বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৩

ধারাবাহিক বিলাভারত-অভীক দত্ত

বিলাভারত- পর্ব ৪
অভীক দত্ত


ছেলেটা পড়াশুনায় ভাল ছিল। ক্লাস নাইন অবধি রেজাল্ট খাসা। সবাই বলত এ ছেলে বড় হয়ে শিওর আই আই টি পাবে, কিংবা মেডিক্যাল।

কিন্তু না, সেটা ঘটল না। কেন? মাধ্যমিকে দুর্ধর্ষ রেজাল্ট করে ছেলেটা যখন ইলেভেনে উঠল, ম্যাথস টিউশনে একটা অপূর্ব সুন্দরী মেয়ের সাথে তার হয়ে গেল প্রেম। ব্যস। পড়াশুনা মাথায় উঠল। সারাদিন ফোন, এস এম এস করেই কেটে যেতে লাগল। ফলস্বরূপ এইচ এসে অঙ্কে ব্যাক।

হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। এটা আমি এখনকার সময়ের অপ্সরার ভূমিকা বললাম। কিন্তু মজা সরিয়ে রেখে বলি, মহাভারতে অপ্সরার গুরুত্ব কিন্তু জাস্ট ভাবা যায় না বস!

বহু সচ্চরিত্র পুরুষ হৃদয়কে দুর্বল করার ক্ষমতা ছিল এই অপ্সরাদের। এবার বলি সচ্চরিত্র কাকে বলে? আপনি বলবেন কেন, যার চরিত্রভাল। এবার জিজ্ঞেস করা যেতেই পারে, কিভাবে ভাল হল? সে কি সুযোগ পেয়ে ছেড়ে দিয়েছিল? যদি বলেন হ্যাঁ, তবে মেনে নেব সচ্চরিত্র। কিন্তু যে সারা জীবনে কোন সুযোগই পেল না তাকে সচ্চরিত্র বলি কোন হিসেবে বলুন তো? অপূর্ব সুন্দরী কোন মেয়েকে তার ঘরে মাঝরাতে ঢুকিয়ে দিলে কি সে তার চরিত্র বজায় রাখতে পারত?

এই অপ্সরারা কোত্থেকে এল? বলা হয় অপ্সরাদের অসীম যৌবন, মানে পজিটিভ নেগেটিভ খুঁজতে বসলে দেখা যাবে, এরা যার তার সাথে শুয়ে পরত, তা বলে সহজলভ্য ছিল না একেবারেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেত যে মুনি ধ্যান ট্যান করে ভালমতন র‍্যাপো জমানোর চেষ্টা করতেন স্বর্গ থেকে তার উদ্দেশ্যেই অপ্সরাদের পাঠিয়ে দেওয়া হত। তারপর প্রথম প্রহরে প্রভু চক্ষু মেলি দেখিলেন সামনে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণী নেত্য করিতেছেন, তিনি মাথায় ঘাড়ে জল টল দিয়ে আবার মনোনিবেশ করলেন, তারপর আবার কৌতূহলবশে চোখ টোখ খুলে দেখলেন সামনে সানি লিওন বেশি অপ্সরা জন্মদিনের পোশাক পড়ে শুয়ে র‍য়েছেন তখন প্রভু কি করবেন বলুন? ধুত্তোর নিকুচি করেছে তোর ধ্যানের বলে শুয়ে তো পড়লেন অপ্সরার সাথে, তারপরেই হল বিপত্তি। তখন তো আর ডটেড ব্যাপার স্যাপার ছিল না, অপ্সরাদেবীও দিব্যি পেটটি বাগিয়ে বাচ্চা বিইয়ে স্বগগে পাইলে গেলেন, আর সেই বাচ্চা অন্য কোন বাপ মায়ের হাত ধরে জগত আলো করে বেড়াত। কালিদাস বিখ্যাত করে গেছেন শকুন্তলাকে। বিশ্বামিত্রের ঘোর তপস্যায় ভয় পেয়ে দেবরাজ ইন্দ্র তপস্যা ভঙ্গ করতে পাঠিয়ে দিলেন মেনকাকে। ব্যাস। তার হয়ে গেল তারপরে যা হবার। (তখনও transparent পোশাক পাওয়া যেত, মেনকার সে পোশাক বায়ু হরণ করলে একেবারে উলঙ্গ মেনকাকে দেখে বিশু কাকু আর ঠিক থাকতে পারেননি আর কি)।

মা মেনকা দিব্যি প্রসবের পরে ফেলে পালালেন। কণ্ব মুনি বড় করলেন। মেনকা, উর্বশী, ঘৃতাচী, অদ্রিকা প্রমুখ তখনকার দিনের স্বর্গ মর্ত অপেরার কুখ্যাত নায়িকা ছিলেন। কোমর দুলিয়ে মর্ত্যে এসে পাবলিক খেপিয়ে আবার স্বর্গে প্রস্থানই ছিল তাদের মূল কাজ। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি কথা বলি। একেবারে পুরাকালে সমাজ বলে কিছু ছিল না। যখন যে পারত তার সাথে শুয়ে পড়ত। তারপরে মহর্ষি উদ্দালকের পুত্র শ্বেতকেতু দেখলেন তার বাবার সামনেই তার মাকে অন্য এক জন তার মার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শ্বেতকেতু অবাক হয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন সেটাই দস্তুর। তখনই তিনি এই আইন করেন যে কোন পুরুষ যদি পতিব্রতা স্ত্রীকে ত্যাগ করে অন্য নারী সংসর্গ করেন কিংবা ভাইস ভারসা তবে সেটা ভ্রূণ হত্যার সমতুল্য পাপ হবে। তারপর থেকেই কিছুটা লাগাম এল। তবে সে সময় অপ্সরারা মূলত virgin মুনি ঋষিদেরই টার্গেট করতেন স্বর্গের আদেশ অনুসারে।

স্বয়ং ব্যাসদেব সত্যবতী নামের এক অপ্সরা কন্যার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। দ্রোণাচার্যের বাবা ভরদ্বাজ মুনি ঘৃতাচী অপ্সরাকে দেখে ঠিক থাকতে না পেরে এক কলসের মধ্যে তার শুক্র রেখে দেন, তার থেকেই জন্মগ্রহণ করেন দ্রোণাচার্য। এই দ্রোণাচার্যের জন্ম বৃত্তান্ত বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে হয় না। ডিম্বানু শুক্রানুর মিলন ছাড়া কি করে এ সম্ভব কে জানে। তবে তখনকার দিনের মুনি ঋষিরা চ্যাম্পিয়ন লোক ছিলেন। কত ছয়কে কে নয় করেছিলেন তার ইয়ত্তা নেই...

অপ্সরারা ছিলেন স্বর্গের বারবণিতা। দেবতাদের মনোরঞ্জনের জন্য নাচ টাচ ইত্যাদি করে স্বর্গ জমিয়ে রাখতেন। তারাও কিন্তু দেবতাদের মতোই অমর... কে জানে এখনো ছদ্মবেশে কত সুন্দরী রমণীর ভিতরে লুকিয়ে আছেন...
(চলবে)