বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

উইলিয়াম ব্লেক-এর কবিতা

উইলিয়াম ব্লেক-এর কবিতা
অনুবাদ- সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ

ঢেলা আর নুড়ি


“ভালবাসা” আত্মতুষ্টি চায় না কখনও,

আপনার জন্যে তার চিন্তা নাই কোনো,
নিত্য করে আত্মত্যাগ পরের কারণে,
স্বর্গের উদ্যান রচে নরকের বনে।

এ-গান, মাটির ঢেলা গাইছিল সুখে,
পশুদের পদচিহ্ন আঁকা যার বুকে।
হেনকালে, ঝরনার একটা কাঁকর
খোনা স্বরে ক’রে গেল বকর-বকর:

নিজেরই আনন্দ শুধু চায় “ভালোবাসা”,
পর-কে সে বলি দেয় আপন তুষ্টিতে,
পরের দুঃখের ধন সে গ্রাসে মুষ্টিতে,
স্বর্গ-কে সে ক’রে তোলে শয়তানের বাসা।


পুণ্য বৃহস্পতিবার


কিবা এক পুণ্য দৃশ্য উদিত

ধনী এই সুফল দেশে দিবারাত,
শিশুরা দুর্দশাতে পতিত–
সুশীতল, হাড়-কঞ্জুস কৃপার হাত!

ও-কাঁপা ত্রস্ত কান্না, গান নাকি সে?
এই গান হচ্ছে গাওয়া খুশিতে?
এতজন দুধের শিশু গরিব কিসে?
এদেশের খেত কি ভরা ভুসিতে?

কখনও হয় না এদের সূর্যোদয়।
জমি সব ঊষর এবং স্যাঁৎসেঁতে।
কাঁটাতে রাস্তা এদের গম্য নয়।
আজীবন বসত এদের কাল্ শীতে।

কেননা, যেথায় ওঠেন সূর্যদেব,
যেখানেই বৃষ্টির জল বর্ষায়,
খাদ্যের হয় না অভাব বাচ্চাদের;
দৈন্যের ত্রাস মনে না-অর্সায়।


চিম্‌নি-ঝাড়ুদার

ছোট এক কালো জীব সফেদ তুষারে
কাঁদে ওঁয়া-ওঁয়া, আহা, কাঁদে শতধারে!
বল্ তোর বাপ কই, মা-ই বা কোথায়?
প্রার্থনা করতে তারা গিয়েছে গির্জায়।

কারণ, ছিলাম সুখে খাগড়ার ঝাড়ে,
শীতের তুষারে হেসেছিলাম মধুর–
কাফনের থান তারা পরাল আমারে,
শেখালো করুণ গান, মরণবিধুর।

এবং যেহেতু আমি আজও নাচি, গাই,
বাবা-মা ভেবেছে, তারা করে নাই ক্ষতি–
প্রভু, রাজা, পুরোহিতে তাই তো প্রণতি,
আমাদের দুর্দশার ঘটক তারা-ই।


ধাত্রীর গান


যখন সবুজ মাঠে বাছারা খেলায় মাতে
ফিসফিস শুনি আমি, ভীত:
হারানো যৌবন-দিন করে মন উদাসীন,
মুখ হ’য়ে যায় পাণ্ডু, পীত।

ছেলেমেয়ে এসো তবে, সূর্য ডুবে গেছে কবে,
চতুর্দিকে শিশির-সম্পাত,
হেমন্তের দিনগুলি কেলিতে করেছ ধূলি,
ছদ্মবেশে আসে শীত-রাত।


অসুস্থ গোলাপ


ও গোলাপ, অসুস্থ তুমি যে!
সূচিভেদ্য অন্ধকার রাতে
যে-অদৃশ্য কীট উড়ে আসে
প্রমত্ত ঝড়ের সাথে-সাথে

তোমার রাতুল সুখে-ভরা
বিছানাটি খুঁজে পেয়েছে সে,
আর তার চোরাগোপ্তা প্রেমে
তোমার জীবন যায় শেষে।


মাছি


ছোট্ট মাছি ওরে,
তোরফুল-ফাগুনের খেলা
আমারঅবোধ হাতের ঠেলা
দিল বন্ধ ক’রে।

আমিও কি নই
একটামাছি তোর মতোই?
কিংবা তুইও কি ন’স
আমার মতোই, মানুষ?

কারণ আমিও, মাছি,
তোর মতো গাই, নাচি,
যাবৎ কোনো অন্ধ হাত
আমার পাখায় চালায় কাঁচি–

চিন্তা যদি জীবন,
তথাশক্তি ও প্রাণবায়ু,
চিন্তা থেমে গেলেই
যদিশেষ হ’য়ে যায় আয়ু,

আমি তবে হই
একটা সুখী মাছি,
খোঁজ নিয়ে কাজ নেই
আমিম’রে না বেঁচে আছি।


শার্দূল


জ্বলছ, শার্দূল! জ্বল্‌ছ জ্বল্‌জ্বল
ঝল্‌সে রাত্রির এই বনাঞ্চল!
কোন্ চিরঞ্জীব হাত, কোন্ ঈক্ষণ
বাঁধ্ল ঐ কায়, ভীষ্ম, চিক্কণ?

সে কোন্ আসমানে, গহিন দরিয়ায়
ভীষণ ও-চোখের আগুন জ্বলেছিল?
দুঃসাহসী কোন্ পাখায় ভেসে, হায়,
সে কোন্ তেজি হাত সে-তেজে হাত দিল?

কোন্ কাঁধ, কোন্ কারুকর্মের চর্‌কায়
ঐ হৃৎপিণ্ডের আঁশগুলি সে বোনে?
কবে থেকে ঐ ভীম মর্মটা তড়পায়?
কোন্ বিভীষণ-হাতে? কোন্ ভীম-চরণে?

কোন্ হাতুড়ি? কোন্ শিকলি?–আর
কোন্ উনুনে ছিল ঘিলু তোমার?
কোন্ নেহাই? কোন্ বজ্র-মুঠি
ঐ তরাসে পরিয়ে দিল খুঁটি?

যেসময় তারারা সব ছুঁড়েছে বর্শা তাদের
ভিজিয়ে অশ্রুজলে চাঁদোয়া ফর্সা চাঁদের,
তিনি কি হেসেছিলেন আপনার সৃষ্টিসুখে?
গড়েছে যে তোরে, সে-ই গড়েছে মেষশিশুকে?

শার্দূল! শার্দূল! উজ্জ্বল ভায়
ঝল্‌সাও রাত্রির কান্তার-ছায়!
মৃত্যুঞ্জয় কোন্ হাত, কোন্ ঈক্ষণ
মূর্ছায় ভীম কা’য় সৃষ্টির নিক্বণ?

(আদি অনুবাদ)

বাঘ ও বাঘ! জ্বলছ জ্বল্‌জ্বল্‌
ঝল্‌সে দিয়ে রাতের বনতল;
কোন্ অমর চোখ বা কোন্ হাত
বাঁধে তোমার ভীষণ অনুপাত?

কোন্ গগনে, গহিন দরিয়ায়
ঐ চোখের আগুন জ্বলেছিল?
সাহসী কে সে ভেসে কোন্ পাখায়
ভয়াল হাতে আগুনে হাত দিল?

কোন্ সে কাঁধ, কোন্ সে কারুকর্মে
ঐ হিয়ার তন্তুজাল বোনে?
ধুকপুকুনি কবে শুরু ও-মর্মে,
কোন্ সে ভীম-হাতে, ভীম-চরণে?

কোন্ হাতুড়ি, কোন্ শিকলি, আর
কী-চুল্লিতে ছিল ঘিলু তোমার?
কোন্ নেহাই, কোন্ বজ্রমুঠি
ঐ তরাসে পরিয়ে দিল খুঁটি?

তারারা যবে বর্শা ছোঁড়ে নীচে,
তাদের আঁসু-জলে আকাশ ভেজে :
তার ঠোঁটে কি ফোটে হাসির লেশ?
যে তোরে গড়ে, সে-ই কি গড়ে মেষ?

বাঘ ও বাঘ! জ্বলছ জ্বল্‌জ্বল্
ঝল্‌সে দিয়ে রাতের বনতল;
কোন্ অমর চোখ বা কোন্ হাত
সাহসী অবলীলায় বাঁধে ও-অনুপাত?


আমার সুন্দর গোলাপচারা


পথে যেতে, দেখি এক, ফুটে আছে আহা,
ফাল্গুন-দুর্লভ ফুল, আলো ক’রে বন–
সুন্দর গোলাপচারা আছে যে আমার,
তাই সেই ফুল আমি করিনি চয়ন।

গোলাপচারার কাছে ফিরে গিয়ে আমি
দিনরাত পরিচর্যা করেছি কত-না,
অথচ ঈর্ষায় পুড়ে, গোলাপ আমার,
ফিরিয়ে দিয়েছে শুধু কাঁটার যাতনা।


আহ্ সূর্যমুখী


আহ্, সূর্যমুখী! ক্লান্ত, সময়ের ভারে,
গুনে-গুনে সবিতার ব্যস্ত পদপাত:
খোঁজো কি সে-মরূদ্যান, স্বাদু ঝরনারে,
যেখানে ফুরায় সব ভ্রমণ-প্রমাদ?

যেখানে তরুণ, আহা, কৃশ, কামনায়,
পাণ্ডুরা কুমারী, অবগুণ্ঠিতা অমায়,
গোর থেকে জেগে উঠে দু’-বাহু বাড়ায়–
সেখানে আমার সূর্যমুখী যেতে চায়।


শিউলি


রাতুল গোলাপ ফুটিয়ে দেয় যে কাঁটা,
ছাগলও জাগায় বাগানো শিঙের ভয়,
শুধু এ-শিউলি–সুন্দর, সাদামাটা,
ব্যথা-ভীতি-হীন প্রেম ঢালে অব্যয়।


প্রেমের বাগান


একদিন গিয়ে দেখি প্রেমের বাগানে,
যেখানে সবুজ ঘাসে সকাল-বিকেল
খেলতাম, দেখি, তার ঠিক মাঝখানে
স্থাপিত হয়েছে এক উটকো চ্যাপেল।

আর সেই চ্যাপেলের রুদ্ধ ছিল দ্বার,
“মা কুরু!” লিপিবদ্ধ ছিল দ্বারে তার;
তখন ফিরেছি সেই বাগানে আবার
যেখানে প্রস্ফুট ছিল বহু ফুল-ঝাড়।

গিয়ে দেখি–ঝাড়গুলি কবর-স্তবক,
ফুল সব হ’য়ে গেছে সমাধিফলক,
কালো-বেশ পুরুতেরা করে সেথা ঘোরাফেরা,
কাঁটালতা দিয়ে বাঁধে আমার সুখের সাধে।


লন্ডন


প্রতিটা চার্টার-করা পথে ঘুরে মরি,
কাছেই চার্টার-করা টেম্স্ ব’য়ে যায়;
এবং, প্রতিটা মুখে নিরীক্ষণ করি,
দুর্বলতা, বেদনার চিহ্ন শোভা পায়।

প্রত্যেকটি মানুষের প্রতিটা কান্নায়,
প্রতিটি শিশুর ভীত চিৎকারে থামি,
প্রতি কণ্ঠস্বরে, প্রতি নিষেধাজ্ঞায়,
মন-গড়া হাতকড়া–আরও শুনি আমি

কীভাবে চিমনি-ঝাড়–দারের রোদন
ক্রমশঃ-কালচে সব গির্জাকে শাসায়,
দুর্ভাগা সেনার দীর্ঘনিঃশ্বাসমোচন
প্রাসাদ-প্রাকারগুলি রুধিরে ভাসায়–

কিন্তু নিশুতিতে পথে সর্বাধিক শুনি
কীভাবে, যৌবনবতী বেশ্যার সম্পাত
করে নবজাতকের অশ্রুকে আলুনি,
শবযাত্রা ক’রে তোলে বাসরের রাত।


মানব-বিমূর্তি


করুণা করব তবে কাকে

কেউ যদি গরিব না-থাকে?
দয়া কাকে করব, সকলে
সমপরিমাণে সুখী হ’লে?

অন্যান্য ভীতি-তে শান্তি আসে,
স্বার্থপর প্রেম তার পাশে;
ক্রূরতা তখন জাল মেলে,
সাবধানে তার গুটি ফেলে।

ব’সে প’ড়ে পবিত্র শঙ্কা-য়
অশ্রুজলে মৃত্তিকা ভেজায়;
পাদমূলে তার অতঃপর
গেড়ে বসে বিনয়-শিকড়।

আর তার মাথার উপর
ছায়া ফ্যালে রহস্য সত্বর;
শুঁয়াপোকা আর মাছি মিলে
রহস্যের পাতা চলে গিলে।

ছলনা-র ফল ফলে, লাল
টকটকে, মধুর, রসাল–
তার ঘন ছায়ার ভিতরে
দাঁড়কাক নীড় তার গড়ে।

সমুদ্রের আর পৃথিবীর
দেবতারা খোঁজে, প্রকৃতির
ভিতরে সে-গাছ বৃথা–এর
জন্ম যে মগজে মানুষের!


শিশু শোক


গোঙাচ্ছে মা আমার, বাবা কাঁদে ব’সে,
দেখলাম, ভয়ানক পৃথিবীতে প’শে,
উলঙ্গ, অসহায়, চিল-চিৎকারে,
পিশাচ যেন-বা এক মেঘের আঁধারে।

বাবার শক্ত হাতে করি ছটফট,
বৃথাই ছিঁড়তে চাই ন্যাকড়া-ল্যাঙট,
অবশেষে ক্লান্তিতে থাকি হাই দিতে–
অভিমান ক’রে বসি মা-র মাইটিতে।


বিষবৃক্ষ

রাগ হ’ল এক বন্ধুর ’পরে,
বললাম তাকে, রাগ গেল ম’রে।
শত্রুর ’পরে যখন রুষ্ট,
বলি নি, সে-ক্রোধ হয়েছে পুষ্ট।

দিনরাত আমি উৎকণ্ঠায়
অশ্রুর সেচে বাঁচিয়েছি তা’য়,
হাসির রৌদ্রে তাতিয়েছি তারে,
এবং কপট ভদ্র-ব্যাভারে।

তর্‌তর্‌ক’রে চারা গেল বেড়ে,
মহীরুহ হ’ল, আর ডালে তার
ফলল লোভন ফল এক, বেড়ে–
জানতে দিলাম,–ফলটা আমার।

কালো রাত্রির ঘোমটার ফাঁকে
আমার বাগানে ঢুকেছিল চোর,–
গাছটির নীচে–দেখলাম তাকে–
ম’রে প’ড়ে আছে–যেই হ’ল ভোর।


উইলিয়াম ব্লেক (William Blake, ১৭৫৭-১৮২৭),
অঙ্কন: Thomas Phillips, ১৮০৭


অন্যান্য


দেবদূত

চোর-কে সেধেছিলাম পেড়ে দিতে আতা:
রাখেনি সে কথা।
নারী-কে বলেছিলাম দিতে কিছু সুখ:
শরমে, সে কেঁদেকেটে ফিরিয়েছে মুখ।

আমি ফিরে গেলে এক দেবদূত এলো:
চোরটাকে চোখ টিপে দিয়ে
হাসল নারীর দিকে চেয়ে,
না-ব’লে কোনোই কথা, নীরব কৌতুকে,
নিজ-হাতে আতা পেড়ে খেলো;
আর, বিনা-বাধায় নারীকে
টেনে নিল বুকে।


ক’-পঙ্‌ক্তি


পৃথিবীটা দেখতে কে চাও
একটি বালির কণায়?
কিংবা স্বর্গ–দেখবে কি তাও
বুনো ফুলের সোনায়?
চাও যদি কেউ, হাতের মুঠায়
ধোরো অনন্তকে;
আর মহাকাল, যদি সে এক
লহমাতে ঢোকে।


কখনও প্রেয়সীকে বোলো না


কখনও প্রেয়সীকে বোলো না, “ভালোবাসি”,
প্রেম সে ফোটে না তো কথার লতা ঘিরে।
বরং সঁ’পে দিয়ো বাতাসে প্রেমরাশি,
আড়ালে থেকে, সে-ই জানাবে ধীরে-ধীরে।

বলেছি আমি, হায়, বলেছি প্রেয়সীকে,
হৃদয় দেখিয়েছি প্রচুর উচ্ছ্বাসে;
জমেছে, কেঁপেছে সে, তাকিয়ে তার দিকে;
আহা, সে পালিয়েছে সমূহ সন্ত্রাসে!

আমাকে প্রিয়তমা যখন গেল ছেড়ে,
পর্যটক এক অকুস্থলে এলো,
আড়ালে থেকে, আর মৃদু ঘা মেরে-মেরে
দেখল সব-ই, তবু গেল না–কী যে পেলো!

(আদি অনুবাদ)

জানাতে চেয়ো না বৃথাই তোমার প্রেম,
প্রেম কি কখনও কথায় প্রকট হয়?
কারণ, শান্ত সমীরণ, মোলায়েম,
অদৃশ্য থেকে ধীরে ধীরে তা ভনয়।

হায়, আমি বলেছিলাম প্রিয়াকে, হায়,
দেখিয়েছিলাম সমস্ত এ-হৃদয়,
কম্প্র, শীতল, সভিয় মুমূর্ষায়–
হায় হায় চ’লে গেল যে সে সে-সময়!

প্রেয়সী আমার যেতে-না-যেতেই, এক
পর্যটকের ঘটল অভ্যুদয়,
অদৃশ্য থেকে, ধীরে ধীরে অতিশয়–
আহা, এইবার কোনো বিরূপতা নয়!


নিন্দুকেরা


পরিবাদ ক’রে যাও ভলতের, রুসো,
পরিবাদ ক’রে যাও, যদিও বৃথাই;
ওড়াও কুলোর ধুলো প্রতিকূল বাতাসে, যা ফের
উড়ে পড়ে তোমাদেরই বেয়াড়া মাথায়।

আর, প্রতি-ধূলিকণা মণি হ’য়ে যায়
অলোক আলোকরশ্মি স্পর্শ ক’রে গায়ে;
উড়ে এসে অন্ধ করে বিনিন্দক চোখ,
ইস্রেলের পথে মেনে তবু তারা বিলায় আলোক।

ডেমোক্রিটাসের যত অণুপরমাণু,
আর নিউটনের আলোর কণিকারা
বালি হ’য়ে শুয়ে থাকে লোহিতসাগর-পারে
ইস্রেলের তাঁবুগুলি যেখানে দেদীপ্যমান তারা।


গান


কী-সুখে ঘুরেছি আমি মাঠ থেকে মাঠে,
বসন্তের সুধাপাত্রে দিয়েছি চুমুক,
তারপর দেখি, হায়, আলোকের বাটে
উড়ে চলে প্রেমের কুমার, স্মিতমুখ।

আমার চুলের জন্যে দিয়েছে সে লিলি,
রাতুল গোলাপ দিয়ে ললাটে আমার;
ঘুরিয়েছে কুঞ্জে তার, শুভ্র, নিরিবিলি,
স্বর্ণালি পুলক বাড়ে যেইখানে তার।

ভিজেছে আমার পাখা মধু-হিমিকায়,
তাতিয়েছে সবিতা আমার দীপ্র স্বর;
আটকাল মলমল-জালে সে আমায়,
ঢোকালো সোনালি এক খাঁচায় তারপর।

সে ব’সে আমার গান ভালোবেসে শোনে,
খুনসুটি করে কত, হাসে কুতূহলে;
আমার সোনালি পাখা ছিঁড়ে ফেলে টেনে,–
আমার বন্দি-ত্ব নিয়ে টিটকারিও চলে।


এপিগ্রাম


ফ্ল্যাক্সম্যান-কে

আমাকে তুমি ব্যঙ্গ করো,
“পাগল” ব’লে পাও যে সুখ–
তোমাকে আমি, ব্যঙ্গ নয়,
সোজা-ই বলি, “আহাম্মুক”।


হান্ট্-কে


তুমি বলো, ফিউজিলি বড়ো শিল্পী নয়,
আমি বলি, এইটেই তার শ্রেষ্ঠ পরিচয়।


হান্ট্-কে ২


আমাকে তারা “পাগল” বলে; তোমাকে বলে “হাঁদা”–
কা’কে যে তারা ঈর্ষা করে, বলতে পারো, দাদা!


হেইলি-কে


তব বন্ধুতা হরদম ব্যথা হানে এ-হৃদয়ে, সাথি রে!
এবার শত্রু হও রে আমার বন্ধুত্বের খাতিরে।


স্টট্‌হার্ড্-কে


স্টট্হার্ড্ ছিলেন তাঁর আঁতুড়-ঘরেতে
ভীষণ গরিব আর ভীষণ বুড়োটে।
বড়ো আর ধনী হ’য়ে–এমনই নসিব–
এখনও বুড়োটে, আর এখনও গরিব!


জনাব ক্রমেক


চতুর বজ্জাত এক আমি চিনতুম . . .
জনাব ক্রমেক নাকি? সেলামালিকুম!


জনাব প–


আমাকে যে বন্ধু-সম ভালোবাসে না সে,
বন্ধুদের কাছ থেকে তো লাভের আশা করে–
বরং শুধু এই কারণেই আমায় ভালোবাসে:
হাসতে যেন পারে, আমি আছাড় খেলে পরে।


রয়াল অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে


জাতি যখন বুড়িয়ে যায়, শিল্পের তেজ জুড়িয়ে যায়,
সকল শাখায় গেড়ে বসে বেসাতি;
গরিবগুর্বো আর বুড়োরা বেঁচে থাকে টাকার তোড়ায়,
জন্মায় সব গরিব, এবং অশীতি।


একটা এপিটাফ


এখানে শায়িত আছে জন ট্রট, মানবজাতির বন্ধু তিনি,
একজনও শত্রু রেখে যান নি।
প্রাচীন কবিরা বলে, বন্ধু পাওয়া ছিল নাকি কঠিন ব্যাপার,
আজকে তাদের জন্য রাস্তায় পা-ফেলাই ভার।


স্যর জশুয়া রিনল্ড্‌জ্‌


যবে-না মরিল স্যর জশুয়া রিনল্ড্‌জ্‌
হইল হতমানিত সমস্ত প্রকৃতি–
রানির কানেতে মহারাজা ঢালে এক অশ্রুবিন্দু, তাজা,
তাহাতে পাণ্ডুর তার সব ‘প্রতিকৃতি’।


যাজকের প্রশ্নের উত্তর

‘ভেড়ার কাছে শেখো না কেন
শান্তিপূর্ণতা?’
‘চাই না তব হস্তে মম
পশম-চূর্ণতা।’

1 comments:

Preetha Roy Chowdhury বলেছেন...

bhishon bhalo laglo. school texts e pora original gulir eto sundor onubad porte pere khub bhalo lagchhe.