বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

মানুষ মূলত উভলিঙ্গ

চর্যাস্পৃহা দে
মানুষ মূলত উভলিঙ্গ


লেখা শেষ হলে একটি মেয়ের কথা ভাবি । একটি শিশুকন্যা। লেখাটি ওর জন্য স্বাস্থ্যকর কি? ও বিভ্রান্ত হবে না তো? ওর জন্য যথেষ্ট খনিজ আর খাদ্যপ্রাণ আছে? আমি যখন স্কুলে পড়ি, তখনো এ শিশুটির কথা আমি ভেবেছি। ওর হাসির ওপর বাটারপেপার বিছিয়ে কপি করেছি নিজের হাসি। হাসিফুলের সৌরভ মেখেছি গায়ে। এ কন্যাবিনিশ্চয় কথা বলে সান্ধ্য ভাষায়। জীব ও জীবনের নানা মন্ত্র শেখায় নিরন্তর। প্রাথমিক শব্দ-জল্পনা শেষ হলে সে কাহ্নপাকে বাবা নয়, মা বলে ডাকবে।

নারী পুরুষ আমার কাছে লিঙ্গ নির্দেশক বিশেষ্য নয়। এ আমার কাছে বিশেষণ। একজন নির্যাতক, সে অবয়বে নারী হলেও আসলে পুরুষ। ‘পুরুষ’ আমার কাছে নেতিবাচক অভিধা। আবার ‘বাঙালি’ ইতিবাচক অভিধা। কাজেই গিন্সবার্গ
আমার কাছে বাঙালি। কবির বিপরীত লিঙ্গ ‘মহিলা কবি’ বয়কট করেছি স্কুলেই। আবার প্রত্যাখ্যান করেছি তথাকথিত নারীবাদীদের। চঙঘউঝ নারী দিবসে র‌্যালি করছে। ভার্জিন কোলা গিলে টিকিয়ে রাখছে সতীত্ব’র কনসেপ্ট।

ভ্রুণহত্যা সাপোর্ট করি না বলে বোভোয়ারকেই করেছিলাম বয়কট। যখন জানলাম চিত্রতারকা ক্যাথেরিন ডেনিউফ এবং ডেলফিন সেরিংসহ ৩৪০ জন নারীর সাথে বোভোয়ার এক বিবৃতি দেন—গর্ভপাত করেছেন। পরে অবশ্য স্বীকার করেন, তিনি তা করেন নি, আন্দোলনের স্বার্থে মিথ্যাচার করেছেন, কেবল তখনি আমার প্রিয়া হয়ে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথ আমার মা। কেননা, আমার মানসিক পুষ্টিতে ওঁর ভূগোলের জল ভেজা কেতকীর হিম সুবাস মাখা জলবায়ু, নদীনালার অবদান রয়েছে। একই গাছ, শুধু জলের পাশে রোপণের জন্য বাড়তি ফলন দিলো, তেমনি জলাধার রবীন্দ্রনাথ। আমার এবং আমাদের ।

ক্লীব ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই তবুও অলৌকিক প্রস্তাব
ওঠে দুর্মর শহরাচারে। মানুষ মূলত উভলিঙ্গ
বিশেষত স্বমেহন বশে এনে যারা স্তনের ওপর
পরেছে পুরুষ-পাঁজর আর নারী স্থৈর্যর আভরণ
মেখেছে যুবারা। আজ কম্প্যুটার চর্চিত পর্নোপ্রবণ
নারীগণ লেহন তৃষ্ণায় কাতরাতে কাতরাতে সঙ্গমের
ক্ষণকাল ঠোঁটে দাঁত পিষে করে প্রলম্বিত। হেমমগ্ন
শরতে সড়কের পাশে দুলে ওঠা কাশের ডগা থেকে
উড়ে যায় কতো ফুল, যেমন শিমুল তুলা, তাতে চড়ে
দেবো পাড়ি অক্টোপাস সভ্যতা থেকে চন্দ্র যোজন দূরে

চাঁদবুকের দুধ খেতে খেতে যে শিশু ঘুমিয়ে পড়ে, ওর
বৃন্তচ্যুত অধর বেয়ে এক ফোঁটা জোছনা থুতনিতে থমকে
থাকে, সে বড়ো হয়ে নারীপূর্ণা হলে চিবুক খাঁজে মুক্তো
ফলাবে। সেই মণিতে বুকের তা’-এ জন্মাবে শিশু চাঁদ।
ছাত্রীবাস থেকে খুব ভোরে ট্রেন আসে, হুইসেল বাজায়,
থামে। হাত ধরে উঠে বসি। এভাবে চলে সুখ-বোরাক।
ঈশ্বরের স্বরচিত পথে পথে মানুষের পাদুকার
সুকতলি পড়ে আছে। আসন্ন হিমে কাঁপে একপাটি মোজা
ভোরে শিশু কোলে তুলে যে উদ্যানে হাঁটি তার ঘাসে ঘাসে
কনডোমফুল ঝরে আছে—স্বর্গ’র সাপ ফেলে গেছে নির্মোক।