সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম সংখ্যা

ইচ্ছেবাড়ী - ভিতপুজো ও শুরুর কথা


  
অবশেষে শুরু হল তবেপ্রথমে ভিতপুজো - তারপর যাপন। "ইচ্ছেবাড়ী" - বনদেবতার কাছে জোড়া মোরগ মানত রেখে গহনে পুঁতলাম ইচ্ছের বীজ - ক্ষ্যাপামির অভয়ারণ্যের একেবারে মাঝবরাবর এই বসত-ভিটাতাও আবার সেই পাগলা রঙে রাঙানো - তাতে সবুজ হলুদ হাকুচ কালো পাতা, বাদামি ধূসর শুকনো ডালের ডাঁই, দাবানলে উড়ে পুঁড়ে যাওয়া ছাই, এমনকি, গায়ে গায়ে ঘেষা বিরোৎ আর আখাম্বা গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে ক্ষীণ সুঁড়িপথ বেয়ে হঠাৎ ছুঁয়ে ফেলা অগভীর আধবোজা ডোবার পলি... সমস্ত - সব! সমস্ত রঙ এর দেওয়ালে মিশেছেআর তাই ইচ্ছেবাড়ীর কোন নির্দিষ্ট রঙ নেই - চিত্তির বিচিত্তির মায়া রঙের পাগলা প্রান্তরে আমাদের আস্তানা কেমন অদ্ভুত মানিয়ে গ্যাছে
ইচ্ছে তুমি দেয়াল ধরে লেখো
অন্য অন্য প্রচুর আঁকিবুঁকি
সমস্ত সব দেয়াল জুড়ে আছে -
তারই মাঝে ইচ্ছে তুমি থাকো... 
এদিক সেদিক মেলা জায়গা আছে 
বন্ধুদের বসতে বলি এই মায়াময় দাওয়ায়, পাতাপুতি, শুকনো ডাল, কাগজের টুকরো, শুকনো ধুতরো ফল, সমস্ত যা পেরেছি ঝাঁটা দিয়ে পরিষ্কার করে রেখেছি... আর দু এক কুঁচি ধুলো যা এখনো লেগে আছে - তা থাকুক নাহয়... ঐ ধুলোতেই প্রতীতি অনন্য রূপ নেবে - অভিনব হয়ে ধরা দেবে পরিচিত প্রেম - বিষাদে উঠবে ডেকে নেপথ্যে ডাহুক!
বাড়ী তো হল - এবারে? এবারে আবার কি... এবারে সপরিবার ঘরে এসে দিব্যি সেঁধোবে মনতবে হ্যাঁ - সে এক জমানা ছিলো বটে যখন জনৈক রসিক রায় একই সাথে চার সতীনে আয়েশ করতেন পিতা পিতৃব্যের চক মিলানো কোঠিতে...    
আর এখন? এখন সে রামচন্দ্র নেই - বা থাকলেও তিনি বন্দী রয়েছেন ঘরের কোণে - আন্তর্জালের উদ্বাহু আলিঙ্গনেপৃথিবী তো এখন ভেতরবাগে! ক্রমশ ছোট হতে হতে অবশেষে আটকে আছে কিবোর্ডের উপর আঙ্গুলের টরে টক্কা শব্দে! এখন জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে - আন্তর্জালে ডালপালা মেলেছে বহুমাত্রিক সম্পর্ক সব - নানা তল - অদ্ভুত সমস্ত সব ত্রিকোণ চতুষ্কোণ! এমন ঘূর্ণাবর্তের ঘোরে সময় কিন্তু অর্থহীন!  স্থান কাল পাত্র যে যার জায়গায়...
আমরা বরঞ্চ আলপথ ধরে হাঁটি আর এক মহাকাশ অন্ধকার নিয়ে একে অপরের সাথে জাহান্নামের খেলায় মাতুক বিভিন্ন সময়-কেলাশে বন্দী উপগ্রহ সব... পরাবাস্তব - অধিবাস্তব এবং ঐন্দ্রজালিক বাস্তবের কল্পসকল...  

নন্দিতা ভট্টাচার্য্য

একটি অনুবাদ কবিতা

নন্দিতা ভট্টাচার্য্যের মূল বাংলা : অথৈ জোয়ার

অথৈ জোয়ার ~~

পিঠে খড়ের কুঁজ নিয়ে বসে
আছে হেমন্তের বিরান মাঠ ,
কোথাও কোথাও আবার
হলুদ সর্ষেফুলে চনমনে
গর্ভবতী মাটি ,পেট খালি
থাকে না মাঠের ,ঋতু
চক্রাকারে গর্ভ আসে
বার বার ,ভরাজোয়ারি
অথৈ যৌবন অনন্ত নারী ।

মনোহর দত্তের ভাবানুবাদ : অফুৰন্ত জোৱাৰ

অফুৰন্ত জোৱাৰ

পিঠিত শুকান খৰিৰ কুঁজ হৈ
বহি আছে
হেমন্তৰ নিশ্চল পথাৰ,
ৰবাত কৰবাত আকৌ
বিয়পি পৰে
সৰিয়হ ফুল যেন হালধীয়া অস্থিৰতা,
গৰ্ভৱতী মাটি,
পথাৰৰ গৰ্ভত শূণ্যতা নাথাকে, ঋতু
চক্ৰাকৃতিৰে গৰ্ভলৈ আহে
বাৰে বাৰে, ভৰুণ যৌৱন
অফুৰন্ত জোৱাৰ অনন্ত নাৰী|

স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়

তোমার বাড়ি: ঘুম ও জেগে ওঠা - ১
ঘুমন্ত শরীর থেকে আরো এক শরীর জেগে উঠে
পাঁচ ডিগ্রি কোন মেপে গাছতন্তুর
সংকোচন -প্রসারনের ছায়া খোঁজে
স্তব্ধতারা জন্মলগ্নের রঙ বদলায়
নিজস্ব গন্ধ থেকে দূরে সরে গিয়ে
চাঁদরাত অসম্পূর্ণ বৃত্তের গায়ে লতানো সোনাঝুরি
আমি স্বপ্নকে ছুঁতে ছুঁতে চলে যাই প্রলম্বিত
রশ্মি রাখা সেইসব পরচর্চামগ্ন
ফিসফিসে ঝাউগাছের কাছে

শহীদুল ইসলাম রিপন

সহজ কবিতা
১.
জীবনের খেরোখাতা থেকে তুলে নিয়ে আঙ্গুল
বারবার খুঁজে ফিরি চুলচিরে, কি কি ছিল ভুল;
নিজের অহংটুকু মুছে দিয়ে তারপর থামি,
ওটুকু আমার থেকে বাদ দিলেই আসল আমি

২.
এক দেশে দিবা হলে আর দেশে নামে কালো নিশি
বিধাতার এই রীতি মেনে চলে ভানু আর শশী;
ক্ষণিক আঁধার দেখে যদি তুই পাশ কেটে যাস,
কিভাবে দেখবি বল অমল আলোর উদ্ভাস?!

৩.
এমনি হবার কথা ছিল, বিধির খাতায় ছিল লেখা,
যে-কারণে মাতার-পিতার বীজের ভেতর হলো দেখা;
নিয়তির রায় পাল্‌টাতে শিখছি সাঁতার জোর উজানি,
নইলে খ্যাপা-কামের মোহে ঘুরতে হবে লক্ষ যোনি

৪.
মধ্যদুপুরে সবার অলখি চেয়ে দেখি চোখ মেলে
আজব ব্যাপার! সূর্যকে তুমি ঢেকে দিলে কালি ঢেলে;
ভাবি বসুধায় নামালে আঁধার কিবা প্রহসন রচি
কালোর পর্দা সরে গেলে দেখি ফুটেছে তাজা কুরচি

৫.
আমি যে ভীষন নাদান পুরুষ, তুমি তো ভারি চতুরা
দুলে দুলে হাঁটো বলে তাল ধরে নিতম্ব-তানপুরা;
অহেতুক হাসো, খুকখুক কাশো, লাগে খুব অস্থির
দেহ-তটিনীর জোয়ারে আমার ভেসে যায় দুই তীর

৬.
কণ্টকময় এই পথহাঁটা সেই আদিপাপ হেতু
দুনিয়ার মায়া কাটাতেই দেখি পুলসিরাতের সেতু;
স্বর্গোদ্যানে ভালোই ছিলাম নারী, দায়ী শুধু তুমি,
পাঁজরের হাড়,  তোমার কারণে সর্পফণায় চুমি

৭.
পথের ধূলিতে লুটিয়ে দিয়েছি আমি আত্মস্বার্থ,
স্বভাবের দোষে মুদ্রা চিনি নি বলে বেসাতে ব্যর্থ;
সম্বল তাই ভিক্ষার ঝুলি, ঘুরি ভাবের বাজারে ,
সকাল-সন্ধ্যা জ্বালাই আগরবাতি নিজের মাজারে

৮.
কঠিনেতে খুঁজে গলদঘর্ম, সব উদ্যম নাশ
অথচ কঠিনে থাকে না পরমা সহজেতে তার বাস;
হেথাহোথা খুঁজি পুঁথি-পুস্তকে, ছায়াকেই কায়া ভ্রমি
সহজ পদ্যে দেখা দিতে যদি আমার অপরা তুমি

৯.
ফাগুনে আগুন ঝরে পলাশের-শিমুলের বনে
ফের সে-আগুন দেখি অনূদিত হয় মোর মনে;
একাকী কোকিল ডাকে শুনি মরিয়া কাতরস্বরে
সহজ কবিতা শুধু সেই ডাক তর্জমা করে!

১০.
তোমাকে দেখার বড় সাধ ছিল তাই শূন্যে লাফালে
ডোবা পুকুরের গহীন অতল থেকে ক্ষুদে তিতপুঁটি;
সহসা ধেয়ানী বকের ছদ্মবেশে তুমি তারে খেলে
দুইয়ে মিলনে এক হলো, দিলে সাধ-সাধনার ছুটি

১১.
কি নেই আমাতে যা আছে কৃষ্ণ ওই বালিকার মুখে?
ওই চোখ দূরে গেলে মন কেন ভোগে বিষাদে-অসুখে?
পরমার ছায়া মেলেছিঁড়েছেঁনে ভাবকে করে চূর্ণ  ,
বুঝি ওই মুখ ছাড়া কেন আমি এতো অসম্পূর্ণ!

১২.
তিন স্রোত এসে যেখানে মিশেছে তিন দিক থেকে, আহা!
মিশিয়াছে যেথা ত্রিজলা নহরত্রিবেণীসঙ্গম যাহা
যার কথা শুধু শুনেছি অ্যাদ্দিন লোকমুখে, বেশিকম
আজ দেখা হলো চর্ম চক্ষে সেই সরোবর মনোরম

সাজ্জাদ সাঈফ

বাংলাদেশ

অনাগত হাহাকার থেকে গা বাঁচিয়ে নাটমন্ডল, সমাহিত চাঁদ, আড়ি পেতে থাকা পাতা'পুরাণের পথে গোরস্থান কেশর পেলব মাদকতা নিয়ে হতাশ জীবনে কার হয়ে গেয়ে ওঠে ঘুণ তাড়ানোর ব্যস্ততায় জোড়িঘর হারেমখানায় তোমাকে জড়িয়ে ধরার পুরনো অভ্যেস, জোনাকপোকা চালিত ঝিকিমিকি অন্ধকারের মিশেলে নাটকীয় মন'প্রকারে মুছে যাওয়া স্নেহ-বিজড়িত মায়েদের থানে গন্ধ মাখা শেফালি ফুল'রঙে তড়িত করে, জীবনেশ্বর সমীপে কারু পল্লবে সুজলা সুফলা বাংলাদেশের মাটি ........

সরদার ফারুক

কবি

বৃষ্টির ফোঁটায় আবাহন ,
বিসর্জন ঘন কুয়াশায় -
সব প্রেমিকের সমান বয়সী কবি
অভিমানে ছিঁড়ে ফেলে উপবীত -
সময় হয়েছে তেতো সিরাপের স্বাদে
ঠোঁট ভেজানোর ।
তোমাদের কুমারীরা নিরাপদ ছিলো
ঘরের লক্ষীর দিকে বাড়ায়নি হাত ;
তোমাদের ফসলের ক্ষেতে
কাকতাড়ুয়ার বেশে, রোদে জলে
দাঁড়িয়ে থেকেছে ।

রুদ্র হক

আগন্তুক ভূত

নদীতে বিষ ঢেলে দাও
 
বিষে নীল হয়ে গেলে নদী, স্নানে যাবোসূর্যোমন্ত্রে শরীর ভাসাবো জলেহেসে খেলে মরে যাবো তারপর.. হলুদাভ বিকেলের সোনালু ফুল হয়ে যাবোঅথবা সামর্থবান গাছ- অর্জুণ নয় গর্জণ হবোতার কাঠে নৌকো বানিয়ে আমাকে নদীতে নিয়ে যাবে মাঝিফের জলের ভেতর প্রান মিশে যাবেএকবার নদী হয়ে গেলে পর স্নানরত নারীদের সাথে তীরে তীরে মিশে যাবোযোনিমূলে ছলকে দেবো ঘা.. জোনাকীর টিমটিমে আলো নিয়ে শিকারীর চোখ-দস্যুর চোখ তাড়িয়ে ফিরবে মাছ- ধনীদের গাঁ!তাদের হাত ধরে একদিন নদী ছেড়ে চলে যাবো..ধরো, কিশোরীর নাক থেকে স্বর্ণের ফুল কেড়ে নিতে গেলে কি হবে মিলালে আর কিশোরীর দেহেমন নিয়ে যাবো তার পাটক্ষেতে- যুবকের সাথে- যুবকে মিলাবোযুবকের হাত ধরে একে একে তারপর কিশোরীর চোখ শহরে কি গ্রামে- প্লাবনে কি ঝড়ে মিশে যাবেধরো, যুবকের হাত ধরে সীমান্ত ঘুঁচে গেল পৃথিবীর বুকেপরিব্রাজক পা প্রসারিত হলো ফুলে ফুলে ঘ্রান গাঢ় হলো আরোরাজা-রাণী হয়ে গেলো যুবক কিশোরী..!
 
গর্জণ কাঠে ফের ভেসে গেলো তরী..

পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত

জুবিনের নিভৃতগৃহ -১

কবি চমৎকার বাতাস ভরে নিলেন পেনড্রাইভে
পকেট ভর্তি সমকাল ঘুমিয়ে মুখর আহা জিরাফের জীবন
কফিনের পেরেক নির্বিচার ইডিওলজির স্ববিরোধিতায় ঠকাঠক ঠকাঠক
আমি রচনাকাঠামোয় বুঁদ জুবিন তারুণ্যের উপন্যাসে নতুন জার্নাল
বাঙলা কবিতায় ওরিয়েন্টালএক্সপ্রেস আসলে খেজুরের রস
আমার ফ্রেমবদ্ধ পাখিটিকে স্বপ্নচারী করো
বিষাদ-খচিত মানুষের কাছাকাছি রাখো ও জুবিন দুয়ার খুলেছি...

প্রীতম কুমার রায়

অনধিকার চর্চা

বারুদের গন্ধে গন্ধে ছুটে এলাম রান্নাঘরে
কতোরকম যন্ত্র, মশলাপাতি-
আঁচলে হলুদ লাগিয়ে বাটনা বাটছে কেউ
কেউ গরম তেল বাঁচিয়ে মাছটা-
আলুর চোঁচা বঁটির গা থেকে
 
উড়ে আসছে- উল্কাপাতের মতো;
আমি আঁশ বটির ধার পরীক্ষা করতে গিয়েই
 
রক্তারক্তি!

লেগে গেল যুদ্ধ...

শামিয়ানা ছিঁড়ে, ঘরকন্না উল্টে
 
শেষে এক লাফে রেডক্রস
টেবিলে শান্তি বৈঠক, এলো অধিকার ভঙ্গের নোটিশ, আর
 
আমার থালা ভর্তি যুদ্ধের ফসল!

প্রবুদ্ধসুন্দর কর

ফেরা         

প্রতিটি ফেরার দৃশ্য স্তব্ধতাখচিত

তোমার অর্ধনমিত মুখে রাষ্ট্রীয় শোকের ছায়া

দিকে দিকে রাষ্ট্র হবে, এই ভয়ে, এ দৃশ্যের কথা কাউকে বলিনি

অসহায় এই ফেরা, স্তব্ধতার তোলপাড়, তবু টের পেয়েছিল

ঝোপজঙ্গল, পাহাড়ি বাক, মেঘ আর নেশাগোধূলির চাঁদ

মজনু শাহ

রাতের অর্গান
তবু আমি সেই রতিক্লান্ত তপস্বীর কাছে ফিরে আসি, গঞ্জিকা সেবনের অবসরে গেয়ে ওঠে যদি, ‘আঁখি ঝরে---

বালুতীর জুড়ে, অনেক ছড়ানো তাস, ধর্মপ্রহরীর দল খুঁড়ে চলে ট্রেঞ্চ, কখনো উল্কাপাত দেখে বোবা হয়ে গেছি আরও, গাছের আড়াল থেকে বলে কেউ, এখানে লুম্পেনবিনা প্রবেশাধিকার নাই, যাও, খুঁজে দেখো আদিবাসী মেয়েটির ক্ষুদ্র প্রসাধন বাক্সখানি ঐ অবিদ্যাজঙ্গলে

এখানে কেবল আঁখি ঝরে তার আর ছুটে আসে পর্বত

সন্ধেবেলায় জমে তর্কভীরু পাখিদের রতিহর্ষ সংলাপ, তাদের নীলাভ ডিমগুলো পড়ে থাকে তোমার শীতের মাঝে---পেঁকে ওঠে একাকী ডালিম, খোলসের মধ্য থেকে মাথা বের করে রসসিক্ত দেউলিয়া পাঠক, একদিন তোমারও ছিল সমাধির পরে অনন্ত সেলাই খুলেযাওয়া মেঘবই

এইসব আমাকে প্রথমে করে তোলে অদ্ভুত লিপিকার, তারপর তাঁবুসহ উড়ে যায় রাতের অর্গান, মাছের রূপালি আঁশ অগণন টীকাটিপ্পনী হয়ে জ্বলে ওঠে চারপাশে

তোমার পশমি টুপি, সুনির্মম, বয়ে নিয়ে যাইহেরেমখানায়, আর বাবুই ঘাসের দড়ি বানাবার কৌশল যদি-বা কোনো অসতর্ক মুহূর্তে শেখাও, রে অচেনা, পড়ে নেব তবে উল্কাপাত, বালকের ওড়ানো বুদ্বুদ, আর সেই সমুদ্রআঁখি

ইলিয়াস কমল

বাবাকে
আমার কাছে কোনও জাদুর কাঠি ছিলো না
তাই চলে যাওয়া সন্ধ্যার রূপান্তর ভুলে যাওয়ায়
ব্যক্তিগত মাঠ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে গোলাপী গোলাপী ঢেউ

তোমার জন্য যেই মাঠে সেই বালক বুনেছিলো চিনে বাদামের তে
সেই ফসলি মাঠে এবার দেখো বসেছে বিকেলের মেলা

প্রপিতামহের কাছে এই কথা লিখতে গিয়ে ভুলে গিয়েছি ঠিকানা
বাবা, তোমার বাবা কি আমাকে চেনে?
সে কি জানে আমার নাম?
আমার অনাগত সন্তান কি ভুল করে নিজের মুখের
সাথে তার ছবি মিলিয়ে দেখবে কার মুখশ্রীতে ধরে আছে স্বত্তা?’

বিকেলের খেলার মাঠে ফুসে ওঠা গোলাপী ঢেউ
এবার জমিয়ে তুলবে শীতের আসর;
তুলসীর পাতা বেটে উষ্ণতা জড়ালে- বুকে চেপে বসা
সেই কুজো বুড়ি জন্মাবে নতুন প্রেমিকা হয়ে

আসো বাবা, আমি আর তুমি-তুমি আর তোমার বাবা এক হয়ে ফুটবল খেলি
খেলা শেষে পেয়ে যাবো নিজস্ব ঠিকানা লেখা সেই চিঠি
যার অপেক্ষায় ছিলো তোমার বাবা- আর আছে আমার সন্তান
আসলে তারা একই জন্মে বেড়ে উঠা মাছ

অয়ন আয়শ

আমি, নিঃসঙ্গতা এবং প্রেম

আমি তোমার চারপাশে নাচব
রঙিন কাগজের টোপর পরে
কালো গিটারে তাল বাজাব
দাড়িয়ে রক্তাক্ত লাশেদের উপর।

আমি ভুলে যাব আমার অস্তিত্ব
নিদারুন ক্ষিধায় বেড়ে উঠার গল্প
‍‍তোমার প্রেমে হব আমি আহত, বজ্রাহত
হৃদয় হারাবার যাতনায় যতই জ্বরুক রক্ত।

হৃদয় আজ প্রহেলিকাময় কুয়াশাই ঢাকা
বিরান প্রান্তর, শুধু খুঁজে ফেরে বাঁচার আশ্রয়
আমি তোমার চারপাশে নাচব, ভুলে আমার অস্থিত্ব।

বিধান সাহা

রমণী-কীর্তন

১.
শূন্যে উঠি শূন্যে ভাসি শূন্যে করি বাস
শূন্য এ পুরাণ পাত্রে হলো অধিবাস
দশাঙ্গুলে অধিবিদ্যা পঞ্চবটী বনে
প্রেমের মুরতি মনে হলো এই ক্ষণে
শব্দে শব্দে গদ্য করি পদ্যে তাকে পাই
এ ঘরে শূন্য চাতাল নাই কেহ নাই
নজর খুলেছে আজ মস্তিস্কে বিভ্রম
হৃদিমধ্যে রাধাচূঁড়া মৃত্যু উপক্রম
সংসারে সারথী নাই কুয়াশা-কাঞ্চন
রমনী-কির্তন করি শোন বন্ধুজন।

২.
বৈদ্য ডাকি বৈদ্য ডাকি অসুস্থ ভীষণ
প্রণয় পীড়ায় মরি হয়না মরণ
কাহ্নপা লুইপা নয় এ বিধান-ই জানে
নর অঙ্গে নারী স্পর্শ তার কিবা মানে
আহা কি অমিয় সুধা বিভঙ্গে তাহার
চটুল কবিতা যেন কথার বাহার
চতুরঙ্গে বিভাবরী হৃদয়ে সংঘাত
ষড়রিপু নৃত্য করে করিল বেজাত
বিশ্বস্ত হাওয়ার মুখে শুনে এই বানী
দশদিকে কানকথা হলো জানাজানি।

বেলাল আহমেদ

সহগামি স্রোত ও জলের দূরত্ব

ছায়াফেলে সে দিয়ে গেলো বিরহবার্তা!

তুঁতগাছের নীরবতা এসে গ্রাস করে রাখে-
সমুদ্রপথ, কবাটের কর্নিশে বাঁধা প্রভেদের-ভেদ

মৌনতার যজ্ঞে এসে আছড়ে পড়ে তার কিছু
উদভ্রান্ত চুম্বনের দাগ
সমুদ্রপৃষ্টা পালটে দেখি পুদিনাপাতার মতো
আরো কিছু জখমের পথ;
সহগামি স্রোত ও জলের দূরত্বে
দুজনেই গাই বিরহবার্তা

বিষাদে পুড়ে যাওয়া বিসর্জনের গান...

আরাফাত পিংকু

উপেক্ষার বৃন্ত থেকে ধ্বনিত - ৬
পাখি হবার স্বাধ ছিলো
সমূদ্র কাছে ডেকে বললো -
প্রেম এক জলজ উদ্ভিদ ।
সেই থেকে মেঘের আশ্রয়ে বেড়ে উঠেছি,
মেঘের পালক সন্তান আমি ,
বুকের বাম পাশে
হাত রেখে বলে দিতে পারি
সূর্যের আয়ুষ্কাল ।

অনুপম চৌধুরি



দাদা, জুবিন এত পরামর্শ ত্রিভুজ সিকুয়াল...।।

কবিতা এখন হয়ে উঠে না-
সে কবেই মাঠে মারা গেছে...
              

                (১)
জীবনের নানা জটিলতা ডিঙিয়ে
আজো নাড়ায় হাত, সাঁতরিয়ে
হয়তো অজান্তে চারপাশ ঘিরে
নিঙরে নিচ্ছে বহুদুরতা, মাড়িয়ে
শেষ নিঃশ্বাসে ফোটে জঠিলতা দিগ্বিদিক
                (২)
শান্তির শাদা পায়রা, উড়তে গিয়ে মাঠেই মারা
যন্ত্রণার গোলক ধাঁধা, ক্ষণে ক্ষণে খোলস হারা
হিশেবে গরমিল এপাশ-ওপাশ, চারদিক
শেষ নিঃশ্বাসে ফোটে জঠিলতা দিগ্বিদিক
                (৩)
ভালবাসার রঙিন স্বপ্ন রোগাক্রান্ত ব্যাডে ছটফট
সপ্নাতুর মনের লালিত বীজ, ঢেকুর তোলে, ভাঙে দাপট
কি পেয়েছে প্রশ্নে, চালায় চিন্তার যাঁতাকল
মনে পড়ে, এইতো সেদিন-
পরিয়েছে সোনার মল

অলক বিশ্বাস

রথ (কাব্যগ্রন্থঃ বাতাবিলেবুর ফুল)

মুখোমুখি বসেও হয়নি বলা
আঁধার সরিয়ে হও জ্যোৎস্নার রাত
মুগ্ধ শব্দমালায় পুরুষ বেহুঁশে
বলিনি বাড়াও হাত।

তথাপিও, নিশিরাতে ধরা গেলে আকাশের ছায়া
তারারা দূরত্ব মেপে সরেছে যোজন পথ
ভ্রমর চুমুর আগে, ভাঙন চাঁদের
বৃথা ওড়ানো পুষ্পরথ।

উদয়ন ঘোষ চৌধুরি

অর্ধনারীশ্বর

শরীরে কবন্ধ আমি, ফেটে পড়ছে নাভি
সর্পের শিশ্নমুখে লগ্ন হয়ে আছি (না, শঙ্খ ভেবো না)
সূর্যমুখে মাখিয়েছি ওঁমূত্রবমিস্রাব (আলপনার স্নেহে)
স্তনের শিরায়, দ্যাখো দ্যাখো, ছুঁয়ে দ্যাখো, অগ্নি পুঁতেছি
চকিত মাছের মত খেলেছি তলপিচ্ছিলে
স্বৈরিণী পাখিদের গান, আঃ, এই ভোরে, কেন যে জাগায়!
শুক্রলালাঋতুরসপুঁজ চেটে চেটে, ইস্‌, খেয়ে খেয়ে
পুষ্ট কোষ পুষ্ট কেশ পুষ্ট শ্রোণিভার ঊরু-ও মাতৃক 

মধ্যরাতের আলোয় দশনখে চিরে ফেলি, দেখি, নম্র বীজাধার
দেবীর কাঠামোশাঁস জলে ভেসে জলে পুঁড়ে খাক অস্থিসার

তহমিনা শবনম হক

তিস্তা ছুঁয়ে বালিয়াড়ি

তিস্তা ছুঁয়ে বালিয়াড়ি
হাওয়ার নেই লাজ শরম
পড়ল এসে লিচুবনে
উষ্ণ হতে
জোনাক পোকার কাছে।

ভাবছে শিশির পাতার বুকে
নামুক না শীত আরো
নাইবা এলো রৌদ্র তাপ
পারবে না এই হরিত প্রেমিক
আমায় নিতে শুষে।

নাহিয়ান ফাহিম

নিরাপদ
নিচের লাইনটি আমার নয়:
উপরের লাইনটি আমার নয়
উপর ও নিচের মাঝখানে নিরাপদ
ওই মধ্যবিত্ত শাদা অংশটুকু আমার।
আপনি পড়তে পারছেন তো?

বিপুল চক্রবর্তী

দুখিয়া চামার

দুখিয়া চামার যদি গান গায়, শুনবে না ?

দুঃখ নয়, রাগারাগি নয়
ধরো, সে সাগাইয়ের গানই গাইছে
তবু উঠে আসবে তো কাঠ-চেরাইয়ের শব্দ

উঠে আসবে কুঠার...
 

সুচেতা রায়

পর্বে পর্বে আলেক্ষ্য - জুবিনের নিভৃত গৃহ

কবি পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্তের সময় সেতু অথবা জুবিন কথা

সত্তর দশকের অসামান্য এক কবি - ম্যাজিক রিয়েলিজম্‌ এর ভাবে ভাবিত ওর মনন যাত্রা আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে প্রাণসঞ্চার করেছে জুবিনময়তার। আমি জানি, জুবিন কে নিয়ে কেন লেখেন, কেউ কাউকে নিয়ে তখনি লেখে যখন প্রেমের চেয়েও বেশী কোন অন্য রহস্যময়তার সন্ধান পাওয়া যায়।
জুবিনজুবিন নামক ভাবাদর্শটি ঘিরে সম্মকভাবে জীবনের আত্মকথা - জুবিনেরচৌদিকে আবর্তিত সমস্ত গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে সমগ্রে জীবনের 'জুবিনতা'কেই রঙের আশ্লেষে তুলে ধরেছেন তিনি। এই কবিতাগুলির কবি তাই মধ্যস্থে রয়েছেন জীবনের,রঙ্গিন বাসনায় ছুঁয়ে রয়েছেন পরবর্তী অনন্ত দিনগুলি রাতগুলি তার... অদ্ভুত মমতায় উনি প্রকাশ করেছেন চেতনা যা জীবনকে করে তোলে জুবিনময় - রঙ্গিন - নতুন - চির পরিবর্তনশীল একটা ক্যানভাসকবি বিভিন্ন ভাবে ভাব প্রকাশ করেছেন এই সমগ্রতাকে তুলে ধরতে... দেখাতে চেয়েছেন প্রতিটা রঙ - ভালো মন্দচিরাচরিত নির্বেদ প্রবাহ সমস্ত
শুধু মানুষ জুবিন বা কবি জুবিনে নয়, জুবিন একটি প্রতিতীও বটেজুবিন একটিপুনরুজ্জীবন - একটা বেঁচে থাকা কোনো প্রতিভাবান শিল্পীর গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে ঘিরে কবিতার জাল বোনার কথা নতুন নয়। কিন্তু নিজের উত্তরসূরী কোনো প্রতিভাবান শিল্পীর লেখায় মুগ্ধ হয়ে তাকে উৎসাহিত করার জন্য তাকে ঘিরে পুরো একটা অসাধারণ সিরিজ লেখার ঘটনা সত্যিই বিরল। এই পর্বের ভিতরে কবি ভ্রমণ করেছেন জুবিনল্যাণ্ড। অদ্ভূত সুন্দর সেই অঞ্চলে কবির ভ্রমণ কখনও স্লেজ গাড়িতে, আবার কখনও জুবিন প্রবাহে। সারাগায়ে প্রাকৃতিকগন্ধ মেখে কবি বেরিয়ে পড়েছেন।    
আপোশ করেন নি উনি, প্রয়োজনে চলে গিয়েছেনভাবনার সমান্তরাল বিস্তারে - বিভিন্ন সংকেত / অতিসংকেতের গভীর ব্যাঞ্জনায়চলে গিয়েছেন অন্য কোন মাত্রার উপান্তে, পরাবাস্তবতায়, কখনো সত্য কে অতিক্রমকরেছেন, অভিনব তার অধিবাস্তবতা  সেই ভাবকেই মূর্ত করে তুলবেন বলেফলতঃ আমরা পেয়েছি বেশ কয়েকটি অতুলনীয় চিত্রের কোলাজ - এমনি সুষমাসমৃদ্ধ যা জীবনময় - জুবিনময়
জুবিন ছাড়াও প্রতিভাসে উঠে এসেছে আবর্তিত নানা চরিত্র। কখনও বা সাথে নিয়েছেন মন্দরীকে। কবির ভাষায় মন্দরীর সংজ্ঞা  ‘সে এক রাভা বস্তির মেয়ে’ ।  সেই মেয়েই গানের সুরে ভুলিয়ে রেখেছে চারপাশ। সে প্রলেপ দিয়েছে জুবিনের ব্যথায়। আর অতি-জুবিন হয়ে সে অনায়াসে কাটিয়ে উঠেছে সব বাধা। অপূর্ব সব চিত্রের সমারোহে, মিশ্রণ ঘটেছে কবি ও জুবিনসত্তার। প্রতিভাসে উঠে এসেছে দুইযুগের দুই প্রতিভাবান শিল্পী।
 
পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত
জুবিনের নিভৃতগৃহ -১

কবি চমৎকার বাতাস ভরে নিলেন পেনড্রাইভে
পকেট ভর্তি সমকাল ঘুমিয়ে মুখর আহা জিরাফের জীবন
কফিনের পেরেক নির্বিচার ইডিওলজির স্ববিরোধিতায় ঠকাঠক ঠকাঠক
আমি রচনাকাঠামোয় বুঁদ জুবিন তারুণ্যের উপন্যাসে নতুন জার্নাল
বাঙলা কবিতায় ওরিয়েন্টালএক্সপ্রেস আসলে খেজুরের রস
আমার ফ্রেমবদ্ধ পাখিটিকে স্বপ্নচারী করো
বিষাদ-খচিত মানুষের কাছাকাছি রাখো ও জুবিন দুয়ার খুলেছি...

শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ

ভালই বাস, কি হত্যাই কর!

টুকরো কথা

খুব স্বল্প আলোয় বসেছিলেন তিনিএই সময়টায় চলে আসেন নগরের বাইরে বানজারাদের তাঁবুতে বসে পড়েন এক পেয়ালা শরাব নিয়েমাথার পাগড়িটা বেশ কিছুটা নামানো, কাপড়টা মুখের এপার থেকে ওপারে টানাশুধু পেয়ালায় চুমুক দিতে একটু উঁচু করে নেন মাঝেসাঝেদু-চারজন এমন আদমি আসে এইখানেতারা চায়না তাদের কেউ জানুকঅন্যরাও জানার চেষ্টা করেনাতাছাড়া বানজারার অত কৌতুহলী নয়ওনিশ্চিন্তে বসেছিলেন তিনিখানিক পরেই শুরু হবে নাচ-গান বানজারা পুরুষ ও মেয়েরা নাচবেমরুভূমির বালি উড়বে পায়ে পায়েসামনের যে জায়গাটা খালি সেখানে আগুণ জ্বলে উঠবেতিনি পেয়ালায় চুমুক দিলেনএকটা শিরশিরে হাওয়া আসছে কোথা থেকে যেন! দুটো উট কিছুদূরে নিশ্চিন্তে বসে আছে বেশ কিছুদিন তারা এখানে বসেই থাকবেখাবে আর বসে থাকবেযখন এই বানজারার ডেরা-ডান্ডা গুটিয়ে যাবে তখন আবার ওরা উঠে দাঁড়াবে ভাল করেপিঠে বোঝা নিয়ে দুলতে দুলতে হাঁটতে শুরু করবেমিলিয়ে যাবে দিগন্তেমিলিয়ে যাবেইআহ্‌! আর সহ্য হয়না তাঁরসব মিলিয়ে যাবে? এত, এত কিছু সব? ফতেমার মতন? যার নাভিতে ছিল পদ্মের গঠন তার মতই? তিনি তাঁর যৌবনকে দেখতে পাচ্ছেনযে ওই মরুভূমির বালুর উপরে আধ শোয়াপাশে ফতেমাফতেমার নাভিতে রেখেছেন পেয়ালা কোথাও উঠে যেতে পারবে না সেআর নিজে তিনি কালো আঙুরের ঝাঁক নিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছেন ফতেমার ঠোঁটে, চিবুকে, স্তনসন্ধিতে
যদি নেশায় চুর খৈয়াম তবে আনন্দ করো আয়োজন!
যদি রমণীর পাশে ঘোর, তবে আনন্দ করো আয়োজন!
ভাবনা কিসের বল, শেষে তো জানোই বিশ্ব শুধুই শূণ্য,
তার ফাঁকে ভাব তুমি ফাঁকি নও, তুমি তো এখন পূর্ণ!
ফতেমা একদিন ওই দিগন্ত পার হয়ে বানজারাদের কাফেলার সাথে চলে গেলচলেই গেলতাঁর মতন মানুষের সঙ্গে থাকা অনুচিত ফতেমারখৈয়ামের বেগম আছেফতেমার ঠাঁই কই? তাছাড়া এসব নেশা মাত্রকাল নেশা ছুটে গেলে তখন? ফতেমাকে পরে থাকতে হবে ছেঁড়া কাপড়ের মতনকাবেলার ভাই-বেরাদর যত সকলেই একথা বলেছেফতেমা মেনে নিয়েছেতাঁদের মিলন নেইতাঁদের কুষ্ঠীতে নক্ষত্রের দোষফতেমা কাফেলার সঙ্গে চলে গিয়েছে মরুভূমি পার
তারপরের থেকে নক্ষত্র দেখেছেন তিনিদীর্ঘ্যকাল রাতের আকাশে তাকিয়ে থেকেছেনঘুম আসতো না তাঁরকষ্ট ভারী হয়ে ঝুলতো তাঁর পড়ার ঘরের কোণ-কুলুঙ্গিতেঢুকলেই ঝাঁপিয়ে পড়তো তাঁর উপরে যেন দামাল এক শিশুতিনি তাকে কোলে নিয়ে আদর করতেন, খেলা করতেনকাঁদাতেন, কাঁদতেনএকদিন যখন আর জল ছিল না কোনো তখন ওই অনন্ত আকাশের দিকে চাইলেনযখন তিনি চাইলেন তখন মনে পড়লো তাঁকে ফতেমা বলেছিল,
- আমরা দুজন যেন দুটি সমান্তরাল রেখাচলে যাচ্ছি আর চলে যাচ্ছি
খৈয়াম, যে সুলতান মালিক শাহ-র পরামর্শদাতা, যে কিনা বলখ-এ শেখ মুহাম্মদ মনসৌরির ছাত্র, খোরাসান-এ যাকে শিক্ষা দিয়েছেন স্বয়ং ইমাম মোয়াফফক নিশাপুরি, সে যতই তাঁবু বানানেওয়ালা পরিবারের সন্তান হোক সে আর ফতেমা সমান নাতাঁবু বানানেওয়ালা পরিবারের অনেক অর্থ সঞ্চয় হয়েছিলতাদের দরকার ছিল রাজ বংশের সান্নিধ্যতারা ক্ষমতার কাছে থাকতে চেয়েছিলতাই না আফঘানিস্তান থেকে খোরাসান সর্বত্র নিয়ে গিয়েছে ওমর-কেএই ওমর বানজারা ফতেমার সঙ্গে সব ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে তা কি করে হয়? অনেক পড়াশোনা করে খৈয়াম সার বুঝেছেন যখন ফতেমা এক রাতের আঁধারে চলে গেল মরুভূমির অজানা কোনো প্রান্তে