রবিবার, ২ মার্চ, ২০১৪

ধারাবাহিক – রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

অবভাস



চতুর্থ অধ্যায়

৪।
ফকিরের কানা চোখে / রাতফুল ফোটে / চাতকেরা উড়ে উড়ে / চাঁদমারি লোটে

তার ছোট্ট ঘরের দেওয়ালগুলো কখনও মনে পড়ে, মনে পড়ে নুয়ে আসা জানলাগুলো আর ভুঁয়ে এসে পড়া ছাদটার কথা। যেখান থেকে শুরু হয়েছিল।

আরও কী সব মনে পড়ে যেন।

মনে পড়ে ঘুরন্ত স্কার্টের নিচে অনেকটা টানা শাদা মোজা, আর ঠিক তেমনই শাদা জুতো।
মনে পড়ে এক এককে এক কখনই হয় না।
বরং, এখানে একটা মায়া আছে। মায়া তার মা। মাটি থেকে ওঠে। অনেক দূর পর্যন্ত যায়। কিন্তু, শূন্যে মেলায় না। আবার মাটিতেই নেমে আসে।
এখানে একটা স্কুল হবে। প্রাথমিক স্কুল। যেমনটা সে পড়েছিল। কুড়ি-কুসুম-পরাগ-কেশর-কিশলয়। ঠাকুরদালান। তবে জলচৌকি আর মাদুর সারি দিয়ে নয়, গোল করে পাতা হবে।
ঠাকুর থাকবে না। থাকবে রাধাকৃষ্ণচূড়াগাছ। বৃক্ষপুজো হবে। বসন্ত সমাগমের দিনে।

ভূটান পাহাড় থেকে তখন রোদ পিছলে নামবে। কাঞ্চনজঙ্ঘার একফালি সেই রোদ ঠেলে শুভ্রসমুজ্জবল উঁকি দেবে। আর চা-বাগানের ওপর একটি কুঁড়ি দুটি পাতা চোখ মেলবে।
কল্পদৃশ্যে এই সবও মনে পড়ে। তার অবদমন। সে বলত তার প্রিয় ছাত্রদের।

তখন যা সে পেতে চাইছে তা হল তার নোটবুক। কত আঁকিবুঁকি করা ছিল। তখন যা সে লিখতঃ

১) জেলা – জলপাইগুড়ি, মৌজা – বারদিঘী, খতিয়ান নং – ১৭৮, জে এল নং – ১৩,
থানা – মাটিয়ালি, দাগ নং – ৩১২, জমির মোট পরিমাণ – ০.৩৩, জমির শ্রেণী – ডাঙা
২) দাগের মোট পরিমাণ – ৪.৩২ একর, দাগের মধ্যে অত্র স্বত্বের অংশ – ০.০৭৬৩
দাগের মধ্যে অত্র স্বত্বের জমির অংশের পরিমাণ – ০.৩৩ একর

সেই মুহূর্তে বাস্তুকরণের জন্য তার যা যা প্রয়োজনঃ

১) দলিল জেরক্স
২) খতিয়ান জেরক্স
৩) খাজনার রসিদ জেরক্স
৪) পঞ্চায়েত খাজনার রসিদ (?)
৫) প্রধান এন ও সি
৬) প্ল্যান, প্রোজেক্ট রিপোর্ট, আনুমানিক খরচ

তাকে একটা ১৯৯ টাকার ডি সি আর কাটতে হবে।

একটা স্কুল হবে, আর একটা লিটিল ম্যগাজিন লাইব্রেরি।