বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

স্রষ্ঠাকে সাসপেন্ড করব - ঊষাসী ভট্টাচার্য

আমি স্রষ্ঠাকে সাসপেন্ড করব
ঊষাসী ভট্টাচার্য


পৃথিবীর সৃষ্টির প্রাক মুহূর্তে স্রষ্ঠা তখন আপেল হাতে ড্যাব ড্যাবে চোখে তাকিয়ে আছেন তার পাশে বসে থাকা জিরো ফিগার সুন্দরীটির দিকে । তখনই বায়লজ্যিক্যাল এফেক্টের ভয়াভয় প্রকোপে ঘটে যায় সেই চরম বিভীষিকা । জন্ম হলো পৃথিবীর ।

তবে এবার প্রশ্ন হলো স্রষ্ঠা কে ? কেমন দেখতে , কোথায় থাকেন , কী খান , কী করেন, কেমনভাবে করেন ইত্যাদি ইত্যাদি । বাংলায় স্রষ্ঠা শব্দটি বিভিন্ন শব্দার্থে প্রচলিত । বহুল প্রচলিত দুটি শব্দার্থ হলো ভগবান ও ঈশ্বর । স্রষ্ঠা শব্দের অর্থ সৃষ্টিকর্তা । এবার অনুসন্ধান করা যাক, ভগবান এবং ঈশ্বর শব্দের অর্থ ।

ভগবান = ঐশ্বর্যময়

ঈশ্বর = ঐশ্বর্যবিশিষ্ট্য স্বগুণ ব্রম্ভ বা সৃষ্টি-স্থিতির প্রলয় কর্তা ।

অর্থাৎ পাতি বাংলায় আসল কথা হলো , পয়সাওলা ধান্দাবাজ সমস্ত গোলমালের উৎস লোভী একটি জিনিস হলেন ঈশ্বর বা স্রষ্ঠা ।

মায়া ক্যালেন্ডার অনুসারে ২০১২তে পৃথিবীর ইতি । বাকি লুকোবে কোথায় পৃথিবীর স্মৃতি লুকোবে কোথায় ... কেউ জানে না , আমিও জানি না স্রষ্ঠার সৃষ্টিকর্মের কুৎসা লিখতে বসে পৃথিবীর গল্প , এখানেই খতম হবে কি না । বা স্রষ্টা এসে কান মুলে আমার থোতা মুখ ভোঁতা করবে কী না ? তবে যদি স্রষ্ঠা সামনা সামনি এলে কেসটা পুরো জমে যাবে । ছোটবেলায় মনে আছে স্কুলে একটি প্রোজেক্ট করতে দেওয়া হয়েছিল । খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি অত্যন্ত জঘন্য প্রজেক্ট তৈরী করি । তারফলে পেতে হয় গুরুতর শাস্তি । এবার যদি মনে করি পৃথিবী একটি আস্ত প্রজেক্ট এবং এটি তৈরী করেছেন স্রষ্ঠা , তাহলে অন্তত দশবার নি-ডাউন আর একশবার কান ধরে ওঠবোস স্রষ্ঠাকে করানোই যায় । রসাতলে যাওয়া পৃথিবীর অবস্থা আজ পচা ডিমের মতো । যেখানেই ফেলা হোক পচা গন্ধ বেরোবেই । আর্থিক-সামাজিক- সাংস্কৃতিক সব দিকেই পৃথিবীর অবস্থা খসে পড়া দেওয়ালের সিমেন্ট । রং গেছে চটে, ভিতরের পরিতক্ত সিমেন্টের নগ্নতা দৃশ্যমান । ছোটবেলায় শুনেছিলাম , অন্যায় করলে ভগবান নাকি পাপ দেন । আচ্ছা, আজ ভগবানের পাপের বিচার করবে কে ! মায়ের কোলে ছেলে নেই , সদ্যজাত মা নেই, অসুখের চিকিৎসা নেই, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, চাকরি করলে মাইনে নেই , রাজনীতিতে নীতি নেই – বিশাল এক নৈরাজ্যের নেই রাজ্যেতে আমরা চরকি খেয়ে মরছি । শুনেছিলাম ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য । সেই কথাটিই সত্যি বলে প্রমাণিত হলো , আদপে ভগবান পৃথিবীর জন্য কিছুই করেননি । আর ব্যাটা ভগবান লাস্ট দিন স্যালেন্ডার করে বলছেন, “সরি বস্‌, তোমাদের কিছু দিতে পারলাম না তাই ধ্বংস দিয়ে আর কংস জন্মের হাত থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে দিলাম । ”

থোড় বড়ি খাড়া খাড়া বড়ি থোড় নিয়মের জাঁতাকলে ভাগ্য তথা স্রষ্ঠার হাতে আমরা সবাই পুতুল হয়েই বাঁচি। ২১ তারিখ পৃথিবীর ধ্বংসের আগে আমি অন্তত একবার স্রষ্ঠার সাসপেনশন অর্ডারটা জারি করে দিয়ে যেতে চাই । এবার, আমি মালিক , স্রষ্ঠা আমার অফিসে নিম্নপদস্ত কর্মচারী । বরখাস্তের চিঠি দিয়ে বড় বড় করে লিখলাম –

তুমি ব্যাটা বুড়ো ভাম
তোমায় আমি ছুটি দিলাম
আর করতে হবে না পৃথিবী সামলানোর জঘন্য কাম ।
ব্যাস ! তাড়ানোর এই জঘন্য কবিতা জঘন্য স্রষ্ঠার জন্য পাঠিয়ে দিলাম ক্ষেপুর লেটার বক্সে । “ভগবান বুকে” “বিদ্রোহী ভৃগু”-এর মতো ‘পদচিহ্ন’ আঁকতে না পারলেও সাসপেনশন অর্ডার মুকুবে তাকে শো অফ করে দিলাম যাতে আমিও গর্বিত চিত্তে ক্ষ্যাপামী করতে করতে বলতে পারি, “সবার ওপরে মানুষ সত্য স্রষ্ঠা আছে বা নাই ” ।