বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মুক্তগদ্য - সূর্য্যস্নাত বসু



















বাস ইত্যাদি
সূর্যস্নাত



বাসের জানলা দিয়ে অনেক ইত্যাদি লাফিয়ে পার হন । শেষবেলার সিগারেট থেকে থু থু, ভাঙা আসবাব, রেসের বেটন থেকে ঘড়ির ব্যাটারী, কিংবা হালফিলের কবিতার বইএর কিছু ছেঁড়া পৃষ্ঠা; এরা সর্বতভাবে কিছু না কিছু ইত্যাদিই বটে । এ ইত্যাদি মাঝেসাঝে পাশের পাড়ার নান্টুদার সাথে ডেটিং এ বেরোয় । আমি কিছুই বলিনা । মা জলখাবার আনার আগে টুক করে তাদের একটু সজাগ করে দিই । আর মার পা’দুটো যখন প্রায় ঘর অব্দি চলে এসে থেমে যায় পাপোশে, আমি আবার ওই ইত্যাদিকে যথাস্থানে রেখে দিই । স্কুলে পড়ার সময় থেকে বন্ধু সায়ন্তন আমায় হলুদ মলাটের ওই ইত্যাদি সাপ্লাই করত, আর ফিরে যাওয়ার আগে বলত; “নে জানলার সিটটা ছেড়ে দে;” আমিও তখনকার মত বাসের আলোয় মাখা ইত্যাদিগুলোকে বাইরে বার করে উঠে দাঁড়াতাম, কাজেই ইত্যাদির আরেক নাম যে অন্ধকার; তা আমার স্কুল লেভেল থেকেই জানা ।

অবশ্য এখন জানলার ধারে বসেই বাড়ি ফিরছি । ভিড় বাস । রোগা কণ্ডাক্টর । মোটা ড্রাইভার । ঘোলা চোখ খালাসি, ভোলা চোখ সহযাত্রী । কাকিমার বোগল, লালচে লোম, কাকুর কালো ঘেটি; হাতে একমাত্র বেটি আর বাদবাকি যত আছে; মুখে খিস্তিখাস্তা; একেবারে কাচা যাকে বলে ; এই বুঝি কামড়ে দিল; এই বুঝি মশাল জ্বালালো; খুরপি বার করলো; তারপর সজোরে চালালো পেটে এই বুঝি । এছাড়া কনুই মারা থেকে আরও যত যত ইয়ে ইসে মারা যায় সব চলছে । সারাদিনের ক্লান্তি, ঘাম গন্ধ দুর্গন্ধ, এরাও যে ইত্যাদি এবং এদের পারাপার করার মধ্যেও শালা ঘ্যাটাং ঘ্যাটাং করে চলা, চুলের স্টপেজ, তার মধ্যে দুএকটা পেট্রোল পাম্পসহ মানে একাকার যা বলি; কন্ডাক্টর বারবার কথায় কথায় থেকে থেকে আস্তে লেডিজ; কোলে বাচ্চা, এ এ এ আআইইয়োওও করে মানে কি সব বলছে ; এটাও ইত্যাদি, অর্থাৎ সব না বলা কথারাও যে শুধু ইত্যাদি , তা নয় । এরপর কেউ হুড়মুড়িয়ে পড়ল, কারো হাতে কি কারো পায়ে কি কারো ওখানে কি কারো মুখে কি কারো বুকে হেব্বি লাগল; ওরে বাবা রে বাবা গেলাম গো করে অজস্র ইত্যাদি চেঁচিয়ে ঊঠল; পিছনে প্রতিবন্ধীর সিট আর লেডিজ সিট আর সিনিয়ার সিটিজেন উফফ মাগো মাগো ইত্যাদির আবার ইমারজেন্সি এক্সিট ; অথচ ইত্যাদি এন্ট্রি নেই, তারপর সারাদিনের খবরাখবর, তেলের দাম বৃদ্ধি থেকে ইষ্টবেঙ্গল কি মোহনবাগান; সে যাই বলো চম্পক লোয়ার ইন্ট্যালেকচুয়ালিটি আর কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে ফের জেগে যাওয়া, আপনার ওটা আমার ওখানে লেগেছে, জুতোয় গোবর মাথায় ঘাড়ে আলু নিয়ে হেলে দুলে বসে আছেন তারাই যারা ইত্যাদি । এই আকালে হায় বাসদেবতা কেন যে ইত্যাদি করে বাড়ি ফিরছি, অটো বা ট্যাক্সি বা হেঁটে; হায় রে; যদিও একদল যুবক-যুবতী পেছন সিটে তাক করে গান শুরু করছে; মাটির গান, বাতাসের গান, আকাশের গান, স্নানের গান, পাইখানার গান, পাখির গান, ভেঁপুর গান, ফুলের গান, মেহেন্দির গান, পুজোর গান, আজানের গান ; কিন্তু এত কছু সত্ত্বেও কেউ যদি একবার ইত্যাদির গানখানিও গেয়ে দিতেন; আমি নিশ্চিত, বাসযাত্রী সকলেই একে অপরকে আর কিছু নাই করুক, অন্তত চুম্বনটুকু করতেনই ।