বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৪

মুক্তগদ্য – তন্ময় ভট্টাচার্য

পিছুটান...সুখটান
তন্ময় ভট্টাচার্য



সেদিন লেকের ধারে ক্লিপ খোলা উৎশৃঙ্খলতায় যখন আঙুল চালিচ্ছিলি আর থেকে থেকেই জলে ঝুঁকছিলি,প্রেমে যে পড়িনি একথা হলফ করে বলা যায় না। খুব ইচ্ছে করছিল কাঁকড়া সেজে তোর সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে। বারবার ইশারায় দেখাবি, ডুব দিলেই ‘এই যাহহ’ বলে আফসোস করবি – জীবনে সেই প্রথমবার জলচর না হওয়ার কষ্ট বুঝেছিলাম। ওদিকে পাঁচটার রোদ তখন তোর আমার সবার পশ্চিমে আশা জাগাচ্ছে। ভাগ্যিস ক্যামেরাটা ছিল! লেন্সের খামখেয়ালি তোকে টেক্কা দিতে না পারলেও ‘ফটোজেনিক’ কথাটার মানে বুঝিয়েছিল সেদিন। সিমেন্টের বেঞ্চে পড়ে থাকা ব্যাগদুটোও আলসে হাতে ছুঁয়ে আছে একে অপরকে। ওদিকে প্যান্ডেল বাঁধার কাজ চলছে পুরোদমে। তুই কিছুটা থমকে কিছুটা দৌড়ে কাঠের পাটাতন পার হয়েই কাদায় খেলিয়ে নিলি পা। আমি তো অনেকক্ষণ আগেই হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে নিয়েছি,ঘাস আর অসময়ের বৃষ্টিকে তোর সঙ্গে মেশাবো বলে। ঘুরপাক খাওয়া গেট আমাদেরও এভাবে ঘোরাবে জানলে কখনোই ঢুকতাম না।

কেন হেসেছিলি বলতো সেদিন ওভাবে? আমাকে অপ্রস্তুতের চূড়ান্তে তুলে নিজেই লুকিয়ে পড়লি ক্যারামঘরের কানাচে, এদিক-ওদিক ঘাড় ঘুরিয়েও না পেয়ে পেয়ে যখন হোঁচট খেলাম,তখনই দেখতে হল! ‘আলতো দেখা’ নামের সেই খিলখিলানি কতোটা ভালোবাসিয়েছে জানিস? খবরদার প্রশ্ন করবি না। মেপে বলার ধাত আমার নেই। বোকার মতো তাকাতে পারি শুধু। নিজেকে তোর পোষা বিড়ালছানা মনে হয় তখন। ঘাড়ে পিঠে লেজে হাত বুলিয়ে দিবি,কই একটু চোখ বুজে আদর খাবো, তা না! করে বসলি ফুচকা খাওয়ার আবদার! খুঁজে মরো এবার!

ফেরার পথেও যদি একটু ভুলতে দিস! বাসের ভিড়ে কন্টিনিউয়াস তোর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই স্টপেজ এসে গেল। নেমেও গেলি। আমায় চিনিয়ে দিলি কয়েক স্টপেজ পরের ঠিকানা। জানলা গলে দেখলাম,তিনটে আঙুল নাড়িয়ে একটা পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি মার্কা লুক দিয়ে ক্রস করে যাচ্ছিস রাস্তা। বুকে চেপে রইলাম আমার রঙচটা ব্যাগটা। শেষ পর্যন্ত তোর ব্যাগের হাত ধরে ছিল যে!