রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৩

ধারাবাহিক - সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার



টরেয়া রে টরেয়া
হাতিবান্ধার টরেয়া

৩১।
মাইল মাইল দিগন্তের ভিতর,দিগন্ত পেরিয়ে আরো আরো দিগন্তের ভিতর,নদীঘেরা মানুষঘেরা অরন্যঘেরা গানঘেরা বাজনাঘেরা জীবনের অনন্ততা ছুঁয়ে কোথাও কি যাবার থাকে মানুষের! প্রশ্ন নয়,প্রত্যাশাহীন সংশয় হয়ে কবে কার কতকালের জীবন যেন মায়াকুহকময়তায় জীবনেরই বন্দনাগান।চড়িয়ে যাওয়ায় ছড়িয়ে যাবার আবহমানের আবহমানতায় চিরসত্য হয়ে জীবন যেন নুড়িভাষা নদীর অঞ্চলকথার অত্যাশ্চর্য চোরাটান।


৩২।
দিগন্তের মধ্যেখানেই তো নেমে আসে মানুষ।কত কত মানুষ।ভালোমন্দ হাসিকান্না অসুখবিসুখ নাচগান শীতবর্ষা হাটগঞ্জ পাইকারব্যাপারি বাথানটাথান টাড়িবাড়ি নিয়ে উজ্জলতর সব মানুষের যাপন দিয়েই তো একটানা বুঁনে চলা নকসিকাঁথা।পালাগানের মাষ্টার টরেয়া বর্মন পেরিয়ে যেতে থাকে সুপারিবন শুকনো বাঁশের সাঁকো।হাতিবান্ধার ধানহাটিতে নাচতে থাকে বুধেশ্বরী বুড়ি।ঢোল বাজিয়ে উড়ানি কইতরের গান বাঁধে হরিকান্ত।সবকিছু নিয়েই তো জীবনের জীবন হয়ে উঠবার প্রয়াস।

৩৩।
ধলা মুরগিটা বাচ্চা ফুটাইচে...
নদির কাছাড়ে কাছাড়ে ঘুরে বেরান মুন্সি করিম।প্রবীন চোখের ওপর তার আসমানের ছায়া।ডান হাতে কনুই-এর নিচে দীর্ঘ ক্ষতের কাটাকুটি।তুষভাণ্ডার জমিদারবাড়ির চড়ক মেলা থেকে কত কত কালখণ্ড পুরনো এক শীতকালীন সন্ধ্যেয় বড়খাতার তিস্তা সন্নিহিত জঙ্গলপথে এক চিতাবাঘ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।সে এক ধুন্ধুমার কাণ্ড।গাছের শুকনো ডাল দিয়েই করিম মুন্সির মরণপন লড়াই।সেই থেকে মুন্সি করিম দশ চল্লিশ গঞ্জগাঁয়ে মিথের মতোন।সেই থেকে তিনি ঘুরে বেড়ান জীবনময় অন্তহীন।