বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

কবিতার মানসাঙ্ক - সুবীর ঘোষ

কবিতার মানসাঙ্ক

সুবীর ঘোষ
আনন্দের পরিণতি অশ্রুজলে । আনন্দ আজ কিসের ছলে কাঁদিতে চায় নয়নজলে...বলেছেন রবীন্দ্রনাথ । উৎসবের লগ্ন অনেকখানি অতিক্রান্ত । এই যে বিপুল মহামিলনের সমারোহ তার পাশে পাশেই চলল মৃত্যুদেবের কর্জআদায় । কবিতার ভরা সংসারকে শূন্য করে তিনি একে একে তুলে নিলেন কবি কবিরুল ইসলাম , বাসুদেব দেব, শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে । কিন্তু সেই নির্মমতার দেবতা জানেন না আমাদের কবি আমাদের বলে গেছেন—আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না মৃত্যু হয় না । কবিতা না থাকলে ভালোবাসা হয় না । আর ভালোবাসা না থাকলে কবিতা হয় না । কবিতা রসের উৎসার । নানাবিধ রস মিলিয়ে সে সৌন্দর্য আনন্দ ও সত্যের আস্বাদ দেয় । রসং হ্যেবায়ং লব্ধানন্দী ভবতি । রসলাভ করে মানুষ আনন্দলাভ করে । কাব্যরস তত্ত্বের মতো প্রমাণযোগ্য নয় , অনুভবযোগ্য । যা প্রমাণ করা যায় তা প্রতিপন্ন করা সহজ । কিন্তু যা অনুভব করা যায় তা অনুভূত করানো সহজ নয় । কবিতা নিয়ে মুশকিল হলো যে আমরা কবিতায় যুক্তি খুঁজি । পরম্পরা খুঁজি । উচ্চারিত স্পন্দনের বৈধতা খুঁজি । কবিতাকে ইতিহাস ভূগোলে মিলিয়ে নিয়ে দেখতে যাই । শব্দের ব্যবহার তো বদলাবেই । যাঁরা গোরুর গাড়িতে চড়ে দশ মাইল দূরের হাটে বেচাকেনা করতে যেতেন তাঁদের উত্তরসূরিরা এখন মোটরবাইকে কানে মোবাইল । কবিরা তো শব্দের উৎসব করবেনই । ধ্বনির থেকে শব্দের মধ্যেকার যে অধরা জগৎ , যেন আলো আর শব্দর অন্তবর্তী দূরত্বের মতোই , অনাবিষ্কৃত ভাবনাকে সম্প্রসারিত করে দেয় যাতে কবির পক্ষে সেই উৎসবে সামিল না হয়ে থাকা যায় না । দীপক মজুমদার যখন লেখেন—আমি তো জেগেই আছি আমার প্রত্যেকটি শব্দ মরুভূমি হয় । // আমি শুধু জেগে নই আমার অক্ষরগুলি খোঁজে বিশ্বস্ত বন্দর আর উদ্ভাসিত ঘুম । মরুভূমির দাবদাহে শব্দ কী জ্বলে যাওয়ার বস্তু ? উৎসবে আমরা ক্ষেত্র খুঁজি । অক্ষরমালা তবে বন্দর এবং বিশ্রাম । স্থাবর জঙ্গম দুই নিয়েই তো উৎসব ।একটা প্রশ্ন উঠছে মনের মধ্যে এই যে চলে যাওয়া তার আগে তবে কী কোথাও একটা আসা ছিল ?
আমি কী কোথাও থেকে আসি
আমি বুঝি এখানেই অনন্ত থেকেছি
সময় মানে না শুধু সময়-প্রহরী
আর এই জানকারির দ্বন্দ ও বুঝের অস্পষ্টতার মধ্যেই টের পেয়ে যাই দেখা না দেখায় মেশা বিদ্যুৎলতার মতোই থাকা না থাকার কুয়াসা ছাড়িয়ে অস্মিতার স্পন্দনই প্রকট ।

এই পৃথিবীর তাচ্ছিল্যের সমারোহে
আমাকে খেয়াল করার মতো কেউ নেই ।
আমি কোথাও নেই
যারা ভাবে আছি তারাও নেই
অথচ সরব্ত্র একটা আছি আছি ভাব ।
নিরীক্ষার শর্তই হলো প্রচল অভ্যাসমানতার ওপারে গিয়ে তত্ত্বতালাশ । Viktor Shklovsky রাশিয়ার কবিদের জন্য লিখেছিলেন---Poetry is defamiliarized language whose formations so far from being simply formation of meaning are aesthetic structures—a system , that is to say , of intransitive relations. কবিতা তাই অগম পথে যাবারই উৎসব ।

জীবনে দেখিনি কোনো সূর্যডোবা চোখ
অচেনা পাতার মতো কথাগুলি ঢাকা
ধূলির বসন ঢাকে শমিত নগ্নতা
ফিরে আসে কিছু শব্দ...নদীতেও জল ।



বিপন্ন কৌতূহলো


ঝড়ে আসা যাওয়া ভাঙ্গে

আমার সীমানা
দূরের নিঃশ্বাস শুনে দেখে আসি
কতটা শিথিল ।
রম্য বাণিজ্যের স্বাদে সুখে থাকো
আমি যা পাইনি তার
দলিলও তো হাতে নেই ।
নিরুচ্চার আদালত ঘন মেঘে
শ্রাবণ ছড়ায়
বিপন্ন কৌতূহলো । জানাজানি নিরর্থক ।
সবে সবে
উল্কাপিন্ডে কৌতূহলো জমে ।