শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ভালোবাসি বাংলা - প্রবাসে বাঙালির জীবন - ইন্দ্রাণী সরকার

প্রবাসে (আমেরিকায়) বাঙালির জীবন
ইন্দ্রাণী সরকার


আমেরিকায় বাঙালির জীবন নিয়ে লিখতে বসে অনেক কিছু কথাই মনে পড়ছে | এখানে ছাত্র অবস্থাতেই বেশির ভাগ লোকেরা দেশ থেকে আসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য | লেখাপড়ার যে পদ্ধতি তা দেশ থেকে অনেকটাই আলাদা | ছাত্রছাত্রীরা কলেজের ডর্মে (হোস্টেল) থেকে পড়াশুনা করে | কলেজের (ব্যাচেলর) মেয়াদ চার বছরের হয় | স্নাতক (ব্যাচেলর) ডিগ্রী লাভ করা যায় ক্রেডিট হিসেবে | প্রতি বছরে যে কোর্স নেওয়া হয়, তার উপর পরীক্ষার ভিত্তিতে গ্রেডিং হয় | ছাত্রছাত্রীদের অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয় কোর্স পছন্দ করার ব্যাপারে |

স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দুই বছরের | এখানেও ক্রেডিট হিসেবে ডিগ্রী প্রাপ্তি হয় | পড়ার চাপ স্নাতক বা বি. এস. ডিগ্রী থেকে অনেক কম হয় | এরপর পি. এইচ. ডি. আর তারপর পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রী তো আছেই |

আপাত পড়াশুনা শেষ করার পর চাকরির খোঁজ, বিভিন্ন জায়গায় রেসুমে পাঠিয়ে চাকরির অ্যাপ্লাই করা সে সব তো আছেই যা প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই |

সংসারী লোকেরা প্রথমেই সুবিশাল অট্টালিকায় বাস করতে পারে না | জীবন শুরু হয় ভাড়া এপার্টমেন্ট (ফ্ল্যাট) থেকে, তারপর ধীরে ধীরে কন্ডমিনিয়াম বা টাউনহাউস এবং তারপর নিজস্ব বাড়ি | এর মধ্যে থাকে কত পরিশ্রম আর প্ল্যানিং| বাড়ি তো সাধারনত কাঠের হয় কিন্তু তার দাম তো অনেক | কিস্তিতে বাড়ি কেনা হয় | ব্যাঙ্কের থেকে ধার নিতে হয় যা প্রতি মাসে একটু একটু করে শোধ হয় | শহর ছাড়া যে কোন শহরতলিতে গাড়ি ছাড়া জীবন চলবে না | বাজার, অফিস, বেড়ানো সবেতেই গাড়ির নিতান্তই প্রয়োজন হয় | বাড়ির মত গাড়িও ধারে কেনা যায় যা প্রতি মাসে অল্প অল্প করে শোধ দিতে হয় | এখানে এটাই একটা সুবিধা যে প্রায় সব কিছুই ধারে কেনা যায় |

এই দেশে মানুষের পরিশ্রমের অনেক দাম, খাবারের দামের থেকেও বেশি | যে কোন জিনিস সারাতে যদি অন্য লোকের সাহায্য প্রয়োজন হয় তা খুবই খরচ সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায় | এই কারণে অনেকেই ছোটখাট সারানোর কাজ শিখে নেয় পয়সার কিছু সুরাহা করতে |

খাবারের দাম সত্যিই খুবই কম | এই জন্য মজা করে বলা হয় যে আমেরিকায় আর কিছু না হোক না খেয়ে কেউ মরবে না |

সাধারনত কর্মস্থলে খুব-ই কাজের চাপ থাকে | ডেডলাইন বজায় রাখতে গিয়ে যেন ডেড হয়ে যাবার যোগাড় হয় | কাজের ফাঁকে আড্ডা ইত্যাদির সুযোগ খুবই কম |

তবুও এরই মধ্যে মানুষ জীবন উপভোগ করে | শনি ও রবি এই দুটো দিন ছুটি থাকার জন্য সারা সপ্তাহের অসমাপ্ত কাজ, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া, বন্ধুর বাড়ি পার্টি ইত্যাদি এই সব নিয়ে হৈ হৈ করতে করতে ছুটির দুটো দিন কেমন করে যেন চলে যায় এখানে বাঙালির যে সব ছেলে মেয়েরা জন্মায় স্কুলের পড়াশুনার চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা বা বাঙালিয়ানার থেকে ক্রমশ যেন দূরে সরে যায় | এতে তাদের কোন গাফিলতি থাকে না | পড়াশুনা ছাড়াও এক্সট্রাকারিকুলাম একটিভিটি ইত্যাদি এত বেশি হয়ে যে সমস্ত কিছু ধরে রাখা প্রায়ই অসম্ভব হয়ে যায় | তবুও এরই মধ্যে অনেক ছেলে মেয়েই প্রাচ্যের সংস্কৃতি বজায় রাখতে সক্ষম হয় | উচ্চশিক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ সুবিধা খুব ভাল থাকার জন্য বাঙালির সন্তানরা অধিকাংশ সময়েই জীবনে ভালোভাবে দাঁড়াতে সক্ষম হয় |