বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার


০৫

মেয়েদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবার সময় আমাকে সবসময়ই এক ধরনের হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হয়।জানিনা সেটা মুচকি হাসি বা খলখল হাসি কিনা।জীবনে বহু মেয়ের সান্নিধ্যে কিংবা সখ্যতায় আমাকে আসতে হয়েছে।বহু নারীর অপছন্দের তালিকায় আমার নাম।সামান্য কয়েকজনের পছন্দের তালিকাতেও।তবে আমার সৌভাগ্য আজ পর্‍যন্ত কোনো নারী আমাকে লম্পট বলেনি।তবে মাতাল বলেছে কেউ কেউ।তেমন জমিয়ে প্রেম হলো না আমার জীবনে।আসলে মেয়েদের সাথে আমার তেমন স্বাচ্ছন্দ আসে না।আমার কবিতায় বা গদ্যে বা জীবনযাপনে তেমন কোনো টান নেই।যাদু নেই।পেলবতা নেই।তবে মেয়েরা যখন ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায় বা যুদ্ধবিমান দেখে তখন বেশ ভালো লাগে আমার।আবার ভালো লাগা থেকে একধরনের ঘোর তৈরি হয়।কখনো বৃষ্টির দিন কখনো বা শীতকাল আমাকে চেপে ধরে।তবে আজ এই ৪২-এ একটা কথা জানালে বেশ হয় যে ভালোবাসা শব্দটির প্রতি অবশেষে ঝুঁকে পড়তেই হলো আমাকে।আবার এই ঝুঁকে পড়াটাকে অনায়াসে ভালোবাসার মধ্যে নেমে যাওয়া বলা যেতে পারে।আমি একজন কথা কম বলা গানের সুরে সুরে দুলে ওঠা মেয়ের কথা বলছি।যথারীতি এই মেয়েটিও সরাসরি আমার কবিতার পাতায় হাওয়া বাতাসের মতো পৌঁছতে পারেনি।তবু পৌঁছতে না পারাটাকে কোনো ঘটনাই বলা যায় না।কারণ মেয়েটি আমাকে মুচকি হাসি আর রাজবাড়ির পালকির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।মুচকি হাসির থেকে ভালোবাসার দূরত্ব কয়েক সেকেন্ড মাত্র।আর রাজবাড়ির পালকির সাথে যুক্ত করে দিই যদি ভালোবাসা তবে ভালোবাসায় ভেসে যেতে যেতে আমি খুব একা আর খুব নিজস্ব চোখে মেয়েটির পিয়ানোর বাজনা শুনবো।মেয়েটির যাবতীয় কষ্ট মেয়েটির অনেক একক নিঃশব্দ লড়াই আমি অনিবার্‍যভাবে টুকে রাখব ডাইরিতে এবং শেষ পর্‍যন্ত দেরীতে হলেও আমার কবিতায় একজন নারী ঘুম ও ঘামের মতো জরুরী হয়ে উঠবে।

০৬।

সরে থাকতে চাই তবু বিরক্তিকর মানুষজনদের সাথে জড়িয়ে পড়তেই হয়।একসময় অবসাদ আসে।মানুষের জটিলতা অন্ধকারের তীব্রতম কুহক।কুহকের চোরাস্রোতে ভেসে যাই।জঙ্গল টানে।বনবাসী টানে।মাইল মাইল ধানের ক্ষেত তছনছ করছে হাতির দল।মানুষ মারছে।হাতি ছিল আমাদের লোকমনে লোকগানে আদরণীয়।এখন উত্তরবাংলায় নিম্ন অসমে হাতি মাহুতের গান ভাসে,বাতাসে বাতাসে ওড়ে।অথচ মানুষ এখন হাতিকে আতঙ্ক আর অভিশাপ হিসেবে দেখে।বিষ খাইয়ে হাতি মারে।অথচ হাতিদের তো কোনো দোষ নেই।যে রাস্তা দিয়ে নিত্যদিনের যাতায়াত ছিল সে পথরেখা অবলুপ্ত।জনবসতি।কুলিবস্তি।চায়ের বাগান।জঙ্গল উধাও হয়ে যাচ্ছে মানুষের আর সভ্যতার আগ্রাসনে।হাতিদের খাবার নেই।বন্যপ্রাণী বিপন্ন নয় কেবল সমগ্র বিশ্বের ইকো-সিস্টেম প্রবলভাবে বিপন্ন।আর বিরক্তিকর মানুষজন তাদের মো-সাহেবি ঘ্যানঘ্যান সৃষ্টিহীনতা যাবতীয় সব কিছু্র গায়ে মাঝে মাঝে ঢলে পড়ে চিত্রিত হরিণ,কুকুরছানা আর পেখম তোলা ময়ূর।আর ঢেউতোলা কষ্টগুলির পাশে তা লিখি।নদী নালার দেশে বোধ করি খুব গল্পগাছ ছিল।চা খেতে খেতে পুরনো মানুষেরা যখন সেসব বলেন তখন বুঁদ হয়ে শুনি।গল্প বলা গল্প শোনা দুইয়ের আবহে একধরনের ঝুঁকে পড়া ঘোরে চলে যাওয়া,মানে খুব কুয়াশা হলে যেমন হয় আর কি ? মানে কাছে দূরে ঘুরে বেড়ানো হেঁটে চলে বেড়ানো মানুষজনকে কেমন পটচিত্র কেমন গুহাকন্দর বা পরিত্যক্ত রাজবাড়ির ঘোরানো সিঁড়ি, ভাঙা পাঁচিল এরকম মনে হয়।মনে হওয়াটাকে স্থায়িত্ব দিতে হলে লিখে ফেলা দরকার ডানামেলা পাখির মতো জীবন।অথচ যখন ব্রিজ হয়নি যখন বন্যাপরবর্তীকালীন বিপন্নতায় দীর্ঘতম অহংকারী সেতু নির্মিত হয়নি তখন বিশালকায় গম্ভীর সেই নদীর বুকে মাইল মাইল কাশিয়ার জঙ্গল,ভাবনাবন।বাঘ বেরোত।ভালুকবিচরণ করতো।আর এত কিছুর পরেও প্রতিদিন আবিষ্কৃত হতো অসংখ্য পায়ে চলা পথ।আর সেইসব পথেরগল্পে মানুষই ছিল প্রধান উপজীব্য।