সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

হানযালা

[এই লেখাটির সঙ্গে আপন মাহমুদের শেষ স্মৃতি জড়িয়ে আছে । মৃত্যুর ২-৩ রাত আগে, কবির (হানযালার) বাড়িতে ছিলেন। অনেক রাত পর্যন্ত তাঁরা কবিতা, উপন্যাস, গল্প, বিনয়, শক্তি, উৎপল, সুনীল, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক নিয়ে কথা বলছিলেন। কবিতাটা লেখবার সময় দুজনে মিলে কবিতাটা বারবার পড়ে শেষ রূপটা দাঁড় করান। আপন ভাইয়ের একটাই কথা, কবিতাকে যতটা পারা যায় সহজ করতে হবে। কবি যতই যাচ্ছিলেন কঠিনের দিকে, তিনি টেনে সহজের দিকে নিয়ে আসেন। শেষ পর্যন্ত কিছু বিষয় অমীমাংসিত থেকে যায় । কবি পরে অনেক ভেবে (আপন ভাইয়ের পরামর্শ যতটা রাখা যায়), ওইটা দাঁড় করান।

আপন ভাইয়ের মৃত্যুর ঠিক আগে আগে কবি এই লেখাটি ই-মেইলে ক্ষেপচুরিয়াসে পাঠান । কবি আপন ভাইকে ওই কবিতাটা দেখিয়ে বলেছিলেন , “ক্ষেপু ব্লগের জন্য একটা কবিতা জুবিন দা চাচ্ছেন। এটা দিতে চাই” । তখন অফিসে পিক আওয়ার। খুব কাজের চাপের মধ্যে আপন ভাই একবার পড়ে বললেন, ভালোই-তো, পাঠান পরে নাহয় আবার দেখবো। শেষ পর্যন্ত তা আর দেখা হয়ে ওঠেনি আপন ভাইয়ের । তার আগেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । সেই স্মৃতি বিজরিত এই কবিতাটি এবার আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম – সম্পাদক ক্ষেপচুরিয়ান।]


সময়ের আগে আগে উড়ে যে পাখি, সেই নতুন কথা বলে


‘সময়ের আগে আগে উড়ে যে পাখি, সেই নতুন কথা বলে’ ধ্যান শেষে পূর্ণিমার জোছনার মতো এই উপলব্ধি হয়েছিল রাতের। আমি চেতনার অন্ধকারে পেঁচার মতো ছুটে চলা সেই পাখি। দুধরাজ সাপের কাছে শিখেছি, সৌন্দর্যের মতো ফণায় লিকলিকে জিহ্বার ছবি আঁকতে হয়। সেই জিহ্বার লালায় মৃতদের স্মৃতির মতো রূপসীরা শীৎকার করে ওঠে। যে শীৎকারে উল্কার মতো ছিটকে পড়ে একেকটি ছায়াপথ। সে পথে হেঁটে যায় মায়ার মতো প্রাচীন বটেরা। বটেদের আশ্রমে দেখেছি, শিকড়ের মতো ঋতুবতী নারী। যার জন্ম-বেদনার গাঢ় রস মানুষের চোখে জাগিয়েছে নেশা।

আমি সময়ের যোনীতে দেখেছি, স্পর্শফলের মতো জন্মক্ষুধা। যে ফল থেকে জন্ম নিয়েছে কৌতূহলের মতো এক উইপোকা। আলোর ফাঁদে পড়ে সেই উইপোকা চিৎ হয়ে ঘোরে ঘোরে ঘোরে ...। মাংসাশী পিঁপড়ার দল তার মাথা ছিঁড়ে নিয়ে যায়। মস্তকহীন সেই উইপোকার মতো আমি পা দিয়ে আঁচড় কাটি বাতাসে।


অলংকরণ –গৌরব রায়