শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৩

মলয় রায়চৌধুরীর অপ্রকাশিত ডাইরি

খামচানো কালপৃষ্ঠা


কবি রাম বসুর দেয়া মহার্ঘ দু'আনা পুরস্কার

মলয় রায়চৌধুরী


ডায়রির এই এন্ট্রিটা লেখার জন্য গুগল ইমেজে কবি রাম বসুর ছবি খুঁজে পেলুম না । খটকা লাগায়, কৃষ্ণ ধর, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় খুঁজলুম, পেলুম না । কেমন যেন অপমানিত বোধ করলুম । এতকাল যাবত পশ্চিমবঙ্গের বাংলা অ্যাকাডেমি করছিলটা কী ? যতদূর জানি, এই কবিদের বলা হয় বামপন্হী মনোভাবাপন্ন । তাঁদের কবিতাতেও তাঁদের মনোজগত প্রতিফলিত । তার মানে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্হী সরকার এই কবিদেরওয়েবজগতে সংরক্ষণ করার কোনো ব্যবস্হাই করেনি । অথচ যারা, যাকে বলে ক্ষমতার অলিন্দ, সেখানে ঘুরঘুর করেছে, তারা আছে অনেকেই । 'দায়বদ্ধতা' শব্দটা নিয়ে কত কথা শুনেছি সেই সময়ে, সেই চল্লিশের দশকের আলোচকদের লেখায় । তারপর নকশাল আন্দোলনের সময়েও তাঁদের কবিতা থেকে রসদ খুঁজেছেন অ্যাক্টিভিস্টরা । অথচ কবিদের পাঠবস্তুতে দায়বদ্ধতা আছে কিনা তা যাচাই-পরখ করেই বিদ্যায়তনিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাধিকারীরা খালাস । খাদ্য আন্দোলনের সময়ে বড়ো দেবুদা ও ছোটো দেবুদা বহু ব্যানার ও মিছিল-তোরণে শ্রমিকদের ছবি এঁকে দিতেন, সেগুলোও হারিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে ।


রাম বসুর কথা তুললুম এইজন্য যে আমি যখন নাকতলায় থাকতুম, তখন হঠাৎই একদিন তাঁর টেলিফোন পাই । কোথা থেকে আমার নম্বর পেয়েছিলেন জানি না । তাঁর কন্ঠস্বরটিও, বার্ধক্যে যেমন হয়, কাঁপা-কাঁপা । আমার সঙ্গে তাঁর কখনও দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি । অগ্রজ যে কবিরা পাটনা, চাইবাসা, উত্তরপাড়া, আহিরিটোলাতে এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে আমার পরিচয় দাদা সমীর রায়চৌধুরীর সূত্রে । তিনি জানালেন যে বাঁকুড়ার জনৈক কবি-সম্পাদক আমার একটি বই তাঁকে পড়তে দিয়েছিলেন আর সেই বইটি পড়ে তিনি আমাকে পুরস্কৃত করতে চান ; তিনি ওই কবি-সম্পাদকের মুখে শুনেছেন যে আমি কোনো পুরস্কার নিই না, তা সত্ত্বেও দিতে চান, আর আমাকে তা নিতেই হবে । রাম বসুর কথা শুনে টের পেলুম যে বাঁকুড়ার যে কবি-সম্পাদক আমার ফ্ল্যাটে এসে আমাকে এক হাজার টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটেই অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন, তিনিই রাম বসুকে বলে থাকবেন । আমিওনাকে বললুম যে আমি সত্যিই কোনো সাহিত্য পুরস্কার নিই না, তা সে সরকারি, বেসরকারি, লিটল ম্যাগাজিন যারই পুরস্কার হোক না কেন । কেননা আমি চাইনা যে আমার মনোপরিসর অন্যের মূল্যবোধ ও জীবনদর্শনের দ্বারা দূষিত হোক । সেকারণে আমি কোনো সম্বর্ধনাও নিই না ।


রাম বসু বললেন যে উনি আমার বিষয়ে সেসব কথা শুনেছেন আর এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও তিনিআমার পাঠক । কথা এগিয়ে নিয়ে যেতে বিব্রত বোধ করছিলুম, অনুমান করে থাকবেন উনি । বললেন, ওনার সংগ্রহে বহু পুরোনো একটি দুআনি আছে।সেইটেই তিনি আমাকে আমার 'ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস' উপন্যাসের জন্য পুরস্কার হিসেবে দিতে চান ।