কবি মাসুদার রহমান । জন্ম ০১ সেপ্টেম্বর , ১৯৭০ । ঠিকানা – পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, বাংলাদেশ । এ পর্যন্ত তাঁর ২টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।
১) হাটের কবিতা, (২০১১) । প্রকাশক – পাঠসূত্র, ঢাকা, বাংলাদেশ ।
২) উত্তরবঙ্গ সিরিজ, (২০১২) । প্রকাশক – চিহ্ন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ।
ঢাকা থেকে অনেক দূরে থাকেন কবি । পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হিলি থেকে ২০-২৫ কিমি ভেতরে এক জীবনানন্দীয় গ্রামে কবির বাস ।
কবির কোনো সীমান্ত নেই । কবিতার কোনো দেশ নেই । ভাষার কোনো কাঁটাতার নেই । তাই তো কবি বারবার কাঁটাতারের বেড়া ঠেলে সীমান্তের শূন্যরেখায় ছড়িয়ে দেন বাংলাভাষার মায়াজাল । তাকে ভাষার জন্য, সৃষ্টির জন্য শূন্যরেখায় আবেগ আদান প্রদানের নিমিত্তে নিয়ত আসতে হয় ।
কিছু মানুষ আছেন, যারা কেবল কবিতার জন্যই বাঁচেন, সেরকমই এক ভুতগ্রস্ত মানুষ, কবি মাসুদার রহমান । কবিতা তাঁর ধ্যান । কবিতার জন্য তিনি অনর্গল কথা বলা এক অতিমানব। বাংলার খেটে খাওয়া গরীব–গুর্ব মানুষের অন্তরের ভীষণ কাছাকাছি থাকেন তিনি। হৃদয়ের আবেগের উচ্ছলতা দিয়ে কবিতা ভাসিয়ে দেন তিনি, নদীমাতৃক বাংলাদেশের একুশের ভিটায় ।
চাঁদে পাওয়া মানুষের কবিতা লেখেন তিনি । তাঁর কবিতায় ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের রোদ – বৃষ্টি – আকাশ । তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘হাটের কবিতা’ । সেখানে কবি রচনা করেন আবহমান গ্রাম জনপদের নতুন ভাষ্য । যে গ্রাম নিয়ত বদলে যাচ্ছে । তারপরেও এখনো যে সব গ্রামের মানুষেরা প্রতিবার হাট শেষে রাত্রিতে টর্চ হাতে গ্রামে ফেরে, তাদের কাব্যভাষা রচনা করেন তিনি । ‘পাখিরা পাখিনির কোমর জড়িয়ে ভরিয়ে তুলছে আর্দ্র আকাশ’ । কবি লিখছেন---
বৃষ্টিরা বেদনানাশক ; তবে আর
প্যারাসিটামলে কোন কাজ আছে ?
পাঠক পড়ুন ---
নিহত হবার আগে দু’পেগ গলাতে ঢালা ভালো
তাতে করে মৃত্যুটা মৌজ প্রবণ হয়ে ওঠে
ধান ভাঙতে শিবের গীত – হোক না তা মন্দ কি
শিবও একটা মেটার
মেয়েরাই তো ঝাঁক বেঁধে মন্দিরে মন্দিরে শিব লিঙ্গে
পুজো দিচ্ছে
ভগবান শিব যদি স্বয়ং তোমার অ্যাপার্টমেন্টে এসে ওঠে
কেন তুমি বার বার নিহত হবে না
এখানে কবির কিছু কবিতার বিদ্যুৎ পর পর তুলে দিলাম । পাঠক চোখ রাখুন –
‘বড়োবাবুর ফ্লাটে ঋতুবতী কামরাঙা গাছ’
‘সব্জিহাটার টমেটোর রোদ লেগে আকাশ হাসছে’
‘তোমাদের প্রিয় রাতে আমার শরীর ঘিরে ভোজনের উৎসব হোক’
‘আমাদের বউরা খুব সাধারণ মাদি ঘোড়া, পাছাভারি নধর শুকুরি’
‘জিরাফ রোদের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে সারি সারি ভোর’
সীমান্ত-যন্ত্রণা কবির কাব্য ভাবনায় ভীষণভাবে প্রভাবিত ।
‘সীমান্ত অতিক্রমের ভিসা পিঁপড়েদের আছে ?
সীমান্ত রক্ষীরা তুলছে দৃষ্টির এতো শক্ত দেওয়াল
তা ভেদ করে যাওয়া পিঁপড়েদের পক্ষে কোন ব্যাপারই নয়
পিঁপড়েরা পেরিয়ে যাচ্ছে ওই সীমান্তরেখা, এই কাঁটাতার’ ।
নিম্নবর্গীয় মানুষের ধর্মীয় রূপান্তরের ছাপ কবির লেখায় ধরা পরে । তিনি লিখেছেন – ‘তারপর সাহেবরা সেই বুনোগাছ পুঁতে বাগান বানালো, ফ্যাক্টরি বানালো , টোপেন মুন্ডা হলো মারটিন টোপেন মুন্ডা’ ।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সামাজিক ব্যাধির নানান রূপ মাসুদার এর লেখায় আছে, যা পাঠককে ভীষণ আলোড়িত করে । যেমন – ‘মেয়েটিকে বাঘে ধরেছিল’ এই কবিতায় পাই মেয়েদের অসহায়তা, ধর্ষিত হওয়ার খবর ।
কবির দ্বিতীয় কবিতার বই – উত্তরবঙ্গ সিরিজ । বইটিতে মোট ৪০ টি কবিতা আছে । সমস্ত কবিতার শিরোনাম বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কোনো না কোনো জায়গার নাম । যেমন ঠাকুরগাঁও, বগুরা, নাটোর , রাজশাহী, হিলি , জয়পুরহাট ইত্যাদি । প্রথম বইটিতে কবিকে পাই গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে থাকা হাটের সৌন্দর্য, মায়া ইত্যাদি । সমাজ বদলের চিত্র , গ্রাম বাংলার রূপান্তরের নিদর্শন, বাংলার ‘হাটের কবিতার’ ছত্রে ছত্রে প্রদর্শিত । পাশাপাশি ‘উত্তরবঙ্গ সিরিজ’ এ কবিকে পাচ্ছি একটু অন্যভাবে । এখানে কবি নির্দিষ্ট জায়গার সুখ দুঃখ , ভালো লাগা – মন্দ লাগার বিভিন্ন অনুভূতি গেঁথে কাব্যমালা তৈরি করেছেন । উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে কবির জড়িয়ে থাকা আবেগ নিখুঁতভাবে পাঠকের কাছে হাজির । আমরা যারা এ পার বাংলার মানুষ, যাদের অধিকাংশের নাড়ি পোঁতা আছে ওপারে , তারা এই বইটিতে পাবেন নস্টালজিয়ার অপূর্ব গন্ধ ।
যে গন্ধ আপনাকে অনেকক্ষণ স্মৃতিমেদুর করে তুলবে । ‘পীরগঞ্জ’ কবিতায় একটু চোখ রাখুন-
সজনে গাছের নিচে যে প্রৌঢ় মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন
মায়ের ঢঙয়ে । তিনি প্রায় আমাদের মা
যত গ্রাম আসে যায়, আমাদের গ্রাম
... ... ...
এইসব পথ ধরে হেঁটে ফিরেছিল আমাদের পূর্বজ পুরুষ এক হেয়াত মামুদ !
... ... ...
হলুদ সর্ষেক্ষেতে একটি বিকেল ; রোদ নিয়ে নেমে গিয়ে
আজাবধি তেমনই হলুদ’ ।
কবি নাগরিক নন । নগর জীবন থেকে শত যোজন দূরে বাংলার কুটিরে জ্বলা পিলসুজের কাছেই কবিকে ভালো মানায় , এখানেই সাবলীল তিনি ।
২) উত্তরবঙ্গ সিরিজ, (২০১২) । প্রকাশক – চিহ্ন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ।
ঢাকা থেকে অনেক দূরে থাকেন কবি । পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হিলি থেকে ২০-২৫ কিমি ভেতরে এক জীবনানন্দীয় গ্রামে কবির বাস ।
কবির কোনো সীমান্ত নেই । কবিতার কোনো দেশ নেই । ভাষার কোনো কাঁটাতার নেই । তাই তো কবি বারবার কাঁটাতারের বেড়া ঠেলে সীমান্তের শূন্যরেখায় ছড়িয়ে দেন বাংলাভাষার মায়াজাল । তাকে ভাষার জন্য, সৃষ্টির জন্য শূন্যরেখায় আবেগ আদান প্রদানের নিমিত্তে নিয়ত আসতে হয় ।
কিছু মানুষ আছেন, যারা কেবল কবিতার জন্যই বাঁচেন, সেরকমই এক ভুতগ্রস্ত মানুষ, কবি মাসুদার রহমান । কবিতা তাঁর ধ্যান । কবিতার জন্য তিনি অনর্গল কথা বলা এক অতিমানব। বাংলার খেটে খাওয়া গরীব–গুর্ব মানুষের অন্তরের ভীষণ কাছাকাছি থাকেন তিনি। হৃদয়ের আবেগের উচ্ছলতা দিয়ে কবিতা ভাসিয়ে দেন তিনি, নদীমাতৃক বাংলাদেশের একুশের ভিটায় ।
চাঁদে পাওয়া মানুষের কবিতা লেখেন তিনি । তাঁর কবিতায় ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের রোদ – বৃষ্টি – আকাশ । তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘হাটের কবিতা’ । সেখানে কবি রচনা করেন আবহমান গ্রাম জনপদের নতুন ভাষ্য । যে গ্রাম নিয়ত বদলে যাচ্ছে । তারপরেও এখনো যে সব গ্রামের মানুষেরা প্রতিবার হাট শেষে রাত্রিতে টর্চ হাতে গ্রামে ফেরে, তাদের কাব্যভাষা রচনা করেন তিনি । ‘পাখিরা পাখিনির কোমর জড়িয়ে ভরিয়ে তুলছে আর্দ্র আকাশ’ । কবি লিখছেন---
বৃষ্টিরা বেদনানাশক ; তবে আর
প্যারাসিটামলে কোন কাজ আছে ?
পাঠক পড়ুন ---
নিহত হবার আগে দু’পেগ গলাতে ঢালা ভালো
তাতে করে মৃত্যুটা মৌজ প্রবণ হয়ে ওঠে
ধান ভাঙতে শিবের গীত – হোক না তা মন্দ কি
শিবও একটা মেটার
মেয়েরাই তো ঝাঁক বেঁধে মন্দিরে মন্দিরে শিব লিঙ্গে
পুজো দিচ্ছে
ভগবান শিব যদি স্বয়ং তোমার অ্যাপার্টমেন্টে এসে ওঠে
কেন তুমি বার বার নিহত হবে না
এখানে কবির কিছু কবিতার বিদ্যুৎ পর পর তুলে দিলাম । পাঠক চোখ রাখুন –
‘বড়োবাবুর ফ্লাটে ঋতুবতী কামরাঙা গাছ’
‘সব্জিহাটার টমেটোর রোদ লেগে আকাশ হাসছে’
‘তোমাদের প্রিয় রাতে আমার শরীর ঘিরে ভোজনের উৎসব হোক’
‘আমাদের বউরা খুব সাধারণ মাদি ঘোড়া, পাছাভারি নধর শুকুরি’
‘জিরাফ রোদের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে সারি সারি ভোর’
সীমান্ত-যন্ত্রণা কবির কাব্য ভাবনায় ভীষণভাবে প্রভাবিত ।
‘সীমান্ত অতিক্রমের ভিসা পিঁপড়েদের আছে ?
সীমান্ত রক্ষীরা তুলছে দৃষ্টির এতো শক্ত দেওয়াল
তা ভেদ করে যাওয়া পিঁপড়েদের পক্ষে কোন ব্যাপারই নয়
পিঁপড়েরা পেরিয়ে যাচ্ছে ওই সীমান্তরেখা, এই কাঁটাতার’ ।
নিম্নবর্গীয় মানুষের ধর্মীয় রূপান্তরের ছাপ কবির লেখায় ধরা পরে । তিনি লিখেছেন – ‘তারপর সাহেবরা সেই বুনোগাছ পুঁতে বাগান বানালো, ফ্যাক্টরি বানালো , টোপেন মুন্ডা হলো মারটিন টোপেন মুন্ডা’ ।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সামাজিক ব্যাধির নানান রূপ মাসুদার এর লেখায় আছে, যা পাঠককে ভীষণ আলোড়িত করে । যেমন – ‘মেয়েটিকে বাঘে ধরেছিল’ এই কবিতায় পাই মেয়েদের অসহায়তা, ধর্ষিত হওয়ার খবর ।
কবির দ্বিতীয় কবিতার বই – উত্তরবঙ্গ সিরিজ । বইটিতে মোট ৪০ টি কবিতা আছে । সমস্ত কবিতার শিরোনাম বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কোনো না কোনো জায়গার নাম । যেমন ঠাকুরগাঁও, বগুরা, নাটোর , রাজশাহী, হিলি , জয়পুরহাট ইত্যাদি । প্রথম বইটিতে কবিকে পাই গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে থাকা হাটের সৌন্দর্য, মায়া ইত্যাদি । সমাজ বদলের চিত্র , গ্রাম বাংলার রূপান্তরের নিদর্শন, বাংলার ‘হাটের কবিতার’ ছত্রে ছত্রে প্রদর্শিত । পাশাপাশি ‘উত্তরবঙ্গ সিরিজ’ এ কবিকে পাচ্ছি একটু অন্যভাবে । এখানে কবি নির্দিষ্ট জায়গার সুখ দুঃখ , ভালো লাগা – মন্দ লাগার বিভিন্ন অনুভূতি গেঁথে কাব্যমালা তৈরি করেছেন । উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে কবির জড়িয়ে থাকা আবেগ নিখুঁতভাবে পাঠকের কাছে হাজির । আমরা যারা এ পার বাংলার মানুষ, যাদের অধিকাংশের নাড়ি পোঁতা আছে ওপারে , তারা এই বইটিতে পাবেন নস্টালজিয়ার অপূর্ব গন্ধ ।
যে গন্ধ আপনাকে অনেকক্ষণ স্মৃতিমেদুর করে তুলবে । ‘পীরগঞ্জ’ কবিতায় একটু চোখ রাখুন-
সজনে গাছের নিচে যে প্রৌঢ় মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন
মায়ের ঢঙয়ে । তিনি প্রায় আমাদের মা
যত গ্রাম আসে যায়, আমাদের গ্রাম
... ... ...
এইসব পথ ধরে হেঁটে ফিরেছিল আমাদের পূর্বজ পুরুষ এক হেয়াত মামুদ !
... ... ...
হলুদ সর্ষেক্ষেতে একটি বিকেল ; রোদ নিয়ে নেমে গিয়ে
আজাবধি তেমনই হলুদ’ ।
কবি নাগরিক নন । নগর জীবন থেকে শত যোজন দূরে বাংলার কুটিরে জ্বলা পিলসুজের কাছেই কবিকে ভালো মানায় , এখানেই সাবলীল তিনি ।
2 comments:
সূরজ দাশের আলোচনা অনব্দ্য। কবিকে কাছে পেতে ইচ্ছে জাগে, আগ্রহ জাগে কবির কাব্যগ্রন্থ পাঠ করার।
সূরজ দাশের আলোচনা অনব্দ্য। কবিকে কাছে পেতে ইচ্ছে জাগে, আগ্রহ জাগে কবির কাব্যগ্রন্থ পাঠ করার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন