেপিরই ফাণ্ডে। তাঁদের মধ্যেও অন্যতম আম্বানীরা। কেবল তাই নয়, গুজরাতে অন্যায়ভাবে বিদ্যুৎ বন্টনের বরাত কম দর দেওয়া সরকারি সংস্থার বদলে বেশী দর দেওয়া আদানী গ্রুপ-কে দেওয়ার অভিযোগ আগেই এনেছিলেন। এবার গ্যাসের দাম নির্ধারণ নিয়ে মোদীর নীরবতার প্রসঙ্গ টেনে নীরা রাডিয়া ও সংযুক্ত জনতা দলের এন কে সিং এর সঙ্গে কথোপকথনের উল্লেখ করেন। ওই কথাবার্তাতেই রিলায়েন্সকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রধান বক্তা অরুণ শৌরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আম্বানীদের বিরুদ্ধে রাজনীতির অঙ্গনে অর্থ ও নানা উপঢৌকনে নিজের স্বার্থে কাজ করানোর অভিযোগও নতুন নয়। শেয়ার কেলেঙ্কারির সময়ে গুরুদাস দাসগুপ্ত তাঁর বাড়িতে আম্বানীদের পাঠানো ঝুড়ি ঝুড়ি আলফান্সো আম ফেরত পাঠিয়ে সরকারি স্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কংগ্রেসের একটি সূত্রে প্রকাশ, ইন্দিরা হত্যার পর নির্বাচনে চরম আর্থিক টানাটানির কারণে রাজীব গান্ধী প্রার্থী পিছু দু-লাখ টাকার বেশী দিতে পারেন নি। তখন আম্বানীরা এসে রাজীব গান্ধীকে কয়েকশো কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন। রাজীবকে তাঁরা বলেছিল যে, এই টাকা শ্রীমতী গান্ধীর একটি গোপন একাউন্টের, যা তাঁদের কাছে রাখা ছিল। রাজীব তাঁকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরে, বলিউডের এক নামী অভিনেতার মাধ্যমে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর বাংলার এক নামী কংগ্রেস-ত্যাগী রাজনীতিবিদ নিজের দল তুলে দিয়ে ফের কংগ্রেসে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেন, নরসীমা রাওয়ের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীত্বও পান। বর্তমানে সেই নেতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও কংগ্রেসে আর নেই। বস্তুত, আশোক গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় চক্রান্তে তাঁকেও জড়িয়ে দেওয়ার পরই বিচারপতি গাঙ্গুলী ইস্তফা দেন।

এবার বাকি রইল শেষ একটি প্রশ্ন – অভিযোগকারিনী কেন এতবড় একটা ঝুকি নিলেন? তিনি আইন্সের ছাত্রী হয়েও আইনের পথে যান নি। আবার সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যক কমিটি বেআইনি জেনেও তিনি সেখানে মৌখিক বিবৃতি দিয়েছেন। আবার তাঁর দেওয়া ৬০ পাতার মৌখিক বিবৃতির সঙ্গে তাঁর ব্লগে লেখা বিবৃতির আকাশ-পাতাল ফারাক। আইনের ছাত্রী হিসাবে তিনি নিশ্চয়ই জানেন, আদালত গেলে বয়ান বদলের কারণে তাঁকে ‘হোস্টাইল’ ঘোষণা করে দিত আদালত। তিনি এও জানেন যে, কারও মর্যাদাহানী করাও সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ২১ ধারার পরিপন্থী। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে কেন যে রাজনীতির খেলার পুতুল করে ফেললেন, সেটাই রহস্যের। তথ্যে জানা যাচ্ছে, খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী অভিযোগকারিনী যিনি নিজেই লিখেছেন যে ২৫ ডিসেম্বর তাঁদের ধার্মিক অনুষ্ঠান এবং তাঁর সেদিন তেমন এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল) আসলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ট আত্মীয়। পশ্চিমবাংলা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভায় নির্বাচিত সেই সাংসদের নাম ডেরেক ও-ব্রায়ান বলেই প্রকাশ।

আরেকবার দেশের প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের দ্বিচারিতার প্রসঙ্গটি দেখা যাক। স্টেলা জেমসের তোলা অভিযোগ নিয়ে জলঘোলার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি স্বতন্ত্রকুমারের বিরুদ্ধেও এমনই যৌনহেনস্থার অভিযোগ আনেন আরেকজন মহিলা। দুটি মামলার মধ্যে তফাৎ হল, ঘটনাটির সময় স্বতন্ত্রকুমার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। আর মিল হচ্ছে, বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় পরিবেশ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান, যার কাছে গিয়ে আটকে গেছে অনেকগুলি পরিবেশ ধংসের শিল্পায়ন ও নগরায়নের প্রস্তাব। সেক্ষেত্রেও ক্ষতি হচ্ছে কর্পোরেট লবির। এবং, অভিযোগকারিনী স্টেলার মতই কলকাতার এনইউজেএস-এঁর স্নাতক। কিন্তু, এবার প্রধান বিচারপতি সদাশিবম পত্রপাঠ সেই ইন্টার্নকে বিদায় করে বলেছেন, প্রাক্তন বিচারপতিদের বিরুদ্ধে বিচার করার কোনও এক্তিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই। তাঁর এই বোধোদয় অশোক গাঙ্গুলীর সময় হয় নি কেন? নাকি, তিনি নিজেই আইনের এক্তিয়ার জানতেন না? শেষেরটি হলে তো দুশ্চিন্তার বিষয় – কার হাতে রয়েছে সর্বোচ বিচারের ভার! তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, এমন মামলার কোনও ‘মেকানিজম’ সর্বোচ আদালতের নেই। সেই মেকানিজম সম্পর্কে পরামর্শ দানের জন্য দু-জনকে ‘আদালত-বান্ধব’ (এমিকাস ক্যুরি) নিয়োগ করেছেন। তাহলে, অশোক গাঙ্গুলির ক্ষেত্রে তিনি কোনও মেকানিজম ফলো করেছেন? তা ছাড়া, প্রধান বিচারপতি কি বিচারের মেকানিজম তৈরি করতে পারেন? সে তো আইনসভার কাজ।

এই ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীর পিছনে কারা টাকার থলি নিয়ে দাড়িয়েছিলেন, সেটি এখনও অন্ধকারে। কিন্তু, তাঁর ছায়া দেখা যাছে। অভিযোগকারিণীর আইনজীবি হিসাবে প্রকাশ্যে এসেছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবি হরিশ সালভে। তাঁর এক দিনের ফি ছয় লক্ষ টাকা বলে শোনা যায়। তাহলেই ভেবে দেখুন! অভিযোগকারিণীর হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, সিএনএন-আইবিএন। বিচারপতি স্বতন্ত্রকুমার এই সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের মানহানীর মামলা ঠুকে দিয়েছেন। আদালত বাধ্য হয়েই এই সংবাদমাধ্যমগুলিতে বিচারপতি স্বতন্ত্রকুমারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই মামলার রায় প্রকাশ্যে এলে ষড়যন্ত্রের পর্দা ফাঁস হলেও হতে পারে।

কিন্তু, দ্বিতীয় ঘটনাটিকে বাতিল করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এতদিন পর কবর খুঁড়ে এসন মামলা সামনে আনার কোনও যৌক্তিকতা নেই। বিশেষ করে মেয়েটি নিজেই যেখানে আইনের ছাত্রী এবং তাঁর কি করণীয় ছিল, তা তিনি জানতেন; তবু তা করেননি। ঠিক বলেছেন প্রধান বিচারপতি সদাশিবম। কিন্তু, অশোক গাঙ্গুলির বেলায় এই সামান্য যুক্তি তাঁর মাথায় আসে নি কেন, তা যে বোঝা গেল না! এমনকি, প্রধান বিচারপতি স্বতন্ত্রকুমারের বিরুদ্ধে মেয়েটির দায়ের করা হলফনামার গুণাগুণ নিয়েও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু, অশোক গাঙ্গুলির ক্ষেত্রে শুধু হলফনামার ভিতিতেই যে তিনি বিচারপতি গাঙ্গুলিকে দোষী ঠাউরে ফেলেছেন? কোনও তদন্তের ধার দিয়েও যান নি! তবে কি তিনি নিজেও আইনের প্রাথনিক শর্তটাই লঙ্ঘন করে ফেলেছেন? সেখানে তো বলা হয়েছে, শত অপরাধী মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন, কিন্তু একজনও নিরাপরাধ যেন শাস্তি না পান। স্টেলা জেমসের ঘটনায় ইন্দিরা জয় সিং দিল্লি থেকে উড়ে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করে অশোক গাঙ্গুলির ইস্তিফা দাবি করলেও স্বতন্ত্রকুমারের ঘটনায় ‘নারী আন্দোলনের এক্টিভিস্ট’ হওয়া স্বত্ত্বেও তিনি ততোধিক নীরব। কেন?

অতএব বোঝা যাচ্ছে, গোটা ঘটনাতেই একটা হ-য-ব-র-ল হয়ে গিয়েছে। সুকুমার রায় থাকলে বিশেষজ্ঞ্র মতামত দিতে পারতেন। আমরা বুঝি, রাজনীতিকেই সব কিছুর নিয়ন্তা ভাবতে গিয়ে ক্ষমতাসীনরা ধর্ষণের মত লজ্জাজনক ঘটনাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছেন। এই অপ-রাজনীতির অবসান হওয়া জরুরি।