বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

কাজরী তিথি জামান

উড়ে চলো পঙ্খীরাজ
কাজরী তিথি জামান


তোমাকে হাঁটতে বলিনি—

যে হাঁটে তার বয়স ফোকলা দাঁতে ৷
হতেও পারে এইমাত্র জন্মালো !
কচি কচি আঙ্গুল,পিটপিটে চোখে
অথবা পরিক্রম শেষে ক্লান্ত অবসন্ন
বিষাদ জর্জরিত মরচে পড়া হাত ও পায়ে ……
স্ক্রু লাগিয়ে ধরাশায়ী জীবনের শেষভাগে
একটি পা ও একটি ক্রাচে……৷
সে হাঁটুক,তার শনের মতো দাঁড়ি ও চুলে-
যার চোখ মাছের মতো মৃতপ্রায়
প্রান্তরে ফেলে আসা ঘঁষা কাঁচের অন্তরালে ৷
সে হাঁটুক শতকোটি ভাঁজে ,শীর্ণ দেহে
ভ্রান্তপদাবলী আঁচলে মুড়িয়ে
যার রোশনাই নেই……..নেই প্রাপ্তি ও পর্যবেক্ষণ ৷
তোমাকে হাঁটতে বলিনি—
তুমি যে টগবগে যৌবন’…সূর্যের মিতা’
সাগর`পায়ের নীচে,পাহাড় ধুলিতে মিশিয়ে
কালবৈশাখীর কেতন উড়িয়ে
চির খরায় মেঘমল্লার সাধনার তাপস
তুমিই তো যৌবন !
একহাতে কচি কচি আঙ্গুল,
অন্যহাতে শত কোটি ভাঁজে মাতৃক্রোড়
এবং শনের মতো চুল-দাঁড়িতে’
তোমার জন্মের ইতিহাস ……
তোমার আঙ্গুলে শক্ত বেঁধে নাও ধ্রুবতারা
সে আলোতে পথ আছে,আছে ব্যাপ্তি
নতুন রৌদ্রউজ্জ্বল নাব্যতার পটভূমি’
তুমি দৌড়ে চলো,দ্রুত থেকে দ্রুততর
ক্ষীপ্রতায়---“মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে
মা’কে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে-
তুমি যাচ্ছো পালকিতে মা চ’ড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার প’রে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে…………..”
ধূলি উড়িয়ে পঙ্খীরাজে তুমিও উড়ে চলো
ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা দৈত্য-দানব
লুকিয়ে যাক নিজের নাভিকুন্ডে
নিজেদের তৈরী দাবানলে আত্মহূতি হোক অপদেবতার
হাঁটুক সভ্যতা ধীর-স্থির,মানচিত্রের সীমান্ত ধরে
নীলনদ,পিরামিড,প্রাচীর,ব্যবিলনের ঝুলন্ত বাগানে
বিস্মিত চোখে খুঁড়ে খুঁড়ে তুলনার শবাধার
অথবা ফ্ল্যাভিয়ান আ্যাম্ফিথিয়েটার ৷নয়তো তাজমহল?
তুমি উড়ে চলো ,উড়ে চলো………
কাদা-মাটি ,নর্দমা, ভাঙা কাঁচ
সব,সব উপেক্ষা করে’প্রেমের জরাজীর্ণ খাঁচায়
ফেলে যাও স্বরলিপি কিংবা গোলাপ’
দু’হাতের দু’আঙ্গুলে জড়িয়ে নাও
সভ্যতা,ইতিহাস এবং কালজয়ী ভবিষ্যতের মন্ত্র’
বুকে রাখো উজাড় মিলনের শুভ্রচেতনার স্বপ্ন
তোমাকে হাঁটতে বলছি না ,শুধু বলছি
উড়ে চলো পঙ্খীরাজ’
উড়ে চলো’