শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৩

ধারাবাহিক এপিটাফ - সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার


১৯।


নদীত ফোটে নদীয়া হোলা/হায় আল্লা

ফুটিয়া রইল মোর ডালতে ....



রাস্তায় রাস্তায় উপচে পড়ছে রোদ।মন কেমন করা রোদ। পথচলতি লোকজন সারা শরীরে মেখে নিচ্ছে আমাদের ছোট


শহরের দাউ দাউ রোদ।আর শহরের সমস্ত পুরানো,শতবর্ষ আক্রান্ত ইতিহাসের ছোঁয়া লাগা সেই সব ভূতুড়ে বাড়িগুলির দিকে আমার কী যেন এক চোরাটানের কুহক। আবার বাল্যকালের বন্ধুরা যায় সব আগের মতো।আমার সাইকেলকে ঘনঘন দাঁড়িয়ে পড়তে হয়।আমার জীবন উবু হয়ে বসে পড়ে গেরস্থ বাড়ির সম্পন্ন উঠোনে।উঠোন জুড়ে সদ্য কাটা ধানের আঁটি।ঢেঁকিশালে পোষা বিড়াল।গলায় ঘণ্টা বাঁধা। আমি রাজবংশী সম্পন্ন কৃষকদের ডারি ঘর বা বৈঠকখানা ঘরে বসে দোতারার আওয়াজ শুনি।গেরস্থালীর কাজের ফাঁকে মেয়েরা চটকা গাইছে—



আজি কার বা বাড়ির ভোন্দা বিলাই

দুয়ারত আসিয়া করে ম্যাও


অজস্র আবিস্কারে ভরে উঠতে থাকে আমার জীবন,ঘটনাবহুল বর্ণময়,গনগনে মশালের আলোয় বৃত্তে চুপচাপ বসে থাকা


জীবন।আমি গ্রামে গ্রামে পর্‍যটকের ঢঙে ভ্রমণ সারতে থাকি। উত্তরবাংলার লোকায়ত ভুবনের মায়া তার জাদুতে সেই থেকে আমি বন্দি।এবং আচ্ছন্ন।



২০।



ভালুক মিঞা শিস দিয়ে ভাওয়াইয়ার সুর তুলছে।সাইকেলের বেল দিয়ে,বাতিল থালাবাসন দিয়ে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করছে।


ভালুক মিঞা একজন জন্মান্ধ লোককবি।বিচিত্র সব লোক গানের সুর বাজিয়ে,আর নানারকম পশুপাখির ডাক নকল করে গোটা জীবন জীবিকার তাগিদে বন্দরে,মফঃস্বলে অবিরাম ঘুরে বেড়ায় ভালুক।মানুষ তাকে ঘিরে ভিড় করে। ভালোবেসে ছড়ানো পয়সা সাজিয়ে দেয়।ভালুক ব্রাত্যজনদের গান গায়। আর প্রান্তবাসীরা সেই সব শোনে।আর ঝুঁকে পড়ে।