একটি মোরগের গল্প
অরুণাচল দত্তচৌধুরী
বাবার হার্ট অ্যাটাক… মরণাপন্ন। খবর পেয়ে সপরিবারে নিজের গাড়িতে রওনা হল সুহাস। লম্বা রাস্তা। তবু সে নিজেই ড্রাইভ করবে। উপায় নেই, সময়ও নেই। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। দ্রুত সীমান্ত জেলা থেকে দমদমে ফিরতে হবে। যথাসম্ভব সতর্কতা ছিল। তবু, আচম্বিতে…খ্যাঁ …অ্যা……অ্যা…চ, টায়ারপোড়া গন্ধ। রাস্তার ওপর এসে পড়া মোরগটাকে রক্ষা করা গেল না। এরকম ঘটলে হুশ করে স্পিড বাড়িয়ে পালিয়ে যাওয়াই দস্তুর। সেই প্রথা ভেঙে সুহাস কোনও মতে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করাল। ইস, টায়ার রক্তে মাংসে মাখামাখি। লালচে সাদা পালক লেপ্টে রাস্তায়, গাড়ির বডিতেও। দরজা খুলে নেমে নীচু হয়ে এ'সব দেখে আঁতকে ওঠা সুহাস মাথা তুলেই দেখতে পেল এর মধ্যেই প্রায় কুড়ি পঁচিশ জন মেয়ে পুরুষ ঘিরে দাঁড়িয়েছে। আরও কেউ কেউ ছুটে আসছে এখনও। আতঙ্কিত সুহাসের দিকে উত্তেজিত তর্জনীর মালিকরা গর্জন করে উঠল, -গাড়িটায় আগুন লাগা। ডেরাইভারটাকে পিটিয়ে মেরে ফ্যাল। ভয়ত্রস্ত সুহাস অজান্তেই হাত জোড় করে ফেলল। ওর বউ দীপা গাড়ি থেকে নামেনি এতক্ষণ। সুহাসের গাড়ি থামানোর বোকামিতে যারপরনাই বিরক্ত ম্যানেজমেন্ট পাশ দীপা জানালা দিয়ে মুখ বাড়াল এ'বার। - আঃ, একটা মোরগই তো মরেছে। মরা মোরগ টা নিয়ে দামটা দিয়ে চলো তো তাড়াতাড়ি। কত দাম হবে দাদা, আন্দাজ… কথা শেষ হবার আগেই ধপাস! এক মাঝবয়সী মহিলা গাড়ির সামনে পিচ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। মুখের কষে ফেনা। সঙ্গে হাতপা'র সামান্য খিঁচুনি। সমস্বরে জনতা আর্তনাদ করে উঠল। - আ হা হা গো। মোরগ কোথা? ও'তো সুন্দরীর ছেলে ছিল। আরও ঘনিষ্ঠ দু'একজন বলল, -গত জন্মদিনে ভালো একটা নামও রেখেছিল… মিত্যুঞ্জয়। কাজেই মোরগ মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নয়, মিত্যুঞ্জয়ের 'দাহ খরচ'… শ্রাদ্ধশান্তির জন্য চারহাজার আর মৃত্যুঞ্জয়ের মা'র চিকিৎসাখরচ একহাজার, মোট পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আবার ঊর্ধ্বশ্বাসে যাত্রা শুরু হল। ভাগ্যিস বাবার চিকিৎসা বাবদ রাখা টাকাটা সাথে ছিল। গাড়িতে স্টার্ট দিতে দিতে সুহাস স্পষ্ট শুনল কেউ বলছে -ও সুন্দরী, ও'টাকে কাটাকুটির আগে ভালো করে ধুয়ে নিস কিন্তুক। গাড়িতে যেতে যেতে দীপা ভাবছিল, টাকাটা তো গেলই… মোরগটাও। সুহাসের মাথায় ঘুরছিল সম্পূর্ণ অন্য একটা প্রশ্ন। কিছুটা হাস্যকর যদিও। আচ্ছা, ওই যে বলল মোরগের জন্মদিন, সেটা কবে? যে দিন ওর মা ডিমটা পাড়ে, নাকি যে দিন ডিমের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ছানাটা?
বাবার হার্ট অ্যাটাক… মরণাপন্ন। খবর পেয়ে সপরিবারে নিজের গাড়িতে রওনা হল সুহাস। লম্বা রাস্তা। তবু সে নিজেই ড্রাইভ করবে। উপায় নেই, সময়ও নেই। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। দ্রুত সীমান্ত জেলা থেকে দমদমে ফিরতে হবে। যথাসম্ভব সতর্কতা ছিল। তবু, আচম্বিতে…খ্যাঁ …অ্যা……অ্যা…চ, টায়ারপোড়া গন্ধ। রাস্তার ওপর এসে পড়া মোরগটাকে রক্ষা করা গেল না। এরকম ঘটলে হুশ করে স্পিড বাড়িয়ে পালিয়ে যাওয়াই দস্তুর। সেই প্রথা ভেঙে সুহাস কোনও মতে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করাল। ইস, টায়ার রক্তে মাংসে মাখামাখি। লালচে সাদা পালক লেপ্টে রাস্তায়, গাড়ির বডিতেও। দরজা খুলে নেমে নীচু হয়ে এ'সব দেখে আঁতকে ওঠা সুহাস মাথা তুলেই দেখতে পেল এর মধ্যেই প্রায় কুড়ি পঁচিশ জন মেয়ে পুরুষ ঘিরে দাঁড়িয়েছে। আরও কেউ কেউ ছুটে আসছে এখনও। আতঙ্কিত সুহাসের দিকে উত্তেজিত তর্জনীর মালিকরা গর্জন করে উঠল, -গাড়িটায় আগুন লাগা। ডেরাইভারটাকে পিটিয়ে মেরে ফ্যাল। ভয়ত্রস্ত সুহাস অজান্তেই হাত জোড় করে ফেলল। ওর বউ দীপা গাড়ি থেকে নামেনি এতক্ষণ। সুহাসের গাড়ি থামানোর বোকামিতে যারপরনাই বিরক্ত ম্যানেজমেন্ট পাশ দীপা জানালা দিয়ে মুখ বাড়াল এ'বার। - আঃ, একটা মোরগই তো মরেছে। মরা মোরগ টা নিয়ে দামটা দিয়ে চলো তো তাড়াতাড়ি। কত দাম হবে দাদা, আন্দাজ… কথা শেষ হবার আগেই ধপাস! এক মাঝবয়সী মহিলা গাড়ির সামনে পিচ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। মুখের কষে ফেনা। সঙ্গে হাতপা'র সামান্য খিঁচুনি। সমস্বরে জনতা আর্তনাদ করে উঠল। - আ হা হা গো। মোরগ কোথা? ও'তো সুন্দরীর ছেলে ছিল। আরও ঘনিষ্ঠ দু'একজন বলল, -গত জন্মদিনে ভালো একটা নামও রেখেছিল… মিত্যুঞ্জয়। কাজেই মোরগ মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নয়, মিত্যুঞ্জয়ের 'দাহ খরচ'… শ্রাদ্ধশান্তির জন্য চারহাজার আর মৃত্যুঞ্জয়ের মা'র চিকিৎসাখরচ একহাজার, মোট পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আবার ঊর্ধ্বশ্বাসে যাত্রা শুরু হল। ভাগ্যিস বাবার চিকিৎসা বাবদ রাখা টাকাটা সাথে ছিল। গাড়িতে স্টার্ট দিতে দিতে সুহাস স্পষ্ট শুনল কেউ বলছে -ও সুন্দরী, ও'টাকে কাটাকুটির আগে ভালো করে ধুয়ে নিস কিন্তুক। গাড়িতে যেতে যেতে দীপা ভাবছিল, টাকাটা তো গেলই… মোরগটাও। সুহাসের মাথায় ঘুরছিল সম্পূর্ণ অন্য একটা প্রশ্ন। কিছুটা হাস্যকর যদিও। আচ্ছা, ওই যে বলল মোরগের জন্মদিন, সেটা কবে? যে দিন ওর মা ডিমটা পাড়ে, নাকি যে দিন ডিমের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ছানাটা?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন