মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

হাসির গল্প -এম এ আলিম



চুম্বন 

এম এ আলিম

 

লিপি নন্দী নামে আমার এক বান্ধবী ফ্রান্সে থাকে। গত সপ্তাহে সে দেশে ফিরেছে। আসলে ওর নাম লিপি নন্দী না আমি ওই ছদ্মনামটা দিয়েছি। যদি আসল নাম দিলে মানহানি মামলা করে এই ভয়ে! দেশে ফিরেই সে আমাকে ফোন করল। পদ্মার উপর স্টিমারের উপর সে চরাট করবে। মানে  Journey by steamer on the padma’ আর কি! আগামি কালই যেতে হবে। আমি আমার মামা রুবজ এ রহমানকে বিষয়টি খুলে বললাম, সেই সাথে আবদারও করলাম আমার সাথে যাতে হেল্পার হয়ে যায়। অবশ্য উনার বহু প্রেমের ডেটিংয়ের ক্ষেত্রে আমি বিনা পারিশ্রমিকে চকিদারির মহান দায়িত্ব পালন করেছি! আমি তো আর ওনাকে চৌকিদার বলতে পারি না, হাজার হোক মামা তো! তাই হেল্পারই বললাম। কি বুঝে যেন মামা রাজি হয়ে গেল।

পরের দিন আমরা রওয়ানা হয়ে গেলাম। রওয়ানা হওয়ার আগে মামা বলল- হলুদ পাঞ্জাবি পড়। আমি বললাম- আমার হিমুর মত উজবুক হওয়ার ইচ্ছে নেই। মামা আর কথা বাড়ালেন না। শুধু বললেন- তোর যা ভাল লাগে তাই পড়। টি শার্ট জিন্স পড়লাম। এ আমার চির ভাললাগার পোশাক। এ যেন সেই বিজ্ঞাপনের মত- “রুচি চানাচুর ইয়া জম্মের মজা!” প্রায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই স্টিমারে। লিপির চোখে ছিল কালো সানগ্লাস। পোশাকও পড়েছিল ধবধবে সাদা। ওর সানগ্লাসের ভিতর দিয়ে পুরো পৃথিবীকে রঙিন মনে হয়। পৃথিবীকে যৌবনবতী মনে হয়। আমাকে দেখেই তার শুশ্রী দাঁত বের করে চিরপরিচিত হাসি দিল। ওর দাঁতগুলো মুক্তোর দানার মত। ও হাসলে যেন পৃথিবী হাসে!

আমার দিকে হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, Nice to meet you.  আমিও খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম- Seme to u. মামাকে দেখিয়ে বললাম, ইনি আমার মামা রুবজ এ রহমানলিপি সালাম দিল। মামা ভেবেছিল ওয়েস্টার্ন শিক্ষায় শিক্ষিত মেয়ে হয়ত হাত বাড়িয়ে দিবে আর এই ফাঁকে একটু ছুয়েও দেখা যাবে তাকে! কিন্তু সে আশার যেন গুড়ে বালি! মামার সাথে আরও কিছু কুশলাদি বিনিময় করল সে। এরপর মামা বললেন- তোমরা কথা বল আমি একটু আসছি।

আমরা দুজনেই ছিলাম স্টিমারের সামনের একেবারে কিনারের দিকেস্টিমারটি তখন ঢেউয়ের কারণে বেশ দুলতেছিল। আমি কী একটা কথা বলাতে ওর এমন হাসি পেল যে হাসতে হাসতে আর নিজের ভারসাম্য রাখতেই পারলেন না, পানিতে পড়ে গেলেন। আর আমিও এমন উজবুক সে পড়ে যাচ্ছে জেনেও ধরার কথা মনে ছিল না! আমি চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিলাম। চারদিক থেকে মানুষ হুমরি খেয়ে পড়ল ব্যাপরটি কী তা দেখার জন্য। কিন্ত কেউ এ কুচকুচে পানির মধ্যে আর নামার সাহস পেল না।

পরের ঘটনা খুবই ভূতুরে। আমি স্টিমারেই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ দেখলাম আমি পানিতেবুঝতে পারলাম না, ভূতপ্রেত কেউ আমাকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলেছে না কি আমার গুনধর মামা…! পানিতে পড়ে আমার জিন্স প্যান্টের ওজন আমার চেয়েও ভারি মনে হল। ক্রমেই যেন আমি ঢেউয়ের তলানিতে তলিয়ে যেতে থাকলাম। হঠাৎ দেখলাম লিপির হাত উপরের দিকে। সহসা বাঁচার ইচ্ছে আরও তীব্র হল। আমি তখন বীরের মত প্রাণপণে ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করলাম। লিপি বোধ করি সাঁতার জানে না। আমি তার হাত ধরতেই সে মাথা বের করে আমাকে ঝাপটে ধরল। তাকে অনেক বেশি ওজনের মনে হল। পানিতে পড়ে নিরুপায় হয়ে পানি খেয়ে সে ওজন যেন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে! আমি ওর দিকে তাকাচ্ছি। এখন আর ওর চোখে সে চশমা নেই। ওর ডাগর চোখে সেকি বিষ্ময়! গত শতকে এ রকম ডাগর চোখ বোধ করি আমিও কোথাও দেখি নি। এ রকম চোখের দিকে কয়েকশ বছর অনায়াসেই তাকিয়ে থাকা যায়!

আমি তখনও ফান করে চলেছি। হেসে বলছি- ও আনার কলি! সেও দেখলাম চোখ পিটিপিটি করে বলছে- ও সেলিম! আমি বললাম- আমি সেলিম না, আমি আলিম!!! লিপি চির পরিচিত ঢঙ্গে বলল- You so fanny! কিন্তু অবস্থা খুবই বেগতিক মনে হল। একে তো নিজের এবং জিন্সের প্যান্টের ভার, তার উপর আবার ওর দ্বিগুণ ভার! আমি ক্রমাগতই যেন তলিয়ে যাওয়ার পথে এমন সময় কে বা কারা যেন উপর থেকে লাইফ সাপোর্ট টায়ার নিচের দিকে নিক্ষেপ করল টায়ারটি সজোরে লাগলো লিপির মাথার পিছনে। তার মাথাতে লাগতেই তার ঠোঁট আমার ঠোঁটের উপর এসে পড়ল। আমার তখন বিষ্ময়ে কেবলি মনে পড়তে লাগলো- ভারতীয় ফিল্মের নায়ক ইমরান হাশমির ঠোঁট মিলানো সেই গান- আশিক বানায়া আশিক বানায়া...

আমরা তলিয়ে গেলাম। কিন্তু বাঁচার প্রবল ইচ্ছা শক্তির কারণেই সেদিন উপরে উঠতে পেরেছিলাম। ইঞ্জিনওয়ালা নৌকা যেমন বুটকে সামনে টেনে নেয় তেমনি আমিও লিপিকে টেনে তুলি। উপরে উঠতেই দেখি সেই লাইফ সাপোর্ট টায়ার ভাসছে। মুহূর্তেই ধরে ফেললাম সেটা। এরপর লিপিও ধরল সেটা। অপার বিষ্ময় নিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকাচ্ছি।  মনে হল কয়েকশ বছর ধরে একে অপরকে দেখি না। এমন সময় উপর থেকে মামা ডাকলেন- ভাগনা! ওকে তো?

আমি মামার দিকে তাকাই। মামা হিটলারীয় ভঙ্গিতে আমার দিকে পিটিপিটি করে তাকায়। আমিও তাকাই। মামা তখন, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ড. ইউনুসের মত ৩২০০ দাঁত বের করে হো হো করে হেসে উঠলো। থুক্কু, ৩২টা দাঁত বের করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

ঘটনার এতদিন পর মনে হচ্ছে পানির নিচে আমি কি আরও কিছু করেছিলাম? থাক না সে কথা, বলতে ইচ্ছে করছে না, প্রকাশ করার ইচ্ছে নেই বলে!