শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

শঙ্খ ঘোষ সিরিজ - অরুণাচল দত্তচৌধুরী

শঙ্খ ঘোষ সিরিজ
অরুণাচল দত্তচৌধুরী

(১)
শব্দ হরিণ ধরবে বলে
পদ্য মাখা ফাঁদ
দিন রাত্তির বিছিয়ে রাখে
এ’টাই অপরাধ
লোকটা সে দোষ স্বীকার করেও
সংযত নয় মোটে
সমস্তক্ষণ শব্দ সাজায়
সুখে ও সংকটে
বিষণ্ণ এই পৃথিবী ছোঁয়
জ্যোৎস্নামাখা চাঁদ
মরতে মরতে মানুষ মাখে
বাঁচার অপরাধ।
কলম যখন আঁচড় কাটে
অস্ত্র বোধ হয় ওটা
গড়িয়ে পড়ে অমৃত আর
আগুন বিষের ফোঁটা
লক্ষ হাজার অযুত ফোঁটায়
বর্ণমালার নদী
দিনযাপনের পাপগুলো সব
ভাসায় নিরবধি
তাই তো তাকে শাস্তি দিলাম
আমরা অতঃপর ...
নদীর পারেই বসত করো
শব্দ নিয়ে ঘর



২)

পালিয়ে যাওয়া অবাধ্য শব্দেরা
ফিরছে শঙ্খ ঘোষের পিছু পিছু
প্রায় দিগন্তে যাদের ঘোরাফেরা
তারাই জানে আকাশ কত নীচু
সত্যি কথা বলার পরেই শোনো
ঘরপোড়াদের সিঁদুর মাখা মেঘে
যদিও আমরা বলি না কক্ষনো
যাচ্ছে ভয়ের গোপন কথা লেগে
সে’সব আগুনজলের কাহিনিকে
সাবধানীরা ভাবছে অবান্তর?
ভাবলে ভাবুক। কলম শুধুই লিখে
রাখছে নিজের শরীর ভরা জ্বর।


অজ পাড়াগাঁয় শহর মফসসলে
তুচ্ছ এখন জ্বরের আলোচনা
টিভির বাক্সে সন্ধ্যে সকাল দোলে
সংস্কৃতিময় সিরিয়ালের ফণা।
মন তো খারাপ হচ্ছে প্রতিদিনই
আমরা বরং কবিকে নিই চিনে
শব্দভেদী বান পাঠালেন যিনি
পুব পশ্চিম উত্তরে দক্ষিণে



৩)

তুমি নাকি প্রকাশ্যে গোপনে
লিখে যাচ্ছ সমসাময়িক?
সমস্ত পড়িনি। মনে মনে
ভেবে গেছি ... পড়ে নেবো ঠিক
আমার এই পল্লবগ্রাহীতা
যদি পারো ক্ষমা করে দিয়ো
যুদ্ধারম্ভে পড়ে নেবো গীতা
আপাতত শান্তি বড় প্রিয়
বাজেটের প্রতিরক্ষাখাতে
জমা থাক নির্ভেজাল দেনা
আমি জানি তোমার লেখাতে
ঘুম ঘুম শান্তিটি মেলে না
রোজ দিন ক্লান্ত মনে দেহে
তবু তুমি আমারও বিবেক
নেতা বলে ‘শঙ্খ ঘোষ কে হে?’
আমি বলি ‘আগে বাংলা শেখ্’!



৪)
কাটআউট ভরা বিজ্ঞাপনের রাজা এবং রাণী
মুখ ঢাকা এই শহর বোঝে সমস্ত শয়তানি।


মাঝ দুপুরে শহর জুড়ে বৃষ্টি নেমেছে
রাস্তার তো ভেজার কথাই। আর কে ভিজেছে?


ভিজল হয়তো কাগজ কলম কবিতা একপাঁজা।
কবি নিজেও ভিজল বুঝি? মেজাজটাই তো রাজা।


না থাকলে সে, যমুনাবতী জন্মাতে পারতো না।
সেই তো দেবে শেষ বিকেলের বাবরকে প্রার্থনা।


ভিজবে না তাই আগুন। বুকের জ্বলতে থাকা পাবক
বুঝিয়ে দেবে বন্ধু কে, ... আর ... কে সেই অভিভাবক!


৫)
জীবিতরা মিশে যায় মিথ-এ
মোড়ে মোড়ে ফ্লেক্স ঝোলে ফ্রেশ
এরই মাঝে গ্রীষ্মে ও শীতে
ভাষা নিয়ে ঘোরো দরবেশ


ঝুলিভরা জাদু মুখরতা
দুয়োরে দুয়োরে কর ফেরি
ভয়ে আলো চেনেনা জনতা
হাতে হাতকড়া মনে বেড়ি


তারা চেনে তোলাবাজ নেতা
তারা চেনে রংবাজ পেশী
কী বা লাভ জেনে কবি কে ... তা’
পাগলু চেনালে লাভ বেশি


আরও লাভ যদি চেনা যায়
ফ্লেক্স যার মুখের বিলাস
যুদ্ধ তো রাজায় রাজায়
উলুখড় হয়ে যায় লাশ


তোমাকে সাক্ষী মানে তারা
রীতি মেনে অবজ্ঞাও করে
আমাদের অত নেই তাড়া
ভাষা দাও আমাদের স্বরে



৬)


তোমাকে অনেক দিতে সাধ হয়, ভাঁড়ারে শব্দ নেই তাই
তোমারই বাগান থেকে তুলে আনি, যত্ন করে গাঁথি সুতো দিয়ে
চিনতে পেরেছো হয়তো, কিম্বা সেই গ্লানিমাখা শব্দ অভিলাষ
আমাকে তেমন করে ছুঁতেই পারেনি কোনওদিন
তবু শোনো ধার চাইছি, কথা দিচ্ছি যথাকালে শোধও দিয়ে দেব
বিধিমত দাবী করলে সাথে অতিরিক্ত দেব বিক্রয় কোবালা


আমার ধ্বংসবীজ জন্মাবধি এখানে প্রোথিত। ঠিকমত মাটি জল পেলে
চিৎকারশব্দে এক নতুন অঙ্কুরমালা জ্বলে উঠতে পারে
পাথরে শেকড় গেঁথে কথাবৃক্ষ উঠে যাবে আকাশের দিকে
এমন প্রার্থনা করলে, চেনা দুর্যোগের মত ঘুর্ণি পাঠিওনা
ঝিমধরা সময়কে চোখে চোখ হৃদয়ে হৃদয় রেখে বলতে দিও
তোমার সমস্ত নিতে সাধ হয়। আপাতত মুছে দাও ভুল ধ্বংসটুকু ...


৭)
ইচ্ছে হলে দিনগুলোকে কচকচিয়ে মেঘ মাখিয়ে খাবো।
আঁশ থাকলে ছিবড়ে হবে। সেটুকু ঝুঁকি সবসময় থাকে।
দাঁতের ফাঁকে কবিতাকুচি খোঁচাতে হবে গোপন টুথপিকে
তবেই সেই দন্তরুচি ভদ্রভাবে প্রকাশ করা যাবে
ট্রাফিকরুল ভঙ্গকারী কঠিনতম শাস্তি পাবে জেনেও
অশ্বমেধে চলেছে তবু কবির দল দেশে ও সন্দেশে
উল্টোদিকে ডাস্টবিনের আড়াল থেকে জাতভিখিরি যারা
খাবলে খায় গায়েও মাখে গতরাতের উদবৃত্ত ব্যথা
তরকারিও সেইটুকুই দরকারি যা ভাষ্য মেনে চলে
মনোমোহন মোহনভোগ দেবার আগে রোজ দু'বার ভাবে।
কথাটা ঠিকই কবিতা নয় সুলভ যাদু ... অ্যাফ্রোডিসিয়াক
অ্যাণ্টাসিড সহযোগেও। তবু কিছুটা সহজপাচ্যতা
দাবী করেছে কলমহাতে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক যুবতীরা।
কালিতে নয় ... কলমে নয় ... কি-বোর্ডের নকল কথকতা
ছদ্মবেশে যজ্ঞভূমি বিনা আয়াসে দখল করে আছে।
ওদের আজ প্রশ্ন কর। দখল কর কবরখানাগুলি।
দৈর্ঘ আর প্রস্থ মাপো। খুঁড়তে থাকো নিজের উচ্চতা।
সবাই যেন উঠতে পারে, নিজেই ... শেষ কেয়ামতের দিনে।
প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিচারসভা সাজিয়ে রাখা আছে
সাজান আছে সওয়াল আর নিজের মত তীক্ষ্ণ যুক্তিও।
আর তা'ছাড়া সবাই জেনো লক্ষ্যভেদে ততটা পটু নয়।
মুখোশদের দাঁত থাকে না। আড়াল থেকে নিজের উদ্যোগে
ইচ্ছে হলে চিবিয়ে খাবো প্রাত্যহিক দিনযাপনগুলি
বাঁচুক শুধু ঝড়ের মত শর্তহীন কবিতা কল্পনা



(৮)

আমার বড়ই জ্বর। এসো তুমি। বসো এই ঘরে।
কবিতাপ্রপাত এনে ঢেলে দাও আমার শিয়রে।
ভয়ের তরাসে জ্বর। এ’ অসুখ দারুণ ছোঁয়াচে।
প্রতিবেশীরাও নাকি নিত্যদিন পোড়ে এরই আঁচে।
শরীরে কাঁপুনি ওঠে। জড়োসড়ো হয়ে থাকে মনও।
তবুও বুঝতে পারি পাণ্ডুলিপি গাঢ় আর ঘন
কুয়াশার মত ঝরছে মেলে রাখা খাতায় কাগজে
তুমি যা বলতে চাও সবই ওই বর্ণমালা বোঝে
সবুজ হলুদ লাল অস্যার্থে পুরো ভিবজিওর
রাত কিছু রঙ ঢালে, বাকি সব রঙ জানে ভোর।
পাকদণ্ডী বেয়ে উঠে আকাশে ছড়িয়ে যায় রঙ
একে কি স্বপ্ন বলব? কবিতাই বলছি বরং ...
বুঝি না জ্বরের ঘোরে যা দেখেছি, সবই কি কবিতা?
অসুস্থ সময়কে আরোগ্য এনে দাও পিতা।

2 comments:

Kiriti বলেছেন...

Excelent, Sir! I am so happy that you are into writing poetry so seriously! Missing your smile and warmth, so badly, Dr!

Preetha Roy Chowdhury বলেছেন...

osadharon ekti series porbar soubhagyo labh korlam.