বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ধারাবাহিক উপন্যাস – রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়


অবভাস
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়



পূর্বে প্রকাশিত এই লেখাটির পর হইতে ...



তৃতীয় অধ্যায়




৩।

ডিস্পিরিন ডিস্পিরিন... যাকে আমি ভালো লাগা বলি...
                     
                
                  

                                        


                                                         সা



                                                                                      
                                                                                 

পাতার পর পাতা জুড়ে যা সে লিখেছে। যা তার উপেক্ষা উপহাস এখন তাকেই চেপে বসছে।
একটা দেওয়ালে প্যারিস করার পর বহুদিন রং না করলে যা তার ওপর চেপে বসে।

যতদিন না ক্রেয়নগুলো নিয়ে সে আবার গড়িয়ে দেবে জলচৌকির নিচে আর তারা মোমদানা হয়ে সারাঘর জ্বলবে নিভবে। সে মনে করতে থাকবে তার প্রিয় বন্ধু চলে যাওয়ার আগে ঠিক কী লিখে গিয়েছিল, this world is not meant for me anymore…


                                                                              
                                                              



                                                          



                                সা



                  

          

এবং, এই শুরুর শুরুতে ফিরতে সে অনেকটা সময় নিয়ে নেবে যার সঙ্গে অনন্তের যোগ বা বিয়োগ, গুণ বা ভাগের কোন সম্পর্ক নেই।

এখনও মাস্তুল আঁকা আছে, মাস্তুল ঘেঁষে খুব নিমগাছ
বাপের মরা গন্ধে বুড়ো নিম কিছু বিষফল দিল, পাতা
কোনও চিন্তাই ছিল না তবে চিন্তার নৈরাজ্য নিয়ে এত মাথাব্যথা
                                               ডিস্পিরিন...ডিস্পিরিন
যাকে আমি ভালো লাগা বলি

সত্যি সত্যি বাপ তার চলে গেল। জল-জঙ্গল যখন মনে হচ্ছিল এসকেইপ রুট হতে পারে, মুখ্য ধর্ষক বিচারবন্দী,  কীভাবে যেন জেলেই আত্মহত্যা করতে পারে, পাতার ভাঁজে পেন্সিলটা খোকা হতে হতে একদিন উধাও হয়ে যেতে পারে –- এত হতে পারার মধ্যে তার বাপে চলে যাওয়াটাও একটা হতে পারা হয়ে উঠল।
শরীরটা তাপ আর মায়া ছেড়ে চলে গেল। যে তাপ আর মায়া সে জীবদ্দশায় প্রথম টের পেয়েছিল ওই চওড়া পাঞ্জায় ধরা তার টুকটুকে লাল পাদুটো যা নিয়ে তার চিরকাল আদিখ্যেতা ছিল। নিন্দুকরা অবশ্য বলল বাপের মৃত্যু নিয়ে সে খানিকটা তাইই করল বটে।
শুধু নোটবুকে লেখা হল না, পিণ্ডদানের জন্য ঠিক কতটা চাল লাগে! মুখাগ্নি তিন সন্তান করল, সে শুধু ধরেছিল সেই প্রান্তটা যার অন্য প্রান্তে কোন আগুন ছিল না। পুত্র-প্রপৌত্র নিয়ে সব হাত এক হলে অস্থিভস্ম ভেসে গেল জলে। তার হাতে তখনও ঘিয়ের গন্ধ লেগে ছিল। তার চোখে ডায়াবেটিক ডিজেনেরেশান শুরু হলে তিলবাটা সামান্য লঙ্কা দিয়ে ভাত মেখে খেতে বলল কবিরাজ। তখনও সে ঘিয়ের গন্ধটা পেত। তার মনে হত জীবিত মৃতের এই একটিই মাত্র উচ্চারণ।

আর সেই জলা-জঙ্গল। টিলার ওপর থেকে বাঁকা ভ্রূ চাঁদ নামছে। ময়ূরেরা কমর বাঁধছে আকাশ একটু ফর্সা হলেই দলে দলে নামবে। নেমে ভরিয়ে দেবে কুর্তির সেই তীর যার গায়ে টিলাটা গড়িয়ে এসেছে। হাতি এসে ফেলে দিয়েছে তিনটে নিশানদিহি খুঁট। একটা বাঘ নয়, বাঘারুরও নাকি দেখা মিলেছে। গভীর রাতের। গরু-ছাগলে নাকি ভয় পেয়ে একত্রে কেঁদে-ককিয়ে উঠেছে।