মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১২

উদয়ন ঘোষচৌধুরি

পোড়ামাংস, কুকুর, হাতঘড়ি, অন্যান্য


[ অনেক জায়গায়তেই দেখিঃ ‘কবিতা কেন লিখি?’-র ওপর কাঁড়ি কাঁড়ি পাতা খরচ। যদি এটাই কাউন্টার হয়ে যায়? বলা হয়ঃ ‘কেন পড়ি?’ সত্যিই তো, আমি কেন পড়ি কবিতা? ]
এই যে চারপাশে তাপ্পি-মারা জীবন – ওই যে লোকটা – প্রচুর তেল মেরেও প্রোমোশনের গুড়টা পিঁপড়ে চেটে নিল বলে, মুখ গোঁজ করে আছে অফিসে; ওই যে ছেলেটা – টিউশনির টাকায় মাসে একদিন মুরগির মুরোদ হয় না বলে, প্রেমিকা বলেছে ‘ধুত্তোর’; ওই যে বুড়োটা – উদাস ব্যালকনিতে অপেক্ষা করছে, ছেলের বৌ কখন সিরিয়াল-শেষে এক কাপ চা বানিয়ে দেবে; ওই যে বউটা – লেডিস স্পেশালে ঝুলতে ঝুলতে চার্চগেট যায়, সন্ধে উতরোলে ধুঁকতে ধুঁকতে ফিরে বানায় রাত্তিরের রুটি ও বিছানা; ওই আরেকটা ছেলে – পঞ্চাশ টাকা বেশি পাবে বলে, সুপারভাইজারের পেছুপেছু ঘোরে; আর এই যে আমি – সর্বঅক্ষমতা-সমন্বিত চার হাত-পায়ের মানুষ, নানা জায়গা থেকে নিজেকে ছিঁড়ে নিয়ে, সারা দিন (বা রাত) পরে হাঁ-করা
একটা বিল্ডিং-এ ঢুকি, নির্দিষ্ট একটা নাম্বার মুখস্থ করে বুঝতে পারি, এই চার দেয়াল ও দরজাটি আমার, যার ভেতরে একটা হলুদ বাল্ব দমবন্ধ তাকিয়ে আছে, দিনান্তের খাবার নিয়ে বসছি তার মুখোমুখি, এতটাই বিরক্ত যে চিবোতেও জুত পাচ্ছি না – আর কেউ যেন এসে থালার পাশে লিখে যাচ্ছে -
“যে ছেলেটা দিন আনে
সে কি করে দিন খেয়ে ফেলে?
একটা আস্ত দিন তার কাছে
হেরে গিয়ে অন্ধকার হয়েছে তাহলে?”
(তনুজ নিয়োগী)
দিন আনি, দিন খাই – এরকম কতজনই তো বলেন। দিন কি সত্যিই খেয়ে ফেলা যায়? হ্যাঁ, যায়। দিন তো আমারই বেঁচে থাকার অংশ। আর সেটা বিক্রি করেই তো আমার আজকের ভাত ও তরকারি। আজকের দিনটা আমি কেন বাঁচলাম? কেন নানা জায়গায় লাথি-ঝ্যাঁটা-গালমন্দ মেখে ঘুরলাম? উত্তর খুব সহজ – খাওয়ার জন্যে। ওপরে রেখে যাওয়া লাইনগুলোতে দেখি, দিন হেরে গেছে ছেলেটার কাছে। গোটা একটা দিন মুখ লুকিয়েছে কালো অন্ধকারে। অন্ধকার হয়ে-যাওয়া গতদিন ছেলেটাকে দিচ্ছে আহার্য। বিনিময়ে ছেলেটা হয়ে উঠছে আলোময়। প্রস্তুত হচ্ছে আগামী দিনটাকে খেতে। পাচ্ছে পরবর্তী আরেকটা লড়াইয়ের স্পর্ধা। ‘অন্ধকার’ শব্দটির এত পজিটিভ রং এর আগে কেউ তো বলেনি আমায়!
এই যে অমোঘ খাওয়া – খেতে বসা – কেমন সেই ছবিটা? কেমন দেখতে এক ক্লান্ত ক্ষুধার্ত?
                 “আমারই মাংস পুড়ে
                               লাল লাল ভাত হয়, ভাত
                 পাগল যেভাবে খায়
                               আমার মাংস খাই আমি
                 আহা ভাত, প্রিয় ভাত
                              তোমাকেই খাব বলে, পুড়ি”
 (প্রবীর মণ্ডল)
আমারই মাংস পুড়ে ভাত? হ্যাঁ, তাইই তো। শ্রম তো আমারই মাংস। মেধা তো আমারই অংশ। সেইসব বিক্রি করেই তো জুটেছে এই আহার্য। চরম খিদের মুহূর্তে যেটুকুই জোটে, তাই অমৃতভোগ। সুস্থতার মূল উপকরণ যে খাদ্য – তা না জুটলে আমি তো পাগল হবই। আর যখন জোটে? খুশিতেও কি পাগল হয়ে যাই না? আর পাগল যখন খায়, তখন তার খেয়াল নেই
দিগ্বিদিক। সে লাল লাল ভাত খাচ্ছে। ভাত ‘লাল’ কেন? কারণ, ওটাই আমার পোড়া মাংসের রং। সহজ ভাবে, কিছু গ্রাম্য চালের ভাত এমন রঙের হয়। কিন্তু, আমি যদি তা না জানি? অসুবিধে নেই। আমি কি দেখিনি, ফুটপাথের ওপর একটা নোংরা লোক, হোটেলের ফেলে দেওয়া ঝোল আর এঁটো ভাত পেয়েছে একটা প্লাস্টিকে, হামলে পড়েছে সে ওই রগরগে লালের ওপর, সাপটে নিয়ে খাচ্ছে? অথবা, এই ছবিটাঃ
        “যখন ভাতের জন্যে এতো লড়াই
        দুমুঠো ভাত পেলে গপগপ খাই।
        কেউ কেউ সারমেয় ভাবে।”
(প্রবীর মণ্ডল)
ক্ষুধার্তের খাওয়ার ভঙ্গিতে এসে গ্যালো একটি কুকুরের মুদ্রা। কুকুর যেমন খিদের সময় খাদ্য ছাড়া আর কিছুই দেখতে চায় না, আমিও তেমনই। শেষ লাইনের আগে এখানে যে স্পেসটা বসানো হল – মনে হল, খেতে খেতে কুকুরটা একবার যেন ঘাড় তুলে দেখে নিল আশেপাশে। যেমন আমিও ক্রমশ দেখে নিতে শিখি - পরীক্ষার হলে, ইন্টারভিউ টেবিলে, কফিশপের ডেটিঙে – কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই তো? আচ্ছা, ওই স্পেসটা কি কাউকে চুপ থাকতে বলে? যারা অক্লেশে নিয়মিত খেতে পায় – তাদের কি বলে, চুপ করে দ্যাখো, খাওয়ার ছবিটা ঠিক কিরকম? না কি, কবি নিজেই একটু চুপ থাকলেন, একটা অবজ্ঞার দীর্ঘশ্বাস নিলেন? অথবা, স্পেসটা রেখে বোঝানো হল, মানুষ এভাবেই খায়, এই শূন্যস্থানে - যে জায়গার কোনও ক্যাটালগ হয় না, ঠিক ওখানেই খায় মানুষ - নিজেরই শ্রম পুড়িয়ে। কি কি ভাবে পোড়ায় সে?
        “গরম ভাতের স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে পড়ে ছেলে
        মা গেছে তার নুন আনতে পান্তাভাতটি ফেলে।
        ......
        তোরা কে জামাই দেখবি জামাই আয়
        সোমত্ত সব মেয়েগুলো ধর্মতলায় যায়”
(তনুজ নিয়োগী)
নিজের খাওয়ার পাশাপাশি এসে যায় পরিবারের প্রতিপালন। সন্তানের খিদে। না-চাইতেও চলে আসে যে সন্তান, নিজে অভুক্ত থেকেও খাওয়াতে হয় তাকে। এই লাইনগুলো আমাকে বলছে এক সহজ ও আদি বাস্তব – পেট চালাতে মা যখন নিজেকে বিক্রি করতে যায়। আর অদ্ভুত স্যাটায়ার করে এখানে বসানো হল ‘ধর্মতলা’-র নাম, যা প্রতিফলিত করল আমারই অবস্থানকে। অরুনেশ ঘোষের ‘যাত্রা’ অথবা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অন্নপূর্ণা’ গল্পের মা যেন দাঁড়িয়ে এই ঢাকঢাক গুড়গুড় ধর্মতলার হাটে। অরুনেশ তার ডাইরিতে লিখছেনঃ “যৌনতার কাছে সব সম্পর্কই বোধহয় ফিকে হয়ে যায়, বিশেষত বোধহীন মানুষের যৌনতা।” মানুষ মূলত কোথায় বোধহীন? কোন কোন খানে? আদি ও অকৃত্রিমতায়, খিদের কাছে - যখনও যৌনচেতনা জাগেনি, তখন থেকেই। এখানেই মা বিক্রি হয়ে যায়। সন্তান বিক্রি হয়ে যায়। শুধুই কি শরীর? প্রতিনিয়ত নিজের চেতনা, বোধ, যাপন, সময়, সম্পর্ক – আরও আরও অনেক কিছু বিক্রি করি না কি? মনে হয়, দারিদ্র্যই জন্ম দ্যায় প্রকৃত নীতিহীনতার, মূল্যায়ন অবক্ষয়ের – দিদির দয়িতকে আত্মসাৎ করে ছোটবোন (‘মেঘে ঢাকা তারা’ / ঋত্বিক ঘটক); তরুণী মেয়েকে টাকা ধার করতে পাঠায় মা আর বেড়াতে-আসা আত্মীয়ের সামনে আপ্রাণ লুকোয় (‘কলকাতা ’৭১’ / মৃণাল সেন); বন্ধ মিলের অসহায় শ্রমিক আফশোস করে, যদি তার বউটা কারও কামনা কাড়তে পারত, হয়ত কটা রুটি জুটে যেত (‘সিটি অফ গোল্ড’ / মহেশ মঞ্জরেকর); অদৃষ্টের টাইর্যা নি বাবাকে বাধ্য করায় পঙ্গু মেয়ের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে (‘কাঞ্জিভরম’ / প্রিয়দর্শন); বা, সাদামাটা মধ্যবয়স্কা সংসারী বেছে নিতে চায় খুনি মালিকের অবৈধ প্রেম (‘থ্রি মাঙ্কিস’ / নুরি বিলজে সিলান)। অস্কার ওয়াইল্ড যেমন বলেনঃ “There is no such mystery so great as misery” - খিদের বা অভাবের আসল রূপ কতটা ভয়ঙ্কর ও নির্মম হতে পারে, তা হয়ত আমরা কেউই এখনও জানি না। আমাদের যাবতীয় সমাজ, শিল্প, বিপণন, বুদ্ধি, চাতুর্য, আইন, প্রেম – সব কিছুই উলঙ্গ করে দেয় এই সারমেয় ক্ষুৎসত্তাঃ
   
        “দামোদরের হাঁড়িকুঁড়ি ধর্মে রাখে মতি
        হাটের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সন্তান-সন্ততি।”
(তনুজ নিয়োগী)
আর এই খেতে খেতে, খাওয়াতে খাওয়াতে, প্রতিপল মরতে মরতে - যখন সত্যিই ছেড়ে যায় প্রিয়জন? তখন কি বলে আমার সুবিধাবাদী মন?
   
        “আমার ভাতের জন্যে পুড়ে গেলে তুমি,
        এখনও ভাতের গন্ধে এত লালা আসে!”
(অঞ্জন চক্রবর্তী)
এতক্ষণ দেখছিলাম, নিজের মাংস পোড়ানোর গল্প। কিন্তু আমার কোষকে পুষ্টি দেওয়ার জন্যে আমার পিতার মাংসও তো পুড়েছে। বাবাকে তো কতভাবে দেখেছি, অভাবকে আনন্দের মোড়কে মুছিয়ে দিতে – নিশ্চিত ধসের সামনে দাঁড়িয়েও ছেলেকে খুশি রাখতে সে ঢুকে পড়ে রইস রেস্তোরাঁয়, পরোয়া করে না পকেটের (‘বাইসাইকেল থিফ’ / ভিত্তোরিও দে সিকা); অথবা, একবাটি জলে পাউরুটি ডুবিয়ে খেতে খেতে ছেলের সঙ্গে দিব্যি চালিয়ে যায় সুস্বাদু মাংসের গল্প (‘চ্যাপলিন’ / অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়)। এখন আমি এই যে খেতে বসেছি, থালায় ছড়িয়ে আছে যে শস্য – সেখানেও কি লেগে নেই জন্মদাতার অস্থি-মজ্জা-মেদ? আর সেই গ্রাস গলা দিয়ে নামাতে লালা ঝরছে আমার। কি সাংঘাতিক বাস্তব, তাই না? যতই শোকাতুর হই, যত প্রিয়জনই হারিয়ে যাক না কেন – খিদেই আবার আমাকে সব ভুলিয়ে দ্যায়। খিদেই কি তাহলে আসল সান্ত্বনা? আচ্ছা, এখানে ধরা যাক, কবি নয় - শুধুই আমআদমি। কি বলছে সে পিতৃবিয়োগের পর?
“বাপের থেকে টাকা বড় – মানতেই হবে! আগুন নিবতে না
নিবতেই আমাকে বেরোতে হয় সম্পদ সন্ধান ও নবীকরণে।”
(অঞ্জন চক্রবর্তী)
সম্পদ সন্ধান থেমে যায় না। যেতে পারে না। কারণ, আমাকে যোগাতে হবে নিজের ও পরিবারের আহার। যেভাবে আমার পিতা পুষ্ট করেছেন আমাকে, সেই একইভাবে খাওয়াতে হবে আমার সন্তানকে। আমার মৃত্যুর পর সেও আর দেরি করবে না নবীকরণে। কারণ, দেরি করলে চলে না। দেরি করলে পিছিয়ে যেতে হয়। পিছিয়ে যাওয়া-টা লজ্জা। সামাজিক ও পারিবারিক – দুভাবেই। তাই, যেমন করেই হোক, হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে চলি আমি। বাঁচতে-থাকার এই বাস্তবতায় একটা হেঁচকি কি উঠে আসে? হেঁচকি ও কান্না সামলে আবার সেই লোকটারই চলমানতা -  
“দেখি বেশ দিন কেটে যায়
কেটে যায়, রক্ত কই?
তোমাকে ভুলতে হবে
একথা স্বীকার্যই।”
(অঞ্জন চক্রবর্তী)
আচ্ছা, আমি যখন ছোট ছিলাম? মনে হতো, কবে বড়ো হব! বাবার মতো বড়ো! এই ‘বড়’ কনসেপ্টটা একটি শিশুর কাছে বাবাকে দেখেই জন্মায়। দেয়ালে টাঙানো বাবার জামা, আলমারির নিচে রাখা জুতো, ছাইগর্ভের সিগারেট – এসবই খুব লোভনীয় লাগে। তার কাছে এসবই এক পৃথিবী।
    “মৃত্যুর পর আমার হাতঘড়ি খুলে নেওয়া হবে
    কেননা মৃত্যু হলেও আমার হাতঘড়ি থেমে যাবে না
    ......
    ঘোড়া আর কচ্ছপের মত আচরণ করে ঘড়িটা
    টিটুর মজা হবে”
(অতনু ভট্টাচার্য)
আন্দাজ করি, ‘টিটু’ এখানে সন্তানের নাম। বাবার ঘড়ির দিকে তার খুব লোভ, যেমন ছিল আমারও। বাবা এখানে বলে যাচ্ছে, তার অনুপস্থিতিতে ‘টিটু’কে হাতঘড়িটা দিতে। বাবা জানে, কেউ না থাকলেও সময় কখনও থামে না। প্রথম দু’লাইনে এখানে সেই অমোঘ উচ্চারণ। তারপরই বলা হচ্ছে, ঘড়ির অদ্ভুত আচরণের কথা। দুই বিপরীতধর্মী প্রাণীর তুলনা রাখা হল একইসঙ্গে। সত্যিই তো, ঘড়ি কি নিজের নিয়মে চলে? সে তো শুধুই যন্ত্র। আমারই পুতুল। তাই সে কখনও ধাবমান, কখনও মন্থর – মালিকের মর্জিমাফিক। এরপর “টিটুর মজা হবে।” পিতার মৃত্যুতে সে কেন আনন্দ পাবে? এখানে কি বাবা নিজেই একটু মুখ টিপে হাসল? কেননা, বাবা জানে, এবারই শুরু হবে সন্তানের আসল ক্যারিশমা। এবার সে আসল পৃথিবীর মুখোমুখি। সময়কে যখনই যন্ত্রে বেঁধে দেওয়া হল – মানুষ শুরু করল যন্ত্রের দাসত্ব – ভুলে গ্যালো রং রস রূপ – তখন থেকেই আরম্ভ ‘বড়’ হওয়ার নামে আসলে ছোট হতে থাকা। বাবা তা জেনে গেছে। আর ‘টিটু’ যতদিনে জানবে - তখন?
        “অভিভাবকহীন হওয়ার মজা
        টের পাচ্ছি, স্বাধীন, ধেই ধেই,
        বিস্মরণকারণবারি ঢালি
        তোমার, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তোমার খুলিতেই!”
(অঞ্জন চক্রবর্তী)
রাগ কি হত না বাবার ওপর? ছোটবেলায়? খুবই হত। নানা আদেশ উপদেশ নির্দেশের ঠ্যালায় ওষ্ঠাগত। কিন্তু এখন আমি স্বাধীন। এই স্বাধীনতার কষ্ট বোঝাতে বসানো হল “মজা টের পাচ্ছি”। বিস্মৃতির মদ ঢেলে নিতে হচ্ছে পিতারই খুলিতে। এই খুলি কোথায় পাবো? নিশ্চিত, শ্মশানে। ওই চিতার পাশ থেকেই শুরু আমার স্বাধীন ধেই ধেই – যে স্বাধীনতার মানে খোলা আকাশ, মানে ছাদ নেই, আবরণ আচ্ছাদন বর্ম নেই – এবার পৃথিবীর মুখোমুখি আমি একা। এই একাকীত্ব মুছতে আসছে আমার সন্তানঃ
    “......
    ভালবাসা জমা হলে যে সন্তান হয়।
    হা ঈশ্বর দুটো ভাত চাইব না, শুধু
    আমারই মত সোজা আয়ুরেখা দিও।”
(প্রবীর মণ্ডল)
চিরাচরিত দুধভাতের কথা নয়, আমার প্রার্থনা – “আমারই মতো সোজা আয়ুরেখা”। কারণ, বোধ হয়, মূল বিশ্বাসে, আয়ুরেখা সটান থাকলে মানুষ জুটিয়ে নিতে পারে আহার। এর থেকে বেশি আর কি চাই? ওই যে লোকটা, ওই যে বউটা, ছেলেটা, বুড়োটা – ওদের সকলের জ্যালজ্যালে জীবনে ওরা আর কি চায়? আমিও তার বেশি কিছুই চাই না। আমি কবিতা বুঝি না। কবিতার গোষ্ঠী-আন্দোলন-দশক – এসব কিছুই বুঝি না। আমি বুঝি, নিরন্নের গ্রাসে লেগে থাকে যে চিরন্তন তৃপ্তি – ওটাই সত্যি, ওটাই কবিতা। আমার ভাতের গায়ে ওদেরই তৃপ্তির দাগ লেগে থাকে।
মেনু কার্ডঃ
• নিরাকৃত ভ্রাম্যমাণ তুমি / অতনু ভট্টাচার্য / অরন্ধন, পুরুলিয়া
• সান্ধ্যশিলালিপি / তনুজ নিয়োগী / কণিকা, কলকাতা ১৪৬
• দগ্ধ পদাবলী / অঞ্জন চক্রবর্তী / অদিতি, উঃ ২৪ পরগণা
• আহা ভাত প্রিয় ভাত / প্রবীর মণ্ডল / রূপকথা, দঃ ২৪ পরগণা

1 comments:

খেপচুরিয়ানস্ বলেছেন...

Amalendu Chanda১৬ আগস্ট, ২০১২ ১২:৪৫ pm

Ezra Pound' er bhasay - "Good writers are those who keep the language efficient. That is to say they keep it clear and keep it accurate.."
সব গুণ বর্তমান গোটা লেখার শরীরে। শুধু শেষ দুটি লাইনে এসে সেটা যেন হঠাৎ ইন্টেন্ট এর সনদ হয়ে গেল। লেখা হয় পাথকের জন্য, সাধারন, অসাধারন অতি সাধারন - কিন্তু ইন্তেন্ত এর আলোচনা বা ঘোষণা স্পেসালিস্টের সাব কালচার। এতো কথা বলার কারন যে উড়াল এই লেখার গোটা শরীর জুড়ে আছে, সে ডানার বিস্তার আর প্রাবল্য ওইখানে যেন হঠাৎ মুড়ে গিয়ে থপ করে বসে পড়ল।
সেটুকু বাদে এ এক অনবদ্য লেখা।
উত্তরমুছুন
ujjiban১৮ আগস্ট, ২০১২ ৮:১৯ pm

nijasya vasha vangimay UDAYAN er ai prayas khub valo laglo... valobasa jeno....