বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

সতী- তন্ময় ধর

সতী
তন্ময় ধর


তাত্ত্বিক কচকচির ওপর ঢের পাউডার-পারফিউম ছড়ানো আছে আমরা জানি। আঁশটে গন্ধ নাকে পৌঁছানোর আগেই ঐতিহ্য খাড়া হয়ে যাবে জাপানি তেলের টানে। ‘সতী’ শব্দটার উৎপত্তিগত অর্থ যদি দেখা হয়, তবে দেখা যাবে সৎ+ঈপ =সতী। ‘সৎ’ (অসবিদ্যমান থাকা + শতৃ কর্তৃ) মানে যা বিদ্যমান, যা উত্তম, সাধু এবং সভ্য। পুংলিঙ্গের ক্ষেত্রে এর সমস্যা নেই। কারণ, পুরুষ নির্গুণ, তার স্পর্শদোষ হয় না, সমস্যা ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতিকে নিয়ে। তাই নারীদেহে ‘সতীচ্ছদ’নামক একটি পর্দা নির্ণীত হল, যে শব্দটি আবার পুংলিঙ্গ। অর্থাৎ পুরুষই নির্ধারণ করবে স্ত্রীর বিদ্যমান থাকার শর্ত ও সংজ্ঞা।

নারীর প্রথম যৌনসঙ্গম নিয়ে সমস্ত দেশের সংস্কৃতিতেই কমবেশি উদ্বেগ আছে।তা নিয়ে ঘষামাজাও কম হয়নি।

‘Traditionally, there was a cultural expectation that a female would not engage in premarital sex and would come to her wedding a virgin, which would be indicated by the bride wearing a white gown, and that she would "give up" her virginity to her new husband in the act of consummation of the marriage.In some cultures, it is so important that a female be a virgin that a female will refrain from inserting any object into her vagina, such as a tampon, menstrual cup or dildo, or undergoing some medical examinations, so as not to damage the hymen. Some females who have been previously sexually active (or their hymen has been otherwise damaged) may undergo a surgical procedure, called hymenorrhaphy or hymenoplasty, to repair or replace her hymen, and cause vaginal bleeding on the next intercourse as proof of virginity. In some cultures, an unmarried female who is found not to be a virgin, whether by choice or as a result of a rape, can be subject to shame, ostracism or even an honor killing. In those cultures, female virginity is closely interwoven with personal or even family honor, especially those known as shame societies, in which the loss of virginity before marriage is a matter of deep shame.’(Psychology press article on virginity).

আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে যেই সমাজ পিতৃতান্ত্রিক হয়েছে, ইন্টুইসনিস্ট (ব্রাহ্মণ্য) থেকে সমাজ যত র‌্যাশনালিস্ট (বৌদ্ধ) হয়েছে ততোই মাতৃশক্তিকে পড়তে হয়েছে দূর্দশার মধ্যে। তথাকথিত একনায়কধর্মী ধর্মগুলির (বৌদ্ধ,খৃস্টান, ইসলাম ইত্যাদি) একদেশদর্শিতাই সম্ভবত সতীত্ব শব্দটির জন্ম দিয়েছে, তাকে ঠুনকো করেছে। এই কারণে প্রাচীন ঋগবেদ বা রামায়ণে সতীপ্রথা নেই, কিন্তু পরবর্তী পুরাণ গ্রন্থগুলিতে আছে। সমাজের সামগ্রিক দর্শন-চিন্তা যুগের সাথে সাথে উন্নত হলেও নারীর মর্যাদা ও মূল্য রক্ষার্থে এই গতি বিপরীতমুখী। হয় উপেক্ষা নয়তো ‘ন যযৌ ন তস্থৌ’।

সমাজের সতীত্বের সংজ্ঞা পাল্টাতে গেলে যে পরিমাণ এনার্জি দরকার তা এই গ্রহে কেন, গোটা ব্রহ্মাণ্ডেও নেই। কেননা সিস্টেমে বড়ো অংশটাই ডুবে আছে আপোষে । ক্ষুদ্র অংশের প্রতিবাদে যে উগ্র নারীবাদ উঠে আসে তাও মুখে শতগুণ এবং প্রয়োগকালে প্রায় অদৃশ্য। হ্যাঁ, সতীদাহ প্রথা হয়তো রদ হয়েছে, কিন্তু স্ত্রী-অঙ্গচ্ছেদ (নারীর যৌনতৃপ্তি রোধ করার জন্যে স্ত্রীজননাঙ্গের বাহ্যিক অংশ কেটে বাদ দেওয়া) তো বন্ধ হয়নি (আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং লুকিয়ে-লুকিয়ে এদেশেরও বিভিন্ন প্রান্তে )। বন্ধ হয়নি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে উদ্ভিন্ন যৌবনাদের ব্রেস্ট-আয়রনিং।

এইসব ছিঁড়ে যাওয়া সতীচ্ছেদ রক্তাল্পতা উগরে উগরে সমাজকে রক্তহীন করে ফেলেছে কবেই। এখন এর সতীত্বের সংজ্ঞা খুঁজতে যাওয়াটা নেহাতই পণ্ডশ্রম।