বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০১৪

অনুবাদ কবিতা - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়

চীনের কবি ইয়ান জুন-এর কবিতা
অনুবাদ : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় 



কবি ও সঙ্গীতশিল্পী ইয়ান জুন-এর জন্ম ১৯৭৩ সালে। উত্তর-পশ্চিম চীনের লান্‌ঝৌ প্রদেশে। বর্তমানে বেজিঙে থাকেন। চীনা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পেশাগতভাবে তিনি মিউজিক ইভেন্ট অর্গানাইজ করেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি সঙ্গীতের ওপর সমালোচনামূলক নিবন্ধও লেখেন। প্রথম কবিতার বই ‘49 Poems’ (১৯৯৬)। এরপরে প্রকাশিত হয় ‘Infrasonic Sound’ (২০০১), ‘Impossible’ (২০০৬)। অনুদিত হয়েছেন ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি ও ডাচ ভাষায়। বাঙলায় সম্ভবত এই প্রথম। ইয়ান জুন রাজনৈতিক কবিতায় বিশ্বাস রাখেন না। তাঁর মতে কবিতা লেখাটাই একটা রাজনৈতিক কাজ। ওঁর ভাষায়—‘Either all poems are political or else there is no such thing as a political poem. That’s because writing poetry is a political act in itself.’



১২ই অগাস্ট


আমার লেপ, একটি দানব প্রজাতি




২৯শে অগাস্ট

আন্তর্জাতিক মেরামতি দিবস : আমি থমকে
একগাদা তারের স্তূপ নিয়ে

নীল ভুল লাল ভুলগুলি
তেতলায় আলো নেই চারতলাতেও না
ধুয়ে গেলাম                                    আলো জ্বলতেই



২৫শে সেপ্টেম্বর

একটা রাগে গরগর স্বপ্নে : পিচফলের খোসা খুলতে থাকে
একটা অতীতের স্বপ্নে : শরতের হাওয়া হঠাৎ ঝড়

শরীরের মৌমাছিপাড়াকে আমি ইশারায় ডাকি

অল্প কয়েকটা স্বপ্নেরই ব্যাখ্যা করেছি এ পর্যন্ত
বিছানায় তারা আমার অপেক্ষায়

মধুভেজা ঘর চুপচাপের এক ফালি




২৪শে নভেম্বর
এলিয়েন যে নেই এটা এলিয়েন জানেই না

শীতে আমরা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করি
গরম চা খাই             চোখের পাতা তাদের কাফন দিচ্ছে বাষ্পে

একটা এলিয়েন কাগজের একটা টুকরোর মতো
জানলা দিয়ে উড়তে উড়তে উড়তে উড়তে হার্বিনের দিকে

একবার বালজাক কি বলেছিল আমার মনে পড়ে
হাওয়াই যদি না থাকে কী কাজে আসবে উইলোগাছ?



ফেব্রুয়ারি ১4, বাবার সাথে হাসপাতালে
ব্রেকফাস্ট খেলাম               ওষুধও
লড়লাম হাওয়া দূষণের সাথে

খুব সকালে ওঠা হ’ল           অপেক্ষা করলাম হাসপাতালে
দেখলাম কানের ডাক্তার কিভাবে হাঁটে

আমরা চুপ ক’রে ছিলাম     পাশাপাশি ব’সে
বাতাসে নৈঃশব্দ আমানত রাখা হচ্ছিল তখন

একদিন           দু’দিন         কোমরে হাত
ধীর লিফটে দাঁড়িয়ে

নতুন স্কার্ফ      নতুন বরফ আর নোংরাও
দুজন দুজনকে শুনছি         শুনতে থাকব        যতক্ষণ না আমরা আর কিচ্ছু শুনতে পাব না





৩০শে অক্টোবর
আমার লাগেজ খেয়ে ফেলেছি
খেয়ে ফেলেছি প্রথম দিনটা                    খুব সকাল আর কাকের কা কা—

দশ মিনিট              বাঁশ বাগান হাওয়ায় দুলছে
ট্রেন              ফ্রিজের ভেতরে একটা ট্রেন

আয়নায় যে লোকটা               আমি
যে লোকটা সমুদ্রতীরে মশার পেছনে দৌড়চ্ছে            ওটা আমি




২রা জানুয়ারি
আমি ভাবতাম আমি কিছু বলতে চাই
বরফের দিকে তাকাতাম একবার               ফিরে যেতাম টেবিলে

অথবা টাকাপয়সা গুনতাম                 নয়তো লন্ড্রি
শহরতলিতে কাক ওড়ে            সামনের দরজা দিয়ে ওড়ে

চুপচাপ ব’সে অপেক্ষা করতাম
শীতকালে ব’সে যেভাবে হটপট অপেক্ষা করে

প্লেনের টিকিটে কোনো ডিসকাউন্ট থাকবে না
আমি তো কুরবানির জন্য বসেছিলাম           নিউ ইয়ার হয়ে গেল




৬ই মে, বাগানে

১. এখন ধ্যান শুরু হচ্ছে।

২. পিঁপড়ে। আমি ওদের অনুভব করতে পারি।

৩. ফালতু কথা আর মধু।

৪. একটা খালি ফাঁকা বাসও একটা বাস।

৫. বাতাসে এই ছোট্ট বেজন্মাগুলো।

৬. ইঞ্জিনের পরের দরজা। আমি আমার দরজায় কামড়াচ্ছি।

৭. থকথকে। আমার ঝড়ের মেঘ। একা একা খাচ্ছি।





১০ই ডিসেম্বর
ভোর তিনটেয় স্বপ্ন দেখলাম        আমি একটা ইঁদুর ধরেছি
একটা এ্যারোপ্লেনের মতো        জলের নিচে প্যারেডে যাচ্ছি

একটা শাদা কাগজ           নিচে পড়তে পড়তে কালো হয়ে যাচ্ছে
একদল অন্ধলোক         সংগ্রাম জারি রাখছে

বরফবিহীন সেইসব শীতের মতো
উৎপত্তির জায়গাটায় ফিরছি

রাগে উত্তেজনায় আমি তাড়াহুড়ো ক’রে ফেলি
একটা পাখা        নিজের হাওয়াকে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে