সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

অমিতাভ প্রহরাজ

জগত্মাতা ও করুণাসিন্ধুর ব্যাপার- ১

আজকে বর্ণনা না বলতে নেই, আজই তো নেইগো ডাকার দিন । বাপ, দাদা, ঠাকুর্দা, পিসেমশাই, মেসোমশাই, বোনপো, পিস-শ্বশুরের খুড়তুতো ভাইপো,এই সক্কলের মতো

“নেইগো’’ নামে একটা আত্মীয়তা চাও কি না চাও বজায় থাকেন । যেমন ঘেগেতানা থাকে, না চাইলেও তেরেকেটে থাকে তবলায়, তেমনি একটু ব্যাপার হলোগে নেইগো ।

আমার তোমার সব্বার আছে, মনের মঞ্চে একটু পর্দা, সামান্য আলো আর তার তাপ, ছাপ সব মিলবে, সর্বত্র থাকে কিন্তু কখনোই বাবু সঙ্গে থাকবেন না ।

তপ্তবতী জানে, ওনার সঙ্গে যে ইয়ার আসেন একটু উল্টো মতো, খুড়শাশুড়ি বলেন ওর দেবদশা হয়েচে, সেই ইয়ারের নাকি খুব আপন একটা নেইগো আছে ।

ভারী অদ্ভূত, তপ্তবতী দেখেছে ওই ইয়ার বাবুটিকে ‘বেচারা’ বললে খুব খুশী হয় । তাই উনি প্রতিদিন তিয়াত্তর বার বেচারা বলেন,

তপ্তবতীও কয়েকদিন আড়াল থেকে “বেচারা” বলেছে... দেখেছে বাবুর মনে খুব আনন্দ হয় । ওইটুকুতেই চোখে জল নাকে জল কি প্রকান্ড ।

খারাপ কি, উনি বলেছেন প্রায়ই বলেন দেবতা কিংবা দেবীরাই মানুষের মনে আনন্দ করে । তা ও যদি কিছুক্ষণের জন্য দেবতা হয়, কারোর তো আর গায়ে লাগবেনা ।

ওনাকে দেখেছে কত লোকের আনন্দ করতে, তাইতো উনি পরম ভগবান, ওও না হয় দু-চার জনের মনে আনন্দ করল।

ভেতর থেকে বুঝতে পারে তপ্তবতী বা উষ্ণাভ্রুবতী বা মহলের ভ্রুষ্ণাবতী-ঠাকুরানি। তখন টিভিতে কি একটা দিগগজ অনুষ্ঠান হচ্ছিল, বিজ্ঞাপন বোধহয়...



জগত্মাতা ও করুণাসিন্ধুর ব্যাপার- ২

“...আমাদের আন্তরিক ভালোবাসা জানাই। আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগিতা, সাহচর্য, সযত্ন...।

আঃ শিশুমোহন... তোমার এই স-এর দোষ না যা তা... (পুরুষ কণ্ঠ বন্ধ করে মহিলা কন্ঠ বলে ওঠে অপূর্ব্ব ন্যাকামিঠে স্বরে)...।

আমি বলছি কূহুরিনি, আপনাদের সব্বার প্রিয় সেইইইইইইইই কূহুরিনি...(পূর্ব্বের পুরুষ কণ্ঠটি আতঙ্কিত গলায় বলে ওঠে)...

এই রে, আপনাদের জন্য নারী এসে গেছেন, আমি তবে পলাতক করি... আঃ শিশুম, এখনো বাংলা শিখতে পারলেনা...

যাই হোক আপনারা, আমার কত্ত কত্ত বন্ধুরা, আমি কিন্তু পলাতক করবোনা শিশুমের মতো...

বরং আজ আমি এনেছি, যা আমি রোজ আনি, আপনারাও কিন্তু রোজ আনেন, কিন্তু এখনো জানেন না...

তো কি মনে হয়, আগের এপিসোডের মতো অজান্তেবস্তু হবে?? না জানা যাবে কার কথা বলা হচ্ছে...

দেখতে থাকুন আপনাদের দিলদিওয়ানা ধারাবাহিক “পরবর্তী অংশ”... সঙ্গে শিশু-ডার্লিং এবং অবশ্যই আপনাদের সেই নারী, কূহুরিনি...

তার আগে আমাদের চাই অল্প খোকন...ফিরে আসবো আবার, খোকন কে দেখে এসে...”

এই খোকনের জন্য তপ্তবতী সহ্য করতে পারেনা টিভি, এফ এম এইগুলো...যে চ্যানেলেই যাও, অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে খোকন...

খোকন তখন কি করছে... খোকনের ঘুম... খোকনের কান্না...খোকনের দয়ামায়া...না চাইলেও দেখতে হবে...পরশু খোকনের জ্বর...

মানে আর কিছুই নয় উষ্ণতা হাল্কা বেড়ে গেছিল... সব খবর কাগজে হেডলাইন “খোকনের তাপমাত্রা ১০২”, “খোকনের হঠাৎ জ্বর, স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক!!”... প্রায় দশ কিলো ফন্টে ছাপা...


জগত্মাতা ও করুণাসিন্ধুর ব্যাপার- ৩


কিছু করার না থাকলে অকারণ ভ্রুক্ষেপ করে ভ্রুষ্ণাবতী-ঠাকুরানি। বারবার ভুলে যাচ্ছে আজকে বর্ণনা বলতে নেই... সঙ্গে ছিল মহিলামহলো...

মহিলামহলো খুব ভালো ছেলে, একটু ত্যাড়াব্যাঁকা আছে বলে একেতো বন্ধু নেই, তারওপর তুমুল আওয়াজ খায়।

তপ্তবতী প্রথম প্রথম ওকে ছন্দ করতো, এখন বেশখানিক পছন্দ করে। মহিলামহলো ও তপ্তবতীর বেজায় ন্যাওটা। ওই আজ সাতসক্কালে মনে করিয়ে দিয়েছিল নেইগো দের কথা...

“সম্পর্কে তোমার নেইগো হয় যারা আজকে তাঁদের কথা মনস্ক করিতে হয়

(খবর্দার ‘করতে হয়’ বলবেনা, নেইগো নিয়ে বলতে গেলে সবসময় শ্রদ্ধাভাষায়, সবচেয়ে হোমরা-চোমরা শব্দ দিয়ে, নীচের দিকে আঙুল রেখে বলতে হয়)।

এই সুতাকাটুনির ব্রত (নেইগো-পূজো) কি আজিকালকার কথা ?” মনেই ছিলনা আজকে সুতাকাটনি/সুতাকাটুনির পূর্ণিমা।

আমি জানতাম, কিন্ত ইচ্ছে করেই বলিনি ওকে । আসলে আজকের দিনে বেশ খানিকটা দুঃখ করতে হয়। আমি ভেবেছিলাম ওর মনে না পড়লেই ভালো।

যদিও শাস্ত্রে বলে আজকে দুঃখ করলে সম্পর্কের দেহখারাপ, যাকে বলে সন্ধ্যাসন্দেহ, তা হয়না...

আমি, জানাইনা কাউকে লজ্জা হয়, এই সুতোকাটা পূর্ণিমার ব্রত পালন করি... ও বোধহয় পুরো মন্ত্র জানেনা...

ভেবেছি অনেকবার, কিন্তু কর্তাঠাকুর হয়ে গিন্নিকে সুতোকাটার মন্ত্র শেখাবো, তা হয় নাকি... ও মহিলামহলো জানে, ওকে নিশ্চিত শিখিয়ে দেবে...

আমি আজ সকালের বদলে ভোরে উঠবো। এটি সেসময় যখন সন্ধেই পতনের বৃহত্তম সময় সারাদিনে।

রাত্তিরে সবাই সারাদিনের পুরস্কার আপনমনে গানের কলি ভাঁজতে ভাঁজতে পরিস্কার করে। তখন সকালের থেকে ভোর শুধু বয়সেই বড়ো ন।

চেহারায়, মেজাজে, আকারে, আকৃতিতে, ব্যক্তিত্বে সবদিক থেকে ভোর বড়ো বেশী জাঁদরেল সকালের থেকে।

গম্ভীর গোঁফ আর ঠান্ডা ঠান্ডা চাউনি বাতাসে, ভোর প্রায়ই বড়োকর্ত্তার হাড় হিম করা প্রথম পক্ষ যেন। রাগীঠাকুরানি।

সে যাই হোক তখন ভোরেও পুর্ণিমা থাকত, গহন বস্ত্র পরে, আলোর পায়ের তলায়...

এখন শুধু আজকের দিনে থাকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ওসব জিনিস এখন ভোলা হয়নি।

আজ ভোরে শুধু ওই পূর্নিমা ছাড়া কোন হাতি ঘোড়া নেই বলে...

“আমিও কিন্তু/ হুম হুনা/ ভুলিনি কিছুই/ হুমহুনা/ যাওয়া টা চলছে/ হুমহুনা/ যাচ্ছি চলছে হুম হুনা/আকাশ খারাপ/ হুমহুনা/

বাতাস ভালো হুমহুনা/ বাতাসা বাসছি/ হুমহুনা/ পিঁপড়ে মিষ্টি/ হুম হুনা/ মিষ্টি মালিক/ হুমহুনা/ কত দূরত্ত্ব/ হুম হুনা/ নত অবাধ্য / হুমহুন...”

এই মন্ত্র বলে মাটিতে পা রাখি পাল্কি হারানো বেহারার মতো... মনে পড়ে তীব্র নেইগো, আর নেইগো... এখন ওনারা আমার সম্পর্কে খুকু হন...

আজকে জানালার সায়া ওপরে তুলতে নেই... ভাবতে মনে পড়ে একটা নেইগো দিনের কথা... তখন আচমকিনী... একদিন আচমকিনী ...

রাত্রে হঠাৎ ব্লাউজ হারিয়ে, নিয়ম মতো কাঁদার কথা, এমন তরো ঘাবড়েছিল যে তার বদলে কি বিকট অট্টহাসি করেছিল যে

পাশের বাড়ির মদনা মাতালেরও ঘুম ভেঙে যায়। অট্টহাসি থুড়ি থুড়ি তপ্তবতীর এ গল্প শুনতে আমোদবরন মুখচোখ হয়ে যায়...

#

সংসার জগৎ এর থেকে খুব বেশী ছোটো নয় আচার আচরনে। জগৎ সবসময় পাক দিয়ে খেতে হয়।

জঙ্গলের কি অভয়ারন্য পায় সারাক্ষন, চব্বিশ ঘন্টা? তবু সংসারে তপ্তবতী রোজ আমি যা যা বলিনা...

গরম গরম তোয়াক্কা করবো। গা ছুঁয়ে বলছি, সত্যি বলছি, বিনামূল্যে কোটি কোটি তোয়াক্কা করবো।

নুংকু, আঙুল, ফোস্কা, ব্রণ, জিভে ঘামাচি, সবার জন্য ইস্পেশাল বটম-খোলা তোয়াক্কা করবো, শুধু আমাকে যখন ইচ্ছে মোরগ করো।

মরসুমের প্রথম ভোরবাঁকা শাগ-সবজি বলে চন্দ্রমুখী বা শাঁকালু বা পটলচেরা ছোটো ছোটো ধুলোবালি গছিয়ে দিও,

নো-আপত্তি। বুম-বলাকা, বুম-বাস্টিক, এমন দোতলা শব্দ হবেই হবে, আমোদ-বোমা যেইই ফাটাক, নিধুবাবু বা দিয়াশলাই...

আমোদ-বোমায় ফাটল ধরে যখন, তপ্তবতী দু আঙুলে গামছা ছাড়ে কন্টিনিউয়াস, টপ অপাঙ্গে তাকিয়ে দেখে,

কালো কঙ্কাল ওয়ালা, সেফটি এবং সিকিউরিটি ভগা-ম্যান, ‘মোর দ্যান রাধা’ চাউনি... সার্কাসের তাঁবু - মোচ্ছবের ত্রিপল –

রামবাবার এক্সট্রা-লার্জ-দিগন্তঢাকা ছাউনি- এমনকি মফতলালের পরিপূর্ণ রোল ও আছে স্টকে... এখন জাস্ট দ্রৌপদৃষ্টি পাঠালেই স্টার্ট, রোলিং, সাপ্লাই...

শুধু এই ভগা-ম্যান, ডার্ক স্কেলিটন বলে নামটি বড়ো বিটকেল জড়িত...শ্রী শ্রী শ্রী শ্যামহাড় দেবতা বা করুণাময়-জগৎপিতা-কাককৃষ্ণ/কৃষ্ণকাক দেবতা...

#

একজন এবং লোক, দুজনেই পেট পুরুষ্টু করে খেয়ে, খসখসের দেওয়াল ভেজা, তাতে পূর্ণ ঠেস, অনুপ-জল আর মীরা-লাগানোর-গান।

সঙ্গে পঞ্চাননের কাঁচি মার্কা রাম। মর্দাঙ্গিনী রাগ, অহম, ওহো আলাপেই চৌচির ... খুব একটা লুসিড ও ফুল্কো-সুল্কো নয় বঙ্গলতার বর...

গায়ের বর্ণ লুচি-ধোসার মধ্যবর্তী, বাংলো জুড়ে উসকো/খুসকো , নেশাক্ত , খুব কল্যাণ হলো তোর...

#

ফোর্সটা ছিল দুমদাড়াক্কা জাতের, গতিবেগ ছিল ঢিসুমের চেয়েও আড়াই ধাক্কা বেশী।

যেমন বঙ্গলক্ষী জল, স্থল জমকালো চম্পক‍।

মেন্টালি অপ্সরা, ফিজিক টা শারদীয়া

পাঁচজন বামা পাঁচখানি ডানা। ঠিকানাকাজল দুচোখ আর টগবগ করা নেত্র।

সব সিংহ চাপেন না শুধু নিজের সিংহ নিজেই চালান, আর স্পেশাল জিমনাসিংহ দুবেলা চালান সুপুরি থেকে মার্ডার অবধি

রোজবছরের ক্রীম টাইমে... আসলে ক্রাইম ছিলেন... উচ্চারন্যে বাজে বাজছেন, বাজি বাজছেন, ব্রজ বাজছেন, বালক বাজছে নাদুস নুদুস...

দেরাদুন ধান রান্না করা, পেঁয়াজ কুচি মাখা আলু-মদন, জাম-বাটির একবাটি কাতলা মাছের কেলেঙ্কারি...

“আরে হায় বিধবা রাক্ষস, সিভিয়ার ক্লোরোফিলে ভোগা। সাইজের রাক্ষুসী নেই, তো খাটালেই দিন কাটালে??” মহিষাসুরের

এ ফ্রাস্টু মর্মান্তিক, নিজের চুলে কুলকুচি করার মতো লাশ-বাস্তব

লাস্ট বাস স্টপ । চাপ চাপ তুলা রাশি। কি মিথুন তুলোতে, ধুলোতে

রম্ভা খুলে উরু উড়ন্ত, ঊর্বশীর টিলা, আলতো টেক্কা

কুঁচ-ভ্রুবতী, নিউ আইটেম, চুল্লী রেশম ফুরোচ্ছে যেই

প্রত্যঙ্গ তাক করেছে গোলন্দাজজী আর

হেঁইও অতি দাহ্য অপদার্থ

#

ফুল গন্ধ নিলে চ্ছলাৎ, দানব টানব ফ্রীলি পাবে। বঙ্গদর্শনের বউ কি বামাবোধিনী? না কি বোন? না কি রামবাগানের প্রত্যঙ্গে পুষ্প কুসুম করা বামা...?

আর কৃষ্ণকাক মহারাজ, শ্যামহাড় দেবতা... অনেক কিছু শূন্যতলার পাড়া আর অনেককিছু শূন্য শূন্য শূন্য দিয়ে বললে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন দ্রব্য শোনা যায়...

আসলে উৎপাতের ভালো হাত চাই। ভগা-ম্যান দাদা... অপূর্ব উৎপাতের হাত আর উটপাখির তেজ... যেমনি ভ্যারাইটি, তেমনি কালেকশান। আর কিছু সূক্ষ্ম ডজ, মোচড়, কুচিটান...

হাতে বাসি বছর কামড়ানো, এক খাবলা, কবেকার... লক্ষ করতেই, দুঃখিনী উর্দ্দু ঘ্রাণ ঘেঁষে আসে

শব্দখেলা interval পার করে announcement অবধি হয়ে (এ তে তো prize distribution হয়না) এখন যুবভারতী দাঁড়িয়ে আছে হকি, কিংবা, বেসবলের জন্য।

ভারতে কেন baseball খেলতে পারেনা??

লও, এইরে কয় লেইখ্যা দিয়া অত্যাচার... দেখি এবার কোন হালায় কয় “বেবি তুই লিখিস না ক্যান?”......।

অলংকরণ –কৌশিক বিশ্বাস