বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

আমি স্রষ্ঠাকে সাসপেন্ড করব - মৌ মধুবন্তী

আমি স্রষ্ঠাকে সাসপেন্ড করব
মৌ মধুবন্তী


স্যান্ডি কি নাচলো? কি নাচলো? ট্যাঙ্গো, সাম্বা, সালসা, সাফল, টুইস্ট? নাকি রাম্বা, যাম্ব্রা, মরিস, মাম্বা? অথবা পোলকা, লিম্বা, ডিস্কো? জানতে ইচ্ছে করে সে ভারত নাট্যম, মনিপুরী, কত্থক, এইসব পারে কিনা। জিজ্ঞেস করার সময় পায় নাই জনগণ। তার আগেই সে পথ পরিবর্তন করে এসে তুমুল আঘাত হানে নিউইয়র্কের উপকুলে। যে ম্যানহাটন কোন দিন ঘুমায় না, তাকে সে ডুবিয়ে দিয়েছে কালো গভীর অন্ধকারে। কবিদের ভাণ্ডারে শব্দ থেমে গেছে তার বর্নণা দিতে গিয়ে। লেখকগণ হাতে হাতে বরফ কুচিতে জমানো মদের গ্লাসে চুমুক থামিয়ে দিয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখেছিল সেই তাণ্ডব? নাচের মুদ্রায় জলের আক্রোশ।

রামেশা ব্যস্ত ছিল তার ঘর সামলাতে। সাথে আছে তার পাঁচ বছরের বাচ্চা। কেউ জিজ্ঞেস করে, ছেলে ? কেউ জিজ্ঞেস করে, মেয়ে? রামেশা বলে, এই আমার অবুঝ বাচ্চা। বাচ্চাদের কোন জেন্ডার নেই। কেউ দেখেনি এই বাচ্চা প্রকৃতির কোন অঙ্গ নিয়ে বেড়ে উঠছে মায়ের কাছে একা একা। বাবার অস্তিত্বের কোন গন্ধ সে পায় নাই কোনদিন। সে কথা নাইবা আনলাম এখানে।

কত কথা পড়ে থাকে আশেপাশে, রাস্তা ঘাটে। কি করে সব কথা ঘুচিয়ে একটা বড় গুপ্তগুহায় লুকিয়ে রাখি? লুকালে পাঠক পড়বে কি করে? সবাই বুঝি লেখা পাঠকের জন্য লেখে? রাত ভর জেগে জেগে কত কথা ভাবি, মাথায় আসে কত উপমা, কত গন্ধরাজ ফুল ফোটে, সুবাস কে পায়? সকাল তো নিরুদ্দেশের যাত্রার ছড়ি হাতে নিয়ে উধাও। আমিও ছড়ি হাতে ক্রমশ হাটি দুপুরের দিকে। দুপুর মানেই বারোটা ।

বারো একটা বিশেষ সংখ্যা। বারোটা গোলাপ দিয়ে প্রেম নিবেদন সে অনেক ব্যাখ্যা দাবী করে। বারো মানে এক যুগ। একের ভেতরে আরেক। বারো হয় এক এর পরে দুই দিয়ে। প্রেম তো তাই দাবী করে। একজন থেকে আরেকজন মিলে একের পরে দুই। তেমনি এই সৌরমণ্ডলে মোট বারোটা প্ল্যানেট আছে। সান, মার্কারি,ভেনাস আর্থ,মার্স, জুপিটার, স্যাটার্ণ, ইউরেনাস , নেপচুন, প্লুটো,ও নিবিরু।

এই নিবিরু নাকি আমাদের দিকে ধাওয়া করে আসছে। তার কি হয়েছে? সে কেন তার আপন কক্ষ ছেড়ে এইভাবে আমাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে? নিবিরু তুমি কোন ধর্মের অনুসারী? কেন আমাদের সাথে তোমার এই মারামারি? তুমি বাহিরের সার্কেলের শেষ প্রান্ত থেকে খসে এসে মাঝে এস্টরয়েড বেল্টের ভেতরে মার্স দ্বারা ঘেরা-বেষ্টিত আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে সত্যি গুতা মারবে? তোমার অন্তরে কি কোন মায়া নেই? আমরা কত স্বপ্নের মেরিলিন মনোরো বিল্ডিং, কত টল টাওয়ার, কত কি করছি এখন ডিজিটাল, নিউক্লিয়ার বোমা , তারা কি তোমাকে আঘাত করেছে? চোখে ধোঁয়া দিয়েছে? তবে এতো কেন গোস্বা করলে যে দড়িদড়া ছিড়ে ছুটে আসছো?

রামেশা রান্না ঘরে ঢুকতেই একখণ্ড ছেড়া “দা নিউইয়র্ক টাইমস” এলোমেলো দেখতে পেলো কাউন্টারে পড়ে আছে। একসময় সে আর মার্ক ভাগাভাগি করে দা নিউইয়র্ক টাইমস পড়ত। আজ সব স্মৃতি। আজ মাথার ভেতর একুশে ডিসেম্বর। রামেশা হাসে, ভালো হবে সবাই মিলে একসাথে নতুন গ্রহে চলে যাব। কিন্তু সৌরমণ্ডলে হঠাৎ এমন বিপর্যয় ডেকে আনছে কেন? অলস হাতে তুলে নেয় সে, “দা নিউইয়র্ক টাইমস”- চোখের সামনে হেড লাইন হাসছে, “ Smile You’re on Infrared Camera”.

বটে!। হিসাবে কি এরা ভুল করেছে? চোখ আরেকটু এগিয়ে যায়, যেতে যেতে নাইট ভিশান তুলে নেয় সাব হেডিং, “BMW's Night Vision system picks out potential hazards in the dead of night” । এমনি ইনফ্রারেড ক্যামেরা কি আমাদের সকলের অন্তর্দৃষ্টি বদলে দিতে পারে না? রাতের ঘন অন্ধকারে কালো কাপড় পরে দাঁড়িয়ে থাকো, এই ক্যামেরা BMW ড্রাইভারকে সজাগ করে দেবে, সামনে বিপদ আছে। সংকেত। আমরা তো প্রতিদিন সংকেত পাই বিপদের, মানি কয়জন? কেন মানিনা, জানিনা। স্বভাব ? এলো কোথা থেকে? কোন গ্যালিলিও কেন আবিষ্কার করেনি এই স্বভাবের উদ্ভট উৎপত্তি?

ইন্টারকম বেজে ওঠে। ভিউ প্যানেলে দেখা যায় এক অদ্ভুত মুখচ্ছবি। এই মুখ তার অনেক চেনা। প্রতিশ্রুতি আর প্রবাদ বাক্য যার ঝোলা ভর্তি, সে রামেশার জ্যান্ডারবিহীন সন্তানের জন্মের একমাস আগ থেকেই উধাও। নেই কোথাও নেই। বস্তুত এই ধরাধামে এই নামে কাউকেই রামেশা আর খুঁজে পায় নাই। তার মুখচ্ছবি ভিউ প্যানেলে। দাড় কাকের মত ভেজা কাপড়ে লবিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। চুল থেকে জল ঝরে গেছে অনেকক্ষণ আগে। নেতিয়ে পড়েছে জলঝরা চুল। জীবন যেমন নেতিয়ে পড়ে প্রাণের মানুষটা হারিয়ে গেলে। সিকিউরিটি অনুমতির অপেক্ষায় আছে। রামেশা ভাবছে, সে কি তবে ভুত দেখছে? নাকি স্যান্ডির দারুণ নৃত্যে সে বেতালে তার দিশে হারিয়েছে। চিমটি কেটে দেখছে নিজেকে বেচে আছে নাকি অনেকক্ষণ আগেই সে মরে গেছে, মরে যাবার পরে দেখা হচ্ছে তার হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকের সাথে। এই তার মৃত্যুর পরের ইডেন গার্ডেন। রামেশা লাইন ড্রপ করে দিয়ে লিভিং রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কারেন্ট নেই তো টিভি দেখবে কি করে? জেনারেটর ইমার্জেন্সী সার্ভিস দিচ্ছে মাত্র। ঘরের এক কোনে আর্টিফিসিয়াল ক্যান্ডেল জ্বলছে। যতক্ষণ ব্যাটারি আছে জ্বলবে। তার মত। পেস মেকার আছে তো সে আছে।

সিঁড়ির আলোতে ছায়ামুর্তির মত কেউ হাতে ছোট ছোট ব্যাগে করে খাবার, কেউ বা পান বোতল ওয়াটার, কেউ আবার বিয়ারের ক্যান, ক্যানের খাবার, কফি ও ডোনাট নিয়ে উঠছে উপরের দিকে। পা চলেনা। এই সাতচল্লিশ তলার বিল্ডিং এ রামেশা বসে আছে পঁয়ত্রিশ তলায়। পাঁচ বছরের বাচ্চা কি খাবে? আদৌ কি খাবার আছে বাসায়? রামেশা এইসব ব্যাপারে কোনদিন বেশী বিচক্ষণ নয়। লাস্ট মিনিটের কাজে সে অভ্যস্ত। কাল লাস্ট মিনিট ছিল কি? নাকি অবকাশ না দিয়েই স্যান্ডি এসে হানা দিয়েছে জানালায়। দরজাটা একটু বেশী দূর হয়ে গেছে পঁয়ত্রিশ তলা থেকে। জানালার কাচে আচড় কাটলেও সে ভাঙতে পারেনি বিন্দুমাত্র।

ভাবনার রকেট চড়ে কত কত উঁচুতে নতুন ফ্লোর বানাচ্ছে মার্ক। কিন্তু লবির সেই ওয়ান বাই ওয়ান টাইলস থেকে পা এক চুল নড়েনি, যেন প্যারেক মেরে তাকে আটকে দিয়েছে কেউ। সিকিউরিটি তাকিয়ে আছে তার দিকে। অন্ধকার হলেও সময় গড়ায়। সুর্য না উঠুক ঘড়ির কাটাই জানান দেয়, দিন কখন কোন প্রহরে। রামেশার গায়ের উপরে গড়িয়ে পড়ে তার পাঁচ বছরের সন্তান। রামেশা হু হু করে কাঁদতে থাকে। বাচ্চাটি ভেবে পায় না, মা কেন এমন করে কাঁদছে। চকলেট চিপস কুকিটায় কামড় দিয়ে সে গড়াতেই থাকে মায়ের গায়ের উপর।

মার্কের ভাবনার রশি গিয়ে ফেঁসে যায় সিকিউরিটির কানে। সে মন দিয়ে শুনছে। পৃথিবীতে অনেক রকম দ্বন্দ্ব আছে। আছে ভুল অথবা আধা ভুল তথ্য। এইসব আমাদের জানা দরকার। মরতেই যদি হবে, তা হলে জেনেই মরা ভালো। কেউ মরেও বেচে থাকে কেউ বেচে থেকেও মরে যায় অজ্ঞাতসারে। হিপ্নোটাইজড হয়ে শুনছে সিকিউরিটি-মার্ক বলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কাঁপছে হাত-পা। তবু কণ্ঠ তার তারের মত সুরেলা। তোমাকে জানতে হবে Zechariah Sitchin. গুটিকয় জ্ঞানী মানুষের মধ্যে Sitchin হলো অন্যতম একজন। Sitchin অতি প্রাচীন( সুমেরিয়ান, ইজিপশিয়ান ও হিব্রু) ভাষা পড়তে পারে, বুঝতে পারে, অনুবাদ করতে পারে এবং আধুনিক ভাষার সাথে তার মেলবন্ধন ঘটাতে পারে। তার জীবনকে সে উতসর্গ করেছে এইসব প্রাচীন ভাষা বুঝতে ও অনুবাদ করতে। এতে ছিল টেক্সট, কুনিফরম এবং ক্লে টেবলেট। সিকিউরিটি অফিসার জানেনা, কে বাইরে যাচ্ছে কে ভেতরে ফিরে আসছে। ভিউ প্যানেলগুলো নিজের মত করে চলছে। ক্লান্ত ক্ষুধার্ত ও কিছু ক্ষিপ্ত লোক অনায়াসে বাইরে ভেতরে আসা –যাওয়া করতে পারছে, তারা আনন্দিত আজকের দিনের জন্য। একজন উৎসাহ দিল মার্ককে, ওকে গল্পে মাতিয়ে রাখার জন্য। যেন তাকে ইয়াবা কিংবা এই জাতীয় নেশার ঘোরে রেখেছে মার্ক। মরতে হবে? এইভেবে তার নিজস্ব সিকিউরিটি নিয়ে সন্দিহান অফিসার হা করে শুনছে আর গিলছে কথাগুলো।

Sitchin আবিষ্কার করলো যে, সুম্যেরিয়ান সভ্যতাই হলো পৃথিবীর প্রথম ও আদি সভ্যতা। তাদেরকে এইসব শিখিয়েছে তাদের গড আনুননাকি ( Anunnaki). সেই তখনই তারা সকল গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে অনেক কিছু জানত। তারা জানত আমাদের সোলার সিস্টেম, তাদের রঙ । তারা জানত আমাদের পুর্ণিমা বান চাঁদ বানুর খবর। কোন একসময় তারা এও বলতে শুরু করলো যে মার্সে পানি আছে। সে কি তুমুল আলোচনা চারিদিকে। অবিশ্বাস্য হলেও এখন আমরা জানতে শুরু করেছি মার্সে পানির প্রমাণ আছে। সব শিখিয়েছে স্রষ্টা আনুননাকি। আনুননাকি এসেছিল আরেকটা গ্রহ থেকে নাম তার নিবিরু। প্রতি ছত্রিশ’শ( তিন হাজার ছয়শ বছর) বছর পরে একবার করে এই নিবিরু আমাদের পৃথিবীর কাছাকাছি ভ্রমণ করতে আসে। তার ঠ্যাং ( ইক্লিপ্স) অনেক লম্বা। সেই কারণে আনুননাকি আমাদের দেখতে আসে সেই প্রথম সভ্যতার সময়। বর্তমানে এস্ট্রনামাররা এই গ্রহের সন্ধানে মাতোয়ারা। তারা এই অজানা গ্রহকে নাম দিয়েছে প্ল্যানেট এক্স। উনিশ নব্বই সালে Sitchin সাক্ষাত করে Dr. Robert Harrington এর সাথে। Dr. Robert Harrington হলো US Naval Observatory এর Supervising Astronomer.

সিকিউরিটি অফিসারের মুখে মাছি ঢুকে গেলেও সে জানবে না কি হয়েছে মুখের ভেতর এমনই বড় হা। মার্ক সেই তার ওয়ান বাই ওয়ান টাইলস থেকে সরে এসে সিকিউরিটির মুখের হা বন্ধ করে দিয়ে বলতে থাকে, মায়ান ক্যালেন্ডার। শেষ হবে একুশে ডিসেম্বর, দুই হাজার বারো সালে। এই ক্যালেন্ডার আসলেই শুরু হয় ওল্মেক্স দিয়ে, মায়ান দিয়ে নয়। ওল্মেক্স সভ্যতায় তাকে ডাকা হয় Thoth বলে। Thoth কে বিভিন্ন সভ্যতায় বিভিন্ন নামে ডাকা হলেও সুমেরিয়ান সভ্যতায় তাকে ডাকা হয় Ningishziddah নামে। নিবিরু গ্রহের আনুননাকিদের অনেকের মধ্য থেকে এই Ningishziddah -ই আমাদের ধরণিতে নেমে আসে । Ningishziddah এর ফেরত যাবার সময় সে নাকি প্রতিজ্ঞা করে, সে আবার ফিরে আসবেই আমাদের গ্রহে। আর সেই আসার দিন হলো একুশে ডিসেম্বর, দুই হাজার বারো সাল। সিকিউরিটি, তা হলে সে আসছে? হয় হয় করে কান্না। শেষ হবে পৃথিবী একুশে ডিসেম্বর। অবিশ্বাস্য এই মায়ানমার ক্যালেন্ডার।

মার্ক বলে, লাইনের সাথে লাইন ধাক্কা খাবে, খাবি খাবে, বাড়ী দেবে, মারবে, অক্ষে অক্ষে রক্ষে করবে আমাদের প্রেম, আমাদের হারিয়ে যাওয়া, আমাদের ব্যর্থতা ও আমাদের সভ্যতা । মেরে কেটে চুরমাচুর করে নতুন গান তুলবে, ঝপাং ঝং।

ওদিকে এলোমেলো সব ভাবনা। আকাশ থেকে নক্ষত্র খসে পড়তে দেখেনি যে কোনদিন সেও প্রস্তুতি নিয়েছে নিবিরু নামে এক অচেনা গ্রহের অকস্মাৎ ভূপাত অধঃপতন দেখবার জন্য। ম্যানহাটন ঘুমায় না। স্যান্ডির নাচের পরে মঞ্চে আলো নিভে গিয়েছিল বটে, তবে সার্চ লাইট এখন পুর্ণোদ্যমে আবার আলোকিত করে রাখবে ম্যানহাটনকে। প্রস্তুতি চলবে একত্রিশ ডিসেম্বর রাতের। দুই হাজার তের সালকে হাতে করে এই রাত আসবে আমাদের কাছে নতুন পৃথিবীকে বরণ করতে।

একজন বদ্ধ উন্মাদের মত হাঁপাতে হাঁপাতে কুর্স লাইট বিয়ার হাতে দৌড়াচ্ছে সিঁড়ির দিকে। কত তলায় উঠতে হবে জানে না। ডেলিভারি। বিল্ডিং এর সামনে রাস্তার উপরে একটা পুলিশ পেট্রোল কার এসে থেমেছে। নিউ ইয়র্ক এম্পাওয়ারম্যান্ট টিম। এম্পয়ায়ারম্যান্ট। মার্ক ঘন ঘন নিশ্বাস নিয়ে এম্পাওয়ার্ড হতে থাকে। ইয়েস। “Earth is coming to an end “ । ব্ল্যাক হোল। সিকিউরিটির চোখ থেকে জল পড়ছে গত আটচল্লিশ ঘণ্টা ডিউটিতে আছে, তার সুইট হার্টের সাথে দেখা নেই। সে থাকে ব্রঙ্কসে। নিরাপদ আছে । কিন্তু পৃথিবী ধ্বংস হলে, তাদের বিয়ে হবে কবে? অনেক স্বপ্ন দেখেছে বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে।

রামেশার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়েছে। দু’বছর আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারী হয়েছে। সেল ফোন চার্জ দিতে পারে নাই। লবির পাওয়ার পয়েন্ট ইউজ করা নিষেধ। মাত্র হল ওয়ে টাকে আলোকিত রাখার জন্যই জেনারেটর। বাচ্চাটা দেখছে মা কেমন যেন করছে। ইন্টারকমে প্রেস করে, সিকিউরিটিকে বলছে, মাই মাম ঈজ সিক। শি ইজ ক্রাইং। মার্কের আত্মায় কেন যেন জোরে আর জোরে ধাক্কা দিতে থাকে। সে শুনছে, কথাবার্তা। মার্ক জানে না রামেশার সার্জারীর কথা , কিন্তু সিকিউরিটির মনে আছে, সেই রাতের কথা। রাত দু’টোয় রামেশাকে এম্বুলেন্স এসে নিয়ে গেছে সেন্ট ভিন্সেন্ট হাসপাতালে। নিউইয়্যর্কের খুব উঁচু মানের একটা হাসপাতালের মধ্যে সেন্ট ভিন্সেন্ট অন্যতম একটা। সেভেনথ এভিনিউতে যেতে লাগে মাত্র দশ মিনিট।

সিকিউরিটি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে, I will suspend Ningishziddah! মার্ক দৌড়াতে থাকে সিঁড়ি ঘরের দিকে। একুশে ডিসেম্বরের আগেই তাকে পৌছাতে হবে পঁয়ত্রিশ তলায়। বিশ তলায় ওঠার পরে মনে হলো মার্কের, কত নম্বর স্যুইটে সে যাবে? সে তো কেবল বিল্ডিং নাম্বার জানে, ফ্লোর নাম্বার তো জানে না। সব তথ্য, এই ঠিকানা তার জানা ছিলনা। ঘটনাক্রমে সে ফেসবুকে রামেশাকে আবিষ্কার করে। ফেসবুকের এবাউট পড়েই সে তার ঠিকানা জেনে নিয়েছিল দিন কয়েক আগে। কিন্তু কি করে সে রামেশার মুখোমুখি হবে ভেবে ভেবে ঘামাচ্ছিল, আসবার সাহস পাচ্ছিল না। আম্ররক থাকে আপার ম্যানহাটনে। নব্বুই ব্লক হেটে হেটে মার্ক আজ এই দুর্যোগের দিনে এসেছে সিক্সথ এভুনিউতে পার্ক চেষ্টার টাওয়ারে। মার্ক আবার নামতে থাকে সিঁড়ি দিয়ে। এমন অন্ধের মত নামছে, ল্যান্ডিং এ এক লোকের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। কেটে যায় কনুইয়ের খানিকটা। গড়িয়ে যায় সিঁড়ির কয়েক ধাপ। মাথায় চোট লাগে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই মার্কের। লোকটা ফাক ইউ বলেই থমকে গিয়ে বলল, সরি। মার্ক নেমে যাচ্ছে নীচের দিকে।

কত নাম্বার স্যুইটে যাব? সিকিউরিটি হা করে আছে। I will suspend Ningishziddah! নাইন ওয়ান ওয়ান স্যুইটে।মার্ক আবার দৌড়াতে থাকে। যখন পঁয়ত্রিশ তলায় পৌছালো, তখন রামেশার পাঁচ বছরের বাচ্চা মাকে টানতে টানতে হল ওয়েতে নিয়ে আসে। বাচ্চাটা কাঁদছে না। হাঁপাচ্ছে আর বলছে, লেটস গো টু হসপিটাল। মার্ক দেখছে , কি কঠোর পরিশ্রম করছে, একটা অবুঝ বাচ্চা। মার্ক বলে ওঠে I will suspend Ningishziddah! বলেই কাঁধে তুলে নেয় রামেশাকে। বাচ্চা ও মার্ক দু’জন নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। ভাববার কোন সময় ।

মার্ক, হে বয়, নো, হে গার্ল । মার্ক বিরাট দ্বন্দ্বে আছে বাচ্চাটিকে নিয়ে। একি ছেলে না মেয়ে? কি করে ডাকব তাকে। তোমার নাম কি? মাই নেম ইজ মাই বেবি। সাত তলায় এসে পৌঁছেছে। মার্ক একটা ধাক্কা খেলো দেয়ালের সাথে। পাঁচ বছরের বাচ্চা নাম বলতে পারছে না। রামেশা তো এই রকম অগোছালো নয়। কি করে এমন হলো? আমাকে হারিয়ে সেকি এতই দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। তা হলে সে এই রকম লাক্সারি এপার্টম্যান্টে থাকে কি করে। হে বয়, হে গার্ল ডোন্ট ইউ হ্যাভ এনি ম্যান এট হোম?

ম্যান ডাইড বিফোর মাই বার্থ। মার্ক হুমড়ি খেয়ে পড়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে। সে বেচে আছে কেবল নিজের কাছে। বাকী সবার কাছেই সে মৃত। রামেশার দেহ অসাড়। হার্ট বীট আছে, স্লো। রামেশার চোখ বন্ধ। হাতগুলো ঝুলছে। মার্ক হুমড়ি খেয়ে পড়লেও রামেশাকে সে কাঁধের উপর থেকে পড়তে দেয় নাই। সিকিউরিটি দৌড়ে এসেই হেল্প করলো মার্ককে। এতক্ষণে মনে পড়লো সিপিয়ার দেবার কথা। মুখে মুখে সিপিয়ার দিতে শুরু করে মার্ক। আহ কতকাল পরে রামেশার ঠোটে ঠোট। মনের ভেতর মার্কের আগুন জ্বলতে থাকে। এই ঠোট তার অতি প্রিয়। পুলিশের গাড়ি থেকে একজন পুলিশ নেমে আসে। ইমার্জেন্সী সার্ভিস কল করে। মার্ক অপেক্ষা করতে রাজী নয়। সে কাধে করেই হাসপাতাল নিয়ে যাবে। পুলিশ তার অবস্থা দেখছে। হাত থেকে রক্ত ঝরছে। হাঁটুর উপরে প্যান্ট ছিড়ে গিয়ে চামড়া হা হয়ে আছে। বাচ্চাটা কাউন্টারের সাথে হেলান দিয়ে বসে হাঁপাচ্ছে। মার দিকে অপলক চেয়ে আছে। এই জগতে ওর আর কেউ থাকবে না মা চলে গেলে। এই ভাবনা ওকে গ্রাস করছে না। বয়েসটাই তাকে বুঝতে দিচ্ছে না। মৃত্যু কি জিনিস। তবু সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস, ঈজ শি ডাইং?
মার্ক এবং সিকিউরিটি একসাথে বলে ওঠে, “ I will suspend Ningishziddah!”। ইমার্জেন্সী এম্বুলেন্স এসে তুলে নেয় রামেশাকে এবং মার্ক সহ বাচ্চাকে।

ইমার্জেন্সী রুম। ডক্টর লিও তাকে এটেন্ড করে। মার্ক গিয়ে ডক্টরকে বলে, “I will suspend Ningishziddah!”। ইয়াম্ররজেন্সী এটেন্ডেটরা স্ট্রেচারে করে রামেশাকে নিয়ে যায় অপারেশান থিয়েটার এ। মার্ক কাছে টেনে নেয় বাচ্চাকে। পরম আদরে মুখে মাথায় চুমু দিতে দিতে বলে, “I will suspend Ningishziddah!”। আর ইউ বয় অর গার্ল? আই এম জেন্ডারলেস হিউইম্যানকাইন্ড। মার্ক আবারো বলে, “I will suspend Ningishziddah!”- বাচ্চাটিও শুরু করে। প্রশ্ন, হু আর ইউ? এন্ড হোয়াট ঈজ দিস “I will suspend Ningishziddah!”। স্রষ্ঠা। ক্রিয়েটর হু টেক আ ওয়ে আওয়ার লাইভস। নো! - বাচ্চাটা জোরে চিৎকার করে বলে উঠে, “I will suspend Ningishziddah!”। সবাই ওর দিকে ঘুরে তাকালো। নো ওয়ান ক্যান টেক আ ওয়ে মাই মম।

বাকী যারা ছিল তারাও ঘুরে দেখছে মার্ক বিড় বিড় করে কিছু বলছে। Earth will not End on December 21, 2012. ভুল গনণা । মায়ানমার ক্যালেন্ডারে শুয়ে আছে রামেশা।

টরন্টো, কানাডা, পৃথিবী
১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

2 comments:

মলয় রায়চৌধুরী বলেছেন...

হুম, এই তাহলে ব্যাপার ! স্রষ্টা তো ঝুলেই থাকেন বলে জানি । তুইও তাঁকে বেশ সাসপেনডেড রাখলি । গুড ওয়র্ক, মধু ।

ঘনাদা বলেছেন...

ভালো লাগল । তবে " স্রষ্ঠা" ? বানান ভুলটা এবারও শিরোনামে