দৃশ্য-১
সিনাই পাহাড়ের পাদদেশ ।দুইজন দেবদূত আলাপরত ।১ম দেবদূতঃ
তার পথ যাবে অন্ধকারে
বাতাসের হাহাকারে , সমূহ পতনে
যারা গেছে অভিশপ্ত পথে
কোনোদিন ফিরবে না ঘরে ।
২য় দেবদূতঃ
জানি না এমন করে কার কথা বলো !
প্রভুর নির্দেশ ছাড়া কিছুই ঘটে না ।
১ম দেবদূতঃ
যে নিঃশ্বাস উইলোর শাখায় শাখায়
লোহিত সাগরে যে বিলাপ
ঢেউ হয়ে লুটিয়ে পড়বে চিরকাল
আমি তার কথা বলি ।
২য় দেবদূতঃ
কার সাধ্য অনিয়ম করে
ঈশ্বরের রাজ্যপাটে ?
যেমন কোমল তিনি , তেমনই কঠোর !
১ম দেবদূতঃ
হায় , সেই নারী !
দীঘল কেশের শোভা মেঘের উপমা
রাত্রির সুরভী মাখা দেহে
ইডেন উদ্যানে আপেল বৃক্ষের মতো
নিজেরই রয়েছে তার মায়াবী আপেল !
২য় দেবদূতঃ
প্রান্তরের ধুলো হয়ে
পড়ে থাকে সকল গৌরব
রূপের বিজয়ী প্রভা ,অবাধ্য যৌবন !
প্রভুর করুণা ,বলো ,সবাই কি পায় ?
দেবদূতগণঃ
অনন্ত আকাশে তাঁর অপার্থিব আলো
তারকারাজির মুখে নামগান
কালের দূরন্ত ঘোড়া
থেমে যায় তাঁর ইশারায়
তিনিই সৃষ্টির মূলে
ধ্বংস হবে তাঁরই ইচ্ছায় ।
( উদভ্রান্ত বেশে অ্যাডামের প্রবেশ । )
অ্যাডামঃ
বিশ্বজগতের প্রভু সকলই জানেন ।
বিপরীত বিহারের দাবী
করে সেই নারী !
কী করে মানবো প্রভু,এই অনাচার ?
বিশ্বাসঘাতিনী
বিদায়ের আগে উচ্চারন করে গেছে
প্রভুর নিষিদ্ধ নাম !
জিহোভাঃ
ভুলে গেছে বিদ্রোহিনী ,প্রথমে সে নারী
পুরুষের নিচে তার নির্ধারিত স্হান
নিজের আদলে আমি গড়েছি পুরুষ ।
অ্যডামঃ
কে তারে বোঝায় প্রভু , ভীষণ উদ্ধত !
মুখে মুখে বলে -একই মৃত্তিকা থেকে
দু’জনের সৃষ্টি যদি , কেন ব্যবধান ?
উন্মাদিনী , ঈশ্বরের নিয়ম জানে না !
জিহোভাঃ
বেশ , তবে দেখুক এবার
অবাধ্যতা কোন্ পথে নিয়ে যায় তাকে !
সামায়েল ছিল দেবদূতকুলে সবার উপরে,
আজ দেখো তার পরিণতি !
অ্যাডামঃ
তার হয়ে ক্ষমা চাই প্রভু
একবার ফিরবার অনুমতি দিন ।
আমার রজনী কাটে অনিদ্রায়,নিঃসঙ্গ শয্যায়
স্মৃতিগুলো সূঁচ হয়ে বেঁধে ।
জিহোভাঃ
মনে রেখো , একবার , শুধু একবার
পাবে সে সুযোগ
সেনয় , স্যানসেনয়, সেমানজিলাফ
এই তিন দেবদূত যাবে তার কাছে
ক্ষমা পাবে ,শর্ত মেনে নিলে
বিপরীতে অপেক্ষায় আছে
অনন্ত বিলাপ ।
অ্যাডামঃ
আপনার করুণার ধারা ,প্রভু
এমনি বর্ষিত হোক
যখন ছিলাম একা
পশুকুল ছিল জোড়া জোড়া -
অন্তরে উঠেছে এক বিপুল আক্ষেপ
আপনার অসীম কৃপায় পেয়েছি সঙ্গিনী
নয়নশোভন
জানি না কী পাপে,কলুষিত আকাঙ্খায়
ভরে ওঠে নারীর হৃদয় !
দুরাচারী সামায়েল প্ররোচনা দিয়ে
নিয়ে গেছে তারে , অন্ধকারে
অশুচি পাতালে আর সর্প-সহবাসে ?
অবারিত নন্দন কানন,স্বর্গসুখ
কী করে সে অবহেলা করে?
কোরাসঃ
রক্ত সাগরের ঢেউ নেচে যায় প্রমত্ত উল্লাসে
ঝরা পাতা হয়ে ওড়ে নিষেধের বাণী
আত্মার অমর গান উচ্চকিত অদম্য হাওয়ায়
জীবন-তরুর শাখা ভরে ওঠে নবীন পল্লবে ।
সামায়েলঃ
দাসত্বের শেকল ছিঁড়েছি
অপার মুক্তির স্বাদ জানি
অভিশাপে ভয় নেই ,নৃত্যের মুদ্রায়
আয় সখি ভরে তুলি শূন্যতার ঋতু ।
লিলিথঃ
যখন সাগরে ওঠে ঝড়
জলপাই শাখা নুয়ে পড়ে
মনে আসে প্রিয় সেই মুখ !
দাসী হতে ইচ্ছে নেই-শুধু
চেয়েছি বন্ধুতা ,সমতার সহজ নিয়মে
স্বেচ্ছাচারী প্রভুর আইন মানবো না
বেঁচে থাকি যতো কাল ।
( তিন দেবদূতের প্রবেশ , সামায়েলের প্রস্হান )
দেবদূতগণঃ
শোনো পাপীয়সী , ঈশ্বরের বার্তা নিয়ে
আমরা এসেছি
যদি সব মেনে নিয়ে ফিরে যেতে চাও ,
শেষবার ক্ষমা পাবে
অন্যথায় প্রতিদিন শতপুত্র করবো নিধন ।
লিলিথঃ
ফিরে যাও প্রভুর দাসেরা ,
মুক্তির নিলীমা ছাড়া
আমি আর কোথাও উড়ি না ।
দেবদূতগণঃ
(স্বগতোক্তি)
সদাপ্রভু নিজের মোহরে
আটকে দেবেন যার বোধের কপাট
কে তার মঙ্গল করে , কে হবে উদ্ধার !
(প্রকাশ্যে)
পতনের পথে যাত্রা যার
প্রভু তার বিপুল সংহার
তিলে তিলে নরক আগুনে
দগ্ধ হ’তে মনে জাগে সাধ ?
লিলিথঃ
নরকের নাম যদি স্বাধীনতা হয়
আমি সেই নরকের ফুল
মৃতের খুলিতে পান করি
বিষহর আনন্দ মদিরা ।
(দেবদূতগণের সরোষে প্রস্হান)
(স্বগতোক্তি)
আমিও চেয়েছি তাকে
পাশে রেখে কাটাতে জীবন
একসাথে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে
প্রভুতো আছেন একজন
আর কোন প্রভু মেনে নিতে
অপারগ আমি
ভালোবাসা কোনো চুক্তি নয়
এ তো এক মুক্তির সনদ ।
জিহোভাঃ
(অ্যাডামকে)
আমার থেকেই আসে সকল ক্ষমতা
যাকে ইচ্ছা ধন দেই , কেড়ে নেই
কখনো আবার
মাটির খেলনা ভেঙে গেছে
তাই নিয়ে এতো মনস্তাপ ?
যে নারী স্বামীর থেকে নিজেকে পৃথক
ভাবে ,দুঃশীলা সে নারী নরকে জ্বালানি
এবারে তোমার
বুকের পাঁজর থেকে হাড় নিয়ে
গড়ে দেবো মনোরম নতুন খেলনা
সে তোমার অনুগতা হবে ।
আবার চিত্তে আনো নতুন আমোদ
দুধ মধু সুরার নহরে কেলি কর সুখে ।
অ্যাডামঃ
আর কি সুযোগ নেই প্রভু ,
আর একবার?
জিহোভাঃ
হে উন্মাদ ,প্রলাপ থামাও !
আমার বাণীর কোনো নড়চড় নেই ।
যাও , বালখিল্য আচরনে
জ্বালিও না ক্রোধের আগুন !
(সভয়ে অ্যাডামের প্রস্হান )
দেবদূতগণঃ
তিনিই সর্বজ্ঞ
শক্তিমান তিনিই কেবল
ভুলেও ডেকোনা তাঁর সুমহান ক্রোধ !
ইভঃ
আহা , অনিন্দ্যসুন্দর এই সরোবর !
সাদা সারসেরা উড়ে যায়
সুনীল আকাশে
বৃক্ষেরা পাতারা কভু ঝরে না এখানে ।
অ্যাডামঃ
সবকিছু নিয়মের দাস
স্বর্গের কাননে
ঐ হংসের সারি , দেখো ফিরে আসে
চক্রাকারে অভিন্ন নিয়মে
ফুল-ফল ফলে আছে সকল সময়ে
একটাই ঋতু
দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ি ।
ইভঃ
প্রাণাধিক ,
কেন এই উচাটন , ভোলোনি কি তাকে ?
নিশিথ-রাক্ষুসী সে , রাতের বেলায়
শিশুদের রক্ত পান করে
প্রভুর মহিমা ভুলে ধ্যান করো
পিশাচিনী ,অশুভ নারীরে ?
জিহোভার করুণায় আমাকে পেয়েছো
শয্যায় আনন্দ দেই , যেভাবেই চাও
আমি এক আর্দ্র ভূমি , তুমি তার একক কৃষক ।
অ্যাডামঃ
চুপ করো ,আজ্ঞাবহ নারী !
তেমন উল্লাস কই , রুধিরে উচ্ছাস?
ব্রীড়া নেই প্রতিরোধ নেই
কাদা হয়ে পড়ে থাকো গ্রণ্হের আদেশে !
ইভঃ
কোন্ সর্বনাশ তুমি ডেকে আনো
ভুলের বিলাসে ?
প্রভুর দৃষ্টির অগোচরে কিছু নেই ।
আয়তলোচনা নই , ওষ্ঠে নেই মধু?
বক্ষ দেখে লজ্জা পায় সিনাই পর্বত
তবু তুমি অতীত ভোলো না !
(অ্যাডাম হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা দূরে সরে যায় )
(ইভ কিছুটা উচ্চ কণ্ঠে)
আজ বুঝে গেছি ,কী কারণে
কেঁপে ওঠো তুমি নিদ্রাঘোরে
একা একা সিক্ত হও !
কুলটা রমনী আসে স্বপ্নের বাহনে ।
অ্যাডাম
(স্বগতোক্তি)
জগতের সব রূপ সেই ভ্রষ্টা রসিকার চোখে
ঘন কালো চিকুরের জালে
ঢেকে আছে মুখ
ওষ্ঠের ওপরে তিল চুম্বনের পিপাসা জাগায়
নিম্ননাভি শ্রোণীদেশ জ্বলন্ত মশাল
ঘোটকীর মতো তার দীপ্ত চলাফেরা ।
ইভঃ
ভালো কি বাসিনি আমি?মমতায় বেঁধে রাখি
চোখে চোখে থাকি
তবু কেন পাই নাই মন !
১ম দেবদূতঃ
কিসের উৎসবে আজ মেতে আছে লোহিত সাগর?
অন্ধ ড্রাগনের পুচ্ছে আলো জ্বলে ,অযুত হাঙর
উঠে আসে তীরে !
নলখাগড়ার বনে ঝোড়ো হাওয়া খেলে
শঙ্খনাদ ভেসে আসে কানে ।
২য় দেবদূতঃ
এখনো শোনোনি সেই আশ্চর্য ঘটনা?
অভিশপ্ত লিলিথের বিবাহের আয়োজন আজ ,
পাত্র সেই পাষণ্ড পামর - সামায়েল ।
খুলে গেছে নরকের সকল দরোজা
পিশাচেরা খোলস ছেড়েছে ।
১ম দেবদূতঃ
হায় , ভেবেছো কী পরিণাম ?
লাখো লাখো পাতক সন্তানে
ভরে যাবে পৃথিবীর ভূমি !
(এমন সময় তীব্র আর্তনাদ ও নারীকণ্ঠে বিলাপের শব্দ শোনা যায় , একটু পরেই একদল দেবদূত উড়ে আসে ।)
২য় দেবদূত
( আগতদের উদ্দেশ্যে)
পবিত্র সাথীর দল ,
ওখানে কিসের শব্দ ,ক্রন্দনের স্বর?
একজন উড়ন্ত দেবদূতঃ
সামায়েল পেয়ে গেছে সমুচিত সাজা
সদপ্রভু জিহোভার শাপে
আজ থেকে নপুংসক ,মিটে গেছে বিবাহের সাধ ।
সেই পাপিষ্ঠার কান্না শোনো
নিজের রক্তেই আজ হোলিখেলা করে ।
(দেবদূতদের উল্লাস)
কোরাসঃ
যতদিন সৃষ্টি আছে স্রষ্টার ইচ্ছায়
এই অভিশাপ থেকে যাবে
মরুর নির্মম ঝড়ে , পশু সহবাসে
কেটে যাবে দিন
পাতালের অন্ধকারে মৃত্যুদেবী
সাথী হবে তার
পুরুষের নিশাস্বপ্নে
কামপ্ররোচনা দিয়ে যাবে
কখনো সর্পের বেশে ,ডাইনির বেশে
উইলো শাখায় দেখা দেবে
হায় , প্রথমা রূপসী
প্রথম দিনের আলো
মুক্তির দিশারি হতে চেয়ে
বরণ করেছে সেই চির অন্ধকার !
5 comments:
অপূর্ব ভাই ! ভালোলাগা প্রকাশের ভাষা নেই ।
কবিতা বা পদ্য যাই বলি না কেন- আমার ব্যালার্ড বলে মনে হলো !
অসাধারণ! খুব ভালো লাগলো ফারুক ভাই!!!
এক কথায় অনবদ্য...... অপূর্ব!!!
darun!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন