বিলাভারত
অভীক দত্ত
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রাজনীতির একচেটিয়া নয়। বাসে ট্রামে নন্দীগ্রামে সব জায়গাতেই এর প্রাচুর্য আছে। কুরুক্ষেত্রে কৌরবেরা যুদ্ধের সময় শুরু থেকেই হেরে বসেছিল প্রচুর সৈন্য থাকা সত্ত্বেও। এর কারণ ওই।
দ্রোণ, ভীষ্ম, কৃপাচার্য সবাই লড়লেন বটে কিন্তু আদতে তারা লড়েছিলেন চেয়ারের হয়ে। মন থেকে তারা ছিলেন পান্ডবদের পক্ষে। এর ফল হয়েছিল মারাত্মক। জয়দ্রথের মৃত্যুর পরে যখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল একাট্টা হয়ে লড়ার তখন কৌরব শিবিরে শুরু হল প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
কর্ণ যখন গরম গরম কথা বলে চেষ্টা করছেন কৌরবদের তাতানোর হঠাৎ করে কৃপাচার্য বলে বসলেন “ওহে, সূতপুত্র, অত বড় বড় কথা বলছ কেন? তুমি সব জায়গাতেই হেরে ভূত হয়ে আছো আর এদিকে বলছ তুমি পান্ডবদের মারবে”।
শুরু থেকেই এই বৃদ্ধদের পান্ডবপ্রীতিতে বিরক্ত কর্ণ যা নয় তাই বলে বসলেন কৃপাচার্যকে।বলেই বসলেন “বুড়ো তোর ওই জিভ আমি ছিড়ে ফেলে দেব”।
দ্রোণপুত্র অশ্বত্থমার মামা কৃপাচার্য। খচে গেলেন তিনি। খড়গ উদ্যত করে মারতে হাজির হয়ে গেলেন কর্ণকে। দুর্যোধন কোনমতে যুযুধান দুপক্ষকে ঠেকান।
মানেটা বোঝাই যাচ্ছে বেশ। এদের কারও লক্ষ্যই স্থির ছিল না। কেউ একাট্টা ছিল না। তার ওপর মুখে যাই বলুক দুর্যোধন, কর্ণদের মনে পাপবোধটা ছিল যে তারা পাণ্ডবদের সাথে যা করেছে সেটা ঠিক হয় নি। কর্ণ সেটা বলেও বসছেন জয়দ্রথের মৃত্যুর পরে।
২।
দাবা খেলায় যেমন সৈন্যের পেছনে মন্ত্রীকে ছুটিয়ে আচমকা হানা দিয়ে মন্ত্রী খেয়ে নেওয়া যায় সুকৌশলে, কৃষ্ণ একই ট্যাক্টিক্স নিয়েছিলেন। কর্ণের কাছে ছিল ইন্দ্রের থেকে পাওয়া কবচ কুন্ডল ও বৈজয়ন্তী বাণ। কবচ কুন্ডল আগেই হস্তগত হয়ে গেছিল, বাকি ছিল বৈজয়ন্তী বাণ। যে বাণ সযত্নে কর্ণ তুলে রেখে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র অর্জুনের জন্য।মনে রাখতে হবে কুন্তীর কাছে দেখা হবার পর কর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি অর্জুন বাদে বাকি পান্ডব সন্তানদের কিছু করবেন না।
জয়দ্রথ বধের পর পরই কুরুপান্ডবে শুরু হল ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। আর কর্ণ ছিলেন পুরো ফর্মে। একের পর এক পান্ডবপক্ষের সেনা পরাজিত হচ্ছেন দেখে অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন চল, এবার আমরা কর্ণ সংহার করি।
কৃষ্ণ ভালভাবেই জানতেন কর্ণের অস্ত্রের কথা। তিনি অর্জুনকে বাঁধা দিলেন। ব্লেই দিলেন “নাহ, মুড ভাল নেই আমার। তুমি এক কাজ কর, ঘটোৎকোচ ভাল শিখেছে ঝারপিট ওকে পাঠাও”।
অগত্যা ঘটোৎকোচ ফুল পাওয়ারে যুদ্ধ শুরু করল। আর কর্ণও ঘটোৎকোচের মায়াজালে পর্যুদস্ত হয়ে শেষ মেষ আর পারলেন না।
বৈজয়ন্তী খসিয়ে ফেললেন। অতঃপর ঘটোৎকোচের মৃত্যু এবং কৃষ্ণের তুমুল নৃত্য।
অর্জুন ব্যথিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে কৃষ্ণ ব্যাখ্যা দিলেন আসলে কর্ণর তিনটে লাইফ লাইনের শেষটাও নষ্ট হয়ে গেল। যুধিষ্ঠির সহ বাকিরা বেশি প্যানপ্যানানি করলে কৃষ্ণ বলে দেন আসলে ঘটোৎকোচের আত্মাটা নষ্ট হয়ে গেছিল তা এভাবে পরিশুদ্ধ হল।
আদতে অনার্য ঘটোৎকোচকে গিনিপিগ হিসেবে দাঁড় করিয়ে কৃষ্ণ সুকৌশলে কর্ণের ইন্দ্রপ্রদত্ত বাণের ভূমিকা শেষ করে দিলেন। সাপও মরল লাঠিও ভাঙল না। কর্ণকে এই কারনেই এতদিন কৃষ্ণ অ্যাভয়েড করছিলেন কারণ তিনি জানতেন কর্ণ যদিও জানেন অর্জুন তাঁর ভাই তবু শ্রেষ্ঠত্ব জনিত ইগোর কারণে কোনদিনই তিনি অর্জুনকে সহ্য করতে পারতেন না।
এক টার্গেটের জন্য সযত্নে সাশ্রয় করে রাখা বাণ চলে গেল ঘটোৎকোচ বধে। অব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া ইয়ে কর্ণ?
৩।
পুণ্য বল বড় বল। সততার প্রতীক যুধিষ্ঠিরের রথ ভূমি থেকে সব সময় চার আঙুল উপরে থাকত। “অশ্বত্থমা হত ইতি গজ” কেসের পর বাকিদের মতই তাঁর রথের চাকা ভূমি স্পর্শ করে।
শুধু পোস্টার টাঙালেই হয় না, করে দেখাতে হয়। স্বয়ং যুধিষ্ঠির পারেননি... তো বাকিরা...
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রাজনীতির একচেটিয়া নয়। বাসে ট্রামে নন্দীগ্রামে সব জায়গাতেই এর প্রাচুর্য আছে। কুরুক্ষেত্রে কৌরবেরা যুদ্ধের সময় শুরু থেকেই হেরে বসেছিল প্রচুর সৈন্য থাকা সত্ত্বেও। এর কারণ ওই।
দ্রোণ, ভীষ্ম, কৃপাচার্য সবাই লড়লেন বটে কিন্তু আদতে তারা লড়েছিলেন চেয়ারের হয়ে। মন থেকে তারা ছিলেন পান্ডবদের পক্ষে। এর ফল হয়েছিল মারাত্মক। জয়দ্রথের মৃত্যুর পরে যখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল একাট্টা হয়ে লড়ার তখন কৌরব শিবিরে শুরু হল প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
কর্ণ যখন গরম গরম কথা বলে চেষ্টা করছেন কৌরবদের তাতানোর হঠাৎ করে কৃপাচার্য বলে বসলেন “ওহে, সূতপুত্র, অত বড় বড় কথা বলছ কেন? তুমি সব জায়গাতেই হেরে ভূত হয়ে আছো আর এদিকে বলছ তুমি পান্ডবদের মারবে”।
শুরু থেকেই এই বৃদ্ধদের পান্ডবপ্রীতিতে বিরক্ত কর্ণ যা নয় তাই বলে বসলেন কৃপাচার্যকে।বলেই বসলেন “বুড়ো তোর ওই জিভ আমি ছিড়ে ফেলে দেব”।
দ্রোণপুত্র অশ্বত্থমার মামা কৃপাচার্য। খচে গেলেন তিনি। খড়গ উদ্যত করে মারতে হাজির হয়ে গেলেন কর্ণকে। দুর্যোধন কোনমতে যুযুধান দুপক্ষকে ঠেকান।
মানেটা বোঝাই যাচ্ছে বেশ। এদের কারও লক্ষ্যই স্থির ছিল না। কেউ একাট্টা ছিল না। তার ওপর মুখে যাই বলুক দুর্যোধন, কর্ণদের মনে পাপবোধটা ছিল যে তারা পাণ্ডবদের সাথে যা করেছে সেটা ঠিক হয় নি। কর্ণ সেটা বলেও বসছেন জয়দ্রথের মৃত্যুর পরে।
২।
দাবা খেলায় যেমন সৈন্যের পেছনে মন্ত্রীকে ছুটিয়ে আচমকা হানা দিয়ে মন্ত্রী খেয়ে নেওয়া যায় সুকৌশলে, কৃষ্ণ একই ট্যাক্টিক্স নিয়েছিলেন। কর্ণের কাছে ছিল ইন্দ্রের থেকে পাওয়া কবচ কুন্ডল ও বৈজয়ন্তী বাণ। কবচ কুন্ডল আগেই হস্তগত হয়ে গেছিল, বাকি ছিল বৈজয়ন্তী বাণ। যে বাণ সযত্নে কর্ণ তুলে রেখে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র অর্জুনের জন্য।মনে রাখতে হবে কুন্তীর কাছে দেখা হবার পর কর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি অর্জুন বাদে বাকি পান্ডব সন্তানদের কিছু করবেন না।
জয়দ্রথ বধের পর পরই কুরুপান্ডবে শুরু হল ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। আর কর্ণ ছিলেন পুরো ফর্মে। একের পর এক পান্ডবপক্ষের সেনা পরাজিত হচ্ছেন দেখে অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন চল, এবার আমরা কর্ণ সংহার করি।
কৃষ্ণ ভালভাবেই জানতেন কর্ণের অস্ত্রের কথা। তিনি অর্জুনকে বাঁধা দিলেন। ব্লেই দিলেন “নাহ, মুড ভাল নেই আমার। তুমি এক কাজ কর, ঘটোৎকোচ ভাল শিখেছে ঝারপিট ওকে পাঠাও”।
অগত্যা ঘটোৎকোচ ফুল পাওয়ারে যুদ্ধ শুরু করল। আর কর্ণও ঘটোৎকোচের মায়াজালে পর্যুদস্ত হয়ে শেষ মেষ আর পারলেন না।
বৈজয়ন্তী খসিয়ে ফেললেন। অতঃপর ঘটোৎকোচের মৃত্যু এবং কৃষ্ণের তুমুল নৃত্য।
অর্জুন ব্যথিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে কৃষ্ণ ব্যাখ্যা দিলেন আসলে কর্ণর তিনটে লাইফ লাইনের শেষটাও নষ্ট হয়ে গেল। যুধিষ্ঠির সহ বাকিরা বেশি প্যানপ্যানানি করলে কৃষ্ণ বলে দেন আসলে ঘটোৎকোচের আত্মাটা নষ্ট হয়ে গেছিল তা এভাবে পরিশুদ্ধ হল।
আদতে অনার্য ঘটোৎকোচকে গিনিপিগ হিসেবে দাঁড় করিয়ে কৃষ্ণ সুকৌশলে কর্ণের ইন্দ্রপ্রদত্ত বাণের ভূমিকা শেষ করে দিলেন। সাপও মরল লাঠিও ভাঙল না। কর্ণকে এই কারনেই এতদিন কৃষ্ণ অ্যাভয়েড করছিলেন কারণ তিনি জানতেন কর্ণ যদিও জানেন অর্জুন তাঁর ভাই তবু শ্রেষ্ঠত্ব জনিত ইগোর কারণে কোনদিনই তিনি অর্জুনকে সহ্য করতে পারতেন না।
এক টার্গেটের জন্য সযত্নে সাশ্রয় করে রাখা বাণ চলে গেল ঘটোৎকোচ বধে। অব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া ইয়ে কর্ণ?
৩।
পুণ্য বল বড় বল। সততার প্রতীক যুধিষ্ঠিরের রথ ভূমি থেকে সব সময় চার আঙুল উপরে থাকত। “অশ্বত্থমা হত ইতি গজ” কেসের পর বাকিদের মতই তাঁর রথের চাকা ভূমি স্পর্শ করে।
শুধু পোস্টার টাঙালেই হয় না, করে দেখাতে হয়। স্বয়ং যুধিষ্ঠির পারেননি... তো বাকিরা...
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন