শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

অনুপম চৌধুরী

রত্নদীপা দে ঘোষের কাব্যগ্রন্থ আমি ঈশ্বর হতে চাই”- হয়ে উঠার গল্প লিখছেন অনুপম চৌধুরী


বাংলা সাহিত্যেরকর্ষসাধনেচর্যাপদেরহাতধরেমধ্যযুগের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পথ ধরে মাইকেলের মেঘনাদবধ দিয়ে হাটাযাতে পড়েনি ক্লান্তির ছাপবেশ সুন্দর সুনিপুণপরিপাটিরাস্তায়অনন্তকালআমাদের যাত্রাযার রোশনাই এখনোজ্বেলেআমাদেরঅন্তরেকালে কালে তৈরিহচ্ছে কালের প্রসাদ, কালের রসদসাহিত্যের একেবারেউত্তরআধুনিকতায়এখনআমাদের বাস, এই আমাদের আবাসলেখনি জোরে তারগায়েপড়লউত্তরআধুনিকতাচিহ্ন মহাবিশ্বে বিস্ফোরণের মাধ্যমে এই পৃথিবীর সৃষ্টি, সৃষ্টির সৃষ্টিতব্য বিষয়ে আমাদের অবস্থান অনেক কঠিনপ্রতিনিয়ত বাঙলাভাষারবাঙলাভাণ্ডারকে অনেক ভাবে কবি সাহিত্যিকরা পরিপূর্ণতার দীপ জ্বেলে একছত্র অবস্থান করে যাচ্ছেনতাই বাঙলা সাহিত্যেরচর্চায়পারহচ্ছেঅনেকসময়, শ্রম, যার পরিশুদ্ধতার রোশনাই- আমাদের অগ্রযাত্রা

কবি রত্নদীপা দেঘোষএমনই এক স্রষ্ঠা যার হাতে ফলেছে বাঙলা ভাষার সুপ্ত বীজ, যা কিনা আগামী দিনের কৃষ্ট ফসলকবি ভারতের লেখকহলেও, বাংলাদেশেও বেশ নাম দামের সাথে দিনাতিপাত করছেন জন্মসুত্রে ময়মনসিংহে জন্ম করায় দেশের প্রতি রয়েছে অনেক ভালোবাসা ভাটির টানএই মমত্ববোধ বাংলাদেশেরমাঠপর্যায়ের কবি মহলে বেশ জনপ্রিয় নাম- কবি রত্নদীপা দে ঘোষ এই বিজ্ঞানের যুগেনেটওয়ার্কিং একমাত্র মাধ্যমএই যোগাযোগ নাথাকলেহয়তোকোনোভাবেচ্যুতহতোনাএইঅধমলেখকের সাথে, এবং দু-চার লাইন লিখার সুযোগও আসত না

উত্তরণ-দহনপুড়ো অভিমানী মনে কখনও ত্যাগে হননের তৃষাআত্ম নিধনেই বুঝিমুক্তি, যে হৃদয় দেউলে এসেছে নির্বাণ জ্ঞান; পরম আলর ছটা তাতেই কি ক্রোধে উদ্যত সংহারের কণা, রত্নদীপা দে ঘোষ সংকটগ্রস্ত, সে মরুভূমিতে রুইয়ে দিতে চান সঞ্জীবনের বীজউত্তরণের নাটকীয় পাড়ায়কবিবলেনমস্তিকেরঅমাবস্যাতাড়িয়ে হৃদয়ে লাগাও বড় গোলাপের চারা, তাতেই একদিন আমরাও ঠাই নেবো বুকে, সঙে স্বপ্নে সংযোগে মানুষ বাঁচে, বেড়ে উঠেউচ্চতর বোধের উত্তরণজাগাতেকথিতের বেদন বুঝাতে কবি নেন সিদ্ধার্থের স্মরণশ্রীক্ষেত্রে দুর্লভপ্রাণেকবি দেখতে চান হননের  সবহীন পরিত্রাতা

নাম নেই - লিপিরআরপতিতদেরকোনো নাম-তো নেই; কথিত পাপ বন্ধনে তারা হয়তো পাপগ্রস্থপুঁজিবাদী করালচিকারে প্রগতিশীলতার উলঙ্গ আক্রমণে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ব্যবধান হচ্ছে যোজন যোজন চামেলি বা শেফালী বা আর যত বেনামী মিছিলে আমরা দেখি কেবল লাইন চ্যুত স্বপ্নের সারি কথিত জনরাস্ট্রের বিচ্যুতনাগরিকএরা স্বাদ আহ্লাদের টুঁটি চেপে তারা নাবে নিষিদ্ধ সৈকতে , যেখানে মানবিকতার ছিঁটে ফোঁটাও নেইআছে শুধু নিয়নের লেলিহান শিখাসভ্য লোকের কড়কড়েনোটেরভাঁজতারাপেতেনেয় দেহের সাঁজনষ্ট উচ্ছিষ্টদের মতোবেঁচেথাকানষ্টা কোল সাবজেক্ট হন বিভিন্ন মহান সিম্পনিরএসব হাওয়ায় মিঠায়েজ্ঞানগালিচায়কখনোউদ্দারহয়না

রত্নদীপা দে ঘোষেরকবিতাযেমননাটকীয়(ডায়লগ)ময়তেমনি (ক্যারেক্টার)সর্বস্বপ্রায় কবিতায় দুটো(ক্যারেক্টার) চোখেপড়েদ্রষ্টা বক্তা হয়ে বা কখনো নিজেই সাবজেক্টও বক্তা হয়ে কথা বলেছেনযত বিষাদ, বেদনা, হাহাকার বুকেধরুকতবুতারকবিতায়একটামুখরতাআছে, সরব চলন আছেতার পঙক্তি বা লাইঙ্কে বিচ্ছিন্ন করে পড়া গেলে তাতে ভাবই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়- কবি হয়তো প্রচলিত লাইন কবিতায় লাগিয়ে সমগ্র কবিতায় মন দিয়েছেন ( নামকরণগুলো স্বকীয়

কিছু ভালো লাগা পঙক্তি তুলে ধরলাম -

  • "এখন হাবুডুবু খাই /  প্রতীক্ষার ময়ূর পাখায় কোটি কোটি কৃষ্ণ বিচ্ছেদ"
  • "এসো নির্জনে আমার বুকে / দুজনে গড়ি দেবালয় / বিদুষী রোধী বৃক্ষের"
  • "ঠোঁটে মধ্যবিত্ত রাত"..
  • "সপ্ত দিঙ্গা বাণিজ্যে- /গনগনে আগুন আঁচে / আমাদের যাতায়ত- নিত্য অভিসার"
  • "নিঃসঙ্গ হাতের তালুতে/ পুড়েছে বালি অর্ধেক অমরাবতী / আর নিশিগন্ধা গাছ"।

চাঁদের হাটে কবি আসর জমালেন কবিদের সাথেনিজ ভূমে সেরানায়িকাদেরস্মৃতিসমেত তারা কলম কালির দর্পণে মনযোগীকৃষ্ণকালী, বনলতা পদের সৌন্দর্য চিন্তার বিতর্ক নিয়ে রত্নদীপা কবিগণের মুখে ডায়লগ বসালেনরক্তমাংসের নায়িকার বেশে নারীকে মানায়তবে বনলতা- সেতোভাবসৌন্দর্য; সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সে কখনো দাঁড়াবে নাকবির হাটে কবিরাকেবলরত্নদীপারচোখের কবি এইভাবেই বারে বারে সাঁতরে গেছেন কবিতার স্রোতস্বিণী সমুদ্রে

কাব্যগ্রন্থ - আমি ঈশ্বর হতে চাই   রত্নদীপা দে ঘোষ পত্রলেখা  ৭৫ টাকা