শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৩

ধারাবাহিক - অরিন্দম চন্দ্র

দিল্লী কা লাড্ডু
অরিন্দম চন্দ্র


কে যেন বলেছিলেন যে বাংলা আজ যা ভাবে কাল সারা দেশ তাই ভাববে তিনি একটুও ভুল ভাবেন নি।এই যে বাংলার বিদ্দ্বজ্জন যাঁরা বারাসতের মত জঘন্য ঘটনার পরও সুশীল সমাজী নিরবতা পালন করছেন,দেখে নেবেন কাল গোটা ভারতের বিদ্দ্বজ্জনেরাও একইরকম মৌনীবাবা হয়ে যাবেন।কিন্তু মুশকিল একটাই।যত রত্ন বা ভূষণ বা বিভূষণ পশ্চিম বাংলায় আছে ভারতের স্টক সীমিত থাকায় এত উপাধি-টুপাধি দেওয়া ...

গৌরচন্দ্রিকা থাক।প্রথম কথা এই সুশীল বাবুরা তাদের নিরবতা নিয়েই থাকুন,আমাদের কাজ আমাদেরকেই করতে হবে।ধর্ষণের বলি তারা হয় না,দাঙ্গায় ঘর তাদের পোড়ে না,চাকরী যাওয়া বা না পাওয়ার গ্লানি তাদের নেই আর বাজারের চাল-ডাল-তেল-নুনের চক্করে তাদের টিকি দেখা যায় না।এসবের ভোগের দায় আমার-আপনার।কাজেই মোমবাতির আর রাজপথের অধিকার তাদের যাক,আসুন আমরা সে অধিকার কেড়ে নি।“Prominent “ শব্দটা আমাদের বিশেষণ নাই বা হল,গেরস্থালী পাগ বা স্পিতজ এর চেয়ে রাস্তার কুকুর অনেক ভালো,অন্ততঃ অধীনতার নিগড়টা যাক।

বাংলায় কি এখন সব কিছুই ফেসবুকে?উন্নয়নও ফেসবুকে প্রতিবাদও ফেসবুকে? অস্বীকার করার যায়গা নেই যে কর্পোরেট মিডিয়ার দাপাদাপিতে অলটারনেটিভ মিডিয়া হিসাবে এই সব সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি আজ প্রথম সারিতে উঠে এসেছে।কিন্তু শুধুমাত্র ফেসবুক বা টুইটার?রাস্তায় নামা নেই,বাসে-ট্রামে প্রতিবাদ নেই,ঘরোয়া আড্ডাতেও নেই।মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের যে তিনজন ব্লগার প্রথম শাহবাগ স্কোয়ারে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন তাঁদের আশা ছিল কয়েক-শ মানুষের জমায়েত হবে,কিন্তু প্রথম সমাবেশে প্রায় সাত হাজার মানুষে র ঢল তাঁদের শক্তিশালী করেছে।আর এই বাংলায়?

আজ গড়পড়তা বাঙ্গালী শুধু সুশীলবাবুদের নামে খেউড় করেই দিব্যি নিদ্রা যাচ্ছেন,যেন দায়টা তাদের বাপের।আসলে সুবিধার ব্যাপারটা ওরা একা বোঝেন তা নয়,ওদের মতন আমরাও বুঝি কিভাবে দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজে তোফা থাকা যায়।দিল্লীতে যে ঘটনা সকলকে এক করতে পেরেছিল,শাহবাগ যে এখনও তার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তার মূল কারন হল এই যে মানুষ পথ আর সোশাল মিডিয়া,দুটোই দখল করতে পেরছিল,আমরা শুধু দ্বিতীয়টা,তাও অসমপূর্ণ।

ভেবে দেখার দরকার এই “বুদ্ধিজীবি” শব্দটাকেও।আমি আপনি কি বুদ্ধি ছাড়া দিন গুজরান করি?যিনি তুলি-ক্যানভাসে কাজ চালান আর যিনি বাড়ীর ঘর মোছেন দুজনের মাথায় একই ক্যালকুলেশন,কতটা আয়াসে কাজটা ভালোভাবে শেষ হবে।যত এদের আলাদা করে আমাদের ভাবনার দায় এদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হবার চেষ্টা করি না কেন,ঘরে আগুন লাগলে তখন আর ফুটো ঘটিটাকে কপালে মেরেও একফোঁটা জল আসবে না।তাই আজ নির্দ্বিধায় শাসকের প্রশ্নঃ “আপনারা কি Prominent?”

আরও একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা দরকার।বারাসতের নির্মম ধর্ষণ কাণ্ডের পর খুব সুক্ষ্ণভাবে ছড়ানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বিষ।বাঙ্গালী আজ বিভক্ত বাঙ্গালী।যে সাম্প্রদায়িকতার জন্য আজ আমরা বিভক্ত সেই শত্রু আজ আবার মাথা চাড়া দিচ্ছে।বিভিন্ন রকমের সুড়সুড়ি খেয়ে আমরা না আবার ভ্রাতৃঘাতী উল্লাসে না মেতে উঠি।

তাই বাঙ্গালী জাগো বলে শেষ করবো না,শুধু একটা যন্ত্রণা শেয়ার করব।দিল্লীর মেয়েটি যেভাবে মানুষকে মাঠে ময়দানে একজোট করতে পেরেছিল আমাদের কামদুনির মেয়েটি কি আরো নৃশংসতার শিকার হলে বাঙ্গালীও একজোট হবে?না কি আমরাও দিল্লী কা লাড্ডু ভেবে খাওয়া বা না খাওয়ার মাঝামাঝি ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলে থাকব?উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।