মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

গুচ্ছ কবিতা- দেবাশিস মজুমদার

কৈফিয়ত 


পাহাড়কে ভালবেসে তার চূড়া থেকে নেমে এসেছিলাম
আবারো ফিরবার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ঠিক যেমনটা
বলেছিলাম সমুদ্রকে, আপাদমস্তক নিমজ্জিত হয়ে তার
বুকের গহিনে, জানিয়েছিলাম এখানেই থেকে যেতে চাই
ঠিক কতবার আওড়েছি মনে পড়েনা ঝিলের ধার ঘেঁষে
সাদা বক
দেখে নিও তোমার মত আমিও একদিন অমন সন্ন্যাসী হব
ছোট্টবেলায় বোষ্টুমীর গান শুনে তার পিছনে ছুটে ছিলাম
আমাকে তোমার সাথে নাও প্লীজ, নাওনা আমায়, আমি
প্লাস্টিকের টিয়ে পাখি চাইনা আর, ভূমিকা  ক্রমশ দীর্ঘ
করছি, কৈফিয়ত রহস্যগল্পের সন্দেহজনক চরিত্রের মত

ওখানে পড়ে আছে অঙ্কুরগুলোর শব, রক্ত, ফিডার
পড়ে আছে কোথাও, দুধ গড়িয়ে গড়িয়ে চলে গেছে
বহুদূর, দেখি আর রক্তাক্ত হই, চোখে, ভেতরে কোথাও
ঠোনা মারেন চে- আরে ধম্ম নয়, বাচ্চাগুলোকে দেখ,
ওরা তখনো তোদের ধম্মের মারপ্যাঁচ বোঝেনি ওরা
মরে যাচ্ছে হুড়মুড়িয়ে, আর তোরা টিভি সিরিয়াল
দেখ বসে বাড়িতে, কেননা, তোদের যা আছে তা
মনতো নয় - একেকটা বেশ্যালয়।

একটু পরেই সন্ধ্যা ভাঙ্গবে, বুকের ভেতরটা দুমরে মুচড়ে
উঠবে আবার, ইচ্ছে হয় চিৎকার করে উঠি, অক্লেশে দৌড়ে
যাই যুবক ষাঁড়ের মত, খানিক পরেই সব ভুলে যাই, আর
বোতলগুলো খালি হলে প্রতিবিম্ব দেখা যায়
এভাবেই আছি, রোজ আমাদের ভাগ্য বিচার করেন
মহামান্য তোতা,
এবং কবিতা যেভাবে আসে বিপ্লব তো সেভাবে আসে না
তাই অগত্যাই
শূন্য বোতলে ডুবুরী হয়ে সাঁতরাই



ফ্রগ প্রিন্স

 

সন্ধ্যার সখ্যতা বেড়ে গেলে
মেট্রোপলিটন তাড়া খায় ফুলহীন বিষণ্ণ অভিমানগুলো ,
মগজের প্লাটফর্মে এলোমেলো পায়চারি করে
নিষিদ্ধ কল্পনা।

শোনো তোমাকে মানায়না ওটুকু সিঁদুরে,
রোজ শরীরের পাড় ভাঙে বানভাসি বিছানা চাদরে।
তবু দুঃখ করোনা চারুশীলা,
এই নাও তোমাকে দিলাম আঁধারের নিজস্ব উপাদান,
আবেগী সন্ত্রাস চাও? তাও নিতে পার, যৌবন চুষে খাওয়া
অনন্ত নক্ষত্রবীথি, জয়ন্তী নাও কিংবা ঝিলম নামের নদী।

তোমার মোহে বিবশ এখন, ঈশ্বর ভেসে যাক,
নিজের কাছে এবার ফিরে এসো, আমি তোমার বুকে
গুজে দেব বনজ ফুল, চিনতে পেরেছ? আমি
ব্যাঙ রাজপুত্তুর।


থিয়েটার

 

বেমৌসুমী গোলাপের মত বিকেলের চাদর খোলা বুকে
তারা রানী ঝাড়ুর ঝাটে ঝাটে খেদায় রোদ্দুর,
বাল্মিকী প্রতিভায় লোকটা প্রকৃতির নায়ক আনন্দ হয়েছিল
অবেলায় মদ গিলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে পরে থাকে এক কোণে।
মিনসেটা এখনো গায় 
আমি তাপিত পিপাসিত, আমায় জল দাও
গ্রীষ্ম নেই, শীত নেই, বর্ষা নেই রংহীন জলে ভাসে ঘূর্ণির ক্ষুধাচক্র,
রোজ রোজ চাঁদের ওপিঠে কবিতা লেখেন ব্রহ্মা
প্রেম মানে মিষ্টি সংসার, আলতো ঘর, ধোয়া ওঠা ভাত, কাচা লঙ্কা;
লবডঙ্কা – প্রেম মানে আদতে এক বিরাট আশার পাহাড়, বুকের
ভেতর বহু জমিজমা, পাখপাখালি, ঘরের বাইরে নদী,
কাঁচের।

একটা শালিক শুধু ঠোকরায়,
তারারানী জানতে চায়- ও পাখি তোমার বয়স কত?
তোমারও অসুখ করেছে! কী অসুখ?
মৌনতা বলে অসুখের নাম হাহাকার।

 


উড়তে উড়তে

অতএব সেই সমস্ত মনেরা ক্লান্ত থাক,
বহ্নি পাতাগুলো শুষে নিক ফসিলের ঘ্রাণ,
দুপুর জিরোক খানিক বেহিসেবি ছলে,
কিশোরীরা বেণীতে বাধুক মেঘেদের গান,
বিকেলের লাল থমকে থাক শাড়ির আচলে,
আজ আমি কিছুই নেবনা, এসমস্ত প্রচ্ছন্ন
প্রলোভন কিংবা ভালবাসাবাসি, সব
তোমাদেরই থাক;

ধাতব পাখির বুকেও জেনো অযুত কান্না আছে