বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

কবিতা - অমিতাভ দাশ

ধ্বংস, মৃত্যু, উড়ান
অমিতাভ দাশ


করপত্রে আঁক


করপত্রে এ আমার, কি আঁক লিখে গেছে ও মৃত্যু নিঠুর
দেখেছি দুরন্ত চোখে মৃত্যুঞ্জয়ী লাবণ্য, লাবণ্যে ভরপূর
দেখা, দেখা, দেখা আর দেখা ছিল কি কৌতুহলে জীবনকে
সে দেখা চিরতরে নিস্তেজে বুজে গেলে এ চিরশিশু চোখে
তারপর নিথর মৃত্যু কি রেখে যাবে, মানচিত্র কি সে আঁকা?
মৃত্যু ও ধ্বংসের পরেও লাবণ্যময় উড়ান রয়েছে যে আঁকাবাঁকা!



মৃত্যু কেন হয়?


মৃত্যুভাবনা, দেয়ালে দেয়ালে ঘা খেয়ে উড়ে যায়, খেয়ে খেয়ে ঘা
কিছু ব্যথা, ফুলে ফুলে উঠে, এখন নীরবে গান, দহনে গহনে, আহ্!
বিকেল কেমন আসে বিকেলের মতো, জিগ্যেস করে নি কেউ
এ ব্যথার মানে। নির্বিকার এহেন সন্ধ্যায় আমি অভিমানী ধূপ, 'কি হয়েছে?'
প্রশ্নেও ঘাসেরা অবিচল, ঘাসেরা ভীষণ চুপ; জীবনপাত্র উপকন্ঠী উদাসী উজানে,
সন্ধ্যাআকাশে কে একলা, ভারী একা মৃত্যুময় অন্ধকার মহাকাব্য রাত রয়...
আনমনা চেয়ে চেয়ে দ্বিতীয়ার মায়াবী চাঁদ বলে: 'ইস্! মৃত্যু কেন হয়?'



ফিরে আসা


কলসটা ভেঙে গেলে, জীবনের জল অনীশ্বর আকাশে হয়
কোন-রঙা মেঘ?
কতদিন লাগে আসতে ফিরে
সে দলা আবেগ?
বৃষ্টি হয়ে ঝরতে কোলে
মাতৃকোলে নিতে ফের গেহ
মা টেনে দেয় মুখে দুগ্ধঝরা বোঁটা...
জীবনেই জয়ী হয় মৃত্যুঞ্জয়ী স্নেহ



ঝাঁক অন্ধকার



এমন চোখ ছাপানো অন্ধকার, আলোভেদী ফেনা
আগ্রাসী পতঙ্গের ঝাঁক যেন সূর্য আর উঠবে না
শিশিরভেজা চোখেতে জলছাপ, ছায়া ফেলে যাই
পুড়ে খাক একদা-সবুজ তৃণভূমি, মৃদু ওড়া ছাই
শোণিতে শিরায় শিরায় অস্ফুটধ্বনিতে পরাজয়
মায়াবী চাঁদ আবারো বলে...'ইস্! মৃত্যু কেন হয়?'



মৃত্যু মানে বুঝেছি


মৃত্যু মানে বুঝেছি যন্ত্রণার ঘরে যন্ত্রণাবিহীন নিস্তব্ধ এক প্রণাম
মৃত্যু মানে বুঝেছি সব শেষ হলেও ভেসে ওঠা সেই তাঁরি নাম--
'মা'...'মা'...'মা'...
সমুদ্র তুমি... মা? না কি রাতআকাশে নক্ষত্রর শীর্ণ ছায়াপথ সাঁকো?
মহামরণের ঐ ওপারের সব কবিতা-ঝিনুক আনবো কুড়িয়ে দেখো
আসবো তোমারই কোলে, তুমি অপেক্ষায় থেকো....


ধ্বংস পরে উড়ান



পৌরাণিক যুগ থেকে আবহমান ভাবনা-চিন্তার --
উত্তরাধিকার-সূত্রে-প্রাপ্ত, অচল কমফর্টেবল্
ভাবনা-চিন্তার, সেই সব টেকটোনিক্ প্লেটগুলো,
প্লেটগুলো সরছে - সরছে - সরছে!!
সব টের পাই! অলীক এ শেষ নৈশভোজ!
ভূমিকম্প অদূরে নয়! প্রলয়! প্রলয়!
ধ্বংস পরেও উড়ানে থাকবে বীজ
নতুন ভাবনা, চেতনা বৃত্তচ্যূত
উড়বে নতুন নতুন কক্ষপথে,
নতুন সে ছায়াপথ গড়ে!
থাকব না আমি শরীরে
ও কবিতা-শরীরে...
এখনই উড়ছি দেখ না!
চেতনায়?



রূপসী নতুন বাংলা


গোপন রূপকথারা অনশ্বর, নতুন নক্ষত্রে স্মৃতি
লাবণ্য অমিত প্রেমে জ্বলবে সুগন্ধে ছায়াধূপ
চন্দন কাঠের দৌড়ানো বোতাম, খুঁজে নিয়ে
ফের রাইকিশোরী...সলাজ স্তনস্পর্শ তৃষ্ণারেণু
মুগ্ধতা!এরকম একান্ত গোপন চিঠি সব, যা
দেখাইনি কাউকে পরমা, নক্ষত্রনতুন গ্রহজল
গড়বে আবার বীজধানে মায়াবী নৈবেদ্য ও
নিবেদনে; আলপথে ঝরা পালক, ধূষর কুয়াশা
বিন্দু বিন্দু জলে রূপসী রূপকথাময় কোন
নতুন বাংলা, কোন শুরুর কবিতা শেষ
করবে নতুন নক্ষত্রে স্মৃতিময় লাবণ্য ও অমিতাভ



অলীক নক্ষত্রযান


বৃষ্টিমগ্ন কৈশোরও ধ্বংস হয়ে যায়, জনপদস্মৃতি
পাথুরে টিলায়, অভিসার, মিলন, মৈথুন, আশ্লেষ
হলে শেষ, বিপর্যয়ের সোপানে জলে বিসর্জন, প্রোথিত
বা আকস্মিক শ্মশানভস্ম মেখে একটু অশালীন উলঙ্গ
পাগল-পাগল ছাই অথবা চলমান বহমান আগুন গৈরিক,
শোক ও হাহাকারেও নির্বিকার কোন স্বপ্নযান চালক!
এরকম কবিদেরই চাবিকাঠি আছে থাকে, আছে জানি
নতজানু হই বিগ্রহ তাদেরই কাছে তাই, কেন্দ্রাতিগ গ্রহ
আর সে ম্যাজিসিয়ান পাখসাট ডানার ডানার অশথ্ব-বটেরও
চেয়ে বড়ো ছায়া ফেলে বিস্ময়ের ধূপ জ্বালে, সোনাঝুরি ঘ্রাণ
গানেতে দোলানি দোলানি ভুলিয়ে গুলিয়ে ভাঙে চাঁদ, আর
জ্যোৎস্নার অব্যর্থ মহাকাশচারী ম্যাজিক পোষাক দেয়, গলিয়ে আমরা
শুয়ে থাকি তারাভরা আকাশের নীচে হূউস্
করে নাবা, বৃষ্টিমগ্ন কৈশোর, তিলক্ষেত, ফুরফরে
কাশবনে নাবা অলীক, অলীক যান সে অপেক্ষার দুরন্ত রাতে