মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

ধারাবাহিক বিলাভারত – অভীক দত্ত

বিলাভারত (দ্বিতীয় পর্যায়)
অভীক দত্ত


শিশুপাল কৃষ্ণের হাতে মরেছিলেন তার পাপের সংখ্যা একশো ক্রস করায়। বিলাভারতে পাপের সংখ্যা কত ক্রস করবে তা এখনই বলতে পারব না। আমরা বরং কাটা ছেড়া করে যাই, পাপের সংখ্যা পরে হিসেব করা যাবে। বিভিন্ন জ্ঞানী লোকের অহেতুক জ্ঞান কোট করেও পাঠককে বোর করার ইচ্ছে নেই আমার, যেটা আমরা বুজছি সেটাই আলোচনা করে যাই।

যাই হোক, এবারে একটা অন্য ব্যাপার, সে আমলে নিচু জাতের কোন রকম মূল্য ছিল না। এখন যেমন ব্রাহ্মণের ভ্যালু তলানিতে এসে ঠেকেছে সেই সময়টা ছিল বাজে সময় নিচু জাতের। একলব্য যত ভালই ধনুর্ধর হোন, তিনি নিচু জাতের প্রতিনিধি ছিলেন। সেই কারণে তাকে দ্রোনাচার্য তাড়িয়ে দেন। গোপনে চর্চা করছিলেন, তাও হিংসুটে অর্জুন তার বুড়ো আঙুল কাটার ব্যাবস্থা করে দিল।

আর জতুগৃহের সময় ঘটে গেল আরও মর্মান্তিক ঘটনা। নিষাদ পত্নী আর তার পাঁচ ছেলেকে জেনে বুঝে জতুগৃহে রেখে পালায় পান্ডবেরা। মানে ব্যাপারটা ছিল ওরা মরলে বাকি বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে পান্ডবেরা মারা গেছে তার সুবাদে পান্ডবেরা কিছুদিন অজ্ঞাতবাসে থাকতে পারবে। লোকগুলিকে পেট ভর্তি করে খাইয়ে বাড়িতে ঘুম পারিয়ে রেখে বাড়িতে আগুন দিয়ে পালায় পান্ডবেরা। এটা পাপের পর্যায়ে পড়বে না, ব্যাসদেব বলে দেবেন হয়ত এরা কোন ধর্মচ্যুত দেব দেবী, স্বর্গে পাপ করে মর্ত্যে এসেছিল আর পান্ডবেরা তাদের আবার স্বর্গে পৌছতে সাহায্য করে।

বস্তুত গোটা মহাভারতেই এই ব্যাপারটা চলতে থাকে। কেউ ভুল করে মিলনে লিপ্ত হরিণ মেরে ফেলে(পান্ডু=সলমন খান?), কেউ ঋষি মুনি মেরে ফেলে আর তাদের পাপকে ঢেকে দেওয়া হয় এই যুক্তিতে তারা কোন না কোন পাপ করে মর্ত্যে এসেছিলেন।

নিচু জাতের যেমন কোন মূল্য ছিল না, তেমনি মূল্য ছিল না মেয়েদের। হিন্দু ধর্ম অনেক বড় বড় কথা বলে মেয়েদের সম্মানের ব্যাপারে কিন্তু আদতে বাকি মধ্যযুগীয় ধর্মগুলির সাথে হিন্দু ধর্মের বিশেষ কোন অমিল নেই। কেন এ কথা বলছি? এবার আলো ফেলা যাক মহাপ্রস্থানিক পর্বে। স্বর্গের খাতায় গোটা মানবজীবনে যুধিষ্ঠিরের কোন দোষ ধরা হয়েছে? না, একমাত্র “অশ্বত্থমা হত ইতি গজ”। আর কোন দোষ ছিল না তার? যুধিষ্ঠির যেভাবে পাশা খেলার সময় দ্রৌপদী কে বাপের সম্পত্তি মনে করে কৌরবদের কাছে দিয়ে দিয়েছিলেন সেটা কি ধরণের ব্যাপার ছিল। যুধিষ্ঠিরের সাথে পাচু পানওয়ালার কি তফাৎ হল যে বাজারে বন্ধুর কাছে দেনা হলে বউকে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়?

এই মারাত্মক অপরাধেও কোন রকম পাপ হয়নি যুধিষ্ঠিরের। অশ্বত্থমা হত ইতি গজ বলার জন্যে তাকে নরক দর্শন করতে হয় কিছু সময়ের জন্য, অন্য কোন কারণে নয়, এটা নারীজাতির অবস্থান সেই সময়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবার পক্ষে যথেষ্ট। সেই তুলনায় বৃকোদর ছিলেন সত্যিকারের পুরুষ যিনি দ্রৌপদীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যুধিষ্ঠিরের হাত পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, পরে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের প্রতিশ্রুতিমতন দুঃশাসনের বুক চিরে রক্ত খেয়েছিলেন। ভীমই ছিলেন মহাভারতে আসল বাঘের বাচ্চা। তিনিই যুধিষ্ঠিরকে জনসমক্ষে সরাসরি বলেছিলেন জুয়াড়িরা তাদের বেশ্যাদেরও কখনো জুয়ায় তুলতেন না, সেখানে যুধিষ্ঠির ধর্মরাজ হয়ে কিভাবে নিলাম করে দিলেন নিজের স্ত্রীর সম্মান?

তার মানে জুয়া হেরে নিজের বউকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ায় কোন পাপ হয় না মহাভারত এই কথাই বলছে? আমাদের তো এই যুগে দাঁড়িয়ে উল্টোটা মনে হবার কথা। দুর্যোধন শকুনি যত পাপী, এই ব্যাপারে যুধিষ্ঠিরও সম পরিমাণ পাপী। দাঁড়িপাল্লায় বিচার করলে যুধিষ্ঠিরের পাপ এখানে বেশি হওয়া উচিত, কম কখনোই নয়। কর্ণকে রবি ঠাকুর খুব উঁচু আসনে বসিয়েছেন, স্বাভাবিক, বাঙালির ধর্মই হল সব কিছু বাঁকা চোখে দেখে সোজা বলা, কিন্তু এই কর্ণই কিন্তু সব কিছু জেনে বুঝে সভায় সরাসরি দ্রৌপদীকে বেশ্যা আখ্যা দেন। সব থেকে বড় কথা দ্রৌপদীর কাপড় খোলার প্ররোচনা দুঃশাসনকে আর কেউ না, এই কর্ণই দেন। যেটা মহাভারতের ইতিহাসে সব থেকে লজ্জাজনক অধ্যায়। ঘরের বউকে জুয়ায় হেরে সভা ভর্তি লোকের সামনে নগ্ন করার প্ল্যান, এদের থেকে তো এ কালের পানু ব্যবসায়ীরাও ভদ্রলোক!!!



(চলবে)

1 comments:

Kinkini Banerjee বলেছেন...

mohabharoter mohan rup'i dekhechhi, ebar dekhchhi tar onyo rup,
aaro porte chai