মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১২

সম্পাদকীয় - ৩য় সংখ্যা

সম্পাদকীয়

ক্ষেপচুরিয়াস গ্রুপম্যাগের আরেক রূপভেদ - “ক্ষেপচুরিয়ানস” - ১ম বর্ষ ৩য় সংখ্যার ব্লগ প্রকাশিত হ’ল। কিন্তু অনেকের কাছেই প্রশ্ন হঠাৎ ক্ষেপচুরিয়ান নাম কেন। হ্যাঁ আমরা ক্ষেপচুরিয়ান , অন্তত বৃহত্তর পাঠক সমাজের কাছে গত একবছরে আমরা সেই নামেই পরিচিত । যাইহোক, কিছুটা দেরীতে হলেও, আশা রাখি, ভিন্নমাত্রার কবিতাবিষয়ক উন্মাদনা আশ্রয় ক’রে ক্ষেপচুরিয়ানস সাহিত্যের ব্লগ এখন থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হবে। এই সংখ্যার বিপুল কর্মকাণ্ডের দায়ভার অনেকটাই স্বস্কন্ধে নিয়ে আমাদের বাধিত তথা নিশ্চিন্ত করেছেন কবি সুমিত রঞ্জন দাস। দীর্ঘদিনের প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিনি সাজিয়ে তুলেছেন এই ব্লগ। তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। একই সাথে ধন্যবাদ মেঘ অদিতি, কৌষিক বিশ্বাস এবং অমিত বিশ্বাস, পার্থপ্রতীম রায় – ব্লগের ক্ষেত্রে অলংকরণ তথা অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহায়তাদানে আমাদের ভার লাঘব করবার জন্য। বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্ত সুমিত রঞ্জন দাস, জুবিন ঘোষ ও অয়ন দাশগুপ্ত অভিভাবকত্বে ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই অভিনব পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপদানে এবং অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানবেন ক্ষেপচুরিয়াসের বিরাট পরিবার, আমাদের সুহৃদ কবি, সাহিত্যিক ও সাহিত্যমনস্ক সদস্য-সদস্যারা, যাদের সৃষ্টিসম্ভারে সেজে উঠেছে ক্ষেপচুরিয়ানস – ১ম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যার ব্লগ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ক্ষেপচুরিয়াস ছাপা পত্রিকাও এসে যাচ্ছে পুজোর আগেই। এই সংখ্যার লেখা আমরা জমা নিয়েছি ডাকে ও ই-মেলে। ক্ষেপচুরিয়াসের সকল সদস্যকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আবারও।

যদিও, আমরা সকলে একটিই পরিবার – ক্ষেপচুরিয়াস। সুখে- দুঃখে- আমোদে- বিবাদে বাঁধ বেঁধে আছি, বিশেষতঃ কবিতায়। সারাদিনে অন্তত একটিবার গ্রুপে ঢুঁ না মারলে আক্ষরিক অর্থেই আমাদের সাহিত্যটান ঢিলে হয়ে আসে। প্রায় আটশতাধিক সদস্যের যে বিরাট ও সক্রিয় কমিউনিটি গড়ে তুলেছে ক্ষেপচুরিয়াস – তা বাংলাসাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে, তাবৎ ফেসবুকেই বড় দুর্লভ। প্রতিটি সদস্যের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করা অবশ্যই বাতুলতা, কারণ ব্যস্তবাগীশ সাহিত্যিকদের সাথে সাথে গ্রুপে রয়েছেন এমন অনেকেই, যারা নিছক কবিতা পড়তে বা আলোচনার স্বাদ নিতে আসেন এইখানে। এদের নিশ্চুপ যোগদান, বলাবাহুল্য, গ্রুপের এবং ব্লগের অক্সিজেনবৎ।

তবে, এ তো নিছকই আনুষ্ঠানিকতা। ক্ষেপচুরিয়াস স্বোপার্জিত ডিগ্রি (অথবা পেডিগ্রি) হ’ল “কবিতার পাগলামি গ্রুপম্যাগ”। পাগলামি কেন ? এর উত্তরে, কোনো সাবেকী পাশ্চাত্য দার্শনিকের উদ্ধৃতি-উদ্ধারের জটিল জঞ্জালে হাত না ডুবিয়েই বলা যায়, WE ARE LIVING IN MAD TIMES ! এক অসাধারণ উন্মাদনা ছেয়ে ফেলেছে আমাদের চারদিক, আচ্ছন্ন করেছে মূল্যবোধ-বিচারবোধ থেকে শুরু করে সাহিত্যবোধ অবধি সবকিছু। কী এর প্রকৃতি, কী এর অভিমুখ – এসব জটিল প্রশ্ন চাপিয়ে দেওয়া যাক চিন্তাবিদদের কাঁধে। আমরা শুধু প্রজাপতির জাল দিয়ে ধরতে থাকি এই সময়কে ; স্টাফড্ করে বসার ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য নয়, বরং রাস্তার মাঝখানে টাঙিয়ে দিই শিল্পচর্চার মহান তাগিদে। কেউ কেউ সময়ের ভাঙা আয়নার টুকরো দিয়ে নিজেকে চেরেন, ক্ষতবিক্ষত করে তুলে দেন ক্রুশবিদ্ধ দগদগে শরীর পরিপন্থী সভ্যতার হাতে – কাঠ ফেটে রোদ সেঁকে চামড়া !

এই যে বিপুল ও ব্যাপক পাগলামি, তার একটি আপাত শান্ত উপরিতল রয়েছে। এই গভীর অসুখগুলিরও রয়েছে কিছু চেনা সমস্যার নিজস্ব রূপক। ফেসবুকের গ্রুপে গ্রুপে সাহিত্যচর্চা একটি ভিন্ন ও নতুন ট্রেন্ড বটে, তবে ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া, আমরা লক্ষ্য করছি, এর মাধ্যমটি নতুন হলেও পুরাতন কিছু সমস্যায় আজও জর্জরিত এবং পরস্পরের ওতপ্রোত। এমন এক উপমহাদেশে আমরা সাহিত্যচর্চা করছি, যা সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ ও নিও-কলোনিয়াল কালচারাল স্টাডিজ-এর ঘানিঘর হয়ে তার বহু বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রায় বিস্মৃত হয়ে রিফিউজি তকমা পেতে বসেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক বিশ্বায়িত অর্থনীতির অবশ্যম্ভাবী লেজুড় হিসেবে শিকড়বিহীনতা ও পরমুখাপেক্ষা, প্লাগিয়ারিজম ও অনুকরণের নোংরা জঘণ্য প্রবণতা। একটি শির ও শিরদাঁড়া সোজা করা সাহিত্য আন্দোলনের এই সময়ে একান্ত প্রয়োজন, যা লাথি মারতে পারে এইসব ঘুনধরা বিকৃতির মুখে। কোনো ধ্বজাধারণে বিশ্বাসী নই আমরা, এই মুহূর্তে বরং তার অপব্যবহারগুলিই চোখে পড়ছে বেশি। পাগলামির নিজস্ব দ্যোতক এই কলম, যা আমরা সাজিয়ে তুলেছি নতুন বর্ণসম্ভারে – তা কতটুকু নিতে পারবে এই সময়ের কষ্টকে, সে তো সময় নিজেই জানাবে। কিন্তু সংবেদনের সঙ্গে সঙ্গে বেশিটাই আমাদের সংগঠিত সংহত প্রতিবাদ (সংশোধন নয়) – কোনো কোনো ব্যর্থ পিকাসো-গ্যালিলেও-কে নিশ্চুপে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে দূর থেকে, কোনো কোনো সার্ধশতবর্ষকে সযত্নে এড়িয়ে প্রদীপ জ্বালাচ্ছে কুঁড়েঘরের ভিতর, কোনো কোনো লাথি খাওয়া কবির পায়ে জোর করে পরিয়ে দিচ্ছে কাঁটাওয়ালা বুট – সে ফিরিয়ে দেবে আজ নিজের অপমানকে, পদলেহীর মুখের উপর !

ক্ষেপচুরিয়ানসের পক্ষে অত্রি ভট্টাচার্য