শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

মলয় রায়চৌধুরীর অপ্রকাশিত ডাইরি


খামচানো কালপৃষ্ঠা
কী ভাবে যৌবন ফিরে পাওয়া যায়
মলয় রায়চৌধুরী



উত্তরপ্রদেশের নেপাল সীমান্তের, পাহাড়ি জঙ্গলঘেঁষা গ্রামগুলোয় ক্ষেত্রসমীক্ষা করতে গিয়েছিলুম, আমার সঙ্গে সহায়ক হিসেবে পশুচিকিৎসক অফিসার, তেলেগুভাষী, ডক্টর রাজাইয়া । ভারত সেবাশ্রম সংঘ আর কোনও একজন রাজনৈতিক নেতা কেন্দ্র সরকারকে অনুরোধ করেছিল এই ধরণের একটি ক্ষেত্রসমীক্ষা করাবার জন্য । আমাদের কাজ ছিল খাঁটি ভারতীয় গোরু বলে কিছু আর অবশিষ্ট আছে কি না তা খুঁজে বের করা । তাঁদের বক্তব্য ছিল যে সারা ভারতবর্ষ ছেয়ে গেছে সংকর জাতের গাইগোরুতে । ক্যালেন্ডারে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যে গোরুগুলো দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো নিউ জারসি বা হলস্টিন ফ্রিজিয়ান । বাজারের বিশ্বায়নের বহু আগে থাকতে গৃহপালিত জানোয়ারের বিশ্বায়ন হয়ে চলেছে । হায়দ্রাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যন্ড মলিকিউলার বায়লজি সংস্হার বিজ্ঞানীরা ভারতবর্ষের সবরকম গোরুর জিন মানচিত্র তৈরি করছিলেন সেসময়ে । তাঁরা জানতে চাইছিলেন কোন-কোন গোরু সবচে বেশি দুধ দেবে, মাংস দেবে আর খাটুনির বলদ দেবে । আমাদের অনুসন্ধান ছিল একেবারে আলাদা । গোমাতা নামে কি কোনও প্রাণী টিকে আছে, নাকি সবই হয়ে গেছে কাউমাম্মি ?

মুম্বাই থেকে বিমানে লখনউ, তারপর অ্যামবাসাডর গাড়িতে পিলিভিত, তারপর বনানীর ভেতর দিয়ে যতদূর জিপগাড়িতে বসে ঘন জঙ্গলের গ্রামগুলোয় ঢোকা যায় । শেষে মৈলানিতে ক্যাম্প করে সোনারিপু, ধনগড়হি, কৈলাটি, চন্দনচৌকি । বেশির ভাগ জায়গায় রাতে ফেরা অসম্ভব বলে কোনো ধনী পাঞ্জাবির বা গ্রামপ্রধানের অতিথি হয়ে থেকে যেতে হয়েছিল । নেপালের জঙ্গলঘেঁষা গ্রামগুলোয়, দেশভাগের পর, পাঞ্জাবি শিখ আর পূর্বপাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের সাড়ে সাত একর করে জমি দেয়া হয়েছিল । বাঙালি পরিবারদের জমি বন্টনের সময়ে লক্ষ্য রাখা হয়নি যে পরিবারটি চাষি কি না । পাঞ্জাবিরা যারা জমি পেয়েছিল তারা, গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটির হস্তক্ষেপে, সবাই চাষি পরিবারের । ফলে বাঙালিরা জমি হস্তান্তর করে দিনমজুরে রূপান্তরিত । সেসব কথা পরে আরেকদিন ।

দুসপ্তাহের ঘোরাঘুরিতে আমরা খুঁজে পেয়েছিলুম জংলি গোরুর পাল, স্হানীয় উত্তরখণ্ডীদের সাহায্যে, যাদের গ্রামগুলো আরও ওপরে । হ্যাঁ, জংলি । শহরাঞ্চলের গাধার মাপের ছোটো-ছোটো গোরু । জঙ্গলে শত্রুর সঙ্গে লড়ার জন্যে সামনেমুখো ছুঁচালো শিং । খুর একটু বড়ো যাতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ছুটে নামতে পারে । পাঞ্জাবি শিখরা গোটাকতককে ধরে দেখেছে এক-দেড় লিটারের বেশি দুধ দেয় না । বলদ বানিয়েও লাভ হয়নি ছোটোগতর বলে। খাবারের লোভ দেখিয়ে রাতের বেলায় পাঁচিল ঘেরা জায়গায় এক-একটা পালকে বন্দী করে বায়োগ্যাসের গোবর সংগ্রহ করে কেউ কেউ । তবে বিশুদ্ধ থাকতে পারবে কি না বলা যায় না। সমতল থেকে মারোয়াড়িদের ছাড়া ধর্মের ষাঁড় গন্ধ শুঁকতে-শুঁকতে উঠে এসেছে জঙ্গলে।


একদিন সকালে আমাদের ডাকতে এলেন বিডিও । বললেন, জলে ডুবে-মরা একটা বাঘের পোস্টমর্টেম করতে হবে, আর তার জন্য ডক্টর রাজাইয়াকে প্রয়োজন । জেলাসদর থেকে বন বিভাগ বা পশু বিভাগের পশুচিকিৎসক আসতে-আসতে দেড়-দুই দিন লেগে যাবে । জেলা শাসক বলেছেন ডক্টর রাজাইয়াকে দিয়ে করিয়া নিতে । আমরা গিয়ে দেখলুম, একটা বাঘিনী। স্হানীয় খালের দুধার সিমেন্ট বাঁধানো ; বাঘিনীটা জল খেতে গিয়ে পড়ে গিয়ে থাকবে । অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারেনি । জলে সাঁতরে কয়েকদিন টিকে ছিল । তারপর আর পারেনি ।

বাঘিনীটাকে, ডক্টর রাজাইয়ার নির্দেশমতো, চারজন লোক চার পা ধরে চিৎ করে শুইয়ে দিল। পাগুলো ধরে রইল পোস্টমর্টেমের সুবিধার জন্য । বুকের ওপর স্তনের সারি; রাজাইয়া বলল, দেখছেন তো, বাঘিনীও আমাদের সেক্স অ্যাপিল দিতে পারে। ( আমার 'অপ্রকাশিত ছোটগল্প' বইতে বাঘিনীর সঙ্গে সেক্স নিয়ে গল্প আছে ) । ক্রমশ ভিড় বাড়তে লাগল, স্হানীয় পাহাড়িদের ভিড় । তাদের সকলের হাতে পাত্র । বিডিও বলল, এরা বাঘের সবকিছু খায়, রক্তও । শুকিয়ে নেপালে পাচারও হয় । নেপাল থেকে চিনে । ভালো দাম পাবে ।

কাটাকুটি শুরু হতে, কুড়ি-পঁচিশ বছরের একজন পাহাড়ি যুবক আমাকে এসে বলল যে, হুজুর, আমাকে দুটো স্তনের বোঁটা দেবেন । সবাই আমাকেই খাতির করছে দেখে ভেবে থাকবে আমিই বাঘিনীর লাশের মালিক । আমার কোঁচকানো ভুরুর দিকে তাকিয়ে যুবকটি বলল, আমার একজন বউয়ের পঞ্চাশ বছর বয়স হল ; ওর মাহওয়ারি আর হয় না । ওদুটো খেলে আবার ওর বাচ্চা হবে , জোয়ান হয়ে উঠবে । বিডিওর দিকে তাকাতে, বিডিও বলল, স্যার স্হানীয়দের মধ্যে এখনও একাধিক স্বামী বা একাধিক স্ত্রীর প্রথা বজায় আছে ।


স্তম্ভিত বলতে যা বোঝায়, তাই হলুম । বাঘিনির মাইয়ের বোঁটা খেয়ে আবার মেন্সটুরেশান শুরু হবে, যৌবন ফিরবে !