সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

গৌরব রায়

যা দেখি

 
কোনো একসময়ে, কোনো একস্থানে এক নতুন শিল্পী এক প্রাজ্ঞ শিল্পীকে তার সদ্য শেষ করা একটি ছবি দেখাতে নিয়ে যান। উদ্দেশ্য সেই শিল্পীর মতামত নিয়ে আরো একটু সম্পৃক্ত (সমৃদ্ধ) হওয়া। সৌম্যকান্তি প্রাজ্ঞ নূতনকে প্রশ্ন করলেন 'কি আঁকছ?' নূতন সোৎসাহে বললেন 'যা দেখি - তাই আঁকছি।' প্রাজ্ঞের পাল্টা প্রশ্ন 'যা দেখ - তাই আঁক কি ?'

সত্যিই তো যা দেখি, আঁকার সময় তার সঙ্গে আর যোগ হয় বোধ। যা সাধারণ দৃশ্যকে করে তোলে অসাধারণ; রসোত্তীর্ণ। আর এই দেখা আর বোঝার মধ্যে দিয়ে দিক নির্দেশিত হয় আধুনিক থেকে উত্তর আধুনিকের দিকে।

একথা সর্বজন স্বীকৃত যে সকলের বোধ সমান নয়। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে সকলের বেড়ে ওঠার পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তার মানসিক গড়ন সমান হয় না। অর্থাৎ বোধের নিরিখে বদলে যায় প্রকাশের ভাষা। একে অন্যের থেকে ভিন্নতর হয়ে ওঠেন। আর আমাদের দৃশ্যশিল্পের জগৎ ভরে যায় নানান রকমফেরের বিচিত্রতায়।

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমাদের বলতেই হবে আমাদের কাছে তথ্যের যোগান প্রচুর। বই,ইন্টারনেট অথবা অন্যান্য মিডিয়া সেই সব তথ্যের যোগানদার। প্রাচীন তথ্যের খুঁটিনাটি থেকে আধুনিকতম আবিষ্কারে হাল হকিকত, সবই ধর্তব্যের মধ্যে বলা যেতে পারে সমস্ত তথ্যই একই surface এ বর্তমান। এটিই আধুনিক আর উত্তর আধুনিকের ফারাক গড়ে দেয়।

শুধুই আগের 'গৎ' থেকে ধারণা তুলে নিয়ে তার পরিবর্তন পরিমার্জনের মাধ্যমে নতুন মাত্রা যোগ করা নয়; মূলগত তথ্যগুলিকে একসঙ্গে রেখে visually তার একটি সনির্বন্ধ প্রতিবেদন। প্রযুক্তির প্রয়োগে কখনো হয়তো তা আর Touchable and Tangible থাকছে না যেমন video art এ হয়ে থাকে।

আবার অনেক সময় পরিবেশ পরিস্থিতির দৃষ্ট ক্যানভাসে দ্বিমাত্রিক illustration এর মাধ্যমে একরকম ভিসুয়াল illusion তৈরীর চেষ্টার পরিবর্তে বিভিন্ন উপাদান, আলো, রঙ, শব্দের মাধ্যমে স্পেস দর্শকের মধ্যে একটি সম্পর্ক নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে 'installation' এর মাধ্যমে।

শহস্রাধিক বছরের প্রাচীন দ্বিমাত্রিক ছবির ধারা বা কেবল অনিন্দ্যসুন্দর একটি ভাস্কর্য কোনো ক্ষেত্রে হয়তো একবিংশ শতাব্দীর মানুষের 'surplus necessity পুরোটা মেটাতে পারছে না। তাই ক্ষেত্রবিশেষ দুই বা ততোধিক মাধ্যমের যুগলবন্দী দেখা যাচ্ছে। সিরামিক বা প্রিন্ট আর্টের মতো কুলীন নয় এমন মাধ্যমকেও মূলধর্মী শিল্পের আর্ক লাইটের আলোয় আনা হয়েছে। খুঁজে দেখা হচ্ছে authentic মাধ্যমের প্রয়োগের নতুন নতুন সম্ভবনা।

নতুনকে খুঁজে পাওয়া না গেলে তার কেবল পুরাতনের চর্বিত চর্বন করলে তাতে শিল্পের পতি যাবে রুদ্ধ হয়ে। আর থেকে যাওয়া মাবেই নিন্দুকেরা বুক বাজিয়ে বলবে 'art is dead'

মানব সংস্কৃতির এরকম একটি স্তম্ভের গায়ে এরকম বোর্ড লাগানো থাকাটা সুস্থ জনের কাছে একেবারেই কাম্য নয়। আর দর্শক যেখানে কোনো কালেই শিল্পকলার বাইরে নয় সেখানে শিল্পী, দর্শক আর স্পেসের সম্বন্ধ আরো একটু মধুর করে তোলাই যায়।