সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ৭ম সংখ্যা, ১ম বর্ষ


ছদ্মসাহিত্যিক

নিজের জন্মনাম পাল্টে গ্রীক Pseudonym বা বাংলায় ছদ্মনামের রীতি আজকের নয়, ষোড়শ শতক থেকেই ছদ্মনামের বাড়বাড়ন্ত পাশ্চাত্যে প্রকট হয় । বাংলায় এই রীতি উনিশ-শতকীয় বলা যায় – হুতোম (কালীপ্রসন্ন সিংহ), টেঁকচাদ ঠাকুর (প্যারীচাঁদ মিত্র), রবীন্দ্রনাথের নয় নয় করে ৫টি ছদ্মনাম- ভানুসিংহ , আন্নাকালী পাকড়াশি, বাণীবিনোদ বন্দ্যোপাধ্যায়, অকপট চন্দ্র লস্কর, শ্রীদিকশূন্য ভট্টাচার্য । এছাড়াও আমরা বহু বিখ্যাত লেখক-কবিদের পাই কখনো দাদাঠাকুর / অনিলা দেবী (শরৎচন্দ্র), ভীষ্মদেব খোসনবীশ (বঙ্কিমচন্দ্র), টিমোথি পেন পোয়েম (মাইকেল মধুসূদন দত্ত), শঙ্খ ঘোষ (চিত্তপ্রিয় ঘোষ), অপরাজিতা দেবী (রাধারাণী দেবী), শ্রীজাত থেকে আজকের মহালয়া বললেই যাঁর নাম ওতপ্রোত নিশ্বাসের মতো স্পন্দিত হয়, সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পর্যন্ত বিরূপাক্ষ নামে দীর্ঘদিন লেখালিখি করেছেন । ছদ্মনাম শুধু নিজেকে আত্মগোপন অথবা আত্মপ্রচারের উপায় না , কখনও এও এক আড়াল মাধুরী, নিজেকে বদলে ফেলা নিজের সঙ্গে । এই আড়াল রচনার মধ্যেও অদ্ভুত আনন্দ থাকে, চিনিয়াও চিনিতে না পারার । বাংলা সম্প্রতি অন্তর্জালের দৌলতে ছদ্মনামের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো । কেউ কালো বেড়াল তো কেউ হোয়াইট র‍্যাস । সোশ্যাল সাইটে লেখালিখির যে নতুন ট্রেন্ডটি আজ ফেসবুক বা অরকুটে দেখা যাচ্ছে সেখানে নিজেকে আড়াল রাখতে অবসম্ভাবী বাড়ছে ছদ্মনামের ভিড়। কিন্তু এর আড়ালে যে আর একটি ডেস্ট্রাক্টিভ ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে সেটাই ভয়ঙ্কর । আগে ছদ্মনামের আড়ালে ছিল কোনো গঠনমূলক প্রয়াস, ইদানীং সেই ছদ্মনামের আড়ালে জন্ম নিচ্ছে বেশ কিছু ছদ্মসাহিত্যিক ও কবি , যারা ছদ্মনামের আড়ালে বিভিন্ন লেখালিখির কমিউনিটিতে প্রবেশ করে সেখাঙ্কার সাহিত্যের পরিবেশ ধ্বংস করতে চাইছে এবং করছেও । এর আগে এই ভাবেই বেশ কিছু গ্রুপে এই ধরণের অন্তর্ঘাতের সাক্ষী বোধহয় অনেকেই হয়েছেন । তার তালিকায় সর্বাগ্রে আসবে ফেসবুকের শুকতারা গ্রুপ । তেমনি আমাদের ক্ষেপচুরিয়াস গ্রুপের সাহিত্যের সুপরিবেশ বজায় রাখতে কিছুদিন আগে সেই সব ছদ্মসাহিত্যিকদের আগাম চিহ্নিত করতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল , যাঁদের নামের আসল পরিচয় আমরা জানতাম না তাদেরকে গোপনে সম্পাদকমণ্ডলীর যে কোনো সদস্যকে তাঁর ন্যূন্যতম পরিচয়টি জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য গ্রুপের মধ্যে অন্তর্ঘাতের সম্ভবনাকে যতটা সম্ভব কমানো যায় ও গ্রুপের বাকি সদস্যদের কাছে একটা সুষ্ঠ পরিবেশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া । এর মধ্যেই কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখিন হয়ে বুঝলাম ক্ষেপচুরিয়াস এখন অনেকেরই ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । অবশ্য ক্ষেপচুরিয়াস ঈর্ষা নয়, ভালোবাসাতে বিশ্বাসী, দুই বাংলার সাহিত্যিকদের একসঙ্গে করে অন্তর্জালে যে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার প্রচেষ্টা আমরা করছি তাঁকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিতে শশব্যস্ত হয়ে উঠেছে কিছু টিকিধারী ছদ্মকবি । এই ঈর্ষা যে তাঁদের বাকি পঞ্চরিপুকেও অধিকান্তর ত্বরান্বিত করছে তাঁর প্রমাণ http://words.bd24live.com/ নামে একটি ওয়েব সংবাদমাধ্যমের সাহিত্যপাতার একটি প্রতিবেদনে ক্ষেপচুরিয়াস সম্পর্কে প্রকাশ করা হলো সম্পূর্ণ প্ররোচিত ও মিথ্যা অপপ্রচার । এমন কী এই সম্পর্কীত প্রতিবেদনে বলা হলো আরও কিছু ভ্রান্ত তথ্য । ক্ষেপচুরিয়াসের মূল লক্ষ্যটিকে সামনে না রেখে সেখানে অপপ্রচার করা হলো ক্ষেপচুরিয়াসে নাকি “পিতৃদত্ত নাম ছাড়া লেখা প্রকাশ হয় না ” । এর পরিপ্রেক্ষিতে যে সকল কবি ক্ষেপচুরিয়াসে ছদ্মনামে লেখেন তাঁদের সমস্ত প্রতিবাদ লিপি নিঃশব্দে মুছে দেওয়া হতে লাগল । প্রসঙ্গত সেই সাহিত্যপাতার বিভাগীয় সম্পাদক কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ছদ্মনামেই ক্ষেপচুরিয়াসে লেখালিখি করেছেন । তবে এই অপপ্রচারের উদ্দেশ্য বুঝতে অসুবিধা হয় না । যাইহোক যে কথা বলছিলাম - কোনো টিকি সর্বস্ব ছদ্মসাহিত্যিকরা যতই প্রচেষ্টা চালিয়ে যান ক্ষেপচুরিয়াস তাঁর কাজ করে যাবে গোষ্ঠীতত্ত্বে বিশ্বাস না করেই । কে জানে এই তথাকথিত ভদ্রমহোদয়গণ কবে বুঝিবেন টিকির মাহাত্ম নামে নয় কর্মে ও নিষ্ঠায় থাকে । যতই সুকৌশলে ক্ষেপচুরিয়াসকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেবার চেষ্টা করা হোক, ক্ষেপচুরিয়াসে কোনোদিন কাঁটাতারের বেড়া ছিল না থাকবেও না । হাটের মাঝে বিষ্টা পাড়লেও কিছু বায়স গোত্রীয় প্রাণী ঠিক জুটে যায় । ছদ্মসাহত্যিকরা সেই রকমই । একা নামে রক্ষে নেই টিকি দোসর !



এবারের শারদীয় সংখ্যা এসে গেল হই হই করতে করতে, ঢাকের সাজের মতোই নতুন স্টাইলে । আশা করি আনাদের ভালো লাগবে । যে কথাগুলো না বললেই নয় তা হলো এই ওয়েব ম্যাগাজিনটা করতে সুমিত রঞ্জন দাস মহাশয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম । তাঁর ঋণ আমরা কোনোদিন পূরণ করতে পারবো না । এই সংখ্যাতেও অলংকরণ করে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন কবি মেঘ অদিতি, কবি কৌশিক বিশ্বাস, কবি প্রদ্যুৎপ্রকাশ রায় ও চন্দ্রশেখর মিত্র । আমরা গৌরাবাণ্বিত এই সংখ্যা থেকে আমাদের অনুবাদ বিভাগের সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রখ্যাত কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ ও কবি জুয়েল মাজহার । সম্পাদনায় এসেছেন কবি জুঁই সরকার । এই প্রসঙ্গে আগামী সংখ্যাগুলোর সম্পর্কেও বলে রাখি – আগামী ১লা নভেম্বর সংখ্যা নারী সংখ্যা হতে চলেছে , এই সংখ্যার জন্য আমরা সমস্ত মহিলা কবিদের লেখা আহ্বান করছি ।

ওহো এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে গেল । পুজো সংখ্যার জন্য আমরা ভারতের ভিন্ন রাজ্যবাসীর ৭০ দশকের এক বিখ্যাত কবির লেখা চাইতে গেলে তিনি বললেন “তোমরা বরং বাচ্চাদের পত্রিকা করো, আমি লিখবো না ” । ভাবছি , তাঁর কথার সম্মান রক্ষার্থে আগামী ১৫ই নভেম্বর তারিখে আমরা সুকুমার রায়ের স্মরণে একটি শিশুসাহিত্য সংখ্যা করবো । সকলের প্রতি রইল প্রাক-শারদীয় প্রীতি ও ভালোবাসা । সঙ্গে থাকুন । আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের পথ চলার পাথেয় । এখানে কোনো গোষ্ঠী নেই ।


সম্পাদকমন্ডলীর পক্ষ থেকে - জুবিন ঘোষ

3 comments:

Abdullah Al Jamil বলেছেন...

খুব ভালো লাগলো

ananya sinha বলেছেন...

valoo valoo

ঘনাদা বলেছেন...

পাগলামী যখন উচ্চপর্য্যায়ে যায়, তখন সেটা সৃষ্টির পথকে সুগম করে ! ক্ষেপচুরিয়ানের ক্ষাপাদের এই ক্ষ্যাপামি এখন আর্ট ।
সব কটা এখনই পড়ার সময় পেলাম না ! তবে, পড়ব ধীরে ধীরে । ভালো লবেঞ্চুষ তারিয়ে তারিয়ে চুষে, গালের এপাশ- ওপাশে রেখে খেতে হয় । তাই করব ।
শুভেচ্ছা আর প্রচুর অভিনন্দন