সোমবার, ১৬ জুন, ২০১৪

ছোটগল্প- নব বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখিচরিত গাছচরিত





--- কালকের ইন্টারভ্যুটা কেমন হল?

--- ভালোই তো !

--- কিন্তু আমি যেন অন্যরকম শুনলাম বাবার কাছে। ঈশিতার গলায় উদ্বেগ।

--- এই বাবা ক্লাসটার ওপর আমার সাংঘাতিক রাগ। কেন যে অ্যাডাল্ট ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে নাক গলায় ! রোহন রাগ চেপে রাখবার চেষ্টা করল না।

--- শুধু রাগ দেখালেই তো হবে না মশাই। ইন্টারভ্যুটা পেয়েছ সেই মানুষটার দৌলতে এটা ভুললে চলবে না।

একথার কোনও উত্তর হয় না। রোহনও চুপ করেই রইল। ঈশিতার চুপ থাকলে চলে না। ওদের রঁদেভ্যু এই পার্কটায় 

অন্ধকার নামছে একটু একটু করে। পাখপাখালির ডাকে জায়গাটা সরগরম।

ছায়া ছায়া কিছু মানুষ পায়চারি করে চলেছে এদিক থেকে ওদিক। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ঈশিতা জিগ্যেস 

করল, তুমি নাকি বাঁশগাছের কোঁড় কাকে বলে জানতে চেয়েচগ মি. পূর্ণেশ’এর কাছে?


পার্কের অন্ধকার বেশ খানিকটা সময় লোফালোফি করল প্রশ্নটা নিয়ে। তারপর প্রতিধ্বনি ফিরে এল, কী করব বল?  

করব স্টোর ক্লার্কের কাজ আর উনি, বিয়িং দ্য মেটিরিয়ালস্‌ ম্যানেজার অব্‌ দ্য কোম্পানি, আমাকে জিগ্যেস করলেন 

হোয়াট ইজ দ্য মোস্ট ইম্পরট্যান্ট পার্ট অব্‌ আকার !


--- দেন হোয়াট ডিড য়্যু সে?

--- ফ্ল্যাট বলে দিলাম আমার বা আমার পরিবারের কারোর গাড়ি নেই।

--- মোস্ট ডিসগাস্‌টিং ! ভিতরের সমস্ত রাগ ঈশিতা নামের আগ্নেয়গিরির ক্রেটার দিয়ে বেড়িয়ে এল এবার, এভাবে 

নিজের স্ট্যাটাসটা জানান না দিলেই চলছিল না ?

--- কী করব বল? আমি যা আমি তা-ই।

প্রায় গাছের ডালে বসা পাখিরই মতো হালকা একটা শরীর এবার ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে একটা বোবা গাছের বাকলে 

মাথা কুটতে লাগল, তুমি কী তাহলে? বল্‌ বল --- বলতেই হবে তোমায় ! মাটির গভীরে শিকড় চালিয়ে দেওয়া কোন 

গাছ আর কবে পাখির ডাকে সাড়া দিয়েছে। অনেকক্ষণ কেঁদে কেঁদে পাখিটা ডানা মেলে উড়ে গেল অন্য ডালের সন্ধানে।

 ততক্ষণে গাছটা আবার মানুষ হয়ে উঠেছে ইচ্ছামতো।