বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

ধ্বংসের পূর্বাভাস - কৌস্তুভ দে সরকার

২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবীর ধ্বংস? - পূর্বাভাস
(রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য কবির কবিতায়)

লিখেছেন – কৌস্তুভ দে সরকার।


২১ ডিসেম্বর ! ২০১২ ! পৃথিবী শেষ ! হয় রাক্ষুসে সুনামি, নয় ভয়ঙ্কর কোনও ভুমিকম্প ! তাতেও না হলে কোনও পরমানু বিস্ফোরণ, মারণাস্ত্রের অপপ্রয়োগ ! সব শেষ ! কাজেই বিষয়টা নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে । যদিও এমন ভাবনা বহু আগেই অনেকেই ভেবে রেখেছেন । লিখে রেখে গিয়েছেন । আজ শুধু সে সবের পুনরাবৃত্তি করা । পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বাভাস আজ নতুন নয় । নতুন হলো, এমন একটা গুঞ্জন সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া । মূলত দুটো কল্পিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর শেষ দিন ঘোষণার গুঞ্জন ছড়াচ্ছে । প্রথমতঃ ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে মায়া বর্ষপঞ্জির । ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার বিশাল অঞ্চলজুড়ে বিকাশ লাভ করেছিল এই মায়া সভ্যতা । এই সভ্যতার আরও অনেক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে এর কয়েক হাজার বছর ধরে চলা বর্ষপঞ্জি । দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করত এ অঞ্চলের মানুষ । পরে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি চালু হয়ে যায় । সেই বিখ্যাত মেসোঅ্যামেরিকান লং কাউন্ট ক্যালেন্ডার পাঁচ হাজার ১২৫ বছরের বৃত্ত শেষ করছে এ বছরের ২১ ডিসেম্বর । এর থেকে রটে গিয়েছে যে , ২০১২ সালের এই ২১ ডিসেম্বর আসলে পৃথিবীরও শেষ দিন । চিনের ‘ই চিং’ বা বাইবেলের ‘ ওল্ড টেস্টামেন্ট’ , মায়া সভ্যতার সেই ভবিষ্যৎবাণীর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সবকিছুই । দ্বিতীয়তঃ এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সুমেরীয়দের আবিষ্কৃত গ্রহ নিবিরু আর পৃথিবীর কক্ষপথ একই রেখায় চলে আসার তত্ত্ব । এই দুটি গ্রহের মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে ; পুরোপুরি না হলেও পৃথিবীর একটা অংশ ছুঁয়ে যাবে নিবিরু । তা ছাড়া নিবিরু পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসার ফলে দুই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ঘাত-প্রতিঘাত পৃথিবীর গতিতেও এনে দেবে বড় ধরনের পরিবর্তন । কেউ কেউ প্রমাণ হিসেবে নাসার একটি পূর্বাভাসকেও ব্যবহার করছেন । যেখানে বলা হচ্ছে যে , ২০১২ সালে সূর্য তুলনামূলকভাবে বেশি উত্তপ্ত থাকবে । এ সময় ‘সোলার ফ্লেয়ার’ বা সূর্যের মধ্যে বিস্ফোরণের পরিমাণ বেড়ে যাবে । কিংবা, আঘাত হানতে পারে একটি বিশালাকার উল্কাপিণ্ড; হতে পারে সৌর-সুনামি বা কৃষ্ণগহ্বর ।


তবে হুট করে পৃথিবী ধ্বংসের এই গুজবকে আরও উসকে দিয়েছে ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ২০১২ নামে একটি ছবি । যেখানে দেখানো হয়েছে , সূর্যের উত্তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কেন্দ্রের উত্তাপও ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাচ্ছে । এর ফলে গলে যাচ্ছে পৃথিবীর ভূখণ্ড । পৃথিবীতে আর ভূখণ্ড বলে কিছু থাকছে না । পুরো পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে জলের নিচে । ওই ছবির প্রচার-প্রচারণায় মায়া বর্ষপঞ্জির শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ব্যবহার করা হয়েছে জোরালোভাবেই । প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ নাসার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন । কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন যে , ওই বিভীষিকা শুরুর আগেই তাঁরা সপরিবারে আত্মহত্যা করবেন ! বাধ্য হয়ে নাসা এই বিষয়টি নিয়ে একটি বিশেষ ওয়েবসাইট খুলে সেখানে বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করছে যে , পৃথিবীর অন্তত এ বছরেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই । নিবিরু নামের কল্পিত সেই গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দিয়েছে নাসা । নাসার অ্যাস্ট্রোবায়োলজির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডেভিড মরিসন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ ধরনের কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই ।’ মরিসন অবশ্য স্বীকার করেছেন যে , এ বছর সোলার ফ্লেয়ার একটু বেশি হতে পারে । তবে তাতে পৃথিবীর ধ্বংসটংস হবার সম্ভাবনা নেই , বড়জোর সমস্যা হতে পারে স্যাটেলাইট যোগাযোগের ক্ষেত্রে।

কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা যাই বলুন না কেন , যেহেতু কবির চেতনালোক সবার চেয়ে বেশি অগ্রসর । তারা সর্বকালেই সমস্ত চৈতন্য এবং অনুভূতির পুরোভাগে থাকেন । সম্ভবত এ কারণেই বাংলা কবিতার সেরা দিকপাল তথা বিশ্ব সাহিত্যের সর্বোজ্বল নক্ষত্র –বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাতেও আমরা প্রত্যক্ষ করি পরিবেশ বিপর্যয় এবং তার পরিণতিতে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কা । আমরা সবাই জানি ‘আমি’ কবিতাটি—কবির এক অসাধারণ সৃষ্টি । কিন্তু এই কবিতাতেই কবি যেন সত্যিই এক অস্থির সময়ের সংলাপ তুলে ধরেছেন । এতে ধ্বনিত হয়েছে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে এক মহাপ্রলয়ের করুণ আর্তনাদ । মানুষ ও প্রাণীকুলের একমাত্র আবাসস্থল পৃথিবীর প্রতি কবির একান্ত দুশ্চিন্তার চিত্রটিই যেন প্রস্ফুটিত হয়েছে এই কবিতাটির কয়েকটি ছত্রে , শব্দ কণিকায় । এই কবিতায় কবি লিখেছেন –

“বুড়ো চন্দ্রটা, নিষ্ঠুর চতুর হাসি তার,
মৃত্যুদূতের মতো গুঁড়ি মেরে আসছে সে
পৃথিবীর পাঁজরের কাছে ।
একদিন দেবে চরম টান তার সাগরে পর্বতে ;
মর্তলোকে মহাকালের নূতন খাতায়
পাতা জুড়ে নামবে একটা শূন্য,
গিলে ফেলবে দিনরাতের জমাখরচ ;
মানুষের কীর্তি হারাবে অমরতার ভান,
তার ইতিহাসে লেপে দেবে
অনন্ত রাত্রির কালি ।
মানুষের যাবার দিনের চোখ
বিশ্ব থেকে নিকিয়ে নেবে রঙ,
মানুষের যাবার দিনের মন
ছানিয়ে নেবে রস ।
শক্তির কম্পন চলবে আকাশে আকাশে,
জ্বলবে না কোথাও আলো ।
বীণাহীন সভায় যন্ত্রীর আঙুল নাচবে,
বাজবে না সুর ।
সেদিন কবিত্বহীন বিধাতা একা রবেন বসে
নীলিমাহীন আকাশে
ব্যক্তিত্বহারা অস্তিত্বের গণিততত্ত্ব নিয়ে । ....”

অর্থাৎ কবি যেন এখানে বলতে চেয়েছেন যে , কিছু একটা ধেয়ে আসবে পৃথিবীর দিকে ; আর তাই হঠাৎ দুলে উঠবে পৃথিবী । টান লাগবে সাগরে পর্বতে । বদলে যাবে আহ্নিক গতি । ঘুরতে শুরু করবে উল্টো দিকে ! উত্তর মেরু চলে যাবে দক্ষিণ মেরুতে, দক্ষিণ মেরু উত্তর মেরুতে । পশ্চিম দিকে উঠবে সূর্য ! নড়তে শুরু করবে মহাদেশীয় প্লেটগুলো । ফুঁসে উঠবে মৃত, সুপ্ত, অর্ধসুপ্ত—সব আগ্নেয়গিরি । দেখা দেবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। বেড়ে যাবে সূর্যের উত্তাপ; উত্তাপ বাড়বে পৃথিবীরও । গলিত লাভার মতো গলে যেতে শুরু করবে পৃথিবীর ভূখণ্ড । মর্তলোকে মহাকালের নূতন খাতায় পাতা জুড়ে নামবে একটা শূন্য । অর্থাৎ , পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যাবে । মানুষের কীর্তি হারাবে অমরতার ভান । তার ইতিহাসে লেপে দেবে অনন্ত রাত্রির কালি । অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যাবে সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাস । শক্তির কম্পন চলবে আকাশে আকাশে, ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাবে । জ্বলবে না কোথাও আলো । অর্থাৎ অন্ধকারে ছেয়ে যাবে গোটা বিশ্ব । ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর, পৃথিবীর ভাগ্যললাটে যেন লেখা হবে একটাই শব্দ—মৃত্যু !আমাদের ভালোবাসা , মায়া, লোভ, ঘৃণা, পাপ-পুন্যের লাল নীল সবুজ এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ওই দিনই । সত্যিই কি পৃথিবী ধ্বংস হবে ২০১২ ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই লেখা । যেভাবে অপপ্রচার এবং অপবিজ্ঞানে স্বাভাবিক চিন্তাধারার মানুষের নিজস্ব যুক্তিবোধ ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে তার মাঝখানে বিশ্বকবির এই কবিতার লাইনগুলি ভাবলে অস্থিরতা যে আরও বাড়বে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই ।

আর মহাবিশ্ব যখনই ধ্বংস হোক, শেষ পর্যন্ত ইশ্বরকে অন্তত বেকার বসে থাকার ইঙ্গিতও কবি দিয়ে রেখেছেন তাঁর এই কবিতায় –
“ বিধাতা কি আবার বসবেন সাধনা করতে
যুগযুগান্তর ধরে-
প্রলয় সন্ধ্যায় জপ করবেন
‘কথা কও, কথা কও’,.........।

ফরাসি কবি মালার্মের মতে, ‘কবিতা হচ্ছে এমন একটি ভাবপ্রকল্প যার মাধ্যমে মানুষ তার জীবনের তরঙ্গকে এবং অস্তিত্বের নিগূঢ় ব্যঞ্জনাকে উপস্থিত করে ।’ ‘আমি’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথও তেমনি অস্তিত্বের নিগূঢ় ব্যঞ্জনায় যে অস্থির আগামীকালের ইঙ্গিত স্পষ্ট করে তুলেছেন এবং সম্ভাব্য বিপর্যয়ের সচেতনতার যে পরম আর্তনাদ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত করেছেন, তার পর আর কোনও কিছু বলাই সম্ভব নয় যেন ।
যদিও মাত্র কয়েক দশক আগে ক্ষণজন্মা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার অসাধারণ কবিতা ‘ছাড়পত্র’তে বিশ্বকে নবজাতকের বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন, সেখানে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও কিন্তু তার আবাসস্থল পৃথিবীর জন্য ভাবিত, তাড়িত ও উত্কণ্ঠিত । সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন –
“প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা ”......
— অর্থাৎ , চরম বিপর্যয় এবং বিলয়ের দিকে তার তীব্র করুণা, তীব্র অভিসম্পাত ধ্বনিত হয়েছে এই কবি কণ্ঠেও ।
একজন কবি—প্রকৃত কবি তার উপলব্ধি দিয়ে ভবিষ্যতকে শনাক্ত করে দেখে থাকেন আগেই । কবি জীবনানন্দ দাশেও আমরা এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করি না । ‘সিন্ধুসারস’ কবিতায় জীবনানন্দ লিখেছেন –
“সৌন্দর্য রাখিছে হাত অন্ধকার ক্ষুধার বিবরে ;
গভীর নীলাভতম ইচ্ছা চেষ্টা মানুষের – ইন্দ্রধনু ধরিবার ক্লান্ত আয়োজন
হেমন্তের কুয়াশায় ফুরাতেছে অল্পপ্রাণ দিনের মতন ।”
– অর্থাৎ পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলতে ও আর সুন্দরভাবে ভোগ করতে মানুষের যত আয়োজন কাণ্ডকারখানা সেইসব প্রচেষ্টার চরম পরিণতিতে কিন্তু অন্ধকার গহ্বরেই যেন মিশে যাবে মানব সভ্যতা । কারন , পৃথিবীর সমস্ত রঙ – রূপ – রস নিংড়ে নিয়ে , জল আলো বাতাসের মতো পৃথিবীর সমস্ত উপাদানের যথেচ্ছ ব্যবহার করে নিয়ে আমরা এই সুন্দর পৃথিবীকে ক্রমশঃ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি । তাছাড়া, এই যে ইদানীং কালে সৃষ্টির রহস্য জানার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা , ঈশ্বরকণার জন্য অক্লান্ত আয়োজন তাও যেন ফুরিয়ে যাবে একদিন । অল্পপ্রাণ দিনের মতন আমরা বেঁচে আছি । তাই ‘ এইখানে সূর্যের’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ লিখেছেন –
“মাঝে মাঝে বাসুকির লিপ্ত মাথা টলে,
ক্লান্ত হয়ে শান্তি পায় অপরূপ প্রলয়-কম্পনে ;”.........
অর্থাৎ আজকাল এই যে এত ভুমিকম্প হচ্ছে দিকে দিকে তার পূর্বাভাস ছিল এই কবিতায় । আবার তাঁর ‘সুচেতনা’—কবিতাতেও আছে এমনই একটি শঙ্কার বিরল আর্তনাদ -“এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য ; তবু শেষ সত্য নয় ”............ এরকম অমোঘ উচ্চারণ । কবির আশঙ্কা এই সুন্দর পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে । পৃথিবীর মানুষের লোভ – লাভ – লালসার দ্বারা জীবনকে জয় করার সে সুদীপ্ত বাসনা , যে রণ রক্ত সফলতা , জীবনের সফলতালাভের অদম্য চেষ্টা - সেইটাই একমাত্র শেষ কথা নয় । শেষ সত্যটা কি তবে শুধুমাত্র পৃথিবীর ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত ? এবং তাইকি বোঝাতে চেয়েছিলেন কবি জীবনানন্দ ?

পরবর্তীকালে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর ‘একদিন’ কবিতায় লিখেছেন – “মানুষই ছুটেছে দেখি মৃত্যুর নিষ্ঠুর অনুষ্ঠানে......”। আবার ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন –
“মৃত্যু ও জীবনে শুধু একটি ঊর্ধ্বে উঠে-আসা মেঘ
কিংবা এক জলজ হিংসা লেজ ঝাপটে লুপ্ত করে নেবে –
গান গাওয়া !”......

কবিদের এই প্রশ্ন যেন তাদের একার প্রশ্ন নয় । এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে তারা স্পর্শ করে যান দেশ কাল ও পাত্রকে । কবিকুলের প্রতিনিধি হিসেবে তারা যেন সতর্ক করে দেন সমগ্র মানুষকে—মানবসভ্যতাকে । পৃথিবীকে নিয়ে এত এই যে আবেগ, উৎকণ্ঠা—এর পরিণতি সম্পর্কে কবিরা কি আগেই জেনে ফেলেছেন — পৃথিবীর ভবিষ্যত্ কোন সুতোয় গাঁথা ? এই ধন্দে পড়ে আমি নিজেও একটি ছড়া লিখে ফেলেছি –

পৃথিবী কি ধ্বংস হবে দুহাজার বারো ?
সঠিক এর উত্তর - কে বলতে পারো ?
কি ভাবে ধ্বংস হবে – হঠাৎ না ধীরে ?
সংশয় দেখা দিচ্ছে পৃথিবীকে ঘিরে !
পৃথিবীর সকলেই সে কারনে ভীত
পৃথিবী ধ্বংস হবে – নয়তো কাঙ্খিত ।
রটনা-যে বর্তমানে ব্যাপক জল্পনা !
তারপরে কি থাকবে – সেটাও কল্পনা ।
আমেরিকা ডুবে যাবে ? নাকি আটলান্টিক ?
হিমালয় থেকে যাবে এরকম-ই ঠিক ?
ব্রিটেন উন্নত দেশ – ডুবে যাবে তা-ও ?
মাছেরা মেলবে ডানা, পেয়ে যাবে পা-ও !
মানুষ থাকবে ? না-কি ? থাকবে না পাখী ?
থাকবে কি টাটা-দের ন্যানো একলাখি ?
জটিল প্রশ্ন সব মুখে মুখে ঘোরে ;
পৃথিবী থামবে , না-কি ঘুরবেই , জোরে !
উত্তর সঠিক-টা যেই দেশ দেবে –
ষোলর অলিম্পিকে সব সোনা নেবে !

যাইহোক, বিশ্বজুড়ে এই যে কলকারখানার অবাধ বিস্তার, অবাধ বৃক্ষচ্ছেদন, রাসায়নিক বর্জ্যে পরিবেশ বিনষ্ট হওয়া, অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ, বোমা বিস্ফোরণ, ওজোনস্তর ক্ষয়ে যাওয়া , জলস্তর নীচে নেমে যাওয়া, উষ্ণায়ন ইত্যাদি নানা কারণে এরই মধ্যে পৃথিবীর পরিবেশে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়েছে—তাতে এই মুহূর্তে সতর্ক না হলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তার অবয়ব, নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে সবুজ বেষ্টনী, বরফস্তর এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে কমে যেতে পারে স্থলভাগ, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত গরমে তা হয়ে উঠতে পারে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের বসবাসের অযোগ্য । যার প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া আমরা অল্প অল্প করে হলেও হয়তো টের পাওয়া শুরু করে ফেলেছি । দেখা যাক শেষোব্ধি কি হয় ? সেই প্রশ্নের উত্তরটাও সময়-ই সব চেয়ে ভালো দিতে পারবে বোধ হয় ।