বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

ফেমিনিজম নাকি ঈশ্বরিজম

ফেমিনিজম নাকি ঈশ্বরিজম
মৌ মধুবন্তী

ডিপ টিউব ওয়েল। কুয়োর জল। খুঁড়লেই পাওয়া যায়। কোনো বিধি নিষেধ নেই। রাস্তার পাশে ফলের গাছ। অবুঝ বে-বুঝ সবাই চাইলেই হাত লাগিয়ে পেড়ে নিতে পারে। একবিংশ শতকেও নারী কে আজও কেন রাস্তার পাশের গাছ কিংবা কুয়োর জলের মতো ভাবা হয়, বুঝতে পারি না। নারী কখনো পণ্যশালায়, কখনো টেম্পলে রক্ষিতা। এই পুরুষ কি একবারও ভাবে না যে নারীর দেহ গুহা থেকেই তাদের জন্ম। তা হলে আরেক জন নারীর গুহায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে তাদের বিবেকে এতোটুকু বাধে না কেন? কেন এই শতাব্দীতে আমাকে, “Fourth wave feminism”এজেন্ডা লিখতে হয়? কেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে হিলারির স্থান হয় নাই? আমেরিকা কি বিশ্বের প্রাচ্য দেশের চেয়েও কুৎসিতমনা, হীনমনা? এখন আমাদের কথা বলতে হতো , “ Trans-Feminism” –নিয়ে। হয়ত বা Feminism –এর ভবিষ্যৎ হবে “trans –feminism”। এইটাই এখন গুরুত্বপুর্ণ। Feminismএর অন্তর্নিহিত ভাব ও ধারণা কিন্তু মূলত জৈবিক হলেও সেটাই কিন্তু গন্তব্য বা লক্ষ্য নয়।

লিঙ্গের ভূমিকা আদি থেকেই নারী ও পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করবার মতো নয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীকেই এর কলঙ্কিত অধ্যায়ের দুর্ভোগ কাঁধে তুলে নিতে হয়, যা পুরুষের ক্ষেত্রে বলতে গেলে কোনো সমাজেই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনকি এই সব নারী ও নারীকেই দোষারোপ করে সব চেয়ে বেশি। এই সব লিঙ্গের যে প্রকরণ তা প্রাকৃতিক, এই কথা বুঝেও সমাজের উঁচু-নিচু, শিক্ষিত–অশিক্ষিত মুখ্য-গৌণ, সুশীল-নিম্নবর্ণ সবরকম স্তরেই কম বেশি মাত্রায় নারীর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা থাকে।

বস্তুত এখানে কোনো প্রেস্ক্রাইব সমাজ গড়া সম্ভব নয়। কারণ, মানুষ বিচরণশীল এবং ক্রমাগত মানুষের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। সেখানে স্তর বিন্যাসে নারীকেই শক্ত হাতে হাল ধরে, নারীর পক্ষে নারীর সমর্থণ আরও জোরদার করে, তবেই আগামী দিনের পথপরিক্রমা তৈরি করতে পারতে হবে। লিঙ্গের উপরে ভেদ করে একটা বিশেষ সমাজ ব্যবস্থা আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত নয়; কারণ সমাজে বাস করবার অধিকার সবারই সমানভাবে থাকা দরকার। যদি আমরা বায়োলজিক্যাল এই প্রকারভেদকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তা হলে আমরা সমাজ গঠনে ও সামাজিক ভূমিকা রক্ষার ক্ষেত্রে এই বায়োলজিক্যাল যে ভিন্নতা তাকে তীব্রভাবে কোঠায় কোঠায়ভাগ না করে, একসাথে সামনে পথ চলতে একটা বৈষম্যহীন পথ তৈরি করবার সময় ‘এখনিঁ’ বলে ভাবতে শুরু করি, যাতে কুয়োর জলে মাটির ব্যাং লাফিয়ে পড়তে না পারে যখন তখন।

এখন আমাদের উচিত মনোযোগ দেয়া gender fluidity, transience, transgression, variance ও rejection এর দিকে। লিঙ্গ প্রকারের ক্ষেত্রে আমরা যে পরিমাপ করছি তা আধাভৌতিক এবং hypocritical –অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এমতাবস্থায় Third wave Feminism – এর কারণে race, poverty, sexual orientation, disability, body type, neurotypicality যে অগ্রগতি লাভ করেছে তাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে Fourth wave movement – এর এজেন্ডার সাথে একসাথে বারুদ বেগে প্রতিষ্ঠিত করাই বর্তমান এই মুভমেন্টের যারা হোতা তাদের সাথে পা মিলিয়ে দ্রুত পথ পার হওয়া জরুরি প্রয়োজন।

আরো একটু এগিয়ে যাবার আগে আমি Fourth wave movement এর এজেন্ডায় কি আসছে তার কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।নীচে কয়েকটা প্রস্তাবনা দেয়া হলো—( সংগৃহীত)

7. Women are still paid less than men.
6. Reporters and writers can slam women on TV and in print with impunity
5. I’m sick of young women growing up believing this is “just how it is”
4. Women undermine other women more than support them
3. Women are in danger of rape and attack every time they leave their homes
2. Beating women is still called “domestic violence”, like that makes it understandable/less appalling than what a similar assault on any other person would be called
1. Women together can do anything

এজেন্ডা থেকে এক নাম্বার প্রস্তাবনা পড়েই আমি আনমনা হেঁটে যাচ্ছি। মনে মনে আকাশ পাতাল ভাবছি। পা ফেলছি কোথায় জানিনা। মনচায়, লিখি কিছু সুন্দর কথা।নরম পালকের মতো উড়ে বেড়ানো মনের কথা।ডান পাশে চন্দনের গন্ধ নাকে বুলিয়ে দিল এমেন্ডার মৃত্যুর করুণ কাহিনি।ইউটিউব খুলে দেখি টড।নির্মল একটা মুখ।কিউকার্ডে লিখে গেছে জীবনের করুণ আর্তি।হায় জীবন তুমি কত রকমের রসিকতা করতে জানো।এমেন্ডার শেষ কথা, “I don’t have anyone, I wish I have someone.” টিনএজ বয়েস কি চায়?

এই মরুনদীতেএকজন মা যে কি অসহায় ভাবে সাঁতার কাটে তা কেবল মা-ই জানে।এই এমেন্ডাই আমার আজকের লেখার বিষয় বস্তু। কতভাবে বাঁচতে চেয়েছে চরম সভ্যতার এই উন্নত দেশে চরম সভ্যতার অঙ্গনে । কিন্তু বুলিং কোথাও তাকে স্বস্তিতে টিকতে দেয় নাই। কিউ কার্ডে লিখে ইউ টিউবে নিজের কষ্টের কথা জানিয়েও এমেন্ডা কি কারো কাছ থেকে একটু ভালোবাসা, একটু মায়া, একটু সহানুভূতি পেতে পারেনি? মানবিকতা কোথায় মুর্ছিত হয়ে আছে?

মানুষের বিবেক এখনও “Conundrum”এর ভেতরে থেবড়ে আছে। যে এমেন্ডার বুব ইন্টারনেটে পোষ্ট করার কারণে তাকে তিনটে শহর বদল করে তিনটে স্কুল বদল করার পরেও স্বস্তিতে থাকতে দেয় নাই, সেই কানাডা এমন দেশ যেখানে বিকিনি পরে সুস্থ মেয়েরাই বিচে ঘুরে বেড়ায়। কি পার্থক্য ছিল ঐ টুকু খোলা আর এক চিলতে কাপড়ে ঢাকার মধ্যে?

এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে পুরুষ তাকে বঞ্চনা করলো, বুলিং এর স্বীকার করলো, তাকে খুঁজে বের করবার দাবী কয়জন মানুষ উত্থাপন করেছে? কয়জন মেয়ে উত্থাপন করেছে? এইখানেই বিচার মুখে কাপড় বেঁধে বোবা সমাজ বানিয়ে রেখেছে। তাই সকল মুভমেন্টের আগে দরকার নারীর প্রতি নারীর সহানুভূতি বৃদ্ধি করা । গত তিন বছরে এমেন্ডার পাশে মা ছাড়া আর একজন নারী ও কি বন্ধু হয়ে দাঁড়াতে পারেনি? তা হলে হে নিষ্ঠুর বিধাতা তুমি নারী করে পাঠালে কোনো অহংকারে? প্রকৃত অবিবেচক তুমি নিজেই ঈশ্বর। তোমার কোনো বিচার ক্ষমতা নেই। তুমি হলে সবচেয়ে নিষ্ঠুর পুরুষ!Feminism –এর “Fourth wave movement” এর নাম্বার ওয়ান দাবী হবে ঈশ্বরের বিচার চাই।

টরন্টো, কানাডা, পৃথিবী

1 comments:

Banibrata বলেছেন...

খুব সুন্দর!! তথ্যপূর্ণ এবং আসাধারণ বিশ্লেষণী ক্ষমতায় উজ্জ্বল এই লেখা!! :)