No Escape From Escapism
Escapism আদতে একটি মনস্তাত্ত্বিক পরিভাষা যার অর্থ কঠিন বাস্তবকে এড়িয়ে চলার স্বভাব .শাহরুখ খান অভিনীত "My Name Is Khan" ছবিতে যে Autism কে আশ্রয় করে সাম্প্রদায়িক গৌরব প্রচারের চেষ্টা করা ,সেই দিবাস্বপ্ন সম আত্মরতি -Escapismএর জাতভাই কিনা তা মনস্তাত্ত্বিকরা বলবেন ,কিন্তু মনোবিদের পরীক্ষাগার থেকে তাকে সাহিত্য সমালোচনার রনাঙ্গনে টেনে আনেন যথাস্থিতবাদী (Naturalist) এবং বাস্তববাদী সাহিত্য সমালোচকরা কেউ কেউ এই ঘটনাকে শ্লীলতাহানি রূপে বর্ণনা করে এর আংশিক দায় মতান্ধ কমিউনিস্ট দের ঘাড়েও চাপান । পূর্বসূরি সারস্বতদের নস্যাৎ না করলে নবোদিত মতাদর্শের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা ঠিক জমে না, তাই প্রথম যুগে রোমান্টিক ও পরবর্তী কালে সুররিয়ালিস্টিক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও কোণঠাসা করার জন্যে তাদের সৃষ্টির গায়ে এসকেপিস্ট লিটারেচার এর স্টাম্প মেরে দেওয়া হয় ইবসেন,বার্নার্ড শ প্রমুখ বাস্তববাদীরা কিংবা গ্ন্কর্ট, জোলা প্রমুখ যথাস্থিতবাদীরা তাদের সৃষ্টিতে মৃত্যুঞ্জয় । কিন্তু বিশশতকের প্রথমার্ধে দু দুটি বিশ্বযুদ্ধ, তিরিশের দশকে মন্দা ও আর্থিক সঙ্কট ,বিশেষত ভারতবর্ষে ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ ,১৯৪৬ এর দাঙ্গা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা , আর্থ সামাজিক অবক্ষয় - একটি অদ্ভুতযুগের পটভূমি রচনা করেছিল । সেই কঠিন কঠোর বাস্তব অনেকেই সহ্য করতে পারেননি, তার মধ্যে খুঁজে পাননি কোনো অনুকরণীয় আদর্শ দর্শন ।
এবং মনস্তাত্ত্বিক ফ্রয়েডের উদ্ভাবনায় চঞ্চল সেইসময় কেউ আশ্রয় নিলেন অভিব্যক্তিবাদে কেউ ডাটাবাদ পরাবাস্তববাদে কিংবা কেউ অন্যতম মতবাদে ।
মানিক, শৈলজানন্দ,সমরেশ বসু,প্রেমেন্দ্র মিত্র,সমর সেন,সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দিনেশ দাস প্রমুখ প্রতিভাশালী নব্য সাহিত্যিকরা রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দকেও পলায়নবাদী আখ্যা দিতে পিছপা হননি । ঠিক তার পরবর্তীকালে এদের অনুগামীদের প্রবেশের ফলে বাংলা সাহিত্যের আঙ্গিনা কুস্তির আখড়ার রূপ নেয়.সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার নামে বিকৃতি, অবক্ষয়, অশ্লীলতার কর্দ মতাই কালো হয়ে যায় তত্কালীন সাহিত্যসৃষ্টি। অথচ আজ সেই তথাকথিত এসকেপিস্টরাই আমাদের নয়নের মণি ,সাধনার ধন, প্রতি মুহূর্তের মানসসঙ্গী আর সাহিত্যের নামে রাজনৈতিক প্রচার, "শ্রেয় কে হেয়" করার জন্যে অবিরাম বিষোদ্গার , সাহিত্যের নামে যত অসাহিত্যিকতা -বিস্মৃতির খাদ্য হয়ে গেছে ।
রোমান্টিক,সুররিয়ালিস্টিক,বা মিস্টিক দের বিরুদ্ধে এই নতুন প্রজন্মের মূলতঃ অভিযোগ ছিল এই যে পুরাতন ধারার সাহিত্যের সাথে নাকি সামাজিক জীবন ও চিত্ত সম্পর্কহীন , বাস্তবের মাটি ছেড়ে কল্পনার গজদন্ত মিনারে আশ্রয় নিয়েছেন ,তাই জগত ও জীবনের সাথে এদের সাহিত্য সৃষ্টির যোগসূত্র নেই !
কিন্তু বিচারকদের এটা খেয়াল ছিল না যে তারা কবির সামাজিক কর্তব্যের বিচার করতে বসেছেন, কাব্যের নয় । ভবিষ্যতের শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন দেখা, তার জন্যে জীবন দিয়ে দেওয়া ,তাদের মতে পরম কর্তব্য .. কিন্তু তা কি সাহিত্যিক নাকি সামাজিক কর্তব্য ?
কল্পনা, প্রেম, স্বপ্নচারিতা, প্রকৃতিচেতনা ইত্যাদি কবিতার মূল উপাদান, তাকে তার মধ্যে আশ্রয় নিতেই হবে ! বাস্তবের নকল করা তার কাজ নয়, তাই স্বভাবোক্তিকে অলঙ্কারশাস্ত্রে অলঙ্কার বলে ধরাই হয়না ।
আসলে সকল সাহিত্যিকই কমবেশি পলায়নবাদী (ভোগবাদী নয়, অনেকে আবার পলায়নবাদ ও ভোগবাদ কে গুলিয়ে ফেলেন )
এটাও শ্বাশ্বত সত্য যে লৌকিক মন ও জীবন থেকে দূরবর্তী হয়ে গেলে সাহিত্য দুর্বল হতে বাধ্য, কারণ সাহিত্যের প্রধান উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো মানুষের জীবন ,লৌকিক আনন্দ, বেদনা, বিত্ত ও সামাজিকতা । মহাভারত থেকে গ্রিক ট্রাজেডি, শেক্সপিয়রের নাটক থেকে টলস্তয়ের উপন্যাস -রসোত্তীর্ণ সাহিত্য - হয়তো সেজন্যেই ভ্রম হয় যে সাহিত্যিকের কাজ শুধু বাস্তব চিত্রণই..
পলায়নবাদী সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পালান না , এত সুবিশাল উপকরণ দিয়ে সাহিত্য সৃষ্টিতে তিনি অপারগ বলেই পালান.একে সাহিত্যিক চাতুর্য বলে ধরে নেওয়ায় শ্রেয় ।
আধুনিক সাহিত্যের বাজার যারা জগৎ ও জীবনের কুশ্রীতা ,নগ্নতা ,কদর্যতা আর তার সাথে ভোগবাদের মিশ্রণে মাতিয়ে রেখেছেন ,নারী মনের রহস্য কে উপজীব্য না করে তার মাংসল ভাঁজকেই কবিতার বিষয়বস্তু করেছেন , তাঁরাও কি এসকেপিস্ট নন?
রিয়ালিটি নয়, রিয়ালিজমের মুখোস পরা সস্তাসেন্টিমেন্টালিজ্ম-এর প্রদর্শনে এদের কবিতার পরতে-পরতে মল মূত্র , বীর্য , রজ্স্রাবের ছড়াছড়ি .. কিন্তু জীবন কি শুধু তাই ?
স্বাভাবিক সৌন্দর্য ,মান,অভিমান,বলে কিছুর অস্তিত্বই কি নেই ? বিপ্লবের রণধ্বনির মাঝে প্রেমের ফুল ফোঁটা কি কষ্ট কল্পনা ?
আসলে সমস্যাটা তা নয়। এরা সৌন্দর্য-ভীরু, সত্য শিব সুন্দরের বিশালতায় ভয় পেয়ে এরা আশ্রয় নেই বিকৃতির বিবরে ।
জগৎ সংসারের অমৃত ও গরল যে একসাথে মিলেমিশে আছে , সেই বিস্ময় সেই বন্দনা কোথায়? নাকি সেই বিস্ময় থেকে বঞ্চিত হয়েই কুশ্রীর জয়গান !
সর্বোপরি বলবো যে ,সব কথার সারকথা একটাই - সারস্বত সাধনা - পথ যাইহোক না কেন।
"কামনা অনলে প্রেম শতদল ফোটে"
মিথ্যে জনপ্রিয়তার লোভে যারা সেই সুন্দরকে ছেড়ে পাঁক ঘেঁটে মরে, তাদের মতো নির্বোধ কে ?
অলংকরণ – কৌশিক বিশ্বাস
3 comments:
আসলে বাংলা কবিতার শ্রেষ্ঠত্ব এবং সর্বনাশ দুটোই রবীন্দ্রনাথ করে গেছেন।:)তাই মনে হয় অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত লিখেছিলেন
"সম্মুখে থাকুন বসে পথ রুধি রবীন্দ্রঠাকুর,
আপন চক্ষের থেকে জ্বালিব যে তীব্র তীক্ষ্ন আলো
যুগসূর্য ম্লান তার কাছে।মোর পথ আরো দুর।"
বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন যাকে কল্লোলযুগ বলা হয় তার প্রধান লক্ষণ বিদ্রোহ,আর সে বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্যই রবীন্দ্রনাথ।
অধ্যাপক ক্ষেত্র গুপ্ত বলেন"সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা সৌন্দর্য,প্রেম ও আনন্দ সম্পর্কে রবীন্দনাথকে অস্বীকার করতে চাইল,কল্যাণ বুদ্ধিকে ব্যঙ্গ করল.ধর্মবোধকে নির্বাসন দিল।পল্লী প্রকৃতীর প্রতি অতি আকর্ষণকে বললো ফ্যাসন আর নাগরিক জীবনের ক্লান্তি অবসাদ যন্ত্রনা আর বেদনাকেই সত্য বলে বরণ করে নিল।প্রেম কে স্থাপিত করা হল দেহ কামনার বাস্তব ভূমিকায়।নতুন দেবতা হলেন ফ্রয়েড আর মার্ক্স।অনুভুতির আধিক্যের স্থানে মননের দীপ্তি প্রাধান্য পেল।সাম্যবাদী চিন্তা বিষয় বৈচিত্রে বিশ্বপরিক্রমা প্রথাবদ্ধ উপমা উপেক্ষার পথ পরিহার ,ভাষার জটিলতাজনিত দুর্বোধ্যতা গদ্যছন্দের অধিক ব্যবহার তর্ক কন্টকিত পরিবেশের প্রতি আকর্ষণ,অভিনব চিত্রকল্প ও বাকভঙ্গির প্রয়োগ................"।মনে বাঙালী পাঠক বিশষ নিতে পারেনি তাই কবির আগেই পাঠক কবিতা থেকে দুরে পালিয়েছে।
বাহ!! দারুণ লিখেছ। নতুন নতুন জ্ঞানে সমৃদ্ধ।
Asadharon akta lekha porlam.Choritarthoter maddhom hisebe jara kolom ke bechhe niyechhen e jeno tader proti ak sotorko barta.Sristi sukher ullaser majhkhane kono dayboddhota thakte i parena.Sristi aasole doibobani.Lekhok ke aamar binomro Shroddha.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন